বিশ্বশান্তির প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ হয় এই রমযান মাসে

বর্তমান বিশ্বের দৃশ্য: ইউক্রেন-রাশিয়ায় ভৌগলিক যুদ্ধ; চীন-আমেরিকা-জাপান-তাইওয়ানে ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষ; ইরান, ইরাক, সিরিয়া, সুদান বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা ও দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা; দক্ষিণ এশিয়া যথা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদিতে অর্থনৈতিক সংকট; প্যালেস্টাইন ইসরাইলের দীর্ঘ সাময়িকী ঔপনিবেশিকতার বিরূদ্ধে যুদ্ধ। এসব ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে অনুরূপ অশান্তির ছায়া নিত্য দিনের নৈপুণ্য হয়ে আছে।

 ইসলাম নির্ধারিত এই পবিত্র রমজান মাসে এর সার্বজনিক সমাধান অনুসন্ধান করা যায়। সঠিক মূল্যায়নে দেখা যাবে এই রমজান মাসেই বিশ্ব শান্তির প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ।

এক সর্বজনীন অনুভূতি

রমযানে সূর্য উদয়ের পূর্ব (ফজর) থেকে সূর্যাস্ত (মাগরিব) পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত হয়ে রোযা পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান স্রষ্টা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ তাআ'লার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জন। উপরন্তু, এই সাধনার এক বিশেষ পাঠ হল এক সর্বজনীন অনুভূতি প্রাপ্তি। অনুভুতিটি হল - সহনশীলতার, সান্ত্বনার, শুকরিয়ার, সহযোগিতার ও ভালোবাসার। এইসব বৈশিষ্ট্যই শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি শীলা।

 সহনশীলতা এই কারণেই যে পার্থিব প্রাচুর্যের মধ্যে কখনো স্বল্পতা সামনা হলে তাকে মেনে নিতে হবে। ধৈর্যের কথা ভেবে হৃদয় মাঝে এক সান্তনার উদ্ভব হওয়া চায় যে পৃথিবীর কত সংখ্যাক জীবনধারী মানুষ এক মুষ্টি আহার-পানাহার থেকে বঞ্চিত। এটা কোন কাল্পনিক দৃশ্যের শদ্বাকার নয়, বরং বাস্তব চিত্র উদ্ভাসিত হয়ে আছে মসজিদ মাজারের দ্বারে, রেলওয়ে স্টেশনে, রাস্তার ফুটপাতে, শহর অঞ্চলের স্লমে ইত্যাদি স্থানে। দৃশ্য দর্শন বা শ্রবণের পর আবার মন মাঝে স্রষ্টাকে শুকরিয়ার এক উদ্দীপনা জাগ্রত হয়। ফলস্বরূপ, সার্বিক মানবতার ভালোবাসা এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরস্পরে সহযোগিতার মনোবল সৃষ্টি হয়। এইভাবে বিশ্বশান্তির প্রক্রিয়া সূচিত হয়।

 এটা শুধু ধারণামূলক বক্তব্য নয়, বাস্তব উদাহরণ দেখা যাক। বিশ্বব্যাপী ফান্ডরাইজিং, মুসলমানদের এই মাসে অত্যাধিক দান ও খয়রাত, ইফতারের নামে গরিব-দুঃখীদের খাওয়ানো দ্বীনি আমলের পাশাপাশি পার্থিব উপকারিতার সচ্ছল ছবি। আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ও বৈশ্বিক উন্নতিও রমযানে রোযার  এক বিরাট উদ্দেশ্য।

প্রত্যেক সমাজে

মহান আল্লাহ্ তাআ'লার ইরশাদ: "হে ঈমানদরগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল যাতে তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়। (কুরআন, সূরা বাকারা: ১৮৩)

 ন্যায় বিচার হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক সমাজ ব্যবস্থা। একটি সুস্থ সমাজ অসম মূল পরিবেশ তৈরি করতে ন্যায়ের সমর্থন ও অবিচারের প্রতিরোধ আবশ্যক। রোযার গুরুত্ব বোঝাতে যেরকম এই আয়াতটি তুলে ধরা হয় যে শুধুমাত্র মুহাম্মাদী উম্মতে নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতেও রোযা অপরিহার্য ছিল, অনুরূপ এই বাধ্যতামূলক এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলিও স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রত্যেক সমাজে রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য হল পরহেজগারী ও খোদাভীরুতা আর যেখানে খোদাভীরুতা সেখানেই ন্যায়পরায়ণ। এই বৈশিষ্ট্যের অবর্তমানে বাস্তবে সমাজের অস্তিত্বই থাকে না। অনুরূপ এই সকল বৈশিষ্ট্যের বর্তমানে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যথা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।

 আল্লাহর নবী ﷺ এরশাদ করেছেন: "রোযা একটি ঢাল। তাই সে (রোযাদার) অশ্লীলতা করবে না, ভূল করবে না, এবং কেউ যদি তার সাথে মারামারি করে বা তাকে গালি দেয়, সে যেন বলে: আমি রোযাদার।" (সহীহ বুখারী)

প্রত্যাহার: অর্থ এবং বাস্তবায়কতা

আরবি শব্দ 'সাওম'-এর অভিধানিক অর্থ বিরত থাকা বা প্রত্যাহার করা। এর পরিভাষিক ব্যাখ্যা আগে জানা হয়েছে। কিন্তু খাবার এবং পানাহার থেকে শুধু প্রত্যাহার করার নামই রোযা নয়। এ প্রত্যাহারের চৌহদ্দে আরো অনেক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত যা একেবারেই উপেক্ষা করা অনুচিত।

 এক মুসলিম রোযাদার যেরকম জল-খাবারের মত বাহ্যিক অঙ্গের বিষয়বস্তু প্রত্যাহার করে, অনুরূপ এটা অপরিহার্য যে সে অন্তরীয় সকল প্রকারের ত্রুটি দুষ্কৃতিকে দূর করে। হৃদয়-রোগের উদাহরণ অনেক যেরকম হিংসা, প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, স্বার্থপরতা ইত্যাদি। আর এসব কারণেই বৈশ্বিক শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটে। বিশ্ববাসীর পথ প্রদর্শনের নিমিত্তে প্রেরিত আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ দূত নবী মুহাম্মাদ -এর কথায়: "যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অজ্ঞতা ও তদনুযায়ী আমল ত্যাগ করে না, তার পানাহার ত্যাগ করায়  আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেয়।"

 সাধারণ কথায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্বেগে ইসলাম প্রদত্ত রোযার মধ্যে নিহিত উদ্দেশ্যগুলি অবশ্যই মিলিয়ে নেওয়া উচিত। কোন ব্যক্তিগত জীবনে বা সামাজিক ক্ষেত্রে বা রাষ্ট্রীয় নীতিগ্রহণে সাওমের অভিধানিক ও পরিভাষিক দুই অর্থ যদি একত্রিত হয়ে যায় তাহলে শান্তির বিপ্লব স্বপ্ন দেখা কোন দুষ্কর ব্যাপার নয়।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter