'হিদায়া' গ্রন্থাকারের দলিলিকরণের পদ্ধতি

বর্তমানে ইসলামিক স্টাডিজ একটি সার্বজনিক রূপ পেয়েছে। প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি একটি গবেষণার বিষয়। নিরপেক্ষভাবে, ইচ্ছুক গবেষকরা ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে সুদূর প্রসারে এগিয়েও যাচ্ছেন। তাই তো অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলি ক্ষুদ্রতর থেকে ক্ষুদ্রতম হয়ে আসছে। গবেষণায় বিষয় যতই সংকীর্ণ হবে বিশ্লেষন ততই উদ্দেশ্যমূলক এবং ফলদায়ক প্রমাণিত হবে। 'হিদায়া গ্রন্থাকার আবুল হাসান আলী বিন আবু বক্কর মারগিনানী (রহ:)- এর দলিলিকরনের পদ্ধতি' এমনই একটি সংকীর্ণ ও পরিবেষ্টিত বিষয়। 

হিদায়া ও গ্রন্থাকার আবুল হাসান আলী বিন আবু বক্কর মারগিনানী (রহ:)

   বইটির নাম আল হিদায়াহ শারহু বিদায়তিল মুবতাদি। এই গ্রন্থটি আধুনিক হানাফী ফিকঃ বিষয়ের একটা বড়ো অংশ। আসলে এটি বিদায়াতুল মুবতাদি বয়ের ব্যাখ্যা। আসল মাতন, দলিল, ফতোয়া এবং পড়ার পাঠ হিসেবে হিদায়ার ব্যাবহার খুবই প্রচলিত। পুরো বইটাই মুখতাসারুল কুদুরির মাতনের শারহা। হিদায়া গ্রন্থাকার আবুল হাসান আলী বিন আবু বক্কর মারগিনানী (রহ:) ছিলেন হিজরী ষষ্ট শতাব্দীর প্রখ্যাত বিভিন্ন জ্ঞানে পারদর্শী ও ধর্মীয় পণ্ডিত।

   হিদায়ার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি ইসলামী শাস্ত্রের সরল থেকে গভীর মাসআলা খুঁটিনাটিভাবে পর্যালোচনা করেছে। আকসার মাসআলায় চার মাযহাবের চার ইমামের বর্ণনাসহ আক্লি ও নক্লি দলিল উপস্থাপন করেছেন।হিদায়া রচায়ক বাকি তৃমাযহাবের দলিলের বিরুদ্ধে ও হানাফি মাযহাবের সাপেক্ষে আরও মজবুত ও প্রমাণিত দলিল পেশ করেছেন। এইরূপ শ্রেষ্ঠ ইমাম আবু হানিফা (রহ:) এবং দ্বীনি মুজতাহিদের দলিলসহ মতামত রেখে হানাফি মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা কি অন্য মাযহাবের কোনও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের লেখক করতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ, মালিকী মাযহাবের একটি শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রীয় গ্রন্থ ইবন রুশদের (রহ:) বিদায়াতুল মুজতাহিদ। এই বইয়েও তিনি বিশেষ আলোচনায় ভিন্ন মাযহাবের মতামত তুলে ধরেছেন, কিন্তু সেই সময় তুলনামূলকভাবে মালিকী মতের দলিল প্রতিষ্ঠায় শক্তি হ্রাস পেয়েছে। অনুরূপ দশা হাম্বলী মাযহাবের প্রতিবম্বী গ্রন্থ ইবন কুদামার (রহ:) আলমুগ্নী বইয়েও দেখতে পাওয়া যায়। অন্য মাযহাবের দলিল এনে আবার দলিলসহ সেই মাযহাবের ঠোস উত্তর দেওয়ার এই বৈশিষ্ঠ হিদায়ার দলিলিকরণেই দেখা যায়।  

      হিদায়া গ্রন্থের সূচনাতেই লেখনীর সরলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। লেখক স্বয়ং বলেন যে তিনি উদ্দেশ্যহীন লেখার বেকারত্ব থেকে দূরে থেকেছেন এবং আল্লাহর করুণায় সতেজ বর্ণনা ও পোক্তা দলিল বইয়ের মধ্যে সঞ্চার করেছেন। 

হিদায়া'র দলিলিকরণের একটি উদাহরণ

   একটি খুব সুন্দর এবং সরল উদাহরণ হল 'কিতাবুত তাহারাত'-এ উযুর ক্ষেত্রে 'নাসিয়াত'-এর পরিমাপ সম্পর্কে আইম্মাদের মতাভেদ। হিদায়া রচায়ক শাফিঈ ও মালিকী মাযহাবের রায় উপস্থাপন করে হানাফি মাযহাবের মত রাখেন। পরিশেষে আবু হানিফারই মত অধিকতর সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হয়।

   মুগায়রা বিন শা'বা (রদ:) বর্ণিত হাদীসের ইঙ্গিতে 'নাসিয়াত' অর্থে মাথার চতুর্থাংশ বোঝায়। অর্থাৎ মাথার চতুর্থাংশ মাসাহ করলে ওযুর ফরয আদায় হয়ে যাবে। কুরআনে বর্ণিত 'মাসাহ'-এর পরিমাপ মুগায়রা (রদ:)-এর হাদীসে পরিষ্কার হয়ে যায়। অনুরূপ শফিয়ীদের কমপক্ষে একটি  চুল ও মালীকিদের পুরো মাথা মাসাহ করার দলিল হানাফী দলিলের কাছে ভেঙে যায়। হিদায়ায় এইরূপ বর্ণনা ভুরিভুরি সংখ্যায় বর্তমান। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter