হালাল এবং শুদ্ধ আহারের প্রয়োজনীয়তা
অন্য হলো মহান আল্লাহর এমন এক কৃপা বা আশীর্বাদ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অত্যাবশ্য এবং অপরিহার্য অংশ। মানুষ এই অন্যের জন্য জীবিকা নির্বাহ করে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের অন্যের অভাব এবং প্রাচুর্য দ্বারা পদে পদে পরীক্ষা করে থাকে। মানুষ খাবার নষ্ট করা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পছন্দ করেননা, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের ক্ষুধা দিয়ে পরীক্ষা করার সময় আমাদের ধার্য অনুধাবন করতে হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরান মাজীদে বলেন:
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক (সূরাহ আবাসা-২৪)
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আরো বলেন:
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نَّصْبِرَ عَلَىٰ طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ مِن بَقْلِهَا وَقِثَّائِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَىٰ بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ ۚ اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ
“আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী। (সূরাহ বাক্বারাহ-৬১)”
আমাদের উচিত আমাদের অন্নভোক্ষন কুরান ও হাদিস অনুযায়ী হওয়া। আমাদের খাবার খেতে হবে আদাবের সঙ্গে। নবী (সাঃ) আমাদের খাবার খওয়ার আদাবের ব্যাপারে অনেক কিছু উল্লেখ করেছেন। খাবার মহান আল্লাহর এক ঐশর্য নিয়ামাত সুতরাং, অপচয় কোনভাবে কাম্য নয়।
পানাহার সমন্ধে নবী (সাঃ) এর বর্ণনা:
হযরত কাবিসা ইবন হালব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি নবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি , যখন এক ব্যাক্তি তাকে প্রশ্ন করে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! খাবারের মধ্যে এমন কি আছে, যা আমি ঘৃনা করব? তখন নবী (সাঃ) বললেন, কোন জিনিস সম্পর্কে তোমার মনে যেন ঘৃনার কোনোরূপ সৃষ্টি না হয়। কেননা নাসারারা জিনিসের ওপর ঘৃনা সৃষ্টি করত। (আবু দাউদ; ৩৭৪২)
এবং আরেকটি হাদিসে বর্ণীত আছে, যে নবী (সাঃ) কখন খাবারের দুর্নাম করতেন না, যেটি তিনার খাওয়ার ইচ্ছে হতো সেটি খেতেন এবং যেইটি রুচি হতোনা সেটি খেতেন না । (আবূ দাউদ ;৩৭২১)
পানাহারের সময় রাসূলুল্লাহর পদ্ধতি:
উমার ইবনে আবু সালীম (রাঃ) থেকে বর্ণীত , তিনি নবী (সাঃ) এর কাছে এলেন এবং তার সামনে খাবার উপস্থিত ছিল। তখন নবী (সাঃ) বললেন, আমার নিকটবর্তী হও, এবং বিসমিল্লাহ বল ও ডান হাতে খাও, ও তোমার কাছের খাদ্য গ্রহণ করো। (তিরমিজি ;১৮০৫)
এই হাদিস থেকে বুঝতে পারি আমাদের বিসমিল্লাহ বলে খেতে হবে ও আমাদের নিকটবর্তী পাত্র থেকেই আমাদের খাদ্য পোষণ করতে হবে পাশেরজনের পাত্র থেকে না। অনেক সুন্নাত আছে যেইগুলী আমরা পালন করতে পারিনা,যা আমাদের নবী (সাঃ) আদেশ করে গিয়েছেন। কিন্তু আমাদের ওপর অপরীহার্য সেই সব হাদিস গুলি পালন করা।
হাদিসে বর্ণিত আছে নবী (সাঃ) খাওয়ার পর তার হাতের আঙ্গুলগুলি চাটতেন এবং বলতেন তোমাদের খাদ্য থেকে যদি কিছু পড়ে যায় তাহলে সেটি পরিস্কার করে খাও এবং শয়তানের জন্য পরিত্যাগ করোনা। এবং নবী (সাঃ) আমাদের আহারের পাত্রতে খাবার লাগিয়ে রাখতেন না বরং তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে খেতেন আর বলতেন, তোমাদের মধ্যে কেউ জানেনা কোন খাবারে বরকত আছে। (আবু দাউদ ; ৩৮০২)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নবী (সাঃ) বলেছেন; দুইজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট ও তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (আবু দাউদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)
খাবারের ব্যাপারে কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কুরআনের মধ্যে বলেছেন:
الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَآمَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ
“যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন” (সুরা কুরাইশ;৪)
আমারা এই আয়াত থেকে বুঝতে পারি আল্লাহ তাআলা আমদেরকে খাদ্য প্রদান করেন এবং আমাদের সকল মুসিবত থেকে বাঁচান।
এবং আল্লাহ তাআলা কুরআনের আরেকটি আয়াতে বলেন-
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।(সুরা দাহর-৮)
হালাল খাবার ও হারাম খাবার
আল্লাহ তাআলা কুরানের মধ্যে বলেছেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা – ১৬৮)
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর।
আমরা এই থেকে জ্ঞান পেলাম আমাদের সবসময় হালাল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, আমরা আমাদের খাবার খাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে খাবার হালাল না হারাম। যদি হারাম হয় তাহলে সেই খাদ্য থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে এবং আমাদের শুদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে অশুদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীররে অনেক ক্ষতি হবে।
সুরা মায়িদার ৮৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ হালাল খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট আহার বেছে নাও এবং যে আল্লাহর প্রতি তোমরা ইমান রাখো, তাঁকে ভয় করে চলো।’ বিশ্বাসী মানুষের ইমানি দায়িত্ব হালাল খাবার গ্রহণ করা ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা। হালাল উপার্জনের আহার মানুষকে পবিত্র করে। স্বভাব-চরিত্র সুন্দর করে। সৎসাহসী করে। ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল খাবার গ্রহণ। হারাম খাবার খেয়ে ইবাদত করলে কবুল হয় না। আল্লাহকে ডাকলে তিনি শোনেন না।
রাসুলল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে হে প্রভু বলে মোনাজাত করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার মোনাজাত কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম, হাদিস: ১০১৫)
আমরা সকলে এই ব্যাখ্যা থেকে জানতে পারলাম যে আমাদের আল্লাহ তাআলা হালাল খাবার খেতে বলেছেন। চুরি করা খাবার , কাউকে না বলে তার খাবার খাওয়া, মদ, বা ধূমপান করা এই সব থেকে আমাদের বাঁচতে হবে, অর্থাৎ আমাদের হারাম খাদ্য ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে আল্লাহ তাআলা একদম কঠিন ভাবে হারাম খাবার ও হারাম কর্ম নির্ষিধ করেছে।
এবং আমরা হাদিসের বর্ণনা থেকে যা বুঝতে পারলাম যে আমাদের নবী (সাঃ) এর আদাব অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। আমাদের সুন্নাত মেনে সকল রকম খাদ্য গ্রহন করতে হবে।
রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে হারাম ও অস্বাস্থ্যকর আহার পরিহার করে সবসময় হালাল, বিশুদ্ধ ও উপকারী খাদ্য গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমীন।