মুসলমানরা কেন কুরবানী দেয়?
ভূমিকা:-
যুল হিজ্জার ১০তম দিনে, সারা বিশ্বে মুসলমানরা কুরবানীর কাজটি সম্পাদন করে। যেখানে তারা একটি পশু শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশে যবাই করে এবং ঈদুল আযহার বিস্ময়কর উৎসব উদযাপন করে। এবং তার সাথে সাথে হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম ও ইসমাইল আলাইহি সালামের ওই ভক্তি ও বিশ্বাসকে পুনরায় জীবিত করে। প্রত্যেক মুসলমান যার বয়স হয়েছে এবং তার সাথে সাথে তার যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে তাকে কুরবানী দেওয়া ওয়াজীব। মহান আল্লাহ তাআলা জুগে জুগে নবী-রাসূল ও তাঁর মাহবুব বান্দাকে পরিক্ষা করে থাকেন। যা দেখতে শুনতে বিপদজনক মনে হলেও মূলতঃ এগুলো তাদেরকে মুসিবতে ফেলার জন্য নয়। তাইতো নবী-রাসূল এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ দুনিয়ার সকল বাঁধা বিপত্তিকে ডিঙ্গিয়ে আল্লাহর সেই কঠিন হুকুম পালন করতে একটুও বিলম্ব করেননি। আর তাঁদের এই ঘটনাগুলো পরবর্তী উম্মতের জীবনের পাথেয় হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকে। ঐ রূপ ইতিহাস সমূহের মধ্যে কুরবানীর ইতিহাস অন্যতম।
কুরবানীর ইতিহাসঃ-
কুরবানী হল একটি অত্যন্ত ধর্মীয় উৎসব। কুরবানীর কাহিনী শুরু হয় হজরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম থেকে। কুরবানী ঈদের কাহিনীতে বর্ণনা আছে যে, হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম একবার নয়, বরং বারবার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকে তার পুত্র ইসমাইল আলাইহি সালামকে কুরবানী করার জন্য হুকুম দিলেন। এটা ছিল আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আত্মসমর্পণের পরিক্ষা। তিনি বিনা দ্বিধায় আল্লাহর আদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং নিজেকে তাঁর পুত্রকে কুরবানীর জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।
আল্লাহ পাক হজরত ইব্রাহিম আলাইহি সালামকে তাঁর কলিজার টুকরা আদ্রের দুলাল প্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহি সালামকে আল্লাহর নামে কুরবানীকরার হুকুম করলেন, যা দেখতে শুনতে মানবতার বিরোধী মনে হলেও আসলে তা নয়। কিন্তু হজরত ইসমাইল আলাইহি সালাম এসব কিছু চিন্তা না করে আল্লাহর হুকুম পালনে রত হলেন। তিনি আল্লাহ তাআলার এই কঠিন হুকুমটি পালনে স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে ধারালো তরবারির নিচে শায়িত করে দিলেন। আল্লাহ পাক এতে রাজি হয়ে নিজ কুদরতে হজরত ইসমাইল আলাইহি সালামের স্থলে বেহেস্ত থেকে একটি দুম্বা শোয়ায়ে দেন। হজরত ইব্রাহিম আলাইহি সালামের ছুরিতে সেই দুম্বাটি যবাই হয়ে গেল। আত হজতর ইসমাইল আলাইহি সালাম অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গেলেন।
আজ হজরত ইব্রাহিম আলাইহি সাল্লামের সেই ঘটনাকে ইবাদত হিসেবে উম্মতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পালন করতে হয় যা কুরবানীনামে প্রসিদ্ধ। তাই আজও যারা পূর্ণ ঈমান ও আল্লাহর ভালবাসায় নিখুঁত একটি পশু কুরবানীকরবে, তারাও ওই ইব্রাহিম আলাইহি সাল্লামের মতো কলিজার টুকরা টগবগে এক বালক সন্তানকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার সওয়াব পাবে।
কুরবানীর ফযিলত :-
হাদিস শরিফে কুরবানীর ফযিলত সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছে। যেমন, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, একদা সাহাবায়ে কেরাম হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরবানীর প্রতিদান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কুরবানীর প্রতিদান হচ্ছে কুরবানীর পশুর গায়ের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেড়ার প্রতিদানও কি অনুরূপ? উত্তরে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, ভেড়ারও প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকী দেওয়া হবে। (মিশকাত শরীফ- ১২৯)
আম্মাজান হজরত আয়েশা রাজিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কুরবানীর দিন কুরবানীর চেয়ে বনী আদমের আর কোনো আমল আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয় নয়। আর কিয়ামতের দিন কুরবানিকৃত পশু আল্লাহর হুকুমে তার শিং, চুল ও পায়ের খুড় সহ (ওজন করার জন্য) উপস্থিত হবে। আর কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পরার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে পোঁছে যাবে। (তিরমিজি মিশকাত শরীফ- ১২৮)
যখন কো ন ব্য ক্তি একটি কুরবা নী পশু জবা ই করে তখন রক্তে র প্রথম ফোঁ টা পড়ে তা কে ক্ষমা করে দে ওয়া হয় এবং অবশ্য ই সে ই পশুকে কি য়া মতে র দি ন তা র রক্ত, গো শতসহ সা মনে আনা হবে এবং ওজন সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হবে । তা র নি জে র ওজনে র চে য়ে বে শি , এবং তা রপরে এটি আমলে র মা পকা ঠি তে স্থা পন করা হবে । (কা নযুল উম্মা ল)
যখন কোনো ব্যক্তি
কুরবানী না করার পরিণতি :-
কুরবানী করা যেমন অফুরন্ত সওয়াবের কাজ, তেমনি কুরবানিকে অবজ্ঞা করা এবং ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও কুরবানী না করা নিন্দনীয় অপরাধ ও গুনাহের কাজ। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কুরবানী করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করেনি সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে”। (আত-তারগিব – ২/১০০ পৃষ্ঠা)
কুরবানী না করার পরিণতি দেখতে হলে এই হাদিসটিই যথেষ্ট। কারণ, মুসলমানদের এত সুন্দর আনন্দ উৎসবমাখা সমাবেশে একমাত্র কাফির মুশরিকদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ছিল। আর একজন মুসলমানকে এই সমাবেশে আসতে নিশেধ করা মানে তাকে ওদের দলভুক্ত করে দেওয়া।
উপসংহার:-
কুরবানীর কাহিনীটি নিঃশর্ত ভালোবাসা এবং অঙ্গীকারের একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এটি সর্বশক্তিমানের প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তিকে জাগিয়ে তোলে। এটি হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহি সালামের স্রষ্টার প্রতি অতুলনীয় আনুগত্য এবং উৎসাহের প্রতিনিধিত্ব করে। এই উৎসবে রয়েছে তাকওয়া, দানশীলতার পাশাপাশি সাম্যের সুস্পষ্ট বার্তা। তাছাড়াও যাদের ওপরে কুরবানী ওয়াজিব তারা যদি কুরবানী না করে তাহলে তারা বড়ই গুনাহগার হবে। আর এই কুরবানীতে পশু যবাই করাতে অনেক উপকারও হয়ে থাকে। যেমন আমাদের দেশে এখনও এমন মুসলমান বসবাস করে যাদের সামর্থ হয়না যে তারা মন চাইলেই মাংশ ক্রয় করে খেতে পারে। বিশেষ করে তারা সারা বছরে এই দিনটার অপেক্ষা করে থাকে। মাংশ পেয়েই তারা তাদের আশা পূর্ণ করতে পারে। এই ধরণের উৎসবে আদান প্রদানের দ্বারা এক মুসলমান অপর মুসলমানের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই সারা বিশ্বে মুসলমানদের নিকট এই দিনটাকে খুব যত্ন সহকারে উদযাপিত করে থাকে।