ইসলাম ধর্মে কোরবানী ও কোরবানী ছাড়াও হালাল পশুর কিছু অংশ খাওয়া ওয়াজিব ও হারাম: এর উপর একটি গঠনমূলক বিশ্লেষণ।
ভূমিকা:
ইসলাম ধর্মে কোরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত,যা মূলত জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত আদায় করা হয়। এটি হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ত্যাগ ও আনুগত্যের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফের মধ্যে ঘোষনা করে দিয়ে ছেন যে: “তোমার প্রভুর জন্য সালাত আদায় কর এবং কোরবানি করো।“শরীয়তের দৃষ্টিতে, সক্ষম মুসলমানদের জন্য কোরবানী করা ওয়াজিব, তবে গোরু জবাই করার পরে নিশেদ বলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে,যা হচ্ছে কোরবানী ও কোরবানী ছাড়াও শরীয়াতে হালাল পশুর কিছু অংশ খাওয়া ওয়াজিব ও হারাম, যা বেশির ভাগ মানুষ জানেনা বা যেনও অমল করেনা। কোরবানী ছাড়া হালাল পশুর কিছু অংশ খাওয়া হারাম তা শুধু কোরবানীর সময় নয়, বরং সারা বছর হালাল ভাবে জবাই করা তার পরে পশুর মাংস খাওয়া ইসলামি শরীয়তে বৈধ(হালাল)।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন:لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡكُمۡ
“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের গোশত কিংবা রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ্জ: ৩৭) এখানে একথা বলা উদ্দেশ্য যে, হাদঈ যবেহ করা বা কুরবানী করা একটি মহান ইবাদাত; কিন্তু আল্লাহর কাছে এর গোশত ও রক্ত পৌছে না। কারণ তিনি অমুখাপেক্ষী। আর হাদঈ ও কুরবানীর উদ্দেশ্যও এগুলো নয়; বরং আসল উদ্দেশ্য জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা এবং পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে পালনকর্তর আদেশ পালন করা। তাকে যথাযথভাবে স্মরণ করা, এবং তার হালাল অংশো গুলো কে খাওয়া।
পশুর কিছু খাওয়া হারাম অংশ গুলী হল যেমন:
১)রক্ত ২) যৌন অঙ্গ ৩)যোনি ৪)গর্ভাশয় ৫)লিঙ্গ (বা পুরুষাঙ্গ) ৬)অণ্ডকোষ ৭)মস্তিষ্কে পাওয়া ছোলার ডালের মতো বস্তু ৮) মজ্জা,যা মেরুদণ্ডের ভিতরে থাকে ৯)থেকে শুরু হওয়া মেরুদণ্ডের দুই পাশে থাকা পেশি ১০) পিত্তথলি ১১) প্লীহা ১২)মূত্রথলি,১৩)নাক, ১৪)নখ, ১৫)দাঁত ইত্যাদি অখাদ্য অঙ্গ। এসব কারণেই কোরবানীর সময় এবং কসাইখানায় ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধান গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত”
রক্ত - কুরআনে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে,যে “রক্ত তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (সূরা বাকারা, ২:১৭৩)। রক্ত পানের অভ্যাস বিভিন্ন জাতিতে ছিল, যা ইসলাম স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে।
গলিত রক্ত বা ‘জাবিহা’ না হওয়া - এমন পশু যা শরীয়ত মোতাবেক জবাই করা হয়নি, তার মাংস হারাম। মৃত পশু (মাইতা) ভক্ষণ করাও হারাম।
কোরবানির পশুর বৈধতা ও খাওয়ার নিয়ম
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, কোরবানীর পশু হতে হবে নির্দিষ্ট ধরনের—যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি। এগুলো হতে পারে পুরুষ বা নারী, তবে পশুটি নির্দিষ্ট বয়স ও শারীরিক ত্রুটি-মুক্ত হতে হবে।
কোরবানীর পর মাংস তিন ভাগে ভাগ করার সুন্নত রয়েছে—একভাগ গরীবদের জন্য, একভাগ আত্মীয়দের জন্য এবং একভাগ নিজের জন্য। এটি ইসলামের সামাজিক সমতা ও সহানুভূতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
ওয়াজিব কি?
কোনো নির্দিষ্ট অংশ খাওয়া ওয়াজিব – এমন কোনো শরীয়ত নির্দেশনা নেই। তবে, কোরবানীর মাংস থেকে গরীবদের অংশ দেওয়া ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত, বিশেষ করে হানাফি মাযহাবে। নিজের জন্য কিছু খাওয়া মুস্তাহাব বা উত্তম।
কোরবানী ও খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ইসলামের ভারসাম্য ইসলামে শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা সঠিকভাবে বিতরণ ও সংরক্ষণের নির্দেশনাও আছে। অপচয় নিষিদ্ধ, এবং গরীবদের হক আদায় করাও অপরিহার্য। ইসলাম এভাবে খাদ্য, ত্যাগ এবং নৈতিকতার সমন্বয় ঘটায়।
কোরবানীর দিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল:
ইসলাম ধর্মে কোরবানীর দিন, অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিনটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও ইবাদতপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা, ঈদের নামাজ আদায় করা, তাকবীর তাশরীক পাঠ করা এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখীদের মাঝে কোরবানির গোশত বন্টন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা, সুন্দর-পবিত্র পোশাক পরা, আতর ব্যবহার করা ও ঈদের নামাজ আদায়ের সময় খুতবা শোনা সুন্নত। ঈদের দিন কোরবানির আগে কিছু না খাওয়াই উত্তম, যাতে কোরবানির পশুর গোশত দিয়ে ঈদের খাবার শুরু করা যায়।
এছাড়াও ৯ থেকে ১৩ জিলহজ্জ পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তাকবীর তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব বা সুন্নত হিসাবে গণ্য হয়। কোরবানির পশু জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলা আবশ্যক। কোরবানির দিন অপ্রয়োজনীয় খরচ, অহংকার, অপচয় ও গুনাহের কাজ থেকে দূরে থেকে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা ঈমানদার মুসলিমের কর্তব্য। এই দিন আত্মত্যাগ, ত্যাগের মহিমা ও আল্লাহর প্রতি খালেস আনুগত্যের প্রতীক। তাই কোরবানীর দিনটি কেবল উৎসবের নয়, বরং ইবাদত, তাকওয়া ও সামাজিক সংহতির বাস্তবায়নের দিন।
উপসংহার:
ইসলাম এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে কোরবানী শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আত্মিক পরিশুদ্ধি, ত্যাগ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক। হালাল পশুর নির্দিষ্ট কিছু অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইসলাম আমাদেরকে স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার পথে আহ্বান জানায়, তাই কোরবানি করা সামর্থ্যবানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এটি হানাফি মাযহাব অনুযায়ী ওয়াজিব, অন্যদের মতে সুন্নাতে মুআক্কাদা।
আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করি যেন সকল মুসলমান ভাইদের কে শরীয়ত মতাবিক কুরবানী করার এবং পশুর খাওয়া হারাম অংশ গুলি থেকে বিরোধিতা থাকার তৌফিক দান করুক-আমীন।