ইমামতি (খিলাফত) কি কুরাইশ বংশে সীমাবদ্ধ
ভূমিকা
ইসলাম ধর্ম হল আল্লাহর বাণী আদেশ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিকা মেনে চলা। আমাদের নবী যা আদেশ দিয়ে গেছেন বা বলেছেন সেই সবকে মেনে চলা একান্তই জরুরী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অনেক হাদিসে বলেছেন এমন কিছু যা আলেম ওলামাদের মধ্যে সমালোচনার বিষয় রয়েছে, এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "ইমামগণ হবেন কুরাইশ বংশের" এই হাদিস থেকে বিভিন্ন আলেমগণ বিভিন্ন রকমের মতামত নিয়েছে। "ইমামতি বা খিলাফত" কি কুরাইশ বংশে সীমাবদ্ধ? হাদীসটির সমাধানের জন্য জানতে হবে আমাদের কুরাইশ বংশের ব্যাপারে এবং এই হাদিসে ব্যবহৃত শব্দের ব্যাখ্যা। 
বিভিন্ন হাদিস সমুহ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামগণ কুরাইশ বংশের 
আর সহীহ আল-বুখারীতে ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি নবী করীম (সাঃ) এর সূত্রে বলেছেন, “যতদিন তাদের দু’জন থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়টি কুরাইশের মধ্যে অব্যাহত থাকবে।
আর মুসলিম আবু হুরায়রা ও জাবির ইবনে আবদুল্লাহর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: লোকেরা এ ব্যাপারে কুরাইশদের অনুসারণকারি, তাদের মুসলমান তাদের মুসলমানদের কাছে এবং তাদের কাফের তাদের কাফেরদের কাছে।
শব্দের ব্যাখ্যা
ইমাম রাগীব আল আসফাহানি "ইমামা" শব্দের ব্যাখ্যা তে বলেছেন: "ইমাম হল এমন একজন ব্যক্তি যার কথা বা কর্মের অনুসরণ করা হয়, অথবা একটি বই বা অন্য কিছু সঠিক বা ভুল হোক না কেন।"
হাদিসের অর্থে উলামাদের মধ্যে, এই কথাই মতভেদ হয়ে গেছে যে "ইমামা" শব্দের ভাষাগত অর্থ বা "মহান ইমামতির" (الامامة العظمى) মানে নেওয়া হয়েছে।
উলামাদের মতভেদ 
কাজি ইয়াজ এর প্রতিক্রিয়ায় ইমাম আল- নবাবী বলেন: 
কাজি ইয়াজ বলেন, “আল-শাফি’র অনুসারীরা এই হাদিসটি আল-শাফি’র মর্যাদা অনুমান করেছেন।” তিনি বললেন, এবং এতে তাদের জন্য কোন ইঙ্গিত নেই, কারণ খেলাফতে শুধু কুরাইশদের প্রাধান্য দেওয়াই বোঝানো হয়েছে। আমি বলেছি এটা অন্যদের ওপর মর্যাদা বুঝানো হয়েছে এবং শাফিঈ কুরাইশী। 
ইমাম নবাবি এই হাদিসটিতে ইমামা শব্দের অর্থ তার ভাষাগত অর্থ নিয়েছেন শুধুমাত্র খিলাফত এ সীমাবদ্ধ নয়। 
ইমাম ইবনে হাজার আল আসকালানি এবং ইমাম আল সুয়ুতি দুজনের মতামত হল এই হাদীসটি তে "ইমামা" শব্দ দ্বারা খেলাফত কে বোঝানো হয়েছে এবং এই দুজনের মতামতকে ইমাম আল সরকার সমর্থন করেছেন যে ইমামা শব্দের অর্থ শুধুমাত্র খিলাফাত।
হাদিসে এসেছে যে মানুষ কুরাইশের অনুসরণকারী এই বাক্যটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইমাম নবাবি লিখেছেন যে কুরাইশ হলো একটি মর্যাদাশীল বংশ আরব বাসীরা এবং আরবের প্রত্যেকটি গোত্র তার কথা মেনে চলত। ইসলাম আসার পূর্বে এই রকমই কুরাইশ বংশকে অনুসরণ করত, এবং ইসলাম আসার পরেও তাদেরই অনুসরণ করত  এমনকি আরবের অনেক গোত্র রাসুল সাঃ এর ওপর ঈমান আনার জন্য তৈরি হওয়ার সত্ত্বেও কুরাইশ বংশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এবং যখন কুরাইশ বংশ রাসূলের প্রতি ঈমান আনলো তখন তাদেরকে অনুসরণ করে অনেক গোত্র ঈমান এনেছিল। এই মানে বুঝাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে মানুষ হল কুরাইশের অনুসরণকারী।
প্রশ্ন উঠছে যে ইমামতি কি কুরাইশ গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ না অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তি ইমাম হতে পারেন?
যদি আমরা আগেকার ওলামাদের মতামত দেখি ইমাম আল বাকিল্লানি ইমাম এর বৈশিষ্ট লিখতে গিয়ে বলেছেন যে : ইমামের মধ্যে অনেক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে এবং তার মধ্যে একটি হল তাকে কুরাইশী হতে হবে।
ইমাম আল বাগদাদি বলেন যে ইমামতি শুধুমাত্র কুরাইশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ইবনে হাজাম বলছেন যে ইমামতি কুরাইশ ব্যথিত অন্য কোন ব্যক্তির জন্য হালাল নয়।
কিন্তু যদি পরের যুগের ইসলামী ওলামাদের মতামত দেখা যায় তো জানা যাচ্ছে যে হাসান বাসিউনি, তোহা হোসেন এবং মুনির আল বয়াতি এরা বলেছেন যে "ইমামতির" জন্য কুরাইশী হওয়া শর্ত নয়, যদি কুরাইশ ব্যথিত অন্য কোন ব্যক্তি যোগ্য হয়ে থাকেন তো সেই হবেন ইমাম।
সমাধান
হাদিসটির সমাধান করতে গিয়ে ইমাম ইবনে খালদুন বলেছেন যে রাসূল সাঃ এর যুগে সমাজের মধ্যে কুরাইশ বংশের মর্যাদা অনেক উঁচু ছিল তারই জন্য রসূল বলেছেন যে ইমাম হবে কুরাইশ বংশ থেকে ধ্যানে রাখা উচিত যে এইটি কোন আদেশ নয় শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন।
ইমাম ইবনে খালদুন আরো বলেন যে কুরাইশ থেকে ইমাম হবেন এই কথাটি বলার কারণ কি? যদি কারণ দেখতে যায় তো জানা যাবে যে সেই যুগে প্রত্যেকটি গোত্র সেই কুরাইশ বংশের অনুসরণ করত তারই জন্য এই হাদিসটি বলেছেন। কিন্তু যদি পরবর্তীকালে সমাজে কুরাইশ বংশের মর্যাদা না থাকে, অন্য গোত্র যদি তার অনুসরণ না করে, তো ইমাম যে কোনো গোত্র থেকে কোন এক যোগ্য ব্যক্তি হতে পারেন। সঠিক একটি কথা যে, যদি কারণ পাওয়া যায় তো তার ফল পাওয়া যাবে এবং যদি কারণ অপসারণ হয়ে যায় তো তার ফল পাওয়া যাবে না।
অতএব এই সমালোচনা থেকে জানা গেল যে খিলাফত বা ইমামতি শুধুমাত্র কুরাইশ বংশের সীমাবদ্ধ নয় । যদি কুরাইশ বংশ থেকে কোন এক ব্যক্তি উপস্থিত থাকে কিন্তু অন্য এক ব্যক্তি তার চাইতে মর্যাদাশীল থাকে তো সেই হবে ইমামতির যোগ্য। ইসলাম ধর্ম খিলাফত বা ইমামতি কোন একটি গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখেনি। এবং এই হাদিস দ্বারা এটাও বোঝানো হয়নি যে ইসলাম ধর্ম কোন এক গোত্র বা কোন এক জাতকে মর্যাদা দিয়েছে অন্য কোন জাতের ওপর। ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান মর্যাদা দিয়েছে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter