বজ্রপাতের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে নিহতেরজ ঘটনা ঘটছে । দিনদিন বেড়েই চলেছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা । বজ্রপাতের বৃধির কারন কী, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারছেন না আবহায়াবিদরা । তাদের মতে, সাধারন উত্তপক্ত ও আর্দ্রা আবহায়ার কারনে বজ্রপাতের বেশি হয়। উত্তপক্ত বায়ু যখন দ্রুতগতিতে ঠান্ডা হয়, তখন বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।
এই বজ্রপাতের ভেতরে বাতাসের দ্রুতগতি আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বাতাসের জলীয়বাষ্প অকই সময়ে বৃষ্টিকনা, শিশিরবিন্দু ও তুষার কনায় পরিনত হয়। বৃষ্টিকনা ও তুষার কনার পরস্পরিক সংঘর্ষের ফলে তুষারের ইলেকট্রন চার্জ ধাক্কা খায়। ফলে স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্টি হয়। এই চার্জ সঞ্চিত হয়ে তীব্র শব্দের বজ্রপাতের সৃষ্টী করে।যখন বইদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ উচ্চ তাপমাত্রা সৃষ্টি করে, তখনই তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়। বাতাষের মধ্যে দিয়ে দ্রুত প্রবাহিত বজ্রবিদ্যিত প্রায় ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। ফলে বায়ুর দ্রুত প্রসারন হয় ও তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়।
সংখেপে বলতে গেলে বাতাসে উধর্বমুখী প্রবাহ যতই দ্রুততর হয়, বজ্রপাত ততোই বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে । বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে বজ্রের সৃষ্টি হয়, তখন মেঘের ভিতরে থাকা আক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাসের সম্প্রসারন ঘটে। এতে প্রচুর ঝালকানি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে বজ্র। তখন এর সামনে মানুষ বা পশুপাখি যা-ই পড়ে, তার নির্ঘাত মৃত্য হয়।
এটা হচ্ছে বজ্রপাতের বাহ্যিক কারন। তবে পবিত্র কুরাআনুল কারিম একটি সুরা আছে যার নাম হচ্ছে “রদ”, অর্থাৎ “বজ্র” তাহলে কুরআন শরিফে থেকে বুঝতে পারা যায় যে বজ্রপাত হচ্ছে শক্তিশালি একটী আল্লাহর নির্দেশ এর মাধ্যমে তিনি পৃথিবীবাসিদের কে ধ্মক দিয়ে থাকেন। সতর্ক করেন মানবজাতিকে যাতে তারা আল্লাহকে ভয় করে দুনিয়ার সব আশলিল কাজ কর্ম থকে দূরে থাকে। আল্লাহতায়াল কোরআন শরিফে ইরশাদ করেন:
وَيُسَبِّحُ ٱلرَّعْدُ بِحَمْدِهِۦ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِۦ وَيُرْسِلُ ٱلصَّوَٰعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَآءُ وَهُمْ يُجَـٰدِلُونَ فِى ٱللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ ٱلْمِحَالِ
এর অর্থ হল- বজ্র তাঁরই (আল্লাহর) তাসবিহ ও হামদ জ্ঞ্যপন করে এবং তার ভয়ে ফেরাশতাগনও (তাসবিহরত আছে) । তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান তার পর যাআর উপর ইচ্ছা তাকে বিপদরুপে পতিত করেন। আ তাদের (অবিশ্বাসীদের) অবস্থা এই যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধেই তর্ক –বিতর্ক করছে অথচ তার শক্তি অতি প্রচণ্ড“। (সুরা –রাদ, আয়াত-১৩)।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে পৃথিবীতে যখন মানুষ অতি গুনাহ বা খারাপ কাম করে থাকে তখন আল্লাহতায়ালা এই পৃথিবীর উপরে অনেক ধরনের বালা মুসিবাত বা অসহ্য নিয় আযাব নাযিল করেন যা দেখে বান্দা আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়। পাপের সমুদ্রে আকন্ঠ ডুবে আছি আমরা। আত্যাচার, নির্যাতন, সুদ, ঘুষ, জ্বিনা, বেবিচার, অশ্লীলতা, দুর্নীতিহেন অপরাধ নেই যা আজ স্মাজময় ছরিয়ে পরছে না। আমাদের কৃতকর্মের কারনেই আজ সর্বত্র বিপর্যয়। পবিত্র কুরআন শরিফে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন যে:
ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَهُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ
এর অর্থ হল- “মানুষ নিজ হাতে যা কামায়, তারফলে স্থলে ও জলে অশান্তি ছরিয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদের কর্তৃক কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহন করাবেন সেজন্য হয়ত তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে”। (সুরা রুম, আয়াত-৪১) ।
আমরা যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহতায়ালার ইবাদাতে নিমগ্ন থাকি, তাহলে আল্লাহ আমাদের সবাই কে এই বজ্রপাতের মত বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই ও মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন। এর বেপারে আদিস শরিফে বলা হয়েছে যে, হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল কারিম (সা) ইরশাদ করেন যে: ”তোমাদের প্রবল পরাক্রমশালী প্রভু বলেন, যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতে বৃষ্টি দিতাম, সকালে সূর্য দিতাম এবং কখন তাদেরকে বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না”। (মুসনাদে আহমাদ ৮৭০৮) ।
বজ্রপাতের করণীয়:-
আমাদের উচিত আমরা সব সময় তাওয়বা, ইস্তিগফার করে অয়াক ও পবিত্র জিব –জাপন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। পাশাপাশি ব্জ্রপাত থেকে বাচতে নাবি কারিম (সা) এর পবিত্র সুন্নাহর অনুসারন করা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেক বর্ণিত, রাসুল (সা) যখন বজ্রের আওয়াজ শুনতে তখন তিনি এই দুয়া পড়তেন: “আল্লাহুম্মা লা তাক্তুলনা বিগাযাবিকা ওয়ালা তুহলীকণা বিআযাবিকা ওয়া ফীণা কাবলা যালিকা“। আর্থ ( হে আল্লাহ! আপনি ক্রদের বশবর্তী হয়ে আমাদের মৃত্য দেবেন না। শাস্তি দিয়ে ধংস করবেন না। এই বজ্রপাতের আগেই আমদের কে হেফাযাত করুন) (মুসনাদে আহমদ-৮৭০৮)
বজ্রপাতে বাংলাদেশের প্রায় ৮১ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ কী? কারন হচ্ছে একটাই যে আজ মুসলমানদের মধ্যে একত্রটা নেয় , যার ফলে মানুষ নিযের মা বাবার দেখাসুনা করে না বরং তাদের কে ঘড় থেকে বার করে দেওায়া হচ্ছে । শধু তাই নয় আজ আমরা দেখতে পাব যে মুসলিমদের মধ্যে মিলজুল নেয় তারা ধর্ম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে হানাফি, শাফি, দেওবান্দি, ওয়াহাবি, নানা রকম ভাবে তারা ফিত্না ছড়াচ্ছে যার ফলে মুসলিমদের কে পদদলিত হতে হচ্ছে। আবদুল্লাহ ইবনে জুবা জু ইর (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, বজ্রপাত দুনিয়াবাসীর জন্য চরম হুমকি। (আদাবুলবু মুফমু রাদ, হাদিস: ৭২৩; মুয়া মু ত্তা মালেক, হাদিস: ৩৬৪১; আল-আজকার, হাদিস: ২৩৫)
বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঘরের বাইরে :-
১) ঘরের ভিতরে আশ্রয় নিতে হবে। সম্ভব হলে পরে পাকা বাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিতে হবে।
২) খোলা যায়গায় অথবা মাঠে কাজ করার কালিন যদি আশ্রয় নেওয়ার জায়গা না থাকে।
তাহলে যতটা সম্ভব গুতিশটি মেরে বসে পড়ুন। তবে মাটিতে শুয়ে পরবেন না।
৩) যদি যানবহনের মধ্যে থাকেন তাহলে জানালা বন্ধ রাখতে হবে তা নাহলে খতি হতে পারে আপনার।
৪) খোলা মাঠে কন বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিওয়া যাবে না গাছ থকে কমপক্ষে ১৩ ফুট দূরে থাকতে হবে।
৫) ঝুলে থাকা বিদ্যুতিক তার বা ছিরা বিদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৬) জলাশয় বা ওভারহেড বিদ্যুতিক থেকে দুরিত রাখতে হবে।
বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঘরের ভিতরে :-
১) বিদ্যুতিক যন্ত্রপতির প্লাগগুলি লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
২) ছাদ, জানালা এবং বারান্দা থেকে দূরে থাকুন।
৩) বিদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করা থকে বিরত থাকুন।
৪) বারিতে যথাযথ বজ্র-নিরোধকের ব্যবস্থা করুন।
হাফিয ইবনে কাসির (রহ) তিনার তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইবনে আবি যাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি বজ্রপাতের আওয়ায শুনে এই দুওয়া টি পাট করবে “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি “ তাহলে সেই ব্যক্তি কখন বজ্রপাতের আঘাত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-২৯২১৩) তাই আসুন,আমরা সবাই তাওয়াবা ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ অভিমুখী হয়। পাক-পবিত্র জিবন-যাপন করি। সুন্নাহর পবিত্র পরশে বজ্রপাতের মতো ভয়াবাহু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল প্রকার বিপদ-আপদ থকে যেন হিফাযাত করেন –আমিন!