অকল্পনীয় জান্নাত মু'মীনদের জন্য
জান্নাত শব্দের অর্থ হল “স্বর্গ”।জান্নাত আরবি শব্দ যেটি মু'মীনদের জন্য আরামদায়ক শান্তিপূর্ণ জায়গা। সকলকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।এই মৃত্যুই শেষ নয় বরং সকলকে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন উত্তর দিয়ে নিজের কর্মের ফল ভোগ করতে হবে; ভাল লোকেরা স্বর্গে প্রবেশ করবে এবং মন্দরা নরকে।কিন্তু যারা অন্তত একবার আল্লাহর প্রতি ঈমান নিয়ে আসবে, তারা নিশ্চিত একদিন জান্নাতে যাবেই। কি হবে সেই দিন? অতঃপর আমাদের চিন্তা ভাবনা করা দরকার, যে জান্নাত কেমন হবে এবং জাহান্নাম কেমন হবে। কি করব সেই দিন।
এ বিষয়ে রসুল ﷺ বলেন, জান্নাত এমন একটি জায়গা যা কেউ চোখে কোনো দিন দেখেনি, কানে কখনো শোনেনি ও কারও মনে কখনো ধারনাও আসেনি। আল্লাহভীরু লোকেদের জন্য রয়েছে জান্নাত। সেই জান্নাতের অবস্থা হল এই যে, সেখানে পানির নদী,দুধের নদী, শরবতের নদী, মধুর নদী ও নানান ধরনের ফলমূল রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, খেজুর, ডালিম আরও নানান ধরনের সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য তাতে রয়েছে। ঈমানদার পরেজগার মুত্তাকিদের বলা হবে, তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে জান্নাতের মধ্যে প্রবেশ করো। এখানে এখন তোমাদের কোনো ভয় নেই আর কোনো চিন্তার বিষয় নেয়। তোমাদের জন্য প্রচুর ফলমূল থাকবে যা তোমরা আহার করবে। এবং তাদের মনের আসা পূর্ণ করার মত জিনিস থাকবে, যেমন তাদের সঙ্গী হিসাবে তাদের সঙ্গে হুর থাকবে। তাঁরা নিশ্চিন্তার সঙ্গে সমস্ত রকমের সুস্বাদু জিনিস চেয়ে নেবে। তাদের জান্নাতে কখনও মৃত্যু হবে না তারাই হবে আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা স্বর্ণের কেদারায় তারা হেলান দিয়ে বসে থাকবে।সেখানে তারা যা খুশি তাই করবে এবং যা মন যায় তা পানাহার করবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমাদের নেক সন্তান ও স্ত্রীকে একসঙ্গে মিলিত করে দেবো। তাদের অন্তরে যা কিছু দুঃখ ও কষ্ট রয়েছে সমস্ত কিছু তাদের মন থেকে বের করে দেবো, তারা বড়ই ভাগ্যবান হবে সেখানে চিরদিন থাকবে। তবে প্রভুর অন্য কিছু ইচ্ছা হলে আলাদা ব্যপার ,এ সব জিনিস কোনো দিন ছিন্ন ভিন্ন হওয়ার নয়। জান্নাত তাঁদের জন্য আরামদায়ক বসবাসের স্থান, সেখানে তারা সারা জীবন থাকবে , তাঁদের কাছে ফেরেস্তা আসবে এবং বলবে দুনিয়ার কষ্টের ফল ও ধৈর্যের কারণে আজকে তোমাদের এই আরামদায়ক জায়গা, নতুবা আজকে তোমরা জাহান্নামে থাকতে। তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । তারা সেখানে সালাম ব্যাতিত কোনো কথা শুনবে না এবং সেখানে সকাল সন্ধ্যা তাদের জন্য রুজি থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্তেষ্ট ও তারা আল্লাহর প্রতি সন্তেষ্ট থাকবে ।
তারা সবসময় খুশি এবং আনন্দে থাকবে, তারা কোনো রকম কষ্টের মধ্যে থাকবে না, তাদের কোনো কষ্ট অনুভব হবে না, বৃক্ষের ছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে, পানীয় জিনিস তারা রুপার পাত্তে পান করবে এবং তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে ‘যাঞ্জাবিল’ মিশ্রিত পানপাত্তে এটা জান্নাতের ‘সালসাবিল’ নামক একটি ঝর্ণা । সেখানে দেখতে পাওয়া যাবে বিশাল নিয়ামতময় এক রাজ্য। তাঁদের পরনের জিনিস হবে হালকা সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নিমির্ত কংকন এবং তাঁদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন 'শারাবান তাহুরা' ।
যে ধরনের লোক জান্নাতে যাবে তারা হল, যারা আল্লাহ ও তার নবীর প্রতি ঈমান আনবে ,যারা ধৈর্য ধারণকারি, সত্যবাদি, নির্দেশ পালনকারি, সৎ পথে ব্যায়কারি , আল্লাহর রাস্তাই নিজেদের জীবন ও সম্পদ প্রয়োজনে দেশ পর্যন্ত ত্যাগ করেছে । আল্লাহর কাছে তাদের বড় মর্যদা রয়েছে , যারা ইসলামকে বাঁচাবার জন্য আল্লাহর রাস্তাই শহিদ হয়েছে । জান্নাতের বিনিময়ে মুসলমানদের সাহায্য করেছে। এতীমদের যারা সাহায্য করেছে, যারা সৎকাজের মধ্যে ব্যাস্ত থেকেও একটি বারও আল্লাহ্ কে ভোলেনি ও রাসুলের আদর্শকে পরিত্যাগ করেনি। এবং গোলামকে আযাদ করা একটি ভালো কাজ, ইতিহাসে হযরত বেলাল (রাঃ)কে মুক্ত করতে দশ দিরহাম স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেছিল আবুবাক্কার (রাঃ)। তাছাড়া আবুবাক্কার (রাঃ) অনেক গোলামকে আযাদ করেছেন –যেমন আমের ইবনে ফোহাইরাকে কুড়ি তোলা সোনা দিয়ে মুক্ত করেন, বানি আব্দেদার –এক মহিলার দুজন বাঁদি ছিল,একজনের নাম হিন্দিয়া ও অপর জনের নাম জারিয়া, এদের উপর অনেক অত্যচার করা হত , আবুবাক্কার (রাঃ) যখন জানতে পারে তখন তাদেরকে মুক্ত করার জন্য উপযুক্ত মূল্য দিয়ে বাঁদি দুজনকে মুক্ত করে আবুবাক্কার (রাঃ) বলল আজকে থেকে তোমরা আযাদ। দশজন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী রয়েছেন, যাদের দুনিয়ায় জান্নাতের টিকিট হয়ে গেছে। তারা হলেন-
• আবু বাক্কার সিদ্দিক (রাঃ)
• উমার বিন খাত্তাব (রাঃ)
• উসমান বিন আফফান (রাঃ)
• আলি ইবনে আবী তালিব(রাঃ)
• তালাহা (রাঃ)
• যুবাইর (রাঃ)
• আব্দুর রহমান ইবনে আউফ(রাঃ)
• সা'দ ইবনে আবী ওক্কাস (রাঃ)
• সাইদ ইবনে যায়েদ (রাঃ)
• আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ)