মহরমের গুরুত্ব এবং কিছু সমাজের কুসংস্কার
ইসলামিক বৎসরের প্রথম মাস মহরম। এই মাসের পবিত্রতার জন্য যুদ্ধ বিবাদ নিষিদ্ধ। মহরম ঐতিহাসিকভাবে চিরস্মরণীয়। মাসের দশমকে আশুরার দিন বলা হয়। দুনিয়ার ইতিহাসে এই দিনটি অত্যন্ত মর্যদার। এই দিনেই হজরত আদম আলাইহিসসালামের তাওবা কবুল হয়। এই দিনেই হজরত ইউনুস আলাইহিসসালাম মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন, হজরত নুহ আলাইহিসসালামের নৌকা অক্ষয় আবস্থায় জুদি পাহাড়ে লাগে এবং তিনি নোকা থেকে ভুমিতে অবতরণ করেন। হজরাত ইব্রাহীম আলাইহিসসালামের জন্ম এই পবিত্র দিনে, এই দিনেই তিনি খলিলুল্লাহ উপাধিতে ভুষিত হন। এই ফজিলতপূর্ণ দিবসে তিনি নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে নাজাত পান। হজরত আইয়ুব আলাইহিসসালামের রোগ শেষ হয়। হজরত ইয়াকুব আলাইহিসসালাম তাঁর দৃষ্ট শক্তি ফিরে পান। হজরত মুসা আলাইহিসসালামের জন্ম এই দিনে হয় এবং ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করেন। হযরত ঈসা আলাইহিসসালামকে এই তারিখে আসমানে উর্তীন্ন করা হয়। এই তারিখেই পৃথিবী সৃষ্টি হয় এবং এই তারিখেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এই স্মরণীয়ও তারিখের শুক্রবারের দিন ইমাম আলি মাকাম হজরত ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সঙ্গী ও পরিবারসহ কারবালা ময়দানে দিন ধর্মের নামে শহীদ হয়ে হয়ে সত্যের পতাকা উর্ধে রাখেন।
১০ই মুহাররম যথা আশুরার দিন হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাদাতের সহিহ বর্ণনা আনুসারে আলোচনা করা পুণ্যের কাজ। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, যে সভায় সৎ ব্যাক্তিদের আলোচনা করা হয় সেই স্থানে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। কারবালার ঘটনা ধর্য্য, সত্যের সংগ্রাম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই, শরিয়াতের উপর আঁটল থাকার তুলনাহীন শিক্ষা দেয়।আবার চার খলিফায়ে রাশিদীনের সহ অন্যান্য সাহাবাদেরও আলোচনা করা উচিৎ যাতে আহলুস সুন্নাতের আসল পরিচয় বাকি থাকে।
৯ ও ১০ মুহাররম রোজা রাখা অনেক উত্তম। এই রোজার অনেক বেশি নেকি ও সাওয়াব আছে।আশুরার রাতের জন্য বিশেষ দুআ এবং নফল নামাজ মনকুল হয়ে এসেছে।
১০-এ মুহাররাম আশুরার দিন ১০টি বিষয় পালন করা মুস্তাহাব।
- রোজা রাখা
- স্বদকে প্রদান করা
- নফল নামাজ পড়া
- ১০০ বার সুরাহ ঈখলাস পাঠ করা
- কবরস্থান জিয়ারত করা
- এতিমদের মাথায় হাত বুলানো
- নিজ পরিবারের জন্য খাদ্যর সুব্যবস্থা করা
- গোসল করা
- সুরমা লাগানো
- নখ কাটা, অসুস্থ ব্যাক্তিকে দেখতে যাওয়া, শত্রুতা শেষ করা, আশুরার দুয়া পাঠ করা ইত্যাদি করা উত্তম ।
মুহাররাম ১০ তারিখে আশুরার দিন সরবত পান করানো, খাদ্য খাওয়ানো, সিরনী দেওয়া, কারবালার শোহদাগনের উদ্দেশো ফাতেহা পড়া এই সমস্ত কর্ম জায়েজ এবং সওয়াবের কর্ম।
এই ফাতেহা ইসলামে সওয়াবের বিষয় হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি, হাম্বেলি যথা আহলে সুন্নাত চারজন ইমাম একমত। পূর্বে মুতাজিলা সম্প্রাদায় আর বর্তমান ওহাবি, দেওবন্দী ইহার বীরধিতা করছে। শরীয়াতের মোতাবিক মহরম পালন করা জায়েজ কিন্তু মহরমের দিন যে সমস্ত কর্ম শরিয়াতে বিরোধী, কুশঙ্কার, বিদাত হারাম। এসব হতে আমাদের সমস্ত আহলে সুন্নাত ও জামাতের মুসলমানদের বিরত থাকা দরকার।
যেমন – প্রতি বছর প্রচালিত তাজিয়াতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে কারবালার নকশা তৈরি করে পানিতে ডুবানো বা নকল কারবালাতে নিয়ে গিয়ে দাফন করা বা জলে ফেলে দেওয়া আবশই হারামের কাম। ঢোল তাসা বাজানো, মিছিল করা, ছরা দিয়ে শরীরে আঘাত করা বা তাজিয়ার সামনে সেজদাহ করা ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচালিত করা না জায়েজ। এসব কর্ম জাহিলিয়াতি যুগের কাজ।
মুসলমানের দরকার যেন তাজিয়া সামনে মাথা নত না করি। মুহাররম ইবাদাতের করার দিন, উৎসর্গ করার দিন, ঐতিহাসিক পথ স্মরণ করার দিন।
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
             
            
             
            
             
            
            