আব্দুল কাদ্বির জিলানী রহঃ –এর ব্যালকালের একটি বিখ্যাত ঘটনা
২৩মার্চ ১০৭৮, ৪৭০ হিজরী সনের রমজান মাসের ১ তারিখে ইরাকের বাগদাদ নগরের জিলান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন আব্দুল কাদ্বির। তার পিতার নাম আবুসালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা।তার পিতা ছিলেন ইমাম হাসান ইবন আলীর বংশধর ও মাতা ছিলেন ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর বংশধর। আব্দুল কাদের জিলানীর রহঃ ছিলেন একজন বিখ্যাত সূফী ও বুজুর্গ ছিলেন, তাকে বড়পীর বলা হয়। 
বিভিন্ন মাহফিলে তিনি ইসলামের আদর্শ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় ভাষণ দিতেন। তার মহফিলে শুধু মুসলমান নয়, অনেক অমুসলিমও অংশগ্রহণ করতো। তার বক্তব্য শুনে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্মগ্রহন করেছিলেন। তিনি কাদেরিয়া তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন।
হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউসসানী আব্দুল কাদের পরলোক গমন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তার ওফাত দিবস সারা বিশ্বের সূফীরা প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন । 
তার বাল্যকালের একটি ঘটনা আনেক বিখ্যাত, যে তার ছোট থেকে পড়ার অনেক ইচ্ছা তাই তার আম্মাকে বলল আমি পড়াশোনা করার জন্য বাগদাদ শহর যাবো। তার আম্মাজান তাকে তৈরি করে দিল এবং চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা এবং বলল: আমি তোমাকে আল্লাহর রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছি।  জানিনা আর কখনো কোন দিন দেখা হবে কিনা। এবং আমি তোমাকে একটা উপদেশ দিচ্ছি ,যে  তুমি যতই কঠিন পরিস্থিতিতে পরনা কেন তবুও কাওকে মিথ্যা কথা বলবে না। আব্দুল কাদ্বির জিলানী রহঃ তার মা এর কাছে ওয়াদা করলেন, যে সে কোন দিন মিথ্যে কথা বলবে না। তারপর আল্লাহাফিজ বলে বিদায় নিলেন। এবং একটি কাফেলার সঙ্গে রওনা হয়ে গেলন বাগদাদের পথে। যাওয়ার পথে হজরতের আম্মাজান সেই চল্লিশটা স্বর্ণমুদ্রা তার জামার ভিতরে সেলাই করে দিয়েছিলেন, যাতে না পড়ে যায় ।       
যেতে যেতে সামনে একটি বন কাফেলা চলেছে বনের ভিতর দিয়ে । হঠাৎ এগিয়ে এলো একদল ডাকাত, তারা পুরো  কাফেলাকে  ঘিরে ধরল  এবং সকল যাত্রীর কাছ থেকে সমস্ত টাকা-পয়সা আর দামি দামি জিনিস গুলো কেড়ে নিতে শুরু করল।
 একটা ডাকাত এগিয়ে এলো হযরতের কাছে আর চোখ কটমট করে বলল: ওহে খোকা! তোমার কাছে কিছু আছে নাকি? তিনি বললেন : হ্যাঁ ,আমার কাছে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা আছে। 
এবং ওই ডাকাত তাকে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইল এবং সমস্ত ডাকাতকে বলল এবং শেষ পর্যন্ত কথাটা ডাকাতের সর্দার এর কানে পৌঁছল, ডাকাতের সর্দার তাদেরকে হুকুম দিল যে ছেলেটিকে আমার কাছে নিয়ে এসো । ডাকাতরা আব্দুল কাদ্বির জিলানী রহঃ-কে ডাকাতের সর্দার এর কাছে নিয়ে গেল।সরদার জানতে চাইলো : তোমার কাছে কিছু আছে নাকি হে ? – হ্যাঁ ,আমার কাছে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা আছে। -‘কোথায় ?’ –এই দেখুন , আমার জামার ভিতরে লুকানো রয়েছে।‘ আব্দুল কাদ্বির জিলানীর এ কথা শুনে ডাকাতের দল হতভম্ব হয়ে উঠল ।
এবং তাকে বলল যে তুমি কি জানো যে আমরা কাফেলার সমস্ত যাত্রীর কাছ থেকে টাকা পয়সা আর মালপত্র লুটপাট করে নিচ্ছি। এবং তোমার পয়সা তো লুকানো ছিল, আমরা তো দেখতে পেতাম না । তবুও তুমি মিথ্যা কথা না বলে কথাটা ফাঁস করলে কেন? এর কারণ কি? তখন আব্দুল কাদ্বির জিলানী বলল: আমি আমার মাকে আমি কথা দিয়ে এসেছি ,যে যতই বিপদে পড়ি না কেন জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলবনা। অত:এব এখন আমি কেমন করে মিথ্যা কথা বলতে পারি। এ কথা শুনে ডাকাতরা কেঁপে উঠলো কাঁদতে লাগলো এবং বলল ‘এক বাচ্চা তার মায়ের ওয়াদার প্রতি এত মনোযোগ রেখেছে যে, টাকা পয়সা লুটপাটের  ব্যাপারেও তাঁর পরোয়া নেই। কিন্তু, আফসোস ! আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলাম যে-হে আল্লাহ তুমি তো আমাদের প্রভু । আমরা তোমারই কথা মত চলব । হায় আমাদের সর্বনাস বছরের পর বছর ধরে এ ওয়াদা আমরা ভুলে বসে রয়েছি । আর প্রভুর অবাধ্যতা করে চলেছি।‘ এবং  ডাকাতরা আল্লাহর দরবারে তৈওবা করল এবং কাফেলার সমস্ত জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিল ।
 আর তারা ওয়াদা করল যে কোনো দিন খারাপ কাজ করবো না ,  আব্দুল কাদ্বির জিলানী রহঃ এই কাজ থেকে শিক্ষা পাওয়া গেল যে মিথ্যা কথা না বলা, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবসময় সত্য কথা বলার  তৌফিক দান করুন আমীন ……!
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
             
            
             
            
             
            
            