যিলহজ্জের প্রথম দশক: আত্মশুদ্ধি, তাওহীদ ও কুরবানির আলোকবর্তিকা

যিলহজ্জ: বর্ষশেষের বরকতময় মাস

ইসলামী বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ মাস যিলহজ্জ কেবল একটি ক্যালেন্ডারগত সময় নয়, বরং ইবাদত, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহাসুযোগ যার দাঁড়ায় খুব সহজেই নেকি অর্জন করা যেতে পারে। এই মাসের নানান ফজিলত রয়েছে কিন্তু আজকের সমাজ সে সকল ফজিলত ময় ও বরকতময় বিষয়ে অবগত নয়।  এই মাসের প্রথম দশ দিন অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনে রয়েছে চরম ও  অপরিসীম ফজিলত এবং তাৎপর্যমণ্ডিত যে বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা'আলা কোরআন শরীফের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন ও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ফজিলত সম্পর্কে আমাদের বলেছেন। আজ আমার এই লেখা আপনাদের সকলকে জিলহজ মাসের ফজিলত সম্পর্কে ধারণা দিবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে। 

কুরআনের দৃষ্টিতে প্রথম দশ দিনের মর্যাদা

আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿وَٱلۡفَجۡرِ وَلَيَالٍ عَشۡرٖ﴾

“শপথ ফজরের এবং শপথ দশ রজনীর” (সূরা আল-ফাজর: ১-২)।

এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা যিনি তেজোময়জ্যোতি সর্বত্র বিরাজমান মহাসত্য চিরজীবী চিরস্থির নিরপেক্ষ তিনি এই দশ রাত সম্বন্ধে শপথ নিচ্ছেন তো এই দশ রাত কোনটি মুফাসসিরগণ এ বিষয়ে তাফসির করতে গিয়ে বলেন, এই দশ রাত হলো যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন। শপথের মাধ্যমে আল্লাহ যে সময়ের গুরুত্ব নির্দেশ করেন, তা নিঃসন্দেহে গৌরবময়। বলা বাহুল্য যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কেন এ দশরথ সম্বন্ধেই কসম খেলেন নিশ্চয়ই এই শপথের পেছনে এই দশ রাতের মর্যাদা সুপ্ত রয়েছে।

হাদীসের আলোকে দশকের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ এ বিষয়ে সহীহ বুখারী নয়শো উনসত্তর নম্বর হাদিসে ইরশাদ করেন এই যিলহজ মাসের ফজিলত সম্পর্কে যে:

ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذه الأيام العشر

— “এই দশ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই, যেদিন নেক আমল আল্লাহর কাছে এত প্রিয়”।

এই হাদীসটি পরিপূর্ণভাবে যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনকে নেক আমলের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে চিহ্নিত করে। যে বিষয়ে আমাদের অবগত হওয়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরাফা দিবসের বিশেষত্ব

এই যিলহজ্জ মাছের দশকের নবম দিন ‘আরাফা’ অত্যন্ত তাৎপর্যময়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিন বিষয়ে বলেন:

صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده

“আরাফার দিনের রোযা বিগত ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মোচন করে” (সহীহ মুসলিম, ১১৬২)।

এই হাদিসটি খুব সুন্দর ভাবে এটি প্রমাণ করে যে এই দিনটি আত্মশুদ্ধি ও রহমতের এক বিরল সুযোগ।

তাকবীর ও যিকরের মহত্ব

তাহলে এই দিবস গুলিতে আমাদের কি কি কাজ করা উচিত, এই দশকে অধিকহারে বলা হয়:

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد

সাহাবীরা এই সময় মসজিদ, বাজার ও রাস্তাঘাটে সারাক্ষণ এই তাকবীর পাঠ করতেন, যা আল্লাহর স্মরণ ও তাওহীদের উদ্দীপনা পুনর্জীবিত করে। এবং আমাদেরও উচিত যে আমরা এটি বেশি বেশি করে এই প্রথম দশকে পড়তে পারি যার ফজিলত রয়েছে অসীম।

কুরবানির তাৎপর্য: আত্মসমর্পণের পরাকাষ্ঠা

যিলহজ্জের দশকের পরিসমাপ্তি হয় ঈদুল আযহার মাধ্যমে যেই দিনটি এই দশকের প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এটি শুধু একটি উৎসব নয়, বরং ইবরাহীম (আঃ)-এর আত্মত্যাগ, উৎসর্গ ও আল্লাহর প্রতি অনুগত্যের জীবন্ত স্মারক।

﴿فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ﴾

“অতঃপর যখন তারা উভয়ে আত্মসমর্পণ করল…” (সূরা আস-সাফফাত: ১০৩)। এই দিবসে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা রক্ত প্রবাহিত করা বেশি পছন্দ করেন।

উপসংহার: ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ

যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন হচ্ছে এমন এক সময়কাল যেই সময় কালে ইবাদত, যিকর, রোযা ও কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত আমাদের সকলকে এ বিষয়ের প্রতি অবগত হওয়া উচিত এবং আমাদের এই সকল বিষয়ে আমল করার দৃড় চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা যেন আমাদের সকলকে এই দিবসে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন! এই সময় এমনই এক সময় যেন আত্মশুদ্ধি ও ঈমান পুনর্জীবনের বাস্তব প্রশিক্ষণ হয়ে উঠে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter