জিলকাদা মাসের ইসলামী ঘটনা
ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় যে ক্যালেন্ডার ব্যাবহার করা হয়, তার একাদশ মাস হল জিলকাদা। এই মাসে মুসলিমরা পুরোনো যুগে বহু স্মৃতি অর্জন করেছে যা আজ আমরা উপভোগ করছি। এই মাসে ষষ্ঠ হিজরীতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের প্রধান ইসলামী ঘটনা হলো হুদাবিয়া সন্ধি । নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার বহু বছর পর, তিনি এবং তিনার সাহাবারা মদিনায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবারা সবাই মিলে একবদ্ধ হয় যে ষষ্ঠ হিজরীতে ওমরার উদ্যেশ্যে মক্কার দিকে রওনা হবে । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনার সাথে ডেড় হাজার সহযোগীদের সাথে মদিনা থেকে মক্কার দিকে রওনা দিলেন। তিনারা যখন জ্বাল হুলাইফাহ ( মদিনার পাশে একটি জায়গার নাম) পৌঁছলেন, তখন ইসলামের শত্রুরা যাদের বাসস্থান মক্কায় ছিল তারা ভাবলো যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গীদের সাথে নিয়ে এসে আমাদের উপর অত্যাচার বা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্যে অনুরোধ করবে, তাই কাফিরেরা মুসলমানদের পথ রোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোমিনদের মধ্যে উসমান রাঃ কে মক্কার দিকে প্রেরণ করেন, এবং এই বলেন যে "হে মক্কা বাসী আমরা এখানে এসেছি শুধুমাত্র ওমরাহ করার জন্যে, আমরা কাওকে মারতে বা রণক্ষেত্র বানাতে আসিনি বরণ আমরা চাই শুধুমাত্র ওমরাহ করতে তাছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই " । উসমান রাঃ এর কথা শুনে আবু সুফিয়ান ( সেই সময় কাফেরদের নেতা ছিল কিন্তু পরকালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন) বলে "যে উসমান যদি তুমি চাও যে ওমরাহ করবে তাহলে করতে পার আমাদের কোন বাধা নেই" তখন উসমান রাঃ বলেন " না কখনো না আমি আমার নবীর আগে কখনো ওমরাহ করবো না"। যখন নবী সাঃ ওসমান রাঃ কে মক্কাবাসীদের উদ্যেশ্যে প্রেরণ করেন তখন মুসলমানদের মধ্যে এই উক্তির ধ্বনি উঁচু হয় যে " মক্কা বাসীরা উসমান রাঃ কে গণহত্যা করেছে " তখন সব সাহাবায়ে কিরাম নবী করিম সাঃ এর হস্তে সবাই মিলে বাইয়াত করে যে যদি সত্যিই কাফিরেরা উসমান রাঃ কে গণহত্যা করে থাকে তাহলে আমরা সবাই মিলে তাদের উপর আক্রমণ করব । নবী করিম সাঃও এই বাইয়াতে শরিক ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা এরই সম্পর্কে কোরআন কারীমে বয়ান করেছেন " যে যখন তারা সামুরা গাছের নিচে তোমার সাথে বাইয়াত করেছে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর রাজি হয়েছেন" ।
رضي الله عن المؤمنين إذ يباعونك تحت الشجرة
অর্থাৎ: আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়েছেন তাদের উপর যারা আপনার আপনার সাথে গাছের তলায় বাইয়াত করল " । কিন্তু আবার যখন উসমান রাঃ ফিরে আসেন তখন সবাই খুশি হয়। উসমান রাঃ এর সব কথা গুলো শোনার পর সুহেল বিন অমর নামক এক কাফেরকে তাদের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। সে মুসলমানদের কাছে আসে আর বলে যে আমরা সন্ধি করতে চাই। নবী করীম সাঃ এর যুক্তিও সন্ধির দিকে হয়, এবং লেখক আলী রাঃ কে ডাকেন, তিনি লেখা শুরু করেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে। সুহেল চেঁচিয়ে ওঠে বলে যে আমরা জানিনা যে আল্লাহ রহমান ( রহমতওলা) বা রহিম (পরমদয়ালু) বরং তুমি লেখ বিসমিকা আল্লাহুম্মা । আলী রাঃ তার আদেশ মেনে বিসমিকা আল্লাহুম্মা দিয়ে শুরু করেন। তার পর নবী সাঃ বলেন যে হে আলী রাঃ লেখ যে এটি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ( আল্লাহর রাসূল) সন্দ্বি করছেন। তাতেও সুহেল চেঁচিয়ে ওঠে ও বলে আমরা বিশ্বাস করি না যে তুমি আল্লাহর একটি প্রেরিত দূত, সেই রসূলুল্লাহ মিঠিয়ে তুমি লেখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ । আলী রাঃ রাগন্বিত হন ও মিটাতে অস্বীকার করেন। নবী সাঃ বলেন আমাকে সেই জায়গাটা দেখিয়ে দাও, আলী রাঃ তখন তিনাকে জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন ও নবী সাঃ মিটিয়ে দিলেন, ও সুহেলকে বললেন যে আমি আল্লাহর দূত এতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই কিন্তু তোমরা মান্যতা দেওনা। তাদের মধ্যে দুইটি সন্ধি হয় প্রথমত: যদি কোন মুসলমান মক্কার দিকে আগমন হয় তাহলে আর ফিরে আসবেনা। দ্বিতীয়ত: যদি কোন কাফির ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মদিনার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে মুসলিমরা তাকে গ্রহণ করবেনা। এবং তাকে মক্কাবাসীদের হাতে তুলে দেবে। নবী সাঃ এর সাথে আগত সাহাবীরা বিমূর্ষ হয়ে পরে, কিন্তু নবী সাঃ সন্ধি মেনে নেন। তখন নবী সাঃ তাদের অনুরোধ করেন যে তিনাদেরকে ওমরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হক, সুহেল তখন তাকে উত্তর দেয় যে তা এই বছর সম্ভব নয় আগামী বছর ওমরাহ করতে দেওয়া হবে। নবী করীম সাঃ এতেও রাজী হন। সন্দ্বির মধ্যে অনেক বিধির চর্চা হয়, যার মধ্যে একটি হল যে তারা কোন কারণে এখন দশ বছর পর্যন্ত যুদ্ধ করবেনা, সবাই যেন শান্তি অনুভব করতে পারে।এই সন্ধি মুসলমানদের কাছে হুদায়বিয়ার চুক্তি নামে পরিচিত। প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা কি জানেন এর নাম এরকম কেন ? কেননা মুসলমানরা যেথায় নবী সাঃ এর সহীত দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই জায়গার নামই হল হুদাবিয়া। এই সন্ধির কারণেই নবী সাঃ মক্কা বিজয়ের জন্যে সক্ষম হন।
জুলকাদা মাসে সপ্তম হিজরী সনে নবী সাঃ ও তাঁর সাহাবাগণ ওমরাহ
ণ করেন, ও ওমরাহ থেকে ফিরে যাবার পর মায়মানা বিনত হারিসকে বিবাহ করেন।
এই মাসের পনের হিজরী সনে নবী সাঃ এর জীবনের শেষ পর্যায় হজ করার উদ্দেশ্যে রওনা হন ও জিলহজ মাসে সাহাবাগণের সাথে হজ করেন। তারই নাম হুজ্জাতুল বিদা।
এই মাসের প্রথম তারিখ পাঁচ হিজরী সনে নবী সাঃ খাইনব বিনত জাহাসকে বিবাহ করেন।
এই মাসের আট তারিখ পাঁচ হিজরী সনে নবী সাঃ এর লেখক আলী রাঃ নিজের কাফির চাচা যিনি নবী সাঃকে হত্যা করার সবসময় চক্রান্ত করত তাকে হত্যা করেন।