একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত মিসওয়াক : দরকার একটু আগ্রহ
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নত ও শিক্ষাই আমাদের কাছে এই দাবি রাখে যে, আমরা যেন তা গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করি। আর সেটা যদি হয় ‘সুন্নাতে মুআক্কাদা’ তাকিদপূর্ণ সুন্নাত তাহলে তা অনুসরণ করা আরো গুরুত্বপূর্ণ। কর্মজীবনে তা চর্চা না করা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ।
দৈনন্দিন জীবনে বহু সুন্নত এমন রয়েছে, যার উপর আমল করা আমাদের পক্ষে কঠিন কিছু নয়। একটু সচেতন হলে খুব সহজেই আমরা সেগুলো পালন করতে পারি। অনেক সুন্নত আছে, যা অন্য কোনো ফরয বিধানের পরিপূরক হিসেবে অথবা তার আগে পরে আদায় করতে হয়। তাই অতি সহজে আমরা এ সুন্নতগুলো উক্ত ফরযের সাথে আদায় করে নিতে পারি।
যেমন : পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের আগে-পরের সুন্নত নামায, নামাযের ভিতরের সুন্নতসমূহ, অযুর সুন্নতসমূহ ইত্যাদি। যেগুলো আমরা ফরযের সাথে সাথেই আদায় করে থাকি। ফলে এ সুন্নতগুলো আদায় করা আমাদের কাছে খুব ভারী মনে হয় না।
তবে এর মধ্যেই কিছু সুন্নত এমন রয়েছে, অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে যেগুলো আমাদের থেকে ছুটে যায়। এরকম একটি সুন্নত হচ্ছে মিসওয়াক।
মিসওয়াক একটি সুন্নত এবং দ্বীনের অংশ। তা শুধুই দাঁতের ময়লা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য নয়; বরং তার আসল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। হাঁ, দুর্গন্ধ ও ময়লা দূর হওয়াও এর একটি উদ্দেশ্য। ইসলামের প্রতিটি বিধানই ইহকালীন ও পরকালীন উভয় প্রকার কল্যাণে পরিপূর্ণ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সুন্দর ও উত্তমরূপে চলা ইসলামের সর্বব্যাপী শিক্ষা। একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিচ্ছন্ন থাকা এবং উত্তম বেশ-ভূষা ধারন করাকে একজন মুসলিমের একটি বিশেষ প্রতিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যার মাধ্যমে চেনা যাবে যে, সে একজন মুসলমান।
এক সফরে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন-
إِنّكُمْ قَادِمُونَ عَلَى إِخْوَانِكُمْ، فَأَصْلِحُوا رِحَالَكُمْ، وَأَصْلِحُوا لِبَاسَكُمْ، حَتّى تَكُونُوا كَأَنّكُمْ شَامَةٌ فِي النّاسِ.
তোমরা তোমাদের ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছ। তাই নিজেদের বাহন ও আসবাবপত্র ঠিকঠাক ও পরিপাটি করে নাও এবং সুন্দর ও উত্তম বেশ-ভূষা ধারন কর; যেন মানুষদের মাঝে তোমাদেরকে তিলকের মত মনে হয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৮৯; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২০৩
আম্মাজান আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, একবার কিছু সাহাবী ঘরের দরজায় রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নবীজী তাদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তখন আমি লক্ষ করলাম, ঘরের একটি বালতিতে রাখা পানিতে তিনি চেহারা দেখছেন এবং নিজের চুল ও দাড়ি পরিপাটি করে নিচ্ছেন। এ দেখে আমি বললাম, হে আল্লাহর প্রিয় রাসূল! আপনিও এমনটি করেন? জবাবে তিনি বললেন, অবশ্যই করি। প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিত, যখন সে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা করে তখন নিজেকে প্রস্তুত ও পরিপাটি করে নেওয়া। কেননা, আল্লাহ পাক সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকেই ভালোবাসেন। -ই‘তিলালুল কুলূব, খারাইতী, পৃ. ১৬৬; আমালুল ইয়াওমি ওয়াললায়লাহ, ইবনুস সুন্নী, হাদীস ১৭৩
যে সকল বিষয়ে বিশেষভাবে পরিচ্ছন্নতা কাম্য, এগুলোর মধ্যে আছে, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, আসবাব-পত্র, লেবাস-পোশাক, শরীর, মাথা, চেহারা ইত্যাদি। এগুলোর প্রত্যেকটির পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আর মুখের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে পঞ্চাশ বা এরও অধিক সাহাবী হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন রাহ. তাঁর সংকলিত ‘আলবাদরুল মুনীর গ্রন্থে মিসওয়াক সম্পর্কে একশ’র বেশি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, মিসওয়াকের বিষয়ে হাদীসের এই ভার একটি বিশাল ব্যাপার। হায় আফসোস!! একটি সুন্নত, যার ব্যাপারে এত অধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে আজ বহু মানুষ সে সুন্নত পালনে উদাসীন। তবে আমি মহান আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করি যেন আমাদের এই মহৎ সুন্নাত মালন করার তাওফীক দান করুক।