বেহেশতের পরিচয়
পার্থিব জিবনে যে সকল ব্যাক্তি মহন করুনাময় আল্লাহ তায়ালা ও তিনার রাসুলের নির্দেশিত পথে প্রচালিত হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালা ও রাসুলের কথাবার্তা মেনে চলেছে, শরিয়াতের মোতাবেক আল্লাহ তায়ালা যা হুকুম দিয়েছেন সেগুলো মেনে চলেছে, মহন করুনাময় আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য তাদের মৃত্যুর পর অর্থাৎ পরকালীন জীবনে আল্লাহ তাআলা নিজ করুণায় তাদেরকে স্বীয় কর্মফলের প্রদান হিসেবে পুরস্কার হিসেবে যে স্থানটি দিয়েছেন সেই স্থানটির নাম হচ্ছে বেহেশত বা জান্নাত। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকে বেহেশত বলা হয়। বেহেশত ফারসী শব্দ থেকে এসেছে, আরবি পরিভাষায় একে বলা হয় জান্নাত। বাংলাতে জান্নাত অর্থ হল সুসজ্জিত বাগান। এই সুসজ্জিত বাগানে শুধুমাত্র শান্তি আর শান্তি, সেখানে কোনও রকম দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মুসিবত নাই। এই সুসজ্জিত বাগান শুধু তারাই প্রবেশ করতে পারবে যারা আল্লাহ তায়ালাকে এক্কদ্দাবাদ মেনেছেন এবং তার যাবতীয় আদেশকে মেনে চলেছে। আল্লাহ তায়ালাকে ইবাদত বন্দেগি করেছি, অন্যায়কে কোনদিনও পশ্রয় দেইনি, এবং শরিয়াতের অনুসারে আল্লাহ তায়ালা যা হুকুম দিয়েছেন সেগুলো মেনে চলেছে। মাতা পিতাকে সেই সৎ ব্যাক্তি কোনদিনও দুঃখ-কষ্ট দেইনি। কেননা নবী (সাঃ) তিনার পবিত্র হাদিস শরিফে ইরশাদ করেছেন যে:
الجنة تحت أقدام الأمهات
অর্থাৎ: মাজননির পায়ের নিচে ছেলের জান্নাত রয়েছে। এতদ্বারা বুঝতে পারা যাই যে জান্নাতে যেতে হলে মা-বাবারও খেদমত করতে হবে। জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে হবে, এবং ভালো আমল করতে হবে।
বেহেশতের পরিচয়ঃ- বেহেশতের পরিচয়, নমুনা ও নে’আমাত সমূহের বর্ণনা দেওয়া কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
এই ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরিফে উল্লেখ রয়েছে যে- বেহেশতের নি’আমাত সমূহের যে সমাহার রয়েছে এ সবের কল্পনাও কোনো মানুষ করতে পারেনা এমনকি চোখেও দেখেনি। তবে পবিত্র কোরআন শরিফে ও হাদীসের বর্ণনায় যা কিছু অবগদ। বেহেশতের বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র আল্লাহর কালামে [কোরআন শরীফে] একটি আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন যে- বেহেশত সমূহের তলদেশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নদিসমুহ প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে জান্নাতিরা যা পেতে ইচ্ছা করবে এবং যা নিতে মনের ভাব জাগবে তাই পাবে। এবং জান্নাতিরা সেখানে চিরস্থায়ী ভাবে বসাবস করবে। সেখানে তাদেরকে কোন কিছু প্রয়জন হবেনা, তাদের কোন কষ্ট ভগ করতে হবেনা। আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন যে-
وتلك الجنّة الّتى اورشتموها بما كنتم تعملون
অর্থাৎ- সেই জান্নাত যার তমাদেরকে ইত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে যা তোমার আমল করতে। এবং যখন জান্নাতি-মানুষদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করা হবে তখন তাদের চেহেরা নূরের মতন উজ্জ্বল হয়ে যাবে। জান্নাতে তারা যা কিছু চাইবে তাদের সামনে সেগুলি হাজির হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন যে
و فاكهة كشيرة
অর্থাৎ - তাদের জন্য অনেক ফল দেওয়া হবে মানুষ যা দুনিয়াতে ফল দেখেনি সেগুলি ফল দেওয়া হবে, আর তাদের জন্য পাখির মাংস হবে। যেমন চায়বে তেমনি হবে। কোরআন শরীফে আর একটি আয়াত রয়েছে যেটি হল-
ادخلوها بسلم امنين
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা জান্নাতি মানুষদের বলবেন: তোমরা এই জান্নাতে শান্তি ও নির্ভয়ে প্রবেশ কর। যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদের চেহেরা চাঁদের মত আলোকিত হবে। তারপর যারা আসবে তাদের চেহেরা তারার মত চকমক করবে এবং কেই মরবে না। আর তারা থুতু ফেলবে না, তাদের চিরুনি হবে সোনার দিয়া বানানো, তাদের শরীরের ঘাম হবে মিসকে আম্বরের মতো।
সর্বনিম্নতম বেহেশতঃ- বেহেশতের মধ্যে যাকে সর্বনিম্নত বেহেশতটি দান করা হবে এর পরিধি হবে দশটি দুনিয়ার সমান এবং ৮০ হাজার সেবক তাকে দান করা হবে। সেখানে সে ব্যাক্তি পরম আনন্দে বসবাস করবে। তার কোন কষ্ট হবে না। সে নিস্মন্ন থাকবে। সে যা কিছু খেতে চায়বে তাকে ফেরেশতারে সেগুলি এনেদিবে। বেহেশতের হুর-গিলমানদের রুপ-লাব্যনের ব্যাপারে বর্ণিত আছে। যদি ঐ সকল হুর-গিলমানেরা দুনিয়ার জমিনে আড়াল থেকে সামান্য উঁকি দেয় তাহলে চন্দ্র-সূর্যর আলো সে জ্যোতিতে মলিন হয়ে যাবে। বেহেশতের আবহাওয়া কোনদিনও উত্তপ্ত গরমও নয়। আবার একেবারে শীতলও নয়। বেহেশতের আবহাওয়া মধ্য-বরতি হবে অর্থাৎ খুব গরমও হবেনা এবং খুব শীতলও হবেনা। জান্নাত কতই না সান্তিদায়ক স্থান তায় না
বেহেশতের সংখ্যাঃ- সুখ-শান্তি ও কৃতকর্মের ফলাফল অনুসারে জান্নাতের সংখ্যা মোট ৮টি। যথা- [১] জান্নাতুল ফিরদাউস। [২] জান্নাতুন্না’ঈম। [৩] জান্নাতুল মা-ওয়া। [৪] জান্নাতুল খুলদ। [৫] দারুসসালাম। [৬] দারুল কারার। [৭] জান্নাতুল আদান। [৮] ইল্লিয়্যীন।
আল্লাহ তাআলা মহাপরাক্রমশালী জান্নাতের সৃষ্টি করে তার একশভাগের তিনভাগ মাত্র এ দুনিয়ার সৃষ্টি জীবের সাথে তুলনা দিয়েছেন। আর সাতানব্বইয় ভাগই গোপন রেখেছেন। অর্থাৎ এ দুনিয়ার পৃথিবীতে আমরা যে সব সুন্দরময় উপভগ করছি ও দেখছি বেহেশতের তুলনায় একশভাগের মাত্র তিনভাগের সমান।