কাবা শরীফের নির্মাণ ও সংস্কারের ইতিহাস

বাইতুল্লাহঅর্থাৎকাবাঘরহলোপৃথিবীতেমহানআল্লাহতায়ালারঅপূর্বনিদর্শন।যাপৃথিবীজুড়েমুসলিমদেরকাছেপবিত্রতমস্থান।যারব্যাপারেবলাহয়েছেযে, ভৌগোলিকভাবেইগোলাকারপৃথিবীরমধ্যস্থলেকাবারঅবস্থান, অর্থাৎমক্কানগরীতে।সৃষ্টিরআদিকালথেকেইআল্লাহতায়ালাবাইতুল্লাহকেতাঁরমনোনীতবান্দাদেরমিলনমেলাহিসেবেকবুলকরেছেন।পৃথিবীতেআল্লাহতায়ালারইবাদতেরজন্যসর্বপ্রথমএইবাইতুল্লাহনির্মাণকরাহয়।

এইবাইতুল্লাহকেউল্লেখকরেআল্লাহতায়ালাপবিত্রকোরআনেইরশাদকরেন।

إِنَّأَوَّلَبَيْتٍوُضِعَلِلنَّاسِلَلَّذِيبِبَكَّةَمُبَارَكًاوَهُدًىلِّلْعَالَمِينَ

(سورةآلعمران٩٦)

অর্থঃনিঃসন্দেহেসর্বপ্রথমঘরযামানুষেরজন্যেস্থাপনকরাহয়েছে, যামক্কায়অবস্থিত।যাবিশ্বাবাসিরজন্যবরকতময়হেদায়েত। ( সুরাইমরান৩:৯৬)

কেবলহজ্ববাওমরাকরতেএইপবিত্রতীর্থস্থানেযানমুসলিমরা, যানিয়েআল্লাহতায়ালাপবিত্রকোরআনেইরশাদকরেন

وَلِلّٰهِعَلَىالنَّاسِحِجُّالۡبَيۡتِمَنِاسۡتَطَاعَاِلَيۡهِسَبِيۡلًا

(سورةآلعمران٩٧)

অর্থঃআল্লাহরজন্যউক্তঘরেরহজ্জকরালোকেদেরউপরআবশ্যকযারসেপর্যন্তপৌঁছারসামর্থ্যআছে। ( সুরাইমরান৩:৯৭)

তবে, এইপবিত্রকাবাশরীফনির্মাণেরপেছনেআছেসহস্রবছরেরইতিহাস।কিন্তুএইইতিহাসেরবেশিরভাগইআসলেঅনেকমানুষেরকাছেঅজানা।তারাশুধুমাত্রএতোটুকুইজানেযেন, কেবলহজ্ববাওমরাকরতেএইপবিত্রতীর্থস্থানেযানমুসলিমরাএবংমহানবীহযরতমুহাম্মাদ (সা) এরজন্ম, আরবেড়েওঠাএমক্কাশহরে।

আজকেচলুনমক্কাবাকাবারইতিহাসজেনেআসাযাক।কাবাশরীফপ্রথমনির্মাণনিয়েসমাজেঅনেককথাপ্রচলিতআছে।তবেআমরাযদিতাফসীরেইবনেকাসীরেসূরাবাকারার১২৫নংআয়াতেরব্যাখ্যায়দৃষ্টিপাতকরিতাহলেআমরাএরনির্মাণসম্পর্কেজানতেপারবোযে।বাইতুল্লাহসর্বপ্রথমনির্মাতাকেউকেউবলেনযে, কাবাশরীফফেরেশতাগণনির্মাণকরেছিলেন।কিন্তুএকথাটিনির্ভরযোগ্যনয়।কেউকেউবলেনযে, হযরতআদম (আঃ) সর্বপ্রথমপাঁচটিপর্বতদ্বারাকাবাশরীফনির্মাণকরেন।পর্বতপাঁচটিহচ্ছেঃ () হেরা, () তুরেসাইনা, () ভূরেযীতা, () জাবাল--লেবাননএবং () জুদী।কিন্তুএকথাটিওসঠিকনয়।কেউবলেনযে, হযরতশীষ (আঃ) সর্বপ্রথমনির্মাণকরেন।কিন্তুএটাওআহলেকিতাবেরকথা।

কিন্তুসত্যটাহলোযে, এসকলআয়াতেআল্লাহসুস্পষ্টজানিয়েছেনযে, একমাত্রআল্লাহরইবাদতেরজন্যবিশ্বেরসকলমানুষেরজন্যনির্মিতসর্বপ্রথমবরকতময়ঘরবাইতুল্লাহকেইবরাহীম (:) নির্মাণকরেন।এবংকাবাঘরেরঠিকওপরেঊর্ধ্বআকাশেঅবস্থিতবাইতুলমামুর, যারপ্রসঙ্গেমহানবীহযরতমুহাম্মদসাঃবলেছেনযে, অতঃপরবায়তুলমামূরকেআমারসামনেপ্রকাশকরাহল।আমিজিব্রাঈলআলাইহিসসালামকেজিজ্ঞেসকরলাম।তিনিবললেন, এটিবাইতুলমামূর।প্রতিদিনএখানেসত্তরহাজারফেরেশতাসালাতআদায়করেন।এরাএখানহতেএকবারবাহিরহলেদ্বিতীয়বারফিরেআসেননা। (সহিহবুখারী৩২০৭, সহিহমুসলিম৩০০ও৩০০৫)

এইহাদিসেরআদতেজালিয়াতগনফিরিস্থাদেরনামেওমিথ্যারচনাকরছেন।সবচেয়ে নিভর্রযোগ্য বর্ণনা মতে মহান আল্লাহর আদেশে ইব্রাহিম(আঃ)ও ইসমাইল(আঃ)কাবাগৃহ নির্মাণ করেন। ইসমাইল(আঃ)পাথর নিয়ে আসতেন এবং ইব্রাহিম(আঃ)নির্মাণ কাজ করতেন। ইব্রাহিম(আঃ)ও ইসমাইল(আঃ)কর্তৃক নির্মাণ করার সুষ্পষ্ট প্রমান কুরআনুর কারিমে পাওয়া যায়। তাদের দুজনকে কাবাঘর নির্মানের জন্য নির্দেষ প্রদান করা হয়।সাথে সাথে এই ঘর নির্মানের কারন ব্যাখ্যা করে আল্লাহ বলেন,

 

وَإِذْجَعَلْنَاالْبَيْتَمَثَابَةًلِّلنَّاسِوَأَمْناًوَاتَّخِذُواْمِنمَّقَامِإِبْرَاهِيمَمُصَلًّىوَعَهِدْنَاإِلَىإِبْرَاهِيمَوَإِسْمَاعِيلَأَنطَهِّرَابَيْتِيَلِلطَّائِفِينَوَالْعَاكِفِينَوَالرُّكَّعِالسُّجُودِ

 

অর্থঃ যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মেলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। (সুরা বাকারা ২:১২৫)

অর্থাৎ, এইআয়াতের আলোকে বলা যায়যে, বাইতুল্লাহ বা কাবাঘর নির্মানের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো, সালাত আদায় ও হজ্জ করা তথা সকল মানুষের জন্যে সম্মেলন ও শান্তির স্থল হিসাবে তৈরি করা।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন খলিলিল্লাহহযরতইব্রাহিম(আঃ) কাবাঘর নির্মাণকালে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেছিলেন যে,

وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٲهِـۧمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَـٰذَا بَلَدًا ءَامِنً۬ا وَٱرۡزقۡ أَهۡلَهُ ۥ مِنَ ٱلثَّمَرَٲتِ مَنۡ ءَامَنَ مِنۡہُم بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ‌ۖ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُ ۥ قَلِيلاً۬ ثُمَّ أَضۡطَرُّهُ ۥۤ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلنَّارِ‌ۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ (١٢٦) وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٲهِـۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَـٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآ‌ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ (١٢٧) رَبَّنَا وَٱجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَيۡنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةً۬ مُّسۡلِمَةً۬ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبۡ عَلَيۡنَآ‌ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ (١٢٨) رَبَّنَا وَٱبۡعَثۡ فِيهِمۡ رَسُولاً۬ مِّنۡہُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡہِمۡ ءَايَـٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُزَكِّيہِمۡ‌ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ (١٢٩)

 

এর অর্থ এই, যখন ইব্রাহীম বলেছিলেনঃহে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর করুন আর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন।তিনি (আল্লাহ) বললেন, যে কেউ কুফরী করবে তাকেও কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিব। অতপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং তা কত নিকৃষ্ট পরিণাম! স্মরন করুন, যখন ইব্রাহীম ও ইসমা’ঈল কা’বা ঘরের প্রাচীর তুলছিলেন তখন তারা বলেছিলেন,হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত উম্মাত করুন। আমাদেরকে ‘ইবাদাতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হন, আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। (আল-বাকারা ২:১২৬-১২৯)

এইকাবাঘরে ইবাদত করার সাথে সাথেবাইতুল্লাহ নির্মাণের একটিউদ্দেশ্য হল, শির্কমু্ক্ত নির্ভেজাল একত্ববাদের প্রতিষ্ঠার করা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

অর্থঃ যখন আমি ইব্রাহীমকে(আঃ)বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে। (সুরা হাজ্জ্ব ২২:২৬)

এগুলি ছিলো ইব্রাহিম(আঃ)ও ইসমাইl(আঃ)কর্তৃক নির্মাণ পবিত্র কাবাশরীফ।

  • কাবা ধ্বংশের ব্যর্থ চেষ্টাঃ

আমরা সকলেই জানি যে বাইতুল্লাহ শরীফকে ধ্বংশ করার চেষ্টাকরেছিলেন নাজ্জাশী সম্রাট হাবশের পক্ষ হতে ইয়ামানের গভর্ণরআবরাহা সাবাহহাবশী,

তবেযখন আবরাহাদেখলেন যে, আরববাসীগণ ক্বাবা’হ গৃহে হজ্জব্রত পালন করছেন এবং একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন সেখানে আগমন করছেন তখন সানআয় তিনি একটি বিরাট গীর্জা নির্মাণ করলেন এবং আরববাসীগণের হজ্জব্রতকে সেদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আহবান জানালেন। কিন্তু বনু কিনানাহ গোত্রের লোকজন যখন এ সংবাদ অবগত হলেন তখন তাঁরা এক রাত্রে গোপনে গীর্জায় প্রবেশ করে তার সামনের দিকে মলের প্রলেপন দিয়ে একদম নোংরা করে ফেললেন। এ ঘটনায় আবরাহা ভয়ানক ক্রোধান্বিত হন এবং প্রতিশোধ গ্রহণ কল্পে ক্বাবা’হ গৃহ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ষাট হাজার অস্ত্র সজ্জিত সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীসহ মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হন। তিনি নিজে একটি শক্তিশালী হস্তীপৃষ্ঠে আরোহণ করেন। সৈন্যদের নিকট মোট নয়টি অথবা তেরটি হস্তী ছিল। (আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী)

এবংআল্লাহ তায়ালাএরপ্রসঙ্গেকুরআন শরীফে সূরা আলফীলে ইরশাদ করেনযে,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَٰبِ ٱلْفِيلِ
أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِى تَضْلِيلٍ
وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ
تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ
فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍۭ

আপনিকিদেখেননিআপনারপালনকর্তাহস্তীবাহিনীরসাথেকিরূপব্যবহারকরেছেন?
তিনিকিতাদেরচক্রান্তনস্যাৎকরেদেননি?
তিনিতাদেরউপরপ্রেরণকরেছেনঝাঁকেঝাঁকেপাখী,
যারাতাদেরউপরপাথরেরকংকরনিক্ষেপকরছিল।
অতঃপরতিনিতাদেরকেভক্ষিততৃণসদৃশকরেদেন।

যার তাফসীরআমরা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের একটি রিওয়াইয়াতথেকে পাই যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা মক্কার উপর হাতী ওয়ালাদের আধিপত্য বিস্তার করতে দেননি, বরং তিনি তাঁর নবী (সঃ) ও ঈমানদার বান্দাদেরকে মক্কার উপর আধিপত্য দান করেছেন। জেনে রেখো যে, মক্কার মর্যাদা আজ ঐ অবস্থাতেই ফিরে এসেছে যে অবস্থায় গতকাল ছিল। খবরদার! প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট (খবর) পৌছিয়ে দিবে।”

এবং এইঘটনাহলোসূরাফীলের সানেনুযুল।যানিয়ে

ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, বাদশা আবরাহা যখন কাবা ধ্বংস করার জন্য আসে তখন তার অগ্রবাহিনী তিহামার অধিবাসী ও কুরাইশদের উট, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি বহু পালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আবদুল মুত্তালিবেরও দু’শো উট ছিল। এরপর সে মক্কাবাসীদের কাছে নিজের একজন দূতকে পাঠায়। তার মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে এই মর্মে বাণী পাঠায়, আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি এসেছি শুধুমাত্র এই ঘরটি (কাবা) ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। যদি তোমরা যুদ্ধ না করো তাহলে তোমাদের প্রাণ ও ধন সম্পত্তির কোন ক্ষতি আমি করবো না। তাছাড়া তার এক দুতকেও মক্কাবাসীদের কাছে পাঠায়।

মক্কাবাসীরা যদি তার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে তাদের সরদারকে তার কাছে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়। আবদুল মুত্তালিব তখন ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বড় সরদার। দূত তাঁর সাথে সাক্ষাত করে আবরাহার পয়গাম তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। তিনি বলে, আবরাহার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। এটা আল্লাহর ঘর তিনি চাইলে তাঁর ঘর রক্ষা করবেন।

দূত বলে , আপনি আমার সাথে আবরাহার কাছে চলুন। তিনি সম্মত হন এবং দূতের সাথে আবরাহার কাছে যান। তিনি এতই সুশ্রী ও আকর্ষণীয় প্রতাপশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে আবরাহ তাকে দেখে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং সিংহাসন থেকে নেমে এসে নিজে তাঁর কাছে বসে পড়ে। সে তাঁকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কি চান? তিনি বলেন, আমার যে উটগুলো ধরে নেওয়া হয়েছে সেগুলো আমাকে ফেরত দেওয়া হোক। আবরাহা বলল, আপনাকে দেখে তো আমি বড়ই প্রভাবিত হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নিজের উটের দাবী জানাচ্ছেন, অথচ এই যে ঘরটা আপনার ও আপনার পূর্বপুরুষদের ধর্মের কেন্দ্র সে সম্পর্কে কিছুই বলছেন না, আপনার এ বক্তব্য আপনাকে আমার দৃষ্টিতে মর্যাদাহীন করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি তো কেবল আমার উটের মালিক এবং সেগুলোর জন্য আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আর এই ঘর! এর একজন রব, মালিক ও প্রভু আছেন । তিনি নিজেই এর হেফাজত করবেন। আবরাহা জবাব দেয়, তিনি একে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আবদুল মুত্তালিব বলেন, এ ব্যাপারে আপনি জানেন ও তিনি জানেন। একথা বলে তিনি সেখান থেকে উঠে পড়েন। আবরাহা তাঁকে তাঁর উটগুলো ফিরিয়ে দেয়। 

আবরাহার সেনাদলের কাছ থেকে ফিরে এসে আবদুল মুত্তালিব কুরাইশদেরকে বলেন, নিজেদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে পাহাড়ের ওপর চলে যাও, এভাবে তারা ব্যাপক গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তারপর তিনি ও কুরাইশদের কয়েকজন সরদার হারম শরীফে হাযির হয়ে যান। তারা কাবার দরজার কড়া ধরে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে থাকেন যে, তিনি যেন তাঁর ঘর ও তাঁর খাদেমদের হেফাজত করেন। সে সময় কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। কিন্তু এই সংকটকালে তারা সবাই এই মূর্তিগুলোর কথা ভুলে যায়। তারা একমাত্র আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য হাত ওঠায়।

ইতিহাসের বইগুলোতে তাদের প্রার্থনা বাণী উদ্ধৃত হয়েছে তার মধ্যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না।

আবদুল মুত্তালিব দোয়া করতে করতে যে, কবিতাটি পড়েছিলেন ইবনে জারীর সেটিও উদ্ধৃত করেছেন।সেটি হলো,

“হে আমার রব! তাদের মোকাবিলায়

 

তুমি ছাড়া কারো প্রতি আমার আশা নেই,

 

হে আমার রব! তাদের হাত থেকে

 

তোমার হারমের হেফাজত করো।

 

এই ঘরের শত্রু তোমার শত্রু,

 

তোমার জনপদ ধবংস করা থেকে

 

তাদের বিরত রাখো।”

 

পরের দিন আবরাহা মক্কায় প্রবশে করার জন্য এগিয়ে যায়। এ সময় ঝাঁকে ঝাকে পাখিরা ঠোঁটে ও পাঞ্জার পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে । তারা এ সেনাদলের ওপর পাথর বর্ষণ করতে থাকে। যার ওপর পাথর কণা পড়তো তার দেহ সংগে সংগে গলে যেতে থাকতো। (তাফসীরে ইবনে কাসির, মারেফুল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন এর সুরা ফিলের তাফসির)

 

  • কাবাপুনর্নির্মাণঃ

এছাড়ানবুয়তেরপাঁচবছরআগেবৃষ্টিওবন্যারকারণেকাবাঘরেরব্যাপকক্ষতিহয়।ফলেকোরাইশরাকাবাপুনর্নির্মাণেরসিদ্ধান্তনেয়।আরতখনোকাবায়তাওয়াফবন্ধথাকতেপারে।যেহেতুতাতেদীর্ঘসময়লেগেছিল।রাসুল (সা.)-এরমাধ্যমেহাজরেআসওয়াতস্থাপনেরঘটনাএসময়ঘটেছিল।

  • এক নজরে কাবাঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতাঃ

উচ্চতা:১৪ মিটার।

মুলতাযামের দিকে দৈর্ঘ্য: ১২.৮৪ মিটার।

হাতীমের দিকে দৈর্ঘ্য: ১১.২৮ মিটার।

রুকনে ইয়ামানী ও হাতীমের মাঝখানের দৈর্ঘ্য: ১২.১১ মিটার।

হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানের দৈর্ঘ্য: ১১.৫২ মিটার।

  • এবংসৌদি গেজেট মতে:

কাবাগৃহের উচ্চতা পূর্ব দিক থেকে ১৪ মিটার। (অন্য একটি সূত্র মতে ১২.৮৪ মিটার)। পশ্চিম দিক থেকে ১২.১১ মিটার। উত্তর দিক থেকে ১১.২৮ মিটার। দক্ষিণ দিক থেকেও ১২.১১ মিটার। (সূত্র : সৌদি গেজেট, ৩ জানুয়ারি, ২০১০ ইং)।

ভূমি থেকে কাবার দরজার উচ্চতা ২.৫ মিটার। দরজার দৈর্ঘ্য ৩.০৬ ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। বর্তমান দরজা বাদশা খালেদের উপহার, যা নির্মাণে প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর সিলিংকে তিনটি কাঠের পিলার ধরে রেখেছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে.মি.। কাবা শরিফের ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত। এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়। এর ছাদে ১২৭ সে.মি. লম্বা ও ১০৪ সে.মি. প্রস্থের একটি ভেন্টিলেটর রয়েছে, যা দিয়ে ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে। এটি একটি কাচ দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রতিবছর দুবার কাবা শরিফের ভেতরটা ধৌত করার সময় এ কাচ খোলা হয়।এইছিলোপবিত্রকাবা শরীফের নির্মাণও তারওপরআক্রমণের ছোট্ট একটিবয়ান।

 

Related Posts

Leave A Comment

1 Comments

Voting Poll

Get Newsletter