ইসলামের সঠিক দৃষ্টিকোণে কারবালার পরিচয়

ইংরেজি  20 আগস্ট থেকে ইসলামী চন্দ্র নববর্ষ উদযাপিত হল৷ এদারা মহরমের অবিশ্রান্ত ঘটনাপঞ্জি সমাহার উপস্থিত হল৷ অবশ্য এই মাস প্রাগৈতিহাসিক ঈশ্বর প্রেরিত দূত গানের বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাসমূহ দ্বারা ও মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সমূহ দ্বারা আবিষ্ট৷  মহরম একটি আরবি শব্দ যার উৎস হারাম থেকে অর্থাৎ নিষিদ্ধ৷ এই মাসের বিভিন্ন ইতিহাস কেন্দ্রিক ঘটনাসমূহের জন্য মুসলিমসমাজ তার স্মরণযাপনের বিভিন্ন সৎ কাজ করে থাকে ৷ ইসলাম ধর্ম শাস্ত্র অনুসারে 9 ও 10 তারিখের রোজার তাদের কাছে সর্বোত্তম মর্যাদা রাখে৷ এছাড়া কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা এই মাসের সবচেয়ে  ঘটনা যা ইসলামী ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় অনন্ত কালো ছাপ রেখেছে  এবং সেটি চিরকাল প্রত্যেক রসূল বংশ প্রেমিকের মনে নিয়ে আসবে সুখ দুঃখের সাগর৷ হিজরী ক্যালেন্ডার সূত্রে 21 হিজরীর 10 মহররম দিনে ইসলামের ইতিহাসে সর্বনিম্ন যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা মূলত মিথ্যার কাছে সত্যের উৎসন্ন হওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য তুলে ধরে৷ সেই নির্মম যুদ্ধ প্রান্তের রক্তপিপাসা নবী  পৌপুত্র হোসেনের অত্যাচারীদের হাতে শিরশ্ছেদ হওয়ার পর  নিবারিত হয়৷  তারপর শত্রুরা তার মাথা নিয়ে অত্যন্ত উল্লাসের সাথে কুফার অলিগলিতে ঘুরিয়ে তার ঘোর অসম্মান করে৷ এই বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর এই দিবসে তাঁর ভক্তরা শোক মাতম করতে শুরু করে৷ ইসলাম শাস্ত্র অনুসারে,  মৃতের প্রতি সঙ্গীত দ্বারা শোক প্রকাশ করা অনুমিত ৷ যাকে আরবি ভাষায় মূর্শিয়া বলা হয়৷ কিন্তু বর্তমানে সামাজিক দূষণ ঘটে বিভিন্ন ধরনের শাস্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ শুরু হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো সুসজ্জিত তাজিয়া ৷ যা ইতিহাস অনুযায়ী আব্বাসীয় খলিফা মুঈজুদ্দৌলার শাসনকালে 351 হিজরী সালে বাগদাদে সর্বপ্রথম আরম্ভ হয়৷ যে লোক প্রথা এখনো আমাদের সমাজে বিদ্যমান৷ এই সৌখিন তাজিয়ার প্রসঙ্গে এক বিখ্যাত ধর্মগুরু আলা হযরত আহমদ রেজা খান আপন বিধান  পুস্তক ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া -এর নবম খণ্ড,186 পাতায়  লেখেন যে, তাজিয়া তৈরি করা ও তার সম্মান করা একদম শরীয়ত সম্মত বিষয়  নয়৷ 

  তাছাড়া এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষণীয় যে, বর্তমান মুসলিম সমাজে এই 10 ই মহররম উপলক্ষে এক নির্দিষ্ট স্থানকে কারবালা ময়দান নামে আখ্যায়িত করে ভীষণ জটাপটার সঙ্গে জমছে উৎসবের আসর৷  যেখানে জনসাধারণ লাঠি তরবারি নিয়ে অচেতন আয় খেলা করে শুধু তাই নয় অনেক নেশাগ্রস্ত যুবকদের নিয়ে শরীরে আঘাত করে রক্তে  ক্ষতবিক্ষত করে যা ইসলাম শাস্ত্রে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ৷

 আজকে আমাদের এই ধারণা যে দশে মহরম কারবালা যুদ্ধের জন্য প্রসিদ্ধ ৷ কিন্তু ইতিহাস বলে যে,  এই আশুরার দিন ইসলামের আদি যুগ থেকে ভক্তি ও সম্মানের পাত্র৷ এই দিনে ইয়াহুদীরা ও ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়ে প্রশংসা স্বরূপ উপবাস থাকে এবং এই দিনে বিভিন্ন  প্রেরত দূতের অলৌকিক ঘটনায় জড়িত আছে বলে এটি এত বেশি সম্মানের দাবিদার৷ তাই মুসলিম সমাজের উচিত যে এই দিনে অসমজিক ক্রিয়া-কলাপ না করে ইসলামসম্মত পুণ্যের কাজ করা৷ হাদিস সূত্রে জানা যায় যে, এই দিনে যে ব্যক্তি অসহায় এতিমদের সেবা করবে, পরকালে তার মর্যাদা  বর্ধিত হবে ৷ আবার ভোজ খাওয়ালে ও পথিকদের জন্য জল ব্যবস্থা করলে পরিবারের সচ্ছলতা ও মঙ্গল ঘটে৷ তাছাড়া এই দিনের রোজা কত রমজান মাসের পর সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল এবং এই দিনে কারবালা-প্রান্তরে শহীদদের স্মরণ করাও পুণ্যের কাজ৷ তাহলে এত সুন্দর একটা দিন কে অবমাননা করে ঢোল- বাজনা,লাঠি- তারোয়াল নিয়ে সামাজিক ব্যাঘাত সৃষ্টি করা অনুচিত৷ অতএব মুসলিম সমাজের কর্ণধারদের একান্ত কর্তব্য যে শুদ্ধ সমাজকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা ও শান্তি-সমাধানের পন্থা অবলম্বন করা৷

Related Posts

Leave A Comment

1 Comments

Voting Poll

Get Newsletter