কিয়ামতের ১০টি চিহ্ন
এক দিন কিয়ামত নিশ্চয় আসবে। সেই দিন সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, এই পৃথিবী, আকাশ, পাতাল, সূর্য, চন্দ্র , পাহাড়, পর্বত, ইত্যাদি …। সেই দিন ইসরাফিল (আঃ) আল্লাহর অনুমতিতে সিঙ্গা বাজাবেন আর সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু কিয়ামত ঘটিত হওয়ার আগে কিছু ছোট বড় নিদর্শণ আছে। তার মধ্যে কিয়ামতের বড় ১০ চিহ্ন এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
১) ইমাম মেহদির আগমন
কিয়ামতের আগে ইমাম মেহেদি এই ধরায় আসবেন। তিনি একজন ফাতিমা রাঃ সন্তান থেকে সন্মানিত ব্যক্তি। তিনি জগত কে বিচারে ভরিয়ে দিবেন যেমন অন্ধকার ও অবিচারে ভরা আছে। হুজুর সাঃ হাদীস শারিফের মধ্যে বলেন: "মাহদি হলেন আমার সন্তান থেকে একজন ব্যক্তি, তার রং হল আরাবি রং, তার শরির হল ইসরাইলি শরির, তার ডান পাসের গালে একটি তিল হবে যেটি মতির মতো চমকাবে, এই জগত বিচারে ভরে যাবে যেমন অবিচারে ভরা আছে। তিনার খিলাফতে জগতের বাসিন্দারা এবং আসমানের বাসিন্দারা সবাই সন্তুষ্ট হবেন এমনকি বায়ুমন্ডলের পাখিগুলও রাজি হবে”।
২) দাজ্জালের আগমন
জামানার শেষে দজ্জাল এই পৃথিবীতে আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে দিয়ে তার বান্দা দের কে মুবতালা করবে। সে সব কিছুর উপরে ক্ষমতা রাখবে। বাদল কে বলবে বৃষ্টি বর্ষণ করো তখন বৃষ্টি হবে , বৃষ্টি থামার আদেশ করবে আর বৃষ্টি থেমে যাবে। তখন আম্র বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুঙ্কার (ভালো থেকে আদেশ দেওয়া ও খারাব থেকে বাধা দেওয়া) কমে যাবে। মানুষ একে অপর কে খুন করবে। দজ্জাল পৃথিবীর বুকে ৪০ দিন থাকবে । হাদীসের মধ্যে হুজুর সাঃ বলেছেন “ দজ্জাল চল্লিশ দিন থাকবে, প্রথম দিন এক বছরের সমান হবে, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান হবে এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে আর বাকি দিন গুলি সাধারণ দিনের মত হবে।
3) ইসা (আঃ)-এর আগমন
তিনি কিয়ামতের আগে এই পৃথিবীতে আরেকবার আগমন হবেন। তিনি দিমাশকাসের সাদা মিনারের উপরে সকালে আগমন হবেন। তারপর মানুষদেরকে নামাজের দিকে ডাকবেন এবং বলবেন তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন ইমাম যাউ। তখন ইমাম মেহেদি ইমাম হবেন। সেই সময় দজ্জাল বায়তুল মুকাদ্দাসের দরজার সামনে উপস্থিত হবে এবং দরজা বন্ধ থাকবে। দজ্জাল বলবে দরজা খুলো। দরজা খুলবে আর দজ্জাল তাকে দেখে পালিয়ে যাবে। তারপর ইসা (আঃ) ও ইমাম মাহদি তার খোঁজে বার হবেন। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জমিন কে ছোট করে দিবেন। তারপর লাদ নামক এক গ্রামের কাছে ইসা(আঃ) ও দজ্জালের মধ্যে দশ গজের দূরত্ব থাকবে। ইসা (আঃ) তার দিকে তাকিয়ে বলবে “নামাজ পড়”। দজ্জাল বলবে “হে আল্লাহর নবি আমি পড়ে নিয়েছি”। তখন ইসা (আঃ) বলবেন “এ আল্লাহর শত্রু, তুমি যে নিজেকে আল্লাহ দাবি করছ তাহলে কার জন্য নামাজ পড়লে?” তারপর দজ্জালকে ইসা (আঃ) খুন করে দিবেন আর বলবেন: হে মুসলিমগনেরা তোমরা দেখো, তার পর ইসা (আঃ) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শরিয়তের দারা রাজত্ব করবে। এই অবস্থাই ৪০ বছর থাকবে। ইসা(আঃ) বিয়ে করবেন আর ২টি সন্তান হবে। তারপর ইমাম মাহদি এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন। ইসা(আঃ) তিনার জানাজা নামাজ পড়বেন এবং তিনাকে বাইতুল মুকাদ্দাসে দাফন করিয়ে দিবেন। তারপর ইসা (আঃ) মদিনায় ইন্তেকাল করবেন এবং তিনাকে আবুবাক্কার রাঃ পাসে দাফন করা হবে।
৪) ইয়াজুজ ও মাজুজের আগমন
ইয়াজুজ এবং মাজুজ হল ইয়াফিস বিন নুহ আঃ এর সন্তান। এরা হল ভিন্ন এক টিম। এদেরকে ফাসাদের জন্য পৃথিবীতে পাঠানোর পর আল্লাহ তা’আলা ইসা (আঃ)-কে ওয়হি দিবেন “নিশ্চয় আমি দুজন বান্দা কে পাঠিয়েছি, তাদের মধ্যে কাউকে খুন করার ক্ষমতা নায়”। তারপর ইসা (আঃ) সবাইকে নিয়ে তূর পাহাড়ে যাবে এবং আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুজ ও মাজুজ কে পাঠাবে। তারা সব জায়গাই ছড়িয়ে পরবে। এরপর তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে আসবে এবং বলবে “আমরা জগতের সবাইকে খুন করেছি এবার আমরা আসমানের বাসিন্দাদেরকে খুন করবো। তারা আকাশের দিক তীর ছুরবে আর তীর গুলি খুনের সাথে ফিরে আসবে। তারপর ইসা (আঃ) আল্লাহর কাছে দুওয়া করবে। আল্লাহ তা’আলা ইসা (আঃ) এর দুওয়া কবুল করবে এবং ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘারের উপরে নাগাফ পাঠাবে। নাগাফ হল একটি পোকা যেটি ছাগল আর উটের নাকে পাওয়া যাই। এরপর তারা মারা যাবে। ইসা (আঃ) সবাই কে নিয়ে তূর পাহাড় থেকে নেমে আসবে। আর চারিদিকে শুধু তাদের শব দেখতে পাবে। এরপর আল্লাহ তা’আলা কিছু পাখি কে পাঠাবে যাদের গলা অনেক লম্বা হবে, তারা ইয়াজুজ ও মাজুজের লাশ গুল কে তুলে ফেলে দিবে যেখানে আল্লাহ চাইবে।
৫) দাব্বাতের আগমন
দাব্বাত হল সালিহ (আঃ)-এর উটের একটি বাচ্চা। যখন সালিহ (আঃ)-এর উট কে খুন করা হয়েছিল তখন তার বাচ্চার জন্য একটা পাথর কে খুলে দিয়েছিল এবং সেই উটের বাচ্চাটি পাথরের ভিতরে প্রবেশ করেছিল। এখন কোনো মানুষ যদি তাকে খুজে তাহলে তাকে পাবেনা। এই উটের বাচ্চাটি কিয়ামতের আগে বার হবে। সে পুরো দুনিয়া কে দেখবে এবং মমিনদের কপালে মোমিন লিখবে আর কাফিরদের কপালে কাফির লিখবে। মুসলিম কে মুসলিম বলে ডাকবে এবং কাফির কে কাফির বলে ডাকবে। আল্লহ তা’আলা কুরান শরিফের মধ্যে বলেন
و إذ وقع القول عليهم
তাদের উপরে যা বলা হয়েছিল তা এখন ঘটবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা যা বলেছিলেন যে কাফিরদেরকে আজাব দেওয়া হবে ইত্যাদি এইসব ঘটার সময় হয়ে গেল। আল্লাহ তা’আলা কোরআন শারিফের মধ্যে আরও বলেন
أخرجنا لهم دابّة من الأرض تكلّمهم
(আমি তাদের জন্যে জমিনে একটি দাব্বাত বারকরেছি সেটি মানুষদের সাথে কথা বলবে)। এই দাব্বাতটি বলবে হে ফুলান তুমি জান্নাত বাসিদের মধ্যে, হে ফুলান তুমি জাহান্নাম বাসিদের মধ্যে। এটাকে পাঠানোর কারন মানুস যে চিহ্ন গুলির উপরে বিশ্বাস রাখতনা সেগুলিকে বিশ্বাস করার জন্য।
৬) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়
এটি ইসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পর হবে। বর্ণনা করা হয়েছে “সেই দিন সূর্য ডুবলে রাত তাকে প্রকাশ হতে দিবেনা , রাত্রি তিন রাতের সমান লম্বা হবে। সেই দিন অনেক চেষ্টা করে মানুসরা নামাজের সময় নিরধারিত করবে। মানুস এই লম্বা রাত থেকে ভয় করবে। আবুজার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে যখন সূর্য ডুবে তখন হুজুর (সাঃ) বল্লেন: তোমরা কি জানো এটি কথাই যাই? আমি বললাম “না, আল্লাহ এবং তার রসুল সবথেকে ভাল জানে”। হুজুর সাঃ বললেন “এটি আরশের নিচে যাবে এবং সাজদাহ করবে। তারপর আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইবে আর তাকে অনুমতি দিয়ে দেওয়া হবে আর সজদাহ করতে যাবে তখন তার থেকে সাজদাহ কবুল করা হবেনা। তারপর আবার অনুমতি চাইবে আর তাকে অনুমতি দেওয়া হবেনা। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলবে “তুমি যেখান থেকে এসেছ সেইখানে ফিরে যাও”। তখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে, আর তৌবার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
৭) ধুঁয়ার আগমন
কিয়ামতের আরও একটি চিহ্ন হল যে সেইদিন ধুঁয়া আসবে, ধুয়ায় পৃথিবী ভরে যাবে। এটি কাফেরের নাক, কান, চখ, মুখ থেকে বার হবে। ধুঁয়া দারা মুমিনদের কাঁসি ও সর্দি হবে। এটি ৪০ দিন থাকবে।
৮) আগুনের আগমন
কারেউদুন নামক এক জায়গা থেকে এই আগুনটি আসবে।
৯) কুরান উঠে যাবে এবং উপকারের শিক্ষা তার উৎস থেকে উঠে যাবে। পৃথিবীর মানুষেরা কাফের হয়ে যাবে।
১০) কাবা ভঙ্গ
কেয়ামতের আগে হাবশার হাত দিয়ে কাবা ভেঙ্গে দেওয়া হবে।
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
             
            
             
            
             
            
            