রবিউল আউয়াল
আরবি ভাষায় "রবি" অর্থ "বসন্ত" এবং আল-আউয়াল অর্থ "প্রথম"; কাজেই "রবিউল আউয়াল" দ্বারা বুঝানো হয় "প্রথম বসন্ত"। যদিও চন্দ্র বর্ষপঞ্জি হওয়ায় এই মাসটির সময়কাল প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হয়, কাজেই এটি দ্বারা এখন আর মূল ভাবটি দৃশ্যমান হয় না।
ইসলামিক বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের মাস হিসাবে রবিউল আউয়াল মাস মুসলিমদের কাছে বিশেষ মর্যাদার মাস।
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, ‘হে রাসুল আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালবাসা ও তাঁর প্রদর্শিত পথ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা ঈমানের অংশ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (রহ.) তার কিতাবে স্বতন্ত্র একটি শিরোনাম এনেছেন, যার অর্থ ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ’।
বিশিষ্ট সাহাবী হজরত আনাস (রা.) ও আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট নিজ পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ হতে প্রিয় না হবো’। (বুখারী শরীফ : হা: ১৫, মুসলিম শরিফ: হা: ৪৫, মুসনাদে আহমদ: ১২৪৩)।
রবিউল আউয়ালকে একটি বরকতময় মাস হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে পালিত হয়।
রবিউল আউয়াল হল তৃতীয় ইসলামি মাস। রবিউল আউয়ালের প্রকৃত অর্থ হল "বসন্তের প্রথম ঋতু"। কিন্তু বাস্তবে এটি বসন্ত ঋতুর সাথে সম্পর্কিত নয়। কারণ ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ৩৬৫ দিনের চেয়ে ৩৫৫ দিনের কারণে প্রতিটি ইসলামী বছর দশ দিন আগে আসে। সুতরাং আমরা যদি এ বছর বিবেচনা করি, এই মাস এবং পরবর্তী অর্ধ মাস রবিউল আউয়াল এবং বর্তমানে শীতকাল রয়েছে, বসন্ত ঋতু নয়।
যাইহোক, মাসটিকে একটি বরকতময় মাস হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারিখ নিশ্চিত না হলেও দিন নিশ্চিত। মানুষ ১২ এবং ১৭ রবি আল-আউয়াল মধ্যে বিভ্রান্ত হয়. সুন্নি সম্প্রদায়ের মতে নবীর জন্ম ১২ই রবিউল আউয়াল এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মতে ১৭ই রবিউল আউয়াল তারিখে।
প্রতিটি মুসলমান এই মাসটি ইসলামিক চেতনার সাথে পূর্ণ উদযাপন করে। লোকেরা তাদের বাড়ি, রাস্তা এবং পার্কগুলিকে আলোকিত করে। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য অনেকে তাদের বাড়িতে মিলাদ আয়োজন করে।
আমরা যদি এই মাস উদযাপনের কথা বলি, তাহলে আমরা জানতে পারব যে পাকিস্তানই সেই দেশ, যে এই মাসটি উদযাপন করে উত্তেজনা ও হৃদয়ে। আমরা প্রতিটি শহরে এবং প্রতিটি রাস্তায় সমস্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাবারের স্টল দেখতে পাচ্ছি। তারা এই মাসে প্রচুর আনন্দ এবং সদয় কাজ বিতরণ করে কেবল আমাদের নবীকে দেখানোর জন্য যে তারা তাকে ভালবাসে এবং তাকে অনুসরণ করে।
তবে এ মাসে নবীর জন্মদিন ছাড়া আরও অনেক অনুষ্ঠান পালিত হয়।
রবিউল আউয়াল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা তারিখ
- ০১ রবিউল-আউয়াল গ্রানাডা আমিরাতের পতন
- ০৮ রবিউল আউয়াল, ইমাম হাসান আল-আসকারির মৃত্যু
- ০৯ রবিউল আউয়াল, শিয়া সম্প্রদায়ের ঈদ ই সুজা বা ঈদ ই জাহরা
- ১২ রবিউল-আউয়াল, সুন্নি মুসলমানরা মিলাদ উদযাপন করে
- ১৭ রবিউল-আউয়াল, মুসলমানরা জাফর আল-সাদিক-এর জন্মদিন উদযাপন করে।
- ১৮ রবিউল-আউয়াল, উম্মে কুলসুম বিনতে আলীর জন্ম
- ২৬ রবিউল আউয়াল, আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যু
- ২৬ রবিউল আউয়াল একজন নকশবন্দী সুফি শায়খ খাজা সিরাজুদ্দিন নকশবন্দীর মৃত্যু।
প্রতিটি ইসলামী মাসের নিজস্ব সৌজন্য ও গুরুত্ব রয়েছে। মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা।
সূচিত হলো দয়াল নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বতের পরশময় রবিউল আউয়াল মাস। মহানবীর প্রেমের বান ডাকে এ মাসে। মহব্বতের জোয়ার দোলা জাগায় প্রতিটি মোমিন-মুসলমানের হৃদয়ে।
সিরাতুন নবীর এত চর্চা আর কোন মাসে হয় না। বড় বড় মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মূল্যবান আলোচনা পেশ করেন। বাংলার কবি, সাহিত্যিকগণ নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে মহানবীর গুণকীর্তন করেন। বাংলার লোকজ গায়ক আবেগ ও প্রেমে গান করেন 'দয়াল নবীজী আমার'।
ব্যক্তিগত ও সমবেতভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যে পরিমাণ দরুদ ও সালাম পেশ করা হয় রবিউল আউয়াল মাসে, তা বছরের আর কোনো মাসে এতটা হয় না। স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আহযাবে এরশাদ করেন-
(ان الله وملائکة يحصلون على النبى يا يهاالذين امنوا صلو عليه وسلموا تسليما )
"নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা এবং ফেরেশতাগন হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ প্রেরণ করে থাকেন । সুতরাং হে ঈমানদারেরা ! তোমরাও তার উদ্দেশ্যে দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর ।"
রবিউল আউয়ালে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জন্ম ও ওফাতের মাসে তাঁর প্রতি লক্ষ-কোটি দরুদ ও সালাম।
প্রশ্ন: আমরা রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী (দ.) পালন করি এবং জশনে জুলুসও করি। কিন্তু কোন কোন স্থানে মিলাদুন্নবী (দ.)কে গুরুত্ব না দিয়ে একই মাসে সীরাতুন্নবী (দ.) উদ্যাপন করে। প্রশ্ন হলো নবীজির আগমনের মাসে মিলাদুন্নবী (দ.) নাকি সীরাতুন্নবী (দ.) উদ্যাপন করা কোনটি যুক্তিযুক্ত, জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: রবিউল আউয়াল মাস পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাস। নবী-প্রেমিক আশেকে রাসূলগণ এ মাসে আগমনের অপেক্ষায় থাকেন। নূরে মুজাস্সাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমনকে স্বাগত জানিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় এবং রাসূলে পাকের প্রতি ভক্তি-সম্মান প্রদর্শনের জন্য পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও জশনে জুলুস উদ্যাপন করেন। রবিউল আউয়াল মাসেই মহানবী রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ ধরা বুকে শুভাগমন করেছেন এটাই বিশুদ্ধ এবং প্রসিদ্ধ মত। তাই প্রকৃত নবী প্রেমিক ঈমানদার আশেকগণ এই মাসে দরূদ-সালাম, হামদ-নাত, প্রিয় নবীর শান-মান আলোচনা, দোয়া-মুনাজাত ও তবররুক বিতরণের মাধ্যমে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করেন। এটাই যথাযথ এবং এ মাসের সাথে সম্পৃক্ত। মিলাদুন্নবী (দ.) অর্থ নবীপাক রহমতে দো’জাহা, সরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমন ও শুভপদার্পন। আর সীরাতুন্নবীর শাব্দিক ও আভিধানিক অর্থ নবী করীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র বা আখলাক ও ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘সীরাত’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন আল কিফায়া ও কাওয়ায়েদুল ফিক্বহ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘সীরাত’ শব্দটি দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর যুদ্ধ বা জিহাদ সময়কাল জীবনকে বুঝায়। হাদীসের অন্যতম ইমাম হযরত ইমাম নাসাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, জিহাদ সংক্রান্ত তথা যুদ্ধের কর্ম পদ্ধতির বর্ণনার নামই হল সিরাত। হযরত ইমাম বোখারী সিয়ার বা সিরত শব্দটি জিহাদের সাথে বয়ান করেছেন। নবী পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুবিশাল তথা ৬৩ বছর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য হায়াতে জিন্দেগীকে সংকোচিত করে শুধু মাত্র যুদ্ধকালীন জীবন নিয়ে আলোচনা করা বিশেষত মাহে রবিউল আউয়ালে যুক্তি যুক্ত নয়। যেহেতু পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মুমিন মুসলমানদের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়েও বেশী খুশী ও আনন্দের একমাত্র কারণ হলো হুজুর পুরনূর রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমনের তথা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র মাস হওয়ার কারণে।
অথচ ক্বোরআন হাদীস ও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সর্ব-সাধারণের নিকট প্রসিদ্ধ কোন যুদ্ধ বা বিজয় ‘রবিউল আওয়াল‘ মাসে অর্জিত হওয়ার কোন প্রমাণ নেই। তাই পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের পরিবর্তে ‘সীরাতুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই, বরং বাহ্যিক দৃষ্টিতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যা সলফে সালেহীন ও বুজর্গানে দ্বীনের জমানা হতে যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে তাকে কৌশলে প্রতিহত করার জন্য ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব ও গভীর ষড়যন্ত্র।
আর ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নূরানী মাহফিলে নবীজির নূর মুবারকের সৃষ্টি থেকে ওফাত তথা প্রকাশ্য হায়াত হতে পর্দা করা পর্যন্ত যথা সম্ভব গোটা নূরানী হায়াতে পাকের আলোচনা করা হয়। তদুপরি মাহে রবিউল আউয়াল প্রিয় নবীর শুভাগমনের মাস হিসেবে এ মাসের সাথে ঈদ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করার সম্পৃক্ততা বিদ্যমান। বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে মিডিয়াকে অপব্যবহার করে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে সময় খরিদ করে কুচক্রী নবী বিদ্বেষী জ্ঞান পাপী মহল ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বিশাল আয়োজনকে সহ্য করতে না পেরে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গভীর ষড়যন্ত্র পূর্বক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন-এর মত বিশাল পুণ্যময় আমল সোজা সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে দূরে সরানোর অপচেষ্টা হিসেবে ঈদে মিলাদুন্নবীর মাস রবিউল আউয়ালে সীরাতুন্নবী মাহফিলের আয়োজন করতে তৎপর হয়ে যায়। তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত ঈমানদার ও নবী প্রেমিক মুমিন মুসলমান কর্তৃক যুগযুগ ধরে আয়োজিত হয়ে আসা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিরোধিতা করা। যা তাদের হিংস্যাত্মক ও ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রতি আক্রমণাত্মক কথাবার্তা দ্বারা প্রমাণিত।
সুতরাং যুগযুগ ধরে আউলিয়ায়ে কেরাম, ফকিহগণ ও ওলামায়ে রাব্বানির দৃষ্টিতে ফজিলতপূর্ণ বরকতময় ও মুস্তাহাব সাব্যস্ত ঈদে মিলাদুন্নবীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা বা বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করা মূলত ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অস্বীকার করার নামান্তর। যা নবী বিদ্বেষী, মুনাফিক ও ফিতনা বাজদের চরিত্র। আল্লাহ্ পাকের নিকট ফরিয়াদ তিনি যেন আমাদের কে যথাযথ মর্যাদা ও ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপনের তাওফিক দান করেন এবং সকল মুসলমানকে সত্যকে বুঝার শক্তি দান করেন।
প্রসঙ্গ ঈদে মিলাদুন্নবি:
আমাদের সমাজের একশ্রেণির লোক ১২ রবিউল আওয়ালের দিন ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ (রাসুল (সা.)-এর জন্মদিনের ঈদ) পালন করেন। একইসঙ্গে তারা এটাও দাবি করেন, এই ঈদ ‘সাইয়্যেদুল আইয়াদ’ তথা সকল ঈদের বড় ঈদ। অথচ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ‘জুমহুর’ বা অধিকাংশ আলেম এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অভিমত হলো, মিলাদুন্নবি (নবীর জন্ম) উপলক্ষে কোনও ঈদ নেই। ইসলামে মাত্র দুটি ঈদ।এক হাদিসে নবীজি বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির উৎসব আছে, আমাদের উৎসব হলো এই দুই ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা)।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।
ঈদের দিনগুলোতে রোজা রাখা হারাম। অথচ রাসুল (সা.) তাঁর জন্মদিন সোমবারে রোজা রাখতেন। আনসারি সাহাবি হজরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর নিকট সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এই দিনই নবুয়ত লাভ করেছি।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬২)। এখানে আমরা দেখি, আল্লাহর রাসুল (সা.) জন্ম তারিখ নয়; বরং জন্মবার (সোমবার) পালন করতেন।
মরহুম ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ইসলামের প্রথম ছয়শ’ বছরে ঈদে মিলাদুন্নবির অস্তিত্বই ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, প্রসিদ্ধ চার ইমাম, বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানি, ইমাম গাজ্জালিসহ তাদের কেউ ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করেননি। তারা সারা বছর রাসুলের সিরাত তথা জীবনী নিয়ে আলোচনা করতেন। আমাদেরও তাই করা উচিত এবং রাসুলের অনুসরণে সোমবার রোজা রাখা উত্তম হবে।এ বিষয়ে বিশ্বনন্দিত ইসলামি শিক্ষালয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের ৩৭ হাজার ২নং ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘নবী কারিম (সা.) থেকে শুরু করে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, ইমামগণ, বুজুর্গানেদিন- এদের কারও থেকেই প্রচলিত জন্মদিন পালনের কোনও স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। জন্মদিন পালনের এ পদ্ধতি বিজাতীয়দের। মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনও ধর্ম অনুসরণ করে, তা গ্রহণ করা হবে না, আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫)।’
মিলাদুন্নবি সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বের বরেণ্য ইসলামি স্কলার মৌরতানিয়ার বিশিষ্ট আলেম শায়খ মুহাম্মাদ ওয়ালিদুদ দাদো শানকিতি খুবই ভারসাম্যপূর্ণ একটি মত দিয়েছেন। যেহেতু রবিউল আউয়ালে রাসুল (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু দুটোই হয়েছে; তাই তিনি বলেছেন, ‘যে একথা বিশ্বাস করবে যে রাসুলের জন্মদিন ঈদ, সে বিদআত করলো। আর যে তাঁর মৃত্যুদিনে আনন্দিত হলো, সে কুফরি করলো। তবে জন্মদিন উপলক্ষে যদি কেউ এমন আনন্দিত হয় যেমনটা ফেরাউন থেকে মুসা (আ.)-এর মুক্তির দিনে আনন্দিত হয়েছিল, তাতে কোনও সমস্যা নেই। বরং এটি আল্লাহর রাসুলের প্রতি সম্মান জানানো হলো।’
সময়সূচী:
ইসলামি বর্ষপঞ্জি একটি চন্দ্র পঞ্জিকা এবং এই বর্ষপঞ্জির মাসগুলো শুরু হয় যখন নতুন চাঁদের ক্রিসেন্ট দৃশ্যমান হয়। যেহেতু ইসলামি চন্দ্রভিত্তিক বর্ষপঞ্জিটির বছর পূর্ণ হয় সৌর পঞ্জিকা অপেক্ষা ১১ হতে ১২ দিন পূর্বেই, ফলে প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাসের শুরুর দিনটি প্রচলিত সৌরভিত্তিক গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সাথে একই দিনে মেলে না। সৌদি আরবে প্রচলিত “উম্ম আল-কুরা বর্ষপঞ্জি” অনুসারে,[৪] আনুমানিকভাবে, রবিউল আউয়াল মাসটি শুরু এবং স্থায়ীত্ব হবে নিম্নরূপঃ