প্রতিশোধ গ্রহণের সর্বোত্তম পন্থা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

'মানুষ' সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সেরা সৃষ্টি হলেও মানুষের মন ও মননের সমস্তটুকুই যে সর্বাবস্থায় সেরা ও শ্রেষ্ঠ নয়, একথা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল তখনই যখন পবিত্রতম বাসভূমি জান্নাতে অবস্থান করেও শয়তানের গুজবে আদি মানব মানবী লোভের বশবর্তী হয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেতে উদ্যত হয়েছিলেন। কুরআনুল কারীমে এজন্যই বারংবার ঘোষিত হয়েছে - 'ইন্নাস শয়তানা লিল্ ইনসানে অদূবুন মুবীন।' অর্থাৎ নিঃসন্দেহে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুষমন।

শত্রুতা ও প্রতিশোধের প্ররোচনা: শয়তানের ভূমিকা

শত্রুর কাজ কী? প্রতিপক্ষকে যেমনভাবেই হোক পরাজিত করা। ভালো মানুষের মনের মধ্যে লোভ-হিংসা-রাগ ইত্যাদির গুজব জাগিয়ে দিয়ে উত্তেজিত করে তোলা। একাই একাজ করতে না পারলে গোটা দলবলকে ডেকে এনে আগা-পাছা, ডান-বাম, ওপর-নীচ সবদিক হতেই অবিরাম অসঅসার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া। তাতেও বিফল প্রমাণিত হলে 'মানুষ নামধারী' শয়তানকে বিলকুল প্রত্যক্ষভাবেই উত্তেজিত করে তোলার ঘৃণ্য কাজে লাগিয়ে দেওয়া। অনেক শান্তশিষ্ট ভদ্র মানুষ ইবলীস শয়তানের অসঅসা হতে বহুকষ্টে আত্মরক্ষার করতে সমর্থ হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু দুষ্ট-দুরাচার মানুষ শয়তানের কাছে হেরে যায়। তার অশালীন ব্যবহারে ধৈর্য হারিয়ে দেয়। তার কৃতঘ্নতায়, নিন্দায়, গালাগালিতে অসিহয়ু হয়ে ওঠে। 

এবং সুযোগ বুঝে প্রকাশ্য দুশমন শয়তান তার অদৃশ্য গুজবের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। উভয়ে মিলে শেষ পর্যন্ত মুসল্লী-মুত্তাকী মানুষটিকেও প্রতিপক্ষের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে প্রস্তুত করে ফেলে। ধর্মপ্রাণ মানুষটিও ধীরে ধীরে ভুলে যায় যে, ধৈর্য-সহ্য-ক্ষমা-বিনয় ইত্যাদি হলো আল্লাহ প্রদত্ত সর্বোত্তম গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। রাগ ও ঘৃনায় বশীভূত হয়ে প্রথমেই প্রতিপক্ষের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবৃত্তি শয়তানী কর্মকাণ্ড। ভুলে যায় যে, প্রথমত ভালোর দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করাই হচ্ছে ইসলামী জীবন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। ভাবে যে, রাগের জবাব রাগে, হিংসার জবাব হিংসায়, নিন্দার জবাব নিন্দায়, এমনকি লাঠির জবাব লাঠিতে দেওয়াই উত্তম। আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে, ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া দ্বিগুণ হওয়াও মন্দ। কিছু নয়। এই ভেবে নিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের সর্বনাশা আগুনে মুত্তাকী মানুষও ঝাঁপ দিতে তৈরি হয়ে যায়। ইটের জবাব পাথরে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনা। দ্বীন ইসলাম কিন্তু প্রকৃত মুমিন মুসলিমকে দুষমন বিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথমেই এই শ্রেণীর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেয়না। বলে যে, প্রথমত সদাচার অত্যন্ত প্রয়োজন।

প্রতিশোধের বদলে ক্ষমা ও সদাচারের পথ: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উদাহরণ

কে না জানে যে, বিশ্বনাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) কে তাঁর আসমানী মিশন প্রচারের একেবারে শুরুতেই ঘোর বিরোধীদের সাংঘাতিক আচরণের মোকাবিলা করতে হয়েছিল। তারা তাঁকে নানাভাবে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্র করে ছিল। কুকথার দ্বারা, কুকাজের দ্বারা, 'আল আমীন' ও 'আস্ সাদিক' যুবকটিকে তারা উত্তেজিত করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টায় মাতাল হয়ে উঠেছিল। উদ্দেশ্য ছিল যে, শান্তিপ্রিয় ও সত্যনিষ্ঠ মানুষটিকে অসহিষু ও ধৈর্যহারা বানিয়ে দিয়ে অভিশপ্ত প্রতিশোধের স্পৃহায় ক্ষেপিয়ে তোলা। কিন্তু যে ব্যক্তি কোনো মহৎ ও মহান কাজকে বিভ্রান্ত সমাজে প্রতিষ্ঠা দিতে বদ্ধপরিকর, তার পক্ষে কি ধৈর্যহীন অসহিব্লু হওয়া সাজে? মন্দের মোকাবিলা মন্দের দ্বারা মহান ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়। সূরা হা-মীম আস সাজদায় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয়তম বান্দা ও রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) কে অত্যন্ত ভালোর দ্বারা অতিশয় মন্দকে পরাস্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন এই ভাষায়-জানেন" (৪১: ৩৩-৩৬)

প্রতিপক্ষকে জব্দ করার, শত্রুকে মিত্র বানানোর এবং এক সময় সৎকাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের আন্তরিক সমর্থন ও পূর্ণ সহযোগিতা লাভ করার এ একটা অতুলনীয় ও বিস্ময়কর আসমানী সুশিক্ষা। ইতিহাসের সাক্ষ্য যে, প্রিয়নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এই অত্যুত্তম সুশিক্ষা সুনীতির জোরেই গোটা আরবভূখণ্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ অসভ্য অভদ্র মানবমণ্ডলীকে ধীরে ধীরে শির্কের অভিশাপ হতে মুক্ত করে এক লা-শরীক আল্লাহ প্রবর্তিত দ্বীন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মক্কার হিংসু মুশরিকরা ইসলামের তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাতের বিশুদ্ধ আসমানী ধ্যান-ধারণাকে গায়ের জোরে ধরাশায়ী করার দূরভিসন্ধিতে নানা প্রকারের ষড়যন্ত্র ছাড়াও নিশ্চয় এক তরফাভাবে একাধিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ঘোষণা করা সত্বেও রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) ও তাঁর বাহিনী ন্যায়-ইনসাফের রশি ছিন্ন করেননি। মুসলিমদের পক্ষ হতে যুদ্ধাভিযান ছিল এক তরফা অহেতুক আক্রমণের বিপক্ষে নির্ভেজাল আত্মরক্ষারমূলক। আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, কোনো অবস্থাতেই যেন নিরস্ত্র মানুষকে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে শিশু-বালককে, অন্ধ-খঞ্জুকে, আত্মসমর্পণকারী যোদ্ধাকে এমনকি ফল-ফসলের গাছপালাকেও ক্ষতিগ্রস্ত না করা হয়।

কুরআন ও হাদিসে প্রতিশোধের বিরুদ্ধে বার্তা

উপরোক্ত আয়াতটির ভাবার্থে ও প্রিয় নাবীর (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) জীবনাচরণে আমরা সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করছি যে, তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক মনোবিজ্ঞানী। আল্লাহ তাঁকে অতুল্য শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের মাধ্যমে প্রকাশ্য দুষমনেরও মনোদশা বদলিয়ে দেওয়ার দুর্লভ শিক্ষা ও দীক্ষা দান করেছিলেন। প্রতিশোধ গ্রহণের দুরাকাঙ্খা নয়, তার পরিবর্তে সদাচারের মাধ্যমে শত্রুর মনোদশা পরিবর্তন ও সংশোধনের পরামর্শই দিয়েছে ইসলাম। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও ন্যায় সঙ্গত আচরণ প্রদর্শনের সুশিক্ষা দিয়েছে। সূরাহ বাক্কারায় বলা হয়েছে-

وَ قَاتِلُوا فِي سَبِيْلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ  .

“তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে লড়াই করো, যারা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করে কিন্তু সাবধান সে ব্যাপারে সীমালংঘন করোনা। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না” (২:১৯০)

মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সা.)-এর মহত্ব: শত্রুকে ক্ষমা করার বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত

ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের মহানন্দেও দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) তাঁর অতুলনীয় ধৈয-সংযম এবং মহোত্তম উদারতার জোরেই চিরশত্রুদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন। ইচ্ছা করলে তিনি মক্কার সমস্ত প্রকাশ্য পুরাতন শত্রুদের বিরুদ্ধেই দৃষ্টান্তমূলক প্রতিশোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন অনায়াসেই। তাঁর বাহিনীর অধিকাংশ প্রপীড়িত জনতার বাসনাও ছিল এটাই, - জালিম মক্কাবাসীরাও ভেবে নিয়েছিল যে, আজ মজলুমদের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু রাহমাতুললিলআলমীন মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) কয়েকজনমাত্র দুষমনকে ছাড়া বাকি সকলকেই আমভাবে ক্ষমা প্রদানের বিস্ময়কর পরোয়ানা জারী করেন। সর্বকালের বিশ্ব ইতিহাসে এ একটা অতিশয় বিস্ময়কর ঘটনা।

আসল কথা, ইসলাম হলো বিশ্ব প্রভরই প্রবর্তিত ও মনোনীত একমাত্র ও পরম দয়ালু দাতা, তিনি কি : সর্বোত্তম মাখলুক মানুষের মধ্যে অধৈর্য অসহিষুতা, অনুদারতা ও হিংসা-বিদ্বেষ জানতাম যার ফাসাদ দেখতে ভালোবাসতে পারেন? কখনই নয়। তাই তিনি । তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেরিত রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) এর দ্বারা তাঁরই প্রবর্তিত জীবনাচরণের সর্বোত্তম রূপরেখাটিকে ব্যবহারিক জীবনে মূর্তরূপ দান করেছেন, যাতে বর্তমান ভবিষ্যতের বিশ্বমানবমণ্ডলী শিষ্টাচারের সন্ধান পায়। অন্ততঃ ঈমানওয়ালা মুসলিমরা যাতে বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবিলায় অত্যুত্তম স্বভাব-আচরণ উপস্থাপন করতে সক্ষম প্রমাণিত হয়। পরিবর্তিত স্বভাবের মুশরিকদের সঙ্গে মুসলিমরাও যাতে পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। সেজন্যই আল্লাহ তাআলা সূরাহ মুমতাহিনায় বলেন -

لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينََ.

“ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন”। [সূরা মুমতাহিনাহ: 8]

কিন্তু যদি কেউ কারোকে তার ধর্ম পালনে বাধা দেয়, অত্যাচর করে, স্বধর্ম পালনের জন্য বাপদাদার ভিটেমাটি হতে জোর জবরদস্তি উৎখাত করতে হিংস্ররূপে ধারণ করে, তবে সেক্ষেত্রে ইসলাম আত্মরক্ষার জন্য মজলুমকে যাবতীয় ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। একালে বিশ্বসংস্থা ইউএনও তথা পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রীয় সংবিধান এরই সমর্থনে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জানমালের সুরক্ষা ও স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণের বিষয়টি এখন এক ইজরাঈল ছাড়া বিশ্বের সর্বত্রই মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। এক্ষেত্রে যারাই অত্যাচারী, তারাই আল্লাহর দৃষ্টিতেও প্রকৃত যালিম। এই যালিমদের বিরুদ্ধেই কুরআন ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এবং সক্ষম উম্মাতে মুহাম্মাদীকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কড়া নির্দেশ দিয়েছে। কুরআনের বলা হয়েছে- 

إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَىٰ إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। [সূরা মুমতাহিনাহ: 9] 

কিন্তু স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, 'কেবল জালিমদের ছাড়া অন্য কারো ওপর হস্ত প্রসারিত করা সংগত নয়।' সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক ও মানবিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বীন-ইসলাম মুসলিম সম্প্রদায়কে অপরিহার্যভাবেই ন্যায় ইনসাফমূলক পরম উদারতার আচরণ প্রদর্শন করতে বাধ্য করেছে।

রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এর সংঘর্ষময় জীবনে উপরোক্ত অতুল্য গুণাবলির সুসমাহার সহজেই চোখে পড়ে। তাঁর মক্কী জীবনে ও তাঁর মক্কা-বিজয়কালে সহিষুতা, ধৈর্য ও উদারতার বিস্ময়কর নমুনা তিনি আমাদের ঈমান ও আমলের মজবুতির জন্য রেখে গিয়েছেন। মদীনার জীবনে সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশে শান্তি-শৃঙ্খলা কায়েমের জন্য ইহুদীদের সঙ্গে তাঁর বিস্ময়কর সন্ধিতে তাঁর দূরদর্শিতা ও উদারতা যেন সর্বশেষ সীমাকেও অতিক্রম করে গিয়েছিল। তাঁর স্বর্ণযুগে তাঁরই মুক্ত-মধুর স্বভাবাচরণে দীক্ষিত হয়ে তাঁর প্রকৃত অনুসরণকারীরা তৎকালীন ইহুদী নাসারা মুশরিকদের মন থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের নিরাধার দুরাকাঙ্খা দূর করতে সমর্থ হন। ইসলাম ও উম্মাতের বিরুদ্ধে একালের দুনিয়ায় বিরুদ্ধবাদীদের দুর্ব্যবহারের প্রথম প্রতিশোধরূপে আমাদের মতন ঈমান আমলে কমজোর মুসলিমকে সূরা। হা-মীম আস সাজদা'র উপরোক্ত ৩৩-৩৬ আয়াতগুলোরই সুশিক্ষা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রিয়নাবীর (সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) ব্যবহারিক জীবনে তাঁরই যে অত্যুজ্জ্বল প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যায়, সেখান থেকেও শিক্ষা হাসিল করা প্রয়োজন।

এছাড়া ও,স্বাধীনোত্তর কালের ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায় একশ্রেণীর হিংসুক, ক্ষমতালোভী অমুসলিমদের দ্বারা লাগাতারভাবে উপেক্ষিত, তিরস্কৃত এবং জানে-মালে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকা সত্বেও বিপুল ধৈর্য-সংযমের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে। 'বিভিন্নতার মধ্যে একতা' স্থাপনই হচ্ছে এদেশের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। দেশের অধিকাংশ মানুষ জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে - এই উদার মানবিক মূল্যবোধেরই সমর্থক। কিন্তু 'ইবলীস শয়তান' এবং কিছুসংখ্যক 'মানুষ-শয়তানরা' দেশের এই সংযম ও সহনশীলতায় কুঠারাঘাত হেনে মাঝে-মধ্যে দুর্বল-কমজোর মুসলিম সম্প্রদায়কে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। আমাদের মাসজিদ-মাদ্রাসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ী-ঘর, জান-মাল ইত্যাদি সবকিছুই অকারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্যবার। 

এবং,দেশের প্রকৃত জ্ঞানী-গুণী মানুষরা বরাবরই উগ্রপন্থীদের কঠোর সমালোচনা করে এসেছেন। আর আমরা মাজলুম মুসলিমরাও মুকাবিলায় ব্যর্থতায় একমাত্র আল্লাহরই দরবারে এই ফরীয়াদ জানিয়ে এসেছি -

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ

“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে”। (২:২৮৬)।

আমাদের প্রতি তুমি উদারতা দেখাও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো, তোমার রহমত নাযিল করো, তুমিই আমাদের আশ্রয়দাতা, কাফিরদের মুকাবিলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো, - আমীন






Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter