নিশ্চয় ইবাদত জ্ঞানের ফলপ্রসূ 

পূর্ব প্রকাশিত নিবন্ধ ‘প্রজ্ঞাময় আল্লহ তায়ালার মানব সম্প্রদায়ের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?’ তে যদি একটু মনোযোগ সহকারে ধ্যান দেওয়া হয় তবে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে, এই যে ইবাদত, আল্লহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তা সম্পূর্ণরূপে পালন করতে সকলেরই জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। যেহেতু জ্ঞান বা ইলম হল ইবাদতের মূল। 

কেননা, যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করা হয় তবে নিশ্চয় বুঝতে পারা যায়, আল্লাহ তায়ালা কেন (اقرأ) শব্দ দ্বারা সমগ্র পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, নির্ভুল ও মহাগ্রন্থ কুরআন মাজিদের প্রারম্ভ করলেন ও আমাদিগকে প্রথম হুকুম দিলেন। তিনি প্রথমে বলেননি যে, নামায পড়ো, রোযা রাখো, যাকাত দাও, হজ্ব পালন করো বরং তিনি সর্বপ্রথম আদেশ দিলেন (اقرأ باسم ربك الذي خلق)  “পড়ো! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন”।

এছাড়াও যদি রাসূল (সাঃ)- জীবনীর দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি তবে জানতে পারব যে আমাদের নাবী কতই না ইলমকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন উদাহরনস্বরুপ, বদর যুদ্ধে যখন শত্রুপক্ষের যোদ্ধারা পাকড়াও হয়ে যায় সেই সময় তিনি তন্মধ্যে যারা জ্ঞানী ছিল তাদের দিয়াত বা মুক্ত হওয়ার জন্য একটিই শর্ত রেখেছিলেন, আর সেটি হল দশ জন মুসলিমকে শিক্ষা প্রদান করা। এমনকি তিনি একটি হাদিশে বলছেন:

طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة 

অর্থাৎ, “ইলম বা বিদ্যা অর্জন করা প্রত্যেক নর ও নারীর প্রতি অপরিহার্য”। তথাপি যদি এই জ্ঞানের জন্য যদি তোমাদের চিনও যেতে হয় তবে যাও। যেহেতু সেই সময় চিন ছিল জ্ঞান অর্জন করার অন্যতম স্থান ও অতি সুদুরে। 

তাছাড়া প্রজ্ঞাময় সৃষ্টিকর্তাও সূরা মুলকের ২ নং আয়াতে ঘোষনা করছেন যে”

 الذي خلق الموت والحياة ليبلوكم أيكم أحسن عملا 

“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃ্ত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্যে-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম?” সুতরাং, এই আয়াত অনুসারে বলতে পারা যায়, আল্লাহ হলেন পরীক্ষক, নবী হলেন শিক্ষক, মানুষ হল পরীক্ষার্থী, কুরআন হল সিলেবাস বা পাঠ্য পুস্তক, হাদিস হল কুরআনের রেফারেন্স বই, পৃথিবী হল পরীক্ষাগার, কিয়ামাত হল ফলাফলের দিন, জান্নাত বা জাহান্নাম হবে তার প্রতিদান। অতএব, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে আমাদের নিকট একটিই হাতিয়ার আর তা হল বিদ্যা। কুরআন ও হাদিশকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরতে হবে, পড়তে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে তবেই তো আমরা এই মহা পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে পারব।

এমনকি মানুষত্বের পরিচয় কেবল মাত্র এই জ্ঞান দ্বারাই করা যায়। যার যেমন জ্ঞান হয়ে থাকে তার তেমন বুদ্ধি ও মর্যদা হয়ে থাকে। তাই তো আল্লহ তায়ালা কুরআন মাজিদের সূরা জুমার ৯ নং আয়াতে বলছেন:

 قل هل يستوى الذين يعلمون والذين لا يعلمون انما يتذكر اولو الالباب

অর্থাৎ, “হে নাবী আপনি বলেদিন, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান! বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহন করে।”

অনত্রে তিনি আবারও ঘোষনা দিচ্ছেন যে:

 أفمن يعلم أنما أنزل إليك من ربك الحق كمن هو اعمى انما يتذكر اولوا الالباب 

অর্থাৎ, “তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে, সে আর অন্ধ (অজ্ঞ) কি সমান? উপদেশ গ্রহন করে শুধু বিবেক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই”। অন্য একটি আয়াতে আরও বলা হচ্ছে যে:

 إنما يخشى الله من عباده العلمؤا 

অর্থ- “আল্লহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে”।

সুতরাং, উপরুক্ত আয়াতগুলি হইতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, জ্ঞানীদের ও অজ্ঞদের মাঝে রয়েছে অনেক তফাৎ এবং আল্লহকে কেবল জ্ঞানীরাই সত্য ও এক বলে স্বীকার করে, সকল উপেদেশাবলী অবলম্বন করে, তার ইবাদত করে ও তাকে ভয় করে।

মোদ্দা কথায় বলতে হলে, উপরুক্ত সকল বিষয়বস্তুগুলি থেকে একটিই কথা স্পষ্ট হচ্ছে যে, সদাসর্বদা জ্ঞান অর্জন প্রত্যেকের জন্য প্রতিক্ষেত্রে অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যা আদেশ-নিষেধ করেছেন তা জ্ঞান অর্জন ছাড়া কখনোই সম্পূর্ণরূপে জানা ও পালন করা সম্ভব নয়। উদাহরনস্বরুপ, কোন গাছকে ফলদায়ক করতে হলে যেমন সঠিকপদ্ধতিগুলি যত্নসহকারে অবলম্বন করতে হয় তবেই তার সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল ধরে নতুবা যেমন গাছটির যত্ন নেওয়া হবে তদরূপ তার ফল হবে, ঠিক তেমনি ইবাদত হলো জ্ঞানের এমন এক ফলপ্রসূ যা খুব মিষ্ট ও সুস্বাদু হয়ে থাকে কিন্তু জ্ঞান ছাড়া ইবাদত করার ফল ধরলেও হয়তো বা সেটি অপুষ্টিকর হতে পারে। আর এটি কখোনোই আমরা পছন্দ করিনা। অতএব ইবাদত যদি ফলপ্রসূ করতে হয় তবে অবশ্যই বিদ্যা অর্জন করতে হবে। তবে মনে রাখা একান্ত প্রয়োজন,

‏‏علم ايک موتي ہے شبنم بھی ہے ستارا بھی ہے 

اگر غلط ہاتوں میں پر جاۓ تو انگارا بھی ہے 

অর্থ- “ইলম একটি মোতি, শিশিরও আবার নক্ষত্রও, কিন্তু যদি ভুল হাতে পড়ে যায় তবে আগুনের উলকাও”। যেহেতু এই জ্ঞান দ্বারাই কোনো ব্যক্তি সঠিক ও সৎ পথে তার জীবন অতিবাহিত করে পরকালে সফলতা অর্জন করবে আবার কেউ এই জ্ঞান দ্বারাই অসৎ ও বেআইনি পথ অবলম্বন করে থাকলে তা তার জন্যই ক্ষতিকারক হয়ে হয়ে উঠবে ঠিক যেমনটা শয়তানদের সর্দার ইবলিশের সহিত ঘটেছিল। যে ছিল একজন মহাবিজ্ঞ জিন ও জ্ঞানের দিকে ফেরেস্তাদের চেয়েও উর্দ্ধে অথচ সে তার অহংকারের ফলে শয়তানে পরিণত হয় এবং জাহান্নামের জলন্ত অগ্মিতে নিজস্ব জায়গা করে নেয়। তাই বলা বাহুল্য, সকলেই প্রতিনিয়ত যেন সঠিক, ফলদায়ক ও শিক্ষামূলক জ্ঞান অর্জন করতে যথাসাধ্য নিজস্ব প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter