ধৈর্যের উপকারিতা এবং এর অসাধারণ প্রজ্ঞা
সাবর এটি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ “ধৈর্য ধারণ করা ” আমাদের জীবনে আমরা অনেক দুঃখ ও কষ্ট পেয়ে থাকি কিন্তু আমরা সেই কষ্ট দুঃখ সহ্য করতে পারিনা। আল্লাহ তা’ আলা আমাদের সকলকে এই দুনিয়াতে সৃষ্টি করেছে এবং সকলকে তিনি পরীক্ষা করে কখনো কষ্ট আবার কখনো দুঃখ দিয়ে নানা রকম ভাবে পরীক্ষা করে , আল্লাহ তা’আলা দেখতে চায় আমাদের মধ্যে কে সাবর কারী, তাই মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন;
ولَنبلونكم بشيءٍ مِنَ الخوفِ والجوعِ، ونقصٍ مِنَ الأَموالِ والأَنفسِ والثمراتِ، وبشّرِ الصابرينَ الذينَ إذا أصابتهم مصيبةٌ قالوا: إنّا للهِ وإنّا إليهِ راجعونَ (البقرة: 155- 156)
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও। (আল-বাক্বারাহ ১৫৫)
এই সব কষ্ট আমাদের সহ্য করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে ও সাবর করতে হবে আমরা যদি সাবর করি তাহলে আল্লাহ আমাদের অনেক নেকি দান করবেন।
সবরের গুরুত্ব কুরআন দ্বারা
সাবর বা ধৈর্য আল্লাহর পরিপূর্ণ মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য । ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা ’আলা নব্বই জায়গায় সবরের কথা বলেছেন। অতএব ভেবে দেখুন সাবর কত গুরুত্বপূর্ণ! আল্লাহ তা ’আলা বিভিন্নভাবে সবরের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। তাহলে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কত জায়গায় সবরের ব্যাপারে উল্লেখ্য করেছে , এখান থেকে বুঝতে পারলাম সবরের অনেক ফজিলত এবং আমারা একটি আয়াতের অংশ যেইটি আমারা অনেক সময় শুনতে পাই যেইটি হচ্ছে;
إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। আল বাকারা :১৫৩
আল্লাহ তা’ আলা আমাদের নানারকম ভাবে পরীক্ষা করে ,তাই মহান আল্লাহ তা’ আলা একটি আয়াতে ইরশাদ করেছে ;
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّىٰ نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ
অর্থা আমি তোমাদের পরীক্ষা করতে থাকব যতক্ষণ পর্যন্ত আমি জানবো না তোমাদের মধ্যে মুযাহিদন ও ধৈর্যশীল কে। সূরা মুহাম্মাদ : ৩১
সাবর কারীদের জন্য আল্লাহর পুরুস্কার
আল্লাহ কুরআনে ধৈর্য ধারণকারীর জন্য অনেক পুরুস্কারের কথা বর্ণনা করেছেন এবং একটি আয়াতে বলে ;
﴿ما عِندَكُم يَنفَدُ وَما عِندَ اللَّهِ باقٍ وَلَنَجزِيَنَّ الَّذينَ صَبَروا أَجرَهُم بِأَحسَنِ ما كانوا يَعمَلونَ﴾
"তোমাদের কাছে যা আছে তা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে তা চিরস্থায়ী এবং যারা ধৈর্য ধারণ করে আমরা অবশ্যই তাদের পুরষ্কার দেব যা তারা করত।" সূরা নাহল; ৯৬
আরেকটি জায়গায় ইরশাদ করেছেন;
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
কেবলমাত্র ধৈর্যশীলদেরই তাদের পুরষ্কার দেওয়া হবে, বিনা হিসাব-নিকাশেই। সূরা যুমার : ১০
সাবর করার জন্য আল্লাহর সাহায্য
আল্লাহ তা’আলা সাবর কারীদের অনেক সাহায্য করে , যদি আমরা সাবর করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তাহলে আল্লাহ আমাদের কে সাহায্য করবে। যেমন আমরা প্রথমে একটি আয়াতের অংশ উল্লেখ করে ছিলাম যেখানে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন;
يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
“হে মোমিন বান্দারা তোমারা সাবর ও নামাজের সময় আল্লাহর দরবারে সাহায্য চাও । নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন” সূরা আল বাকারা: ১৫৩
আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের সবরের সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়তে হবে, সুতরাং আমাদের অন্য কোন মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়ার আগে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
সবরের গুরুত্ব নবী (সাঃ) এর হাদিস দ্বারা
নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন “মোমিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। মোমিনের সকল কাজ কল্যাণময়, যদি কোন মোমিন বান্দা খুশি পাই তখন সে আল্লহকে শুকুর করবে এবং যদি দুঃখ বা কষ্ট পাই তাহলে সে সাবর করবে আর এইটি তার জন্য কল্যাণময়”
একটি হাদিসে নবি(সাঃ) ইরশাদ করেছেন ; আল্লাহ বলেছেন “ যে বেক্তির আল্লাহ কল্যাণ চাই তাকে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে অনেক মুসিবত দেয়” (বুখারি: ৫৬৪৫)
নবী কারিম (সাঃ) বলে্ন আল্লাহ বলেছেন; “আমার মোমিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ছাড়া কিছু নাই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয় মানুষকে নিয়ে যায় তখন সে সওয়াবের আশায় সাবর করে।
আমরা জানতে পারলাম আমাদের সকল কষ্টে ধৈর্য ধরতে হবে ।সাবর কারীকে আল্লাহ অনেক নেকী দান করেন। আমরা একটি ঘটনা দ্বারা বুঝতে পারব এই সাবর বা ধৈর্য কতই গুরুত্ব পূর্ণ;
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , একদিন নবি(সাঃ) একজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সে মহিলা কবরের কাছে কান্না করছিল তখন নবী(সাঃ) বলেন হে মহিলা আল্লাহকে ভয় করো এবং সাবর করো। তখন সে মহিলা বলে আপনি নিজের কাজ করুন,আমার কষ্ট বা মুসিবত আপনি বুঝতে পারবেন না , সেই মহিলাটি জানতোনা তিনি ছিলেন নাবী(সাঃ)। তখন সকল মানুষজন বলে, তিনি ছিলেন নবী (সাঃ) , সে সময় সে মহিলা নবী (সাঃ) এর বাড়ির দরজার কাছে যায় , সে মহিলা কোন দারোয়ান পেলনা, এবং নবি(সাঃ) কে বলে আমি আপনাকে চিনতে পারিনি, তখন নবী কারিম (সাঃ) বলে , সাবর আবলম্বন তো প্রথম আঘাতে শেষ হয়ে যায়। ( মুসলিম – ৯২৬)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী কারিম (সাঃ) বলেছেন , তোমারা কখনো মৃত্যুর প্রত্যাশা করোনা যদি তুমি কোনরূপে নির্যাতিত হয়ে থাকো, এবং যদি তোমাকে মরণের আশা করতেই হয় তখন তুমি এই দুআ পরবে;
اللهم احينى ما كانت الحياة خيرا لي وتوفني إذا كانت الوفاة خَيْرًا لي
অর্থাৎ "হে আল্লাহ আমাকে এই দুনিয়াই বাঁচিয়ে রাখো যদি আমার জীবন ভালো হয় এবং আমার মৃতু দিয়ো যদি আমার মরণ ভালো হয় তাহলে।
"সাবর এবং ধৈর্য হল আলো (মুসনাদ-হাদিস :২২৯০২)
নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন সাবর বা ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক
মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন সাবর কারী তিনি জীবনে অনেক ধৈর্য ধরেছেন। তিনার সারা জীবন কষ্টে ও দুঃখে গিয়েছে। মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন তিনার মায়ের গর্ভে ছিলেন তখন তিনার আব্বাজান আব্দুল্লাহ মারা যান। তারপর নবী (সাঃ) যখন ৬ বছরের ছিলেন তখন তিনার আম্মাজান ইন্তেকাল হন। তারপর তিনার দাদা আব্দুল মুওালিব অভিভাবক হন। কিন্তু তার দুই বছর পর তিনার দাদাও ইন্তেকাল হন। তারপর তিনার চাচা আবু তালিব তিনাকে বড়ো করেন। তারপর তিনি চাচা সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে এবং তিনি বিয়ে করে। কিন্তু নবী (সাঃ)এর জীবন অনেক কষ্টে কাটেছে। এইভাবে তিনার সকল মানুষ ইন্তেকাল করে। সুতরাং নবী (সাঃ)এর সমস্ত জীবনটাই ছিল বিপদাপদ ও দুঃখ।
এছাড়া ইসলামের দাওয়াতী কাজ করার জন্য আবিশ্বাসীরা তিনাকে অনেক নির্যাতন ও জুলুম করে, যেমন:
১) তিনি যেই রাস্তায় চলাচল করতেন সেই রাস্তায় কাফেররা কাঁটা ছড়িয়ে দিত।
২) নামাজ পড়ার সময় তিনার মাথার ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেওয়া হত।
৩) তার উঠানে যখন রান্না করা হত তখন সেই রান্নার পাত্রের ওপর আবর্জনা কাফেররা ফেলত।
৪) সে যখন ইসলামের দাওয়াতের জন্য বের হত তখন তিনার ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হত। এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের দ্বারা তিনাকে পাথর মারতেন।
৫) তিনি তায়েফে গেলে তায়েফ বাসীরা তিনাকে গালি দিতেন এবন পাথর মেরে তিনার শরীর রক্তাক্ত করা হত।
আমারা বুঝতে পারলাম নবী (সাঃ) কে দুনিয়াতে থাকা কালীন অনেক দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে ধৈর্য ধারণ করতে হয়েছিল। যা একটি সাধারণ মানুষের ধরয সাবর করা অসম্ভব। সব থেকে বেশি নবীদের সাবর করতে হয় । একটি হাদিসে বর্ণিত আছে
একদা এক সময় নবী (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করা হয়, “হে রসূল আমদের কে বলেন বিপদ আপদ দ্বারা কাদের বেশী পরীক্ষা করা হয়? নবী কারিম (সাঃ) বললেন, বিপদ আপদ দ্বারা নবীদের বেশী পরীক্ষা করা হয়। তাই নবী (সাঃ) কে ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক বলে।
নীতি:
সব কিছু আলোকপাত করে আমরা বুঝতে পারলাম ধৈর্যের অনেক ফযিলত এবং সাবর কারীকে অনেক নেকি দান করেন। এবং আমরা জানতে পারলাম হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সাঃ) এই দুনিয়ার বুকে কতই না কষ্ট করছেন। এবং নবি(সাঃ) আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং রসূল। আমরা এইসব ব্যাখ্যা থেকে বুঝতে পারলাম । নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সাবর কারীকে ভালবাসেন। তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সাবর কারীকে পছন্দ করেন ।