বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় একজন মহিলা নির্মাণ করেন

নারীজাতির অস্তিত্বের কারনেই মহাবিশের রং আছে। কিছু পুরুষের এমন দুশ্চিন্তা আছে যে নারীদের অগ্রগতির তাদের পরাজয় আছে। কিন্তু ইতিহাস আমাদের বলে নারীরা এগিয়ে গেলে মানবতা এগিয়ে যায়। আপনি কি জানেন বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি একজন মুসলিম মহিলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? আল-কারাউইয়্যিন বিশ্ববিদ্যালয় যথা বিশ্বের প্রহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হলের ফাতিমা আল-ফিহরি। তিনি অবশ্যই নিজেও উচ্চশিক্ষা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। 

সংক্ষিপ্ত জীবনী


ফাতিমা আল-ফিহরি ছিলেন নবম শতাব্দীর একজন মুসলিম ছিলেন একজন বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী নারী। তিনি বিশ্বের প্রথম উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্র যথা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেন। ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোর ফৌজ শহরে কারাউইয়্যিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব তাঁকে দেওয়া হয় (যা বর্তমান বিশ্ব বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ইত্যাদির অনেক পূর্বে)। মহৎ এই নারী আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মদ আল-ফিহরি বাল্যকাল থেকে পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন। আর্থিক অভাবের কারণে তাদের কাইরুয়ান থেকে মরক্কোর ফেজ শহরে চলে আসতে হয়। সেখানে মুহাম্মাদ আল-ফিহরি প্রচন্ড পরিশ্রম করে এক বড়ো ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। সেখানে তিনি সন্তান-সন্ততিদের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রাপ্যবয়স্ক হওয়ার পর ফেজেই ফাতিমার এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর ফাতিমার পরিবারে দুর্যোগ নেমে আসে। অল্প সময়ের মধ্যে কোনো এক দুর্যোগে তাঁর পিতা, ভাই এবং স্বামী মৃত্যু বরণ করে। জীবিত থাকেন শুধু দুই বোন ফাতিম ও মারইয়াম। পিতার সম্পত্তি তারা দুই বোনে পান। সেগুলিকে তারা বিলাসিতায় খরচ না করে, মানবকল্যানে ও ধর্মের জন্য ব‍্যায় করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা প্রথমে ফেজে দুটি মাসজিদ তৈরি করেন। মারইয়াম তৈরি করে অন্দালুস মাসজিদ ও ফাতিমা তৈরি করেন কারাউইন মসজিদ। তিনি তাঁর জন্মন্মভূমির নাম অনুসারে মসজিদের নাম রাখে কারাউইন মসজিদ। মসজিদ নির্মানের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেন। ফাতিমা আল-ফিহরি ৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। 

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় - আল-কারাউইয়্যিন বিশ্ববিদ্যালয়


বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় 'আল-কারাউইয়্যিন' ফেজের পুরানো মাদিনায় অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি জিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্বের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত।  বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাথমিক ধর্মীয় বিজ্ঞানের পাশাপাশি ব্যাকরণ, ভূগোল, ইতিহাস, গনিত, চিকিৎসা, রসায়ন এবং জ্যোতিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর উন্নত মানের শিক্ষা প্রদান করে। 

ধর্মীয় শিক্ষা পেরিয়ে এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ একাডেমিক খ্যাতি অর্জন করেছে। বলা হয় যে অভারগেনের সারবার্ট (৯৩০-১০০৩) অর্থাৎ পোপ দ্বীতিয় সিলভেস্টার, যিনি ইউরোপের আরবি সংখ্যা প্রবর্তনের জন্য পরিচিত একবার আল-কারাউইয়্যিনের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মধ্যে জ্ঞানের সেতু হিসাবে কাজ করে আসছে।

স্পেন থেকে যখন মুসলমানদের বিতাড়িত করা হয়, তখন অনেকেই ফেজ এবং মেরাউইয়িনে আসে। তারা তাদের সাথে ইউরোপীয় এবং মুরিশ শিল্প ও বিজ্ঞানের শিক্ষা নিয়ে প্রবেশ করে। প্রতিষ্ঠানটিকে অনকেই পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসলামী বিশ্ব এবং ইউরোগের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক সম্পদের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

একটি আবেদন


নারীদের পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। তারা চাইলে একটা সুন্দর সমাজ গড়তে পারে এবং চাইলে একটা সুন্দর সমাজকে ভাঙতেও পারে। তাই একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য নারীদের শিক্ষা অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন 'ইকরা' অর্থাৎ 'পড়ো'। তিনি বলেননি যে শুধু পুরুষদেরকে পড়তে হবে, নারীদেরকে নয়। নারীদেরকেও শিক্ষা অর্জন করতে হবে। তারা অনেক বাধা পেরিয়ে জীবনে এগিয়ে যায়। তাই তাদের জীবনে বাঁধা সৃষ্টি না করে তাদেরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা উচিৎ। সমাজ-সভ্যতার বিকাশে তাদেরও অবদান সমান।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter