বিশ্ব পরিবেশ দিবসের চিন্তাধারা
মহাবিশ্বের পালনকর্তা এই পৃথিবীকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। পৃথিবীর প্রতিটি অংশে জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের বর্ষণ, গাছপালা, মাটি এবং প্রতিটি অঞ্চলের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া জীবজগত, এই মহাবিশ্ব বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। অপ্রয়োজনীয় মানুষের উপস্থিতি প্রকৃতির ভারসাম্য কে বিঘ্নিত করে এবং প্রাকৃতিক কে দুর্যোগের দিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন রোগের উৎপন্নও মানুষের কর্মের ফল, যারা প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে এসেছে। আল্লাহ্ তায়ালা কোরান শরীফে ইরশাদ করেছেন : وَلَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِہَا وَادۡعُوۡہُ خَوۡفًا وَّطَمَعًا اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
"এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর তাতে অশান্তি বিস্তার করো না, এবং (অন্তরে তাঁর) ভয় ও আশা রেখে তাঁর ইবাদত কর।, নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।" (কোরআন: আরাফ 56) এবং এই আয়াতের দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দাঙ্গা ফাসাদ না করে এবাদতের দিকে অগ্রসর করেছেন كُلُوا وَاشْرَبُوا مِن رِّزْقِ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ "আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও, পান কর আর দুনিয়ার বুকে দাংগা-হাংগামা করে বেড়িও না।" (আল-বাকারা 60)
বিশ্ব জুড়ে যত রকমের প্রাণী রয়েছে সকল প্রাণী প্রয়জন মূলক আর সকলকেই নিয়ে বসবাস করতে নির্দেশ দিয়েছেন কেননা প্রত্যেকটা আপন কর্ম রয়েছে। আর নবী সাঃ এর উপর সাহাবীদের অনেক শিক্ষা দিয়েছেন। নবীজীর শিক্ষা হল জীবন্ত প্রাণীদের সম্মান করা এবং তাদের সর্বদা সঠিক ভাবে লালন পালন করা। কেননা নবী (সাঃ) হজরত আবু হুরাইরা নামকরণ করেছিলেন কেননা তিনি বিড়ালের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করতেন এবং বলেছিলেন যে বিড়াল হল তোমার সাথে বসবাসকারী প্রাণী, আর কুকুরকে হত্যা করবেন না কারণ ঈশ্বর এটিকে মানুষের মতো একটি সম্প্রদায় হিসাবে গণ্য করেছেন।
মহানবী (সাঃ) এমন এক ব্যক্তির গল্পও বর্ণনা করেছেন যে বেহেশতে প্রবেশ করেছিল কারণ সে একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়েছিলেন এবং এমন একজন ব্যক্তি যে জাহান্নামের উত্তরাধিকারী হয়েছিল কারণ সে একটি বিড়ালকে খাবার না দিয়ে বেঁধে রেখে হত্যা করেছিল। নবী (সাঃ) বৃক্ষ রোপন করতেও বহু হাদিসে ইরশাদ করেন কেননা এটা হচ্ছে এমন প্রয়জনীয় যে তার কারণে মানুষ অক্সিজেন নিতে সক্ষম হয়। এক হাদিসে নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, "
عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن قامت الساعة وبيد أحدكم فسيلة، فإن استطاع أن لا يقوم حتى يغرسها فليفعل
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত ; আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন : কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় যদি তোমাদের কারো হাতে কোন গাছ থাকে আর সে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে গাছটি লরোপন করতে সক্ষম হয় তবে সে যেন রোপন করেই দেয় । (মুসনাদে আহমদ)
এই হাদিসে হতে যেকোনো সুযোগে চারা রোপণ করার অনুপ্রেরণা প্রদান করেন। তাছাড়া বৃক্ষ বিশ্ব ধ্বংসের গতি কমাতে পারে বলে এ হাদীসে ইঙ্গিত রয়েছে। আল্লাহ যেন আমাদের বেশি বেশি বৃক্ষ রোপন করার তৌফিক দান করুক আমিন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ইতিহাস
জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলি ১৯৭২ সালে স্টকহোম কনফারেন্স অন হিউম্যান এনভায়রনমেন্টের সময় বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতিষ্ঠা করে, যা বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত কূটনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ১৯৭৪ সালে “Only One Earth” থিমের অধীনে অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল, পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য "সাস্টেনেবল ডেভলপমেন্ট" এবং সংরক্ষণ প্রচেষ্টার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে সুস্থ পরিবেশে সকল ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই ঐতিহাসিক সম্মেলন প্রাকৃতিক বিশ্বকে রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচেষ্টার পথ পদর্শন করেছে, যার ফলে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উপরন্তু, এটি ৫ ই জুনকে পরিবেশ সচেতনতার সার্বজনীন দিবস হিসাবে সরকারী ঘোষণা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, UNEP পৃথিবীর সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে অসংখ্য বৈশ্বিক উদ্যোগে নিজেকে উৎসর্গ করেছে।