ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধুলার গুরুত্ব
ইসলাম একটি সুস্থ সমাজ গড়তে চায় যেখানে এর সদস্যরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। একটি আদর্শ সমাজ গঠনে সমাজের প্রতিটি সদস্যকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হয়। তাই প্রত্যেককেই তার সময় না ব্যয় করার এবং শারীরিক সুস্থতা না হারাবার পরামর্শ দিয়েছে। অনর্থক কাজের সম্পদ নষ্ট করা এবং ফালতু কথাবার্তা বা উদ্দেশ্যহীন কাজের সময় ব্যয় করাকে কোরআন ও হাদিসের নিরুৎসাহিত করেছে। যদি কোন ব্যক্তি ফালতু কথাবার্তা বা সময়কে বিনোদনের মাধ্যমে ব্যবহার করে, তাহলে তার মনোযোগকে বিভ্রান্ত করে এবং সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই কোরআন বলে:
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব”। (লুকমান : ৬)
এই আয়াতের আরেকটা তাফসীরে বলে। “কতক মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশতঃ অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি”।
কোরআনে লাহ-আল-হাদিস শব্দটিকে অনুবাদ করেছেন এবং বলেছেন, যে এর অর্থ সঙ্গীত গান নাট্য। আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে লাহ-আল-হাদিস বলতে, টিভি সিরিয়াল, মিউজিক, ভিডিও, নাচ গান ও মিউজিক সম্বলিত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান এবং বিনোদনের অন্যান্য সমস্ত যা মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্যই। এবং জীবনের গঠনমূলক উদ্দেশ্য থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার কাম করে।
কোরআন এবং হাদিস স্বাস্থ্যকর অনুশীলন, কার্যকলাপ এবং খেলাধুলার প্রচার করে যা মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা মানুষদের তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে সাহায্য করে। তীরন্দাজি এবং বর্শা নিক্ষেপের মতো খেলাধুলা প্রচারের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। মহানবী (সা.)-এর বিখ্যাত সাহাবী ছিলেন একজন দক্ষ তীরন্দাজ।
“ইয়াজিদ বিন আবি উবাইদ বলেন, আমি সালমা বিন আকওয়াকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , গোত্রের কিছু লোককে দেখতে পেলেন যারা দুই দলে তীরন্দাজ করছিলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এই দৃশ্য দেখে বলেন, হে ইসমাইলের সন্তান ( আরবদেরকে ইসমাইলের সন্তান বলা হয়), তিরান্দাজ অনুশীলন করো তোমার বাবা ইসমাইল ছিলেন আত্মার আন্দাজ আর, আমিও অনুশীলন করি। একথা শুনে অন্য দদলের নেতারা তীর নিক্ষেপ বন্ধ করে দিল। তিনি বললেন, তোমরা তীর ছুড়ছ না কেন? তারা উত্তর দিল,আমরা কিভাবে তীর ছুড়তে পারি আপনি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের পক্ষে আছেন। তখন তিনি বললেন আচ্ছা আমি উভয় দলের সাথেই আছি, এখন তীর নিক্ষেপ করো”।
আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে, একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল যে নিগ্রহরা বর্শা নিয়ে খেলছিল হঠাৎ হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এসেছিলেন, তাদের দেখে তিনি কঙ্কর তুলে নিক্ষেপ করলেন। তিনি বলেন, উমার তাদেরকে খেলতে দাও। এই হাদীসটি, (আলী আবদুর রাজ্জাকের কাছ থেকে শুনেছেন মুয়াম্মার এবং তার কাছ থেকে আবু হুরায়রা) , তিনি যোগ করেন যে তারা মসজিদে খেলাধুলা করছিল। (হাদিস 123, কিতকাবুল জিহাদ, সহীহ বুখারী)।
আজকে মুসলিম সমাজ খেলাধুলায় কম এবং লাহ-আল-হাদিসের প্রতি বেশি আগ্রহ। তারা তাদের বেশিরভাগ সময় টিভিতে মিউজিক ভিডিও এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখে কাটায়। তাদের বেশিরভাগ সময় ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে ব্যয় করে, যা এক ধরনের লাহ-আল-হাদিস। ইসলাম মুসলমানদেরকে চাপমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে উৎসাহিত করে। কিন্তু আজ মুসলিমরা উৎপাদনশীল সময় ব্যবহার না করে অপচয় করে।
আজ মুসলিম দেশগুলিও, খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করে কারণ তারা মনে করে যে এটা শরীয়তের বিরুদ্ধে এবং অনৈসলামিক। চড়াও খেলাধুলার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অতীতের মুসলমানরা যেসব খেলায় কৃতিত্ব দেখেছিল সেসব খেলায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। ইসলামের জীবদ্দশায় মুসলিম নারীরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তো বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম দেশি মুসলিম নারীদের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেয় না। তাই, মন থেকে এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে কোরআন ও হাদিস সঠিক আলোক পাঠ করা প্রয়োজন যাতে তাদের প্রতিভার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথ স্বীকৃত পাওয়া যায়।