আমরা কি আল্লাহর রহমত থেকে বিরত হয়ে গেছি?
ইসলাম আমাদের শান্তির ধর্ম। কিন্তু বর্তমান যুগের বেশ কয়েক
মুসলমান ধর্ম থেকে এত দূরে চলে গেছে যে দেখে মুসলিম পরিচয় পাওয়া
দুষ্কর। অনেক গুনাহ করা সত্ত্বেও মানুষ তবুও আল্লাহর কাছে এক
বারও তওবা করেন না। হে আল্লাহ আমি গুনাহ করেছি আমাকে ক্ষমা
করে দাও।
তওবা কবুলের জন্য আল্লাহ তায়ালা সবসময় নিজের হাত বিছিয়ে
রেখেছেন। যখনই কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে তওবা করে আল্লাহ তার
তওবা কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে অনেক জায়গাই বলেছেন যে
তোমরা তওবা করো, নিশ্চয় তওবা করে সফল হয়ে যাবে। আর হুজুর
(সালাল্লাহু আলায়হি অসাল্লাম)-এর কত হাদিসে তওবার ব্যাপারে বর্ণনা
শুনে থাকি।
আবু মুসা আল-আশয়ারী রাদিয়াআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত যে, হুজুর
(সালাল্লাহ আলায়হি অসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা
রাতের বেলায় নিজের হাতকে বিছিয়ে দেন দিনের গুনহকারীদের তওবা
কবুল করার জন্যে। এবং দিনের বেলায় নিজের হাত বিছিয়ে দেন রাতের
গুনহকারীদের তওবা কবুল করার জন্যে। যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য পশ্চিম
দিক থেকে না উঠবে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওবা কবুল করার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তবুও আমরা দিনে এক বারও আল্লাহ
তায়ালার কাছে তওবা করিনা। আমরা একবারও চিন্তা করে দেখিনা যে
আমরা কথা বলতে ও কাজ কর্ম করতে গিয়ে কত গুনাহ করে ফেলি।
আর আল্লাহ তায়ালা চান যে তাঁর বান্দা তাঁর দরবারে এসে তওবা করুক।
আল্লাহ তাআলা গুনাহগার ব্যাক্তিদের ক্ষমা করে দেন।
দুঃখের বিষয় এখন কার মানুষেরা দুনীয়ার লালসা o মায়ায় ডুবে রয়েছে।
বিভিন্ন কাজ কর্মতে মগ্ম হয়ে ব্যস্ত। তাহলে তওবা তো দূরের কথা
আমরা তো এক বারো ভাবিনা। আমরা গুনাহ করছি না সৎ কাজ করছি।
আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দার তওবা তখনই সব থেকে বেশি কবুল
করেন, যখন কোনো বান্দা গভীর রাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে এসে
দুই রাকাত নামাজ পড়ে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে দুই হাত পেতে কেঁদে
কেঁদে তওবা করে।
তওবার অর্থ হল ফিরে আসা। তওবার পর আমাদের এরকম মনোবল
তৈরি করা উচিত যে এমন গুনাহ আর কখনও করবো না। অবশ্যই
আমাদেরকে সেই গুনাহটির দিকে না ফিরে যাওয়া উচিত অতএব নিজেকে
বঞ্চিত রাখার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও একটি হাদিসে রসূল সল্ললাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
তোমাদের আগে একটি মানুষ ছিল সে নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা
করেছিল। সে তখন সব থেকে বেশি জানে এরকম মানুষের ব্যপারে তার
এলাকাই খোজ করলো। তখন সেই ব্যাক্তি এক জন রাহিবের খবর পাই।
তখনই সে রাহিবের কাছে এসে বলল: আমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা
করেছি আমার কি তওবা আছে? তখন সেই রাহিব বলল: না। তোমার জন
কোনো তওবা নেই। কেননা তুমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছ।
তখন সেই বাক্তি রাহিবকেও হত্যা করে দিল। তখন তার একশজনকে
হত্যা করা পূরণ হয়ে যায়। তার পরে আবার সে তখন সব থেকে বেশি জানে
এরকম মানুষের ব্যাপারে তার এলাকায় খোজ করলো। তখন সে ব্যাক্তি
এক জন আলিমের খবর পাই। তার পরে সেই ব্যাক্তি আলিমকে বলল:
আমি একশো জন মানুষকে হত্যা করেছি। আমার জন্য কি ক্ষমা আছে।
তখন সেই আলিম বললো:… তুমি তোমার গ্রাম ছেড়ে এমন একটা জায়গায়
চলে যাও যেখানে শুধু আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করা হয়। তার পরে তুমি
সেই জায়গার লোকেদের সঙ্গে ইবদাত করতে শুরু করো। আর তুমি সেখান
থেকে কখনও তোমার গ্রামের দিকে ফিরে আসবে না। তার পরে ওই
লোকটি তার গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে। রাস্তা চলতে চলতে ব্যাক্তি
যখন অর্ধেক রাস্তা পৌঁছাল, তখনই তার মৃত্যু আসে। তখন দুজন
ফেরেস্তা আসেন। একজন রহমতের ফেরেস্তা এবং অন্যজন আযাবের
ফেরেস্তা। তখন রহমতের ফেরেস্তা বলেন লোকটি তওবা করার জন্য
যাচ্ছিল, কিন্তু যেতে যেতে মারা গেছে। তার জ্যন আমি এই লোকটিকে
জান্নাতে নিয়ে যেতে চাই। তার পরে আযাবের ফেরেস্তা বলল: এই লোকটি
তওবা করার জন্য যাচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু এখন পর্যন্ত তওবা করেনি।
তওবা করার আগেই মারা গেছে। তার জন্য আমি এই লোকটিকে
জাহান্নামে নিয়ে যেতে চাই। তখন তাদের দুজনের আলোচনার মধ্যে
একজন ফেরেস্তা এসে বলেন: তোমরা দুই জন এই জায়গাটিকে মাপো। আর
যদি তওবা করার দিকটা কাছে হয়। তাহলে রহমতের ফেরেস্তা এই
মানুষটিকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যদি বাড়ির দিকটা কাছে হয় তাহলে
আযাবের ফেরেস্তা এই মানুষটিকে নিয়ে যাবে। তখন তারা দুই জন
রাস্তাটাকে মাপলো। তার পরে দেখা গেল তওবা করার দিকটা কাছে।
রহমতের ফেরেস্তা সেই লোকটিকে জান্নাতে নিয়ে চলে গেল।
ওই ব্যাক্তিটি গুনাহ করেছিল। তাই তওবা করার জন্য যাচ্ছিল। কিন্তু
অর্ধেক রাস্তা যেতে যেতে মারা গেল। তবুও আল্লাহ তায়ালা ওই
ব্যাক্তির তওবা কবুল করে নিলেন। আর আমরা যদি আল্লাহ তায়ালার
কাছে তওবা করি তাহলে নিশ্চয় আমাদের তওবা কবুল করে নিবেন। তো
আমাদের উচিৎ যে আমরা যদি কোন গুনাহ করে থাকি। তাহলে আল্লাহ
তায়ালার কাছে তওবা বেশি করবো । তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা
আমাদের তওবা কবুল করে নিবেনে। আল্লাহ তায়ালা রহিম ও রহমান তিনি
কাউকে ফিরয়ে দেন না।