যুব সম্প্রদায়ে স্বলাত বিমুখতা: কারণ ও সমাধান
মুসলিম জীবনের অপরিহার্য ইবাদত বন্দেগীগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে ইসলাম নিধারিত নিয়ম-নীতির অনুকূলে স্বলাত অর্থাৎ নামাযকে প্রতিষ্ঠিত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কুরআনুল কারীমে স্বলাতকে প্রতিষ্ঠা দানের কথা অন্যান্য ফরয কাজগুলোর তুলনায় বেশী উচ্চারিত হয়েছে। স্বলাতের প্রয়োজন ও গুরুত্ব সম্পর্কে ২১ নং পারার একেবারে শুরুতেই বলা হয়েছে-
وَ أَقِمِ الصَّلوةَ إِنَّ الصَّلوةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَ الْمُنْكَر
".... এবং যথাযথভাবে স্বলাত প্রতিষ্ঠিত করো, নিশ্চয়ই স্বলাত অশ্লীল এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে...." (২৯:৪৫)
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত হলেও জীবন-জীবিকা-মৃত্যু প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সর্বদাতা-সর্বজ্ঞ স্রষ্টার মুখাপেক্ষী। এজন্যই পবিত্র কুরআন শিক্ষা দিয়েছে-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَوةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّبِرِينَ
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ। তোমরা ধৈর্য ও স্বলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন" (২:১৫৩)।
বর্তমান প্রেক্ষাপট: যুব সমাজে স্বলাত বিমুখতা
অত্যন্ত দুঃখ লজ্জার বিষয় যে, মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ নারী-পুরুষ একালে নিয়মিত এবং যথাযথভাবে প্রত্যহ স্বলাত আদায় করা হতে দূরে অবস্থান করছে। বিশেষতঃ যুবক-যুবতীরা এক্ষেত্রে সর্বাধিক উদাসীনতা, অজ্ঞতা ও বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শন করে চলেছে। যুব সম্প্রদায়ই হলো সমাজ-সংসারের প্রকৃত প্রাণশক্তি। ইসলাম যুবাবস্থার ইবাদত বন্দেগীকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে অধিকাংশ মুসলিম যুবক-যুবতীর স্বলাতহীনতা পীড়াদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক। 'লা-দ্বীনা লিমান-লা স্বলাতালাহ্'- প্রিয় নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এর এই অবিস্মরণীয় সর্তকবাণীর আলোকে যদি একালের মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের ধর্ম-ধার্মিকতার খোঁজ-খবর নেওয়া হয়, তবে সন্দেহাতীতভাবে একথা প্রতিপন্ন হবে যে, একালের নব্বই পচানব্বই শতাংশ যুবক-যুবতীই দ্বীনে ইসলামের 'স্তম্ভ' স্বলাতকে জলাঞ্জলি দিয়ে বেদ্বীনতার খাতায় নাম লিখিয়ে দিয়েছে।
উপরোক্ত হাদীসটির মমার্থ হলো, যে মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনে স্বলাত নেই, সে প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলামের সুরক্ষিত গন্ডীর মধ্যে নেই। অন্য এক বহু চর্চিত বিশুদ্ধ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) বলেন, "ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশক বস্তুটিই হলো স্বলাত।" সুতরাং সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, কোনো মুসলিমের স্বলাতহীন জীবনকে 'মুসলিম জীবন' বলে ভাবাও যেতে পারে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা একালের মুসলিমরা 'দ্বীনের স্তম্ভ' স্বলাতকে নিতান্তই আমাদের বিকৃত মন-মর্জির বিষয়বস্তু ভেবে নিয়ে কেবল 'নামকা ওয়াস্তে মুসলিমরূপে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। পিতা-মাতা এবং অধিকাংশ অভিভাবকদের মতিগতি যখন এমনই বিকৃত-বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে, - তখন সন্তান-সন্ততিদের সার্বিক অবস্থা আরও বিপন্ন-বিধুর হয়ে উঠবে না কেন?
উল্লেখ্য যে, একালে অশিক্ষিত এবং অল্পশিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীরাই স্বলাত-সিয়াম এর ব্যাপারে বেশি উদাসীন ও বেপরোয়া। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অল্পশিক্ষিত মানুষদের মনে-মননে দোলাচল চিত্তবৃত্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া উচ্চ শিক্ষিতদের তুলনায় কম বলেই তারা স্বভাবতই বিশ্বপ্রভুর ওযুদ, রবুবিয়্যাত, রহমত ইত্যাদিতে শাদা মনে বিশ্বাস স্থাপন করতে সমর্থ হয়। পক্ষান্তরে স্কুল-কলেজীয় শিক্ষা দ্বীনি তালীম-তারবীয়ত হতে বিলকুল আযাদ হওয়ায় তথা এ শিক্ষা শুধুমাত্র পার্থিব জীবনকে সুখী-সুন্দর করারই অত্যাকর্ষক রসদে পরিপূর্ণ হওয়ায়, শিক্ষার্থী মনে ঈমান ও তদনুযায়ী আমলের কোনো চেতনাই উদ্রিক্ত করে না। অন্যদিকে তাওহীদ রিসালত ও আখিরাতের প্রয়োজন ও গুরুত্বের বিপরীত শিক্ষিত যুব মনে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া সাজানোর দুর্দম মনোবৃত্তিই চব্বিশ ঘন্টা সক্রিয় থাকার সুযোগ পায়। ফলে শুধুমাত্র এ শিক্ষাতেই শিক্ষিত হয়ে ওঠা যুবক-যুবতীরা অনেকাংশেই উদ্দেশ্যহীন প্রথাগত ভাবে ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে মান্যতা দেওয়ার অন্তঃপ্রেরণা পেয়ে থাকে। স্বলাত আদায়ের ক্ষেত্রে এরা হয়ে থাকে 'সাপ্তাহিক মুসল্লী' - অর্থাৎ কেবল জুম্মা স্বলাত পড়া মুসলিম। প্রশ্ন হচ্ছে,- দ্বীন ইসলামে এই শ্রেণীর মুসলিম হওয়ার কোনো শরিয়ী অধিকার আছে কি? যদি না থাকে এবং ষোলো আনাই সত্য কথা যে, ইসলামে একজন হুঁশ জ্ঞানওয়ালা মুমিন মুসলিমের পক্ষে প্রাত্যহিক পাঞ্জেগানা স্বলাত প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
অতএব ধর্মীয় সেক্ষেত্রে আজ আমাদের অবস্থান কোথায়, -সেকথা আদ্যন্ত ভেবে আমাদের লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়াই উচিত নয় কি?
অভিভাবকদের ভূমিকা ও ব্যর্থতা
আজ আমাদের অধিকাংশ যুবক-যুবতীর স্বলাতহীন হওয়ার, অন্য কথায় 'ধর্মহীন' হওয়ার জন্য আমরা অভিভাবকরাও কম দায়ী-দোষী নই। অপ্রিয় হলেও একথা সত্য যে, একালে বহু নামাযী বাপ-মা এবং দ্বীনদার অভিভাবকদের সন্তানরাও স্বলাত-সাওমের ধার ধারেনা। আম গাছে যে আমড়া ফলছে কেন- সেকথা ভাববারই বিষয়।
তবে একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, বিগত দশ-বিশ বছর হতে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় ছেলে মেয়েদেরকে তাদের জীবনের শুরু হতেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষা দিতে বেদম ইচ্ছুক হয়ে ওঠায় তারা দ্বীনের প্রাথমিক শিক্ষাদীক্ষা হতে মাহরুম হয়ে পড়েছে। কায়েদা-আম্মাপারা- কুরআনের প্রাথমিক অনিবার্য সবক হতে তারা বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে 'গুড মর্নিং-টা টা' ইত্যাদি অত্যাকর্ষক ভাষায় প্রলুব্ধ হয়ে ওঠায় সালাম-কালাম, দুআ-দরুদ তথা স্বলাত-সাওম প্রভৃতি অপরিহার্য শিক্ষা প্রশিক্ষণ হতেও মাহরুম হয়ে পড়ছে।
সমাজ ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব
কথায় বলে, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে! ইসলামও কতকটা একথাই বলে। মায়ের পেট হতে শিশু যে আল্লাহ তাআলার রহমতে ইসলামী ফিতরতেরই ওপর ভূমিষ্ঠ হয় তথা পরবর্তী সময়ে মা-বাপ তথা পরিবেশের অনিবার্য প্রভাবানুযায়ী তার স্বভাব-চরিত্র গড়ে ওঠে, একথা ইসলামেরই কথা। স্কুল-কলেজীয় শিক্ষায় দুনিয়ার সবকিছুই আছে, নেই শুধু দ্বীনি তালীম ও তারবীয়াত। তার ওপর সেখানে রয়েছে ইসলাম নিষিদ্ধ চিত্তাকর্ষক সহশিক্ষা। সুতরাং সেখানে যে মুসলিম ছেলেমেয়েরা কতকটা ইহুদী-নাসারা-মুশরিক ও নাস্তিকদের শিক্ষাদীক্ষা ও চাল-চলনে অনিবার্যভাবেই প্রভাবিত হয়ে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। দ্বীন ইসলামের অত্যাবশ্যক বুনিয়াদী তালীম-তারবীয়াত হতে বঞ্চিত মুসলিম ছেলেমেয়েরা ইসলাম বিরুদ্ধ শিক্ষা ও সহবাসের দরুন দিনানুদিন আরও স্বলাত-সাওম হতে দূরে সরে যাচ্ছে।
করণীয় ও সমাধানমূলক পদক্ষেপ
এই ছোঁয়াচে মনোরোগ হতে আত্মরক্ষান সর্বোত্তম উপায় অবলম্বন হচ্ছে, শিশুকাল ও বাল্যাবস্থাতেই ছেলে মেয়েদেরকে আশানুরূপ ইসলামী তালীম-তারবীয়াত প্রদান করা। 'আমি আমার মতন হবো'- এই কাঙ্খিত আত্মচেতনা ওদের মধ্যে গড়ে তোলার দায়িত্ব হচ্ছে মা-বাবার, অভিভাবকের। এজন্য প্রথমেই ভিন্নভাবে গৃহশিক্ষার সুব্যবস্থা অত্যাবশ্যক। যারা এ সুযোগ লাভে ধন্য হয়, তারা বাস্তবিকই খুশনসীব। কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিকূল পরিবেশেও তারা নিজ স্বাতন্ত্র্যবোধ অক্ষত রেখে সকলের সঙ্গে সমান তালে চলতে বলতে সাহস পায়। খুশীর কথা যে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম পরিচালিত বহু প্রাইভেট স্কুলে দ্বীনি ও দুনিয়াবী উভয় তালীম দেওয়া হচ্ছে। আল্লহামদুলিল্লাহ্। অত্যন্ত শুভ লক্ষণ।
শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মধ্যে ধর্মবোধহীনতা তথা স্বলাত-সাওমহীনতার অন্য এক প্রধান কারণ হলো, উঠতি বয়স হতে কর্মজীবনে প্রবেশ করার সময় পর্যন্ত ইসলামী বই-পুস্তক পত্র-পত্রিকারপঠন-পাঠন হতে বঞ্চিত থাকা। অন্যদিকে নানা প্রকারের 'লাহোয়াল হাদীস' অর্থাৎ ধর্মহীন মনোরঞ্জনাত্মকবিষয়াদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়া।
একালের টি.ভি., ভি.ডি.ও. প্রভৃতি প্রতিমুহূর্তে স্পর্শকাতর মন-মননের অধিকারী যুব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করে তুলছে। যৌন আবেদনমূলক সিনেমা-সংগীত এবং উভয় লিঙ্গের অবাধ মেলামেশায় তারা পলে পলে দুষ্প্রভাবিত হচ্ছে। এমন বিকট অবস্থা হতে আত্মরক্ষার একমাত্র উপায় হলো, প্রয়োজনানুকূল দ্বীনি শিক্ষা দীক্ষা। বাল্যকালে ইসলামী শিক্ষা লাভ করা ছেলেমেয়েরা যদি কলেজীয় জীবন পর্যন্ত দ্বীনি বই-পুস্তক ও ইসলামী পত্র-পত্রিকা পড়ার ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ পায়, তবে ইনশাআল্লাহ্ আশা করা যায় যে, তাদের মধ্যে প্রতিকূল প্রভাব হতে আত্মরক্ষার আশানুরূপ কাঙ্খিত শক্তি-সামর্থ উজ্জীবিত থাকবেই।
আশার আলো: সচেতন যুবসমাজ ও ইসলাহ প্রচেষ্টা
সংখ্যায় অত্যল্প হলেও একালেও এই শ্রেণীর সংগ্রামশীল মুসলিম ছাত্রছাত্রী দেশের প্রায় সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসারে লক্ষ্যগোচর হয়। এদের অটল আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মানবোধ ও অবিচল ধর্মাবোধের প্রশংসা করতেই হয়। এদের হাতে ও থলেতে ধর্মীয় বই-পত্র সবসময় মওজুদ থাকে। মওকা বুঝে অন্যদের মধ্যেও বিতরিত হয়। ইসলাম-নির্দেশিত প্রজ্ঞা-হিকমত তথা শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের ভাব-ভাষায় এরা অমুসলিমদের মধ্যেও দ্বীনি দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দেয়। দুঃখের বিষয় যে, ধর্মকর্মহীন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম যুবকরা এই শ্রেণীর নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল মুসল্লী-মুবাল্লিগদের দেখা সাক্ষাৎ হতে গা ঢাকা দেওয়াকেই শ্রেয় জ্ঞান করে। কেন? তাদের ইসলাম সম্পর্কে ঘোর অজ্ঞতার কারণেই।
আর এই অজ্ঞতা যে তাদের নিজেদের জন্য এবং বৃহত্তর অর্থে গোটা উম্মাতের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক, তাতে সন্দেহ নেই। মিল্লাতের প্রাণশক্তি যুব সম্প্রদায়ই যদি ইসলামী জীবনবোধ এবং স্বলাত-সাওম হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মুশরিকানা আকীদা- তারীকায় ডুবে যায়, তবে সর্বনাশ হতে আর কতো দেরী! আশার কথা যে, গোটা পৃথিবীতেই আল্লাহর অনুগ্রহে আজও উম্মাতে মুসলিমার যুব সম্প্রদায়ের একাংশ অসংখ্য দ্বীনি মাদ্রাসায় ইসলামী তালীম-তারবীয়াত হাসিল করে চলেছে। আমাদের যুবশক্তির একটা বিরাট অংশ আজ বিগড়ে যাওয়া পথে অকাতরে গা ভাসিয়ে দিলেও আল্লাহরই রহমতে অন্য একটা অংশ সঠিক সুন্দর পথের নির্লোভ পথিক হয়ে রয়েছে।
উম্মাতের আমলহীন, গাফেল মানুষবর্গ আজও দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকদেরই সার্বিক সমর্থন ও সাহায্য দানে গর্বানুভব করে। ফলে একালের দুর্দিনেও নিঃশব্দে রাহমান ও রাহীম-আল্লাহর অতুল্য দয়া ও দান দুর্বল উম্মাতের ওপর অহরহ বর্ষিত হয়েই চলেছে। দ্বীনি তালীম ও তারবীয়াতে পরিপুষ্ট আমাদের অগণিত অসংখ্য ছেলে-মেয়েরা আজও এ সংসারে নিঃশব্দে-নির্লোভে ইসলাহ ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দিয়ে চলেছে। দুর্গম ও কান্তার মরুভূমিতে এটা কি কিছু কম আশা-বিশ্বাসের কথা? দুনিয়ার লাভ ও লোভবশতঃ যারা আজ সুপথ হারিয়ে কুপথের পথিক সেজেছে, তাদের পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য ইসলাহ ও তাবীলগপন্থীরাই তো প্রকৃত বন্ধু। আমাদের ছিন্নভিন্ন সমাজের এই ভিন্নমুখী দুটি যুব ধারার মহামিলন একান্তভাবেই কাম্য। কাম্য এই কারণে যে, আমাদের সর্বাধিক প্রিয় প্রার্থনা হলো- رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়কেই কল্যাণময় করো এবং আমাদেরকে তুমি জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করিও" (সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ২০১)।
যারা দুনিয়াবী শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত তারা পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান, টেকনোলজি-ভূগোল-রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিদ্যাবুদ্ধির অধিকারী হলেও দ্বীনের দরকারী, নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য জ্ঞান-বিদ্যা হতে বঞ্চিত। মৃত্যু পরবর্তী শাশ্বত জীবনের খবর সম্পর্কে তারা অনভিজ্ঞ। এক্ষেত্রে দ্বীনি মাদ্রাসায় শিক্ষিতরাই সৌভাগ্যবান।
দ্বীনি ও দুনিয়াবি শিক্ষার সমন্বয়: একটি প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি
এ দুটি পরস্পর ভিন্নমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে সুপরিকল্পিত সংলাপ, বার্তা বিনিময় ও মিলন একান্তভাবেই কাম্য। দ্বীনের প্রকৃত ও বহুমুখী ইসলাহ-তাবলীগের জন্য উভয় শ্রেণীর বিদ্বানদের মধ্যে সংলাপ ও মেলামেশা অত্যন্ত জরুরী। এমন কাঙ্খিত পরিবেশ ও মওকা গড়ে উঠলে আমাদের প্রাত্যহিক উপরোক্ত দুআর অনুকূলে আমরা আমাদের যুবসমাজকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই জীবনের কল্যানার্থে বহু উপেক্ষিত দ্বীনি কাজে নিয়োজিত করতে সমর্থ হবো। লাগামহীন লোভ-লালসার দুনিয়াবী শিক্ষাকে সংযত, সংহত ও সদুদ্দেশ্যমন্ডিত করার একমাত্র নির্ভরশীল উপায়-অবলম্বন হলো, তাতে দ্বীনি শিক্ষা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনাকুল স্পর্শ সাধন। উভয় শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষদের বিশেষতঃ যুব সম্প্রদায়ের সুপরিকল্পিত দেখা সাক্ষাতে, বার্তা বিনিময়ে ও আলাপ-আলোচনায় এই সুফল ফলার আশা করা অসম্ভব কিছু নয়। এ ব্যাপারে দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহের এবং দ্বীনি সংগঠনগুলোর অগ্রগামী ভূমিকা একান্তভাবেই কাম্য।
উপসংহার: আত্মজিজ্ঞাসা ও ফিরতে শেখা
দ্বীনদারীতে উদাসীন ও অন্যমনস্ক যুবক-যুবতীদের আন্তরিক ভাবে ভেবে দেখা কর্তব্য যে, তাদের ধর্ম জ্ঞানহীনতা ওস্বলাত-সাওমহীনতার জন্য তারা নিজেরাও নিজেরই কাছে কম দোয়ী-দোষী নয়। সাবালকত্ব ও উচ্চশিক্ষা প্রাপ্তির পরে মা-বাপ ও পরিবেশেরই ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন অতিবাহিত করা বুদ্ধিমানের ও বিচক্ষণের কাজ কি? ইসলাম একযোগে মানুষের ইহকাল ও পরকালের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করার সুসংবাদ দিয়েছে। ইসলামের এ-একটা অতুলনীয় আসমানী পয়গাম। অতএব কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপনের কিছুই থাকতে পারে না। শুধুমাত্র 'নামকা ওয়াস্তে মুসলিমরূপে বেঁচে থেকে লাভ কি? 'কামকা ওয়াস্তে মুসলিম হওয়ার জন্য প্রথমেই যে জিনিসটি দরকার তা হলো, ২৪ ঘণ্টায় পাঞ্জেগানা - পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত পাঠ। ঠিক যেমন স্কুল কলেজে অ্যাডমিশন নেওয়ার পরে রুটিন মাফিক প্রত্যহ পাঁচ-সাতটি ক্লাসে পাঠাধ্যয়ন। আদর্শ ছাত্রের জন্য নিয়মমাফিক রোজ ক্লাসে যাওয়া ও পড়া যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি পাঞ্জেগানা স্বলাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠাও অপরিহার্য। কেন জরুরী সেকথা ইসলামকে জানতে ও বুঝতে চাইলে ইনশাআল্লাহ্ নিখুঁত নিটোলভাবে উদ্ধার করা যাবেমুল