মুহাররম মাসের ফযীলত

সবাই 29 শে ডিসেম্বরের ঠিক রাত বারোটার পরেই আনন্দে মেতে উঠে। সবাই ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে একে ওপরকে হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে থাকে। কিন্তু আমরা কেউ কখনোই  হ্যাপি নিউ হিজরী বা হ্যাপি নিউ মুহাররম বলিনা। কী করেই বা  বলব আমরা তো হিজরী কী?সেটাই জানিনা। কিন্তু আবার আমরা অনেকেই মুহাররম মাসের নাম শুনেছি কিন্তু মাসটির ফযীলত সম্পর্কে কিছুই জানা নাই। তাই আজকে আমি হিজরী ও মুহাররম সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করবো ।ইনশাল্লাহ।

 পৃথিবীতে নানা ভাষায়  যুগ বা বছরকে নানাভাবে বলে ও গননা করে থাকে।যেমন বলে থাকে ঈশাই সন ঠিক তেমনই আরবি ভাষায়  যুগ ব বছরকে হিজরী সন বলে ডাকে। এটি চন্দ্র অনুযায়ী  গননা করা হয়।এটি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন । আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় যখন হিজরত করেন তখন থেকেই এটির গননা শুরু হয়েছিল।যার ফলে হিজরী আমদের নবীর হিজরতের সেই কষ্টের দিনটি মনে করিয়ে দেই। এটির গননা ৬২২খ্রিস্টাব্দে শুরু করা হয়। 

 আমরা সকলেই জানি যে,পৃথিবীর সকল ভাষায় বারটি মাসের নাম রয়েছে। ঠিক তেমনি আরবি ভাষায় বারটি মাসের নাম রয়েছে। এই বারটি মাসের মধ্যে একটি মাসের নাম হচ্ছে মুহাররম। এই মাসটি মুসলিমদের নিকট খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই মাসটিতে কিছু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল এবং এই মাসটির ফজিলতও অনেক। তো চলুন আমরা এই মাসটির সম্পর্কে কিছু জেনে নিই।
মুহাররম শব্দটি হলো আরবি শব্দ যার অর্থ  সম্মানিত। এই মাসটিকে শাহরুল্লাহ বলেও ডাকা হয়। যার অর্থ আল্লাহর মাস। এই মাসটি হলো আরবি ক্যালেন্ডার প্রথম তম মাস। এই মাসটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে যেটিকে আশুরার দিন বলে ডাকা হয়। এটি এই মাসের ১০ তারিখ হয়ে থাকে। এই দিনটি কেনো এতো স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নের উত্তরটি আমরা এই  হাদিসটি থেকে বুঝতে পারবো। হাদিসটি ইবনু ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) মাদীনাহ্তে এলেন, তখন ইয়াহূদীগণ আশুরার দিন সওম পালন করত। তারা জানাল, এ দিন মূসা (‘আ.) ফিরাউন-এর উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের বললেন, মূসা (‘আ.)-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হকদার। কাজেই তোমরা সওম পালন কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৬৮০) অতএব এই হাদীসটি থেকে বোঝা যায়  যে , আল্লাহ তাআলা এই দিনেই মূসা আলাইহিস সালামকে জয়ী করিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে ছিলেন। এছাড়া এই দিনটিতে  হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনার পরিবারসহ শহীদ হয়েছিলেন। যার ফলে এই দিনটি  সকলের নিকটে এত স্মরণীয় হয়ে আছে।

 মুহাররম মাসের গুরুত্ব কী?আল্লাহ তাআলা কোরআন মজীদে বলেন-নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না।(আত তাওবাহ,৩৬) এছারা আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম  বলেছেন-সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এক বছর হয় বারো মাসে। এরমধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিন মাস ক্রমানবয়ে আসে-জিলকদ যুলহাজ্জ ও মহরম এবং রজব মুজার বা জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মাঝে হয়ে থাকে।(বুখারী,৪৪০৬). অতএব উপরের আয়াতটি ও হাদিসটি থেকে বোঝা যায় যে, চারটি সন্মানিত মাসের মধ্যে মুহাররম মাস হল একটি সম্মানিত মাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এই মাসটির রোজার সম্পর্কে বলেন-“রমাদানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররাম (মাসের রোজা)।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬৩] এবং অন্য একটি হাদিসে বলেন-রমাযান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহররম-এর রোজা হচ্ছে সর্বোত্তম।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৪২৯) অতএব এই হাদিস দুইটি থেকে প্রমানিত  মুহররম মাস কে আল্লাহর মাস বলা হয় এবং এই মাসের রোজা রমজান মাসের পর সর্বোত্তম। এই মাসের রোজার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-আল্লহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের পাপ মাফ করে দিবেন।।(সহীহ মুসলিম) অতএব হাদিসটি থেকে প্রমাণিত হয় যে এই মাসের রোজার কত ফজিলত। বর্তমানে আমরা মুহরম মাসে একটি রোজা রাখি কিন্তু রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো এক দিন রোজা রাখো।(মুসনাদে আহমাদ) অতএব আমাদের দুইটি রোজা রাখা উচিত। আমি আশা করছি আপনারা যথেষ্ট মহরম সম্পর্কে জেনেছেন। তাই আশুরার দিনে আমরা যেন সকলেই রোজা রাখতে পারি।আল্লাহ তার তৌফিক দান করুন।পরিশেষে আমি আমার আলোচনাটি শেষ করছি একটি কবিতা দিয়ে-
یہ وہ مہینہ ہے جس میں قرآن نہیں آیا
بلکہ کہ محافظ قرآن نے خود قرآن کو بچایا

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter