দান করার ফযিলত
দান এমন একটা জিনিস যার দ্বারা আমরা আল্লাহর অনেক কাছে হতে পারি। এবং আল্লাহর অনেক কাছে হতে পারি। দান করলে মনে শান্তি আসে । দানের কারণে সব কষ্ট থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করেন। দান করলে ধন কমে না বরন ধন বেড়ে যায়। এবং আল্লহ তায়ালা বলেছেন যে প্রকাশে দান করার থেকে গোপনে দান করা অনেক উত্তম।
তাই তোমরা এমন করে দান করো যাতে তুমি যদি বাম হাতে দান করো তাহলে যেমন তোমার ডান হাত না জানতে পারে। এবং আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে বাক্তি আমার দেওয়া ধনও সম্পদ আমার রাস্তাই খরচ না করবে সে হোলো বড়ো কৃপণ। দান দুই প্রকার। (১) সাধারণ দান (২) সদকায়ে জারিয়া গরীব দঃখীকে টাকা পয়সা দান করা, ভালো ব্যাবহার করা সাধারণ দান। সদকায়ে জারিয়া বলা হয় ঐ দানকে যার সওয়াব মৃত্যুর পরেও পেতে থাকবে।যেমন যদি কেউ কনও বাক্তি কে শিক্ষা দান করেন তাহলে তার পর সে যখন সেই শিক্ষা অপরজন দান করবে তাখন এই ভাবে তার সওয়াব তার মৃত্যুর পরেও সেবাক্তি পেতে থাকবে। রাসূল পাক (সা. ) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্দ হয়ে যায়।তিনটি ব্যতিত সদকায়ে জারিয়া ইত্যাদি।এবং এই দান করার ফজিলতের ব্যাপারে কুরান শরিফে অনেক উল্লেখ করা হয়েছে। ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করে দিয়না।সেই ব্যক্তির মতো যারা নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে।এবং আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখেনা।এবং দান করার ফলে সমস্ত গুনহা মাফ হয়ে যায় ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাই। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা নিজেদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুসমূহকে হালাল করে নিয়েছিল।এক আল্লাহর অলীর ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারবো দান করার কত ফজিলত।
একদা তাঁর স্ত্রী রুটি বানানোর উদ্দেশ্যে আটার খামিরা তৈরি করলেন। এমন সময় তাঁর মনে হলো, আরে! ঘরে তো আগুন নেই। আগুন জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই। তাই স্বামীকে বললেন–আপনি খামিরার দিকে খেয়াল রাখুন। আমি পাশের ঐ প্রতিবেশীর ঘর থেকে আগুন নিয়ে আসি। বুযুর্গ বললেন, ঠিক আছে–যাও।স্ত্রী আগুন আনতে গেল। এ সময় ঘরের দরজায় এসে এক ফকীহ হাঁক ছাড়ল।বলল, মাগো! আমাকে কিছু খাবার দিন।ঘরে তখন খামিরা করা সামান্য আটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই এটাকেই তিনি ফকীরের হাতে তুলে দিলেন। সেই সাথে বিনয়ের সাথে বললেন–ভাই! দেওয়ার মতো ঘরে আর কোনো খাবার নেই। থাকলে এই কষ্টটুকু তোমাকে দিতাম না। তুমি এই খামিরা দিয়ে রুটি বানিয়ে খেয়ে নিও। কেমন? ফকীহ ‘জ্বী আচ্ছা’ বলে খামিরা নিয়ে চলে গেল।কয়েক মিনিট পর স্ত্রী আগুন নিয়ে ফিরে এল। তারপর আটার খামিরা দেখতে না পেয়ে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, খামিরা কোথায়? স্বামী বললেন, এক বন্ধু এসেছিল তাকে রুটি তৈরির জন্য দিয়ে দিয়েছি।স্ত্রী কিছু সময় অপেক্ষা করলেন। কিন্তু কেউ আসছে না দেখে বললেন–মনে হয়, আটার খামিরা আপনি কাউকে দান করে দিয়েছেন।বুযুর্গ বললেন–হ্যাঁ।স্ত্রী বললেন–আরে আল্লাহর বান্দা! অন্তত একটি রুটি বানানো যায়, এই পরিমান আটা রেখে দিলেও তো দু’জনে ভাগ করে খেয়ে নিতে পারতাম।বুযুর্গ বললেন–আমি খুবই ভালো বন্ধুকে দিয়েছি। চিন্তা করো না। স্ত্রী বললেন-বুঝলাম না।-বুঝলে না? না বোঝার কি আছে এখানে? আরে আল্লাহর বান্দী! আমি এমন এক বন্ধুকে দিয়েছি যিনি কেবল নিতে জানেন না, দিতেও জানেন। শুধু দিতে জানেন বললে ভুল হবে। বরং বলতে হবে–তিনি আরো উত্তমরূপে দিতে জানেন।-এবার তো ব্যাপারটিকে আরো জটিল করে ফেললেন।-থাক থাক। এমন আর আমার কিছুই বলার দরকার নেই। একটু অপেক্ষা করো, তবেই সবকিছু স্পষ্টরূপে বুঝতে পারবে।কিছুক্ষণ পরই দরজায় আওয়াজ শোনা গেল। বুযুর্গ উঠে দরজা খুলে দিলেন। দেখলেন–এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর এক হাতে গোশত বোঝাই একটি পেয়ালা, আরেক হাতে রুটি বোঝাই একটি পাত্র। লোকটি বলল–অমুকে আপনাকে এগুলো হাদিয়া দিয়েছেন। মেহেরবানী করে কবুল করুন।বুযুর্গ রুটি ও গোশত নিয়ে হাসিমুখে ভিতরে এলেন। তারপর স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন –আমি তো আমার বন্ধুকে শুধু আটার খামিরা দিয়েছিলাম। আর আমার বন্ধু এতই ভালো ও দয়ালু যে, তিনি রুটি তৈরি করে তাঁর সাথে গোশতও রান্না করে পাঠিয়েছেন।স্ত্রী বললেন–হ্যাঁ, এবার আমার বুঝে এসেছে আপনি বন্ধু বলতে কাকে বুঝিয়েছেন।প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! মূলত আল্লাহর রাস্তায় দান করার বিষয়টি এমনই। তাই আমি আপনাদের বলব, আমাদের কাজ সঞ্চয় করা নয়, বরং আমাদের কাজ হলো–দান করা, দান করা, শুধুই দান করা। অতএব, আমরা নিজেরাও দান করব, সন্তানদেরকেও আল্লাহর নামে দান করতে শেখাব। সেই সাথে এ কথাটি অবশ্যই শেখাব যে, এই পয়সা অবশ্যই একদিন আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিবেন।