বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে ইসলামের জবাইয়ের পদ্ধতি

মানবের সৃষ্টির পর থেকে দুনিয়ায় বসবাস করার জন্য আর নিজের প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন ধরনের জীবিকা সংগ্রহ করে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সাঃ কোনটা জীবিকা খেলে স্বাস্থের জন্য পুষ্টিকর আর কোনটা ক্ষতিকারক বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।যেই সব দিয়ে ক্ষতি সেই থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন আর যেই জিনিস মানব দেহের জন্য পুষ্টিকর সেটা পোষণ করতে জোর দিয়েছেন। কুরআন ও হাদীসের বাণী যা দেওয়া হয়েছে সেই সব নির্দেশ সর্ব যুগের জন্য ব্যাহত। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাঃ এর কথা কখনোই পরিবর্তন হয়না। বিজ্ঞানও ইসলামের কিছু বিষয়ে বিরোধিতা করে।কারণ বিজ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল প্রত্যেক দিনেই পরিবেশ পরিবর্তন হওয়ায় বিজ্ঞানের সূত্রও বদলায়। এক কথায় ইসলাম হল স্থির আর বিজ্ঞান অস্থির।

ইসলাম বিজ্ঞান

আসলে ভেবে দেখলে ইসলাম একটি বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম এবং এ ধর্মের মহাগ্রন্থ আল-কুরআনও বিজ্ঞানময়। ইসলাম শুধু কিছু আচারসর্বস্ব ধর্ম নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান (Complete code of Life)। এ জীবনের পালনীয়/নিষিদ্ধ যাবতীয় বিষয়াদি সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিকর্তা, সকল বিজ্ঞানীর ঊর্ধ্বে মহাবিজ্ঞানী মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ও শেখানো এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) কর্তৃক শেখানো ও প্রচারকৃত। আধুনিক শিক্ষিত নাস্তিক্যবাদী বা অন্যান্য মতবাদের যেকোন ব্যক্তি বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা যতই অস্বীকার করুক না কেন, ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় ওযূ-গোসল, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য-পানীয়, আচার-ব্যবহার, কেনা-বেচা ইত্যাদির সবকিছুই বিজ্ঞানসম্মত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে এসবের উপকারিতা প্রমাণিত। যেকোন শিক্ষিত ব্যক্তি কুরআন মাজীদ ও কুতুবে সিত্তাহ (বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ) খুলে উল্লিখিত বিষয়গুলি অধ্যায় ও বিষয়বস্ত্ত অনুসারে বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন।

ইসলাম জীবিকা হিসেবে নদী হতে সুমদ্র আর জল হতে স্থলের কিছু প্রাণী ও উদ্ভিদ ছাড়া অধিকাংশ পৃথিবীতে বসবাস করতে ও জীবন বাঁচাতে খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। যেমনটা মাছ, মাংস ও শাকসবজি ইত্যাদি।এবার প্রশ্ন উঠবে কিভাবে  সেই সব জিনিসকে হালাল বা খাদের যোগ্য করে তোলার। সেই সব বিষয়েও  ইসলাম সঠিক  পথ ও পদ্ধতি সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছে। আর সেইসব পদ্ধতি ও নির্দেশ গুলি বর্তমান আধুনিক দুনিয়ার অস্থির বিজ্ঞানও আস্তে আস্তে মানতে হয়েছে।

ইসলাম অনুযায়ী মানব জাতি নিজ জীবন রক্ষা করতে আর নিজ খাদ্য চাহিদা মিটাতে শাকসবজি ছাড়া আদি পিতা আদম আঃ এর যুগে খোদার তরফ হতে কিভাবে এক পশু বা এক জীবকে নিজ খাদ্য করার সঠিক পদ্ধতি প্রদর্শন করা হয়। এবং অবশেষে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম একেবারে সূক্ষ্মভাবে বলে দিয়েছেন যে এক পশুকে মানব খাদ্য রূপে বানানোর জন্য তার আগে যেসব পদ্ধিত আছে তার অনুসরণ আবশ্যিক।

বিজ্ঞান অনুযায়ী মানব এর বানর থেকে বিবর্তন তত্ত্বের ভিত্তিতে যখন খাওয়ার চাহিদা হয় তখন তারা ক্রমে ক্রমে গাছের ডালকে ধারালো করে পশু শিকার শুরু করে আর সেই থেকে পশু মানবের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

যাই হোক মূল বিষয় হচ্ছে যে পশুকে খাওয়াতে  সবাই একমত কিন্তু মতভেদ হয় পশুকে কাটা ও তার খাদ্য হিসেবে তৈরির আগের পদ্ধতিতে। ইসলাম যখন নির্দেশ দেয় তোমরা কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাহ বা কেটে তার রক্ত বের হওয়ার পর সেই পশুর মাংস খাওয়ার জন্যে যোগ্য হয়ে উঠে।আর সেই খাদ্যকে ইসলাম পরিভাষায় তাকে হালাল খাদ্য হিসেবে জানা হয়। যেখানে বিজ্ঞান পশুকে জবাহ করতে কোনো বিশেষ পদ্ধতি নিদির্ষ্ট করেনি। কিন্তু যখন ইসলামের নির্দেশ নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখে আর বুঝতে পারে আসল বিষয়টা আর জানতে পারে যে ইসলাম যা চোদ্দ শত বছর আগে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সব জিনিসের পদ্ধতি বলa হয়েছে সেটাই ঠিক। আজ বিজ্ঞান ইসলামের অধিকাংশ নির্দেশ ও বাণীতে গবেষণা সম্মতি দিলেও আগে সব সময় বিজ্ঞান  ইসলামের প্রতিদ্বন্ধ হিসাবে বিরোধিতা করে গিয়েছে।

ইসলামের অধীনে প্রাণী কল্যাণের প্রাসঙ্গিকতা

ইসলাম পশু কল্যাণের গুরুত্বের জন্য যথেষ্ট সমর্থন প্রদান করে। হাদিস ও সুন্নাতে পশুদের প্রতি নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর উদ্বেগের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে এবং ইসলাম পশু কল্যাণের গুরুত্বের জন্য যথেষ্ট সমর্থন প্রদান করে।কোরানে মানুষের উদ্দেশ্যে পশুদের ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কোরান এবং ঐতিহ্যের শিক্ষাগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে পশুদের প্রতি দয়া ও উদ্বেগের শিক্ষা পাওয়া যায়।

উদাহরণ স্বরূপ সেসব পশুর খাওয়া উচিৎ সেটার নির্দেশ দিয়েছে: 'এবং তিনি তোমাদের (মানুষ) জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তাদের থেকে তোমরা উষ্ণতা ও অনেক উপকার লাভ কর এবং তাদের (মাংস) খাও। (সূরা আন-নাহল ১৬:৫)'

আর যেসব  প্রাণী আমাদের উপকারী সেটা খেতে নিষেধ করেছে:"এবং (তিনি সৃষ্টি করেছেন) ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা, তোমাদের আরোহণের জন্য এবং শোভা স্বরূপ। এবং তিনি আরও কিছু সৃষ্টি করেছেন যার সম্পর্কে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই। (সূরা আন-নাহল ১৬:৮)"

ইসলাম পশু জবাই সংক্রান্ত নিয়ম

ইসলামি ঐতিহ্যে পশু জবাইকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, সহীহ মুসলিম (কিতাব ২১, অধ্যায় ১১, নম্বর ৪৮১০) বিশ্ব নবী মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:'নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছুর জন্য কল্যাণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা হত্যা করো তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করো এবং যখন জবাই করো তখন উত্তম পন্থায় জবাই করো। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেরই উচিত তার ছুরি ধারালো করা এবং জবাই করা পশুকে আরামে মরতে দেওয়া।"

বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আরো বলেছেন, "যখন তোমাদের কেউ জবাই করে, তখন সে যেন তা সম্পূর্ণ করো”, অর্থাৎ একজনকে ছুরিটি ভালোভাবে ধারালো করা উচিত এবং পশুটিকে হত্যা করার আগে তাকে খাওয়ানো, পানি এবং প্রশান্তি দেওয়া উচিত।''

উক্ত উভয় হাদীস দ্বারা পশুকে জবাই করার নিয়ম ও পদ্ধতি আর তার সাথে নম্র ভাবে আচরণ করার কথা ব্যাখ্যা করছে।

তিনি আরও বলেছেন যে ''তুমি কি প্রাণীটিকে দু'বার মৃত্যু ঘটাতে চাও?একবার তার দৃষ্টির মধ্যে ছুরি ধারালো করে এবং একবার তার গলা কেটে?

এই হাদীসতেও ইসলাম সেই শিক্ষা দিতে চায় যেটার পশুকে কষ্ট না দেওয়ার ঈঙ্গিত দেয়। এমনকি তার সামনে ছুরি ধারাল করানোকেও কষ্টকর কর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।এছাড়া অনেক হাদীস আছে যেগুলোতে পশুকে আল্লাহর নামে জবাই করা, এবং তাকে তার রক্ত বের হয়ে শেষ না হওয়া অব্দি গায়ের চামড়া না ছাড়ানো,কোনো বস্তুতে টাঙিয়ে  জবাই না করা, হিংস্র জানোয়ারের মত জবাই না করা ও জংঘ লাগা অস্ত্রে ব্যবহার না করা।

ইসলামের জবাই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ

আসলে ইসলাম একটি সম্পুর্ন জীবনব্যবস্থা ।এখানে সবকিছুর সহজ সমাধান রয়েছে।আর ইসলাম যখন পশুকে জবাই করে খাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে এর মানে যে তাতে অবশ্যই কোনো না কোনো রহস্য আছে।যেমনটা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে যা পাওয়া যায়। প্রথম কারণ:মানুষসহ সকল স্থলজ প্রানীর রক্তে কার্বনডাইঅক্সাইড থাকে।যদি এসব প্রাণীর শ্বাসরুদ্ধ বা স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাহলে রক্তে কার্বনডাইঅক্সাইড থেকে যায়।ফলে রক্তগুলো মাংসর সাথে মিশে যায়।সুতরাং এই মাংস খাওয়া মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর।আর যখন জবেহ করা হয় তখন রক্তগুলো দেহ থেকে বের হয়ে যায় ফলে কোনো মাংসর সাথে কোনো ক্ষতিকর কিছু থাকে না।

অপরদিকে মরা মাছ খাওয়া যায় কারণ মাছ পানি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে যা কার্বনডাইঅক্সাইড থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।তাই মাছের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও তা খাওয়া যায়।এজন্যই ইসলামে মৃত প্রাণি খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।অপরদিকে মরা মাছ খাওয়ার অনুমতি আছে।

দ্বিতীয় কারণ:কোন প্রাণীর ভিতরের রোগ জীবাণু সাধারণত রক্তের ভিতরে বহমান। জবাই করলে সেই রক্ত বাইরে বেরিয়ে আসে যার ফলে সেই জীবাণুর ঝুঁকি অনেক টা কমে যায়। যদি প্রাণীকে আঘাত করে মারা হয় বা রক্ত ভিতরে থাকতে দেয়া হয় তাহলে মৃত্যুর সময় তার কষ্টের পরিমাণ ও বেড়ে যায়। আরো অন্যান্য কারণ আছে।

উপসংহার

বিজ্ঞান যেসব আবিস্কার করছে ইসলাম হাজার বছর আগে সেগুলোর সমাধান দিয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের যে বিষয়গুলো ইসলামের সাথে মিলছে না এসব বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।এসবের জন্য বিজ্ঞানকে একটু অপেক্ষা করতে হবে।আরও গবেষণা করতে হবে।অতীতেও বিজ্ঞানের অনেক ধারণা পরিবর্তন হয়েছে যা শেষ পর্যন্ত ইসলামের মতের সাথে মিলে গিয়েছে।আজ ইসলামকে বিরোধিতা করে যারাই গবেষণা করতে গিয়েছে তারাই ইসলামের আসল মুক্তটা চিনতে পেরে ইসলামকে গ্রহন করেছে।এক রিপোর্ট অনুযায়ী আজ সারা বিশ্বে হালাল খাওয়ার চাহিদা বাড়ছে আর সেটা বিজ্ঞান ও মানতে বাধ্য হচ্ছে আর হবেও।

 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter