ইসলামের পবিত্র গ্রন্থসমূহ
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থগুলি এমন ধর্মীয় গ্রন্থ যা মুসলমানদের দৃষ্টিতে আল্লাহর গ্রন্থ হিসাবে তাৎপর্য লাভ করে, কারণ এগুলি বিভিন্ন নবী এবং রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ দ্বারা তিনাদের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল ও এর ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুসলমানরা যেরকম বিশ্বাস করেন পবিত্র কুরআনকে যেটি মুহাম্মদের ﷺ প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল, যেটি মানবজাতির প্রতি আল্লাহর চূড়ান্ত বাণী বলে মনে ও বিশ্বাস করে; কুরআনের মতোই বাইবেল, তওরাত ও জাবুর ধর্মগ্রর্মন্থগুলির ওপরও সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। যেমনটি, কেননা যদি কোনো মুসলমান পবিত্র গ্রন্থসমূহ মধ্যে থেকে একটি গ্রন্থের ওপর বিশ্বাস না করে এবং অস্বীকার করে যে- এই গ্রন্থটি আল্লাহর গ্রন্থ না, তাহলে শরীয়ার হিসেবে সে একজন কাফির। এই প্রসঙ্গে মুসলমানরা কুরআনকে প্রাধান্য দিলেও, পূর্ববর্তী আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থের বৈধতায় বিশ্বাসের ছয়টি ইসলামী নিবন্ধের মধ্যে একটি। যাইহোক, বেশিরভাগ স্ব- চিহ্নিত মুসলমানদের জন্য, এই বিশ্বাসের স্তর তাহরিফের ধা রণা দ্বারা সীমাবদ্ধ।
বৈধ প্রাক-ইসলামিক আয়াত হিসাবে বিবেচিত ধর্মীয় গ্রন্থগুলির মধ্যে, কুরআনে যে তিনটি নাম উল্লেখ করা হয়েছে তা হ'ল তাওরাত, যা নবী মূসা (আঃ) গ্রহণ করেছিলেন, গীতসংহিতা অর্থাৎ জাবুর দায়ূদ (আঃ) গ্রহণ করেছিলেন এবং সুসমাচার অর্থাৎ ইঞ্জিল, যা ইসা (আঃ) গ্রহণ করেছিলেন।
কুরআন
ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ ﷺ কে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন প্রদান করা হয়। কুরআনে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে নবীদের কাছে ঈশ্বর প্রেরিত অন্যান্য গ্রন্থের অনেক উল্লেখ রয়েছে- যেমন ইব্রাহীমের কিতাব যার বর্তমান পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব নেই, মূসা (আঃ) এর তওরাত, দায়ূদের গীতসংহিতা (জাবুর) এবং ইসা (আঃ) জন্য সুসমাচার (ইঞ্জিল)।
চারটি কিতাবে বিশ্বাস করা ইসলামী বিশ্বাসের একটি অপরিহার্য অংশ।
প্রতিটি কিতাব আল্লাহ এই রসূলগণের প্রতি অবতীর্ণ করেছিলেন, যারা পরে তাঁর বাণী তাদের লোকদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। যদিও ইব্রাহীমের কিতাব সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেছে, ইসলাম অনুসারে জাবুর, তওরাত এবং ইঙ্গিল এখন আর তাদের মূল অবস্থায় নেই। এই গ্রন্থ গুলিকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেওয়া হয়েছে।
এগুলি তাদের নবীদের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, সরাসরি তাদের নবীদের সাথে সনাক্ত করা যায় না, বা কেবল পরিবর্তনর্ত করা হয়েছে। শুধুমাত্র কুরআনই তার মূল অবস্থায় সংরক্ষিত হয়েছে, ঠিক যেমনটি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল।
তাওরাত
"তাওরাত" হল যা মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে এটি নবী মূসা (আঃ) –এর ওপর অবতীর্ণ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এবং এটিকেও সম্পূর্ণরূপে বদলে দেওয়া হয়েছে। এবং এই বদলে দেওয়া বইটি এখন শুধু ইসরাইলি লোকেদের কাছে পাওয়া যায়।
জাবুর
কুরআনে জাবুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা জাবুরের বই হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, পয়গম্বর দায়ূদ (আঃ) –এর ওপর অবতীর্ণ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসাবে। পণ্ডিতরা প্রায়শই জাবুর কে প্রশংসার পবিত্র গান হিসাবে বুঝতে পেরেছিলেন, আইন পরিচালনার বই নয়। বর্তমান জাবুর এখনও অনেক মুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা প্রশংসিত হয়।
ইঞ্জিল
কুরআন অনুসারে ইঞ্জিল ছিল ঈসা (আঃ)- এর প্রতি অবতীর্ণ পবিত্র গ্রন্থ। যদিও কিছু সাধারণ মুসলমান বিশ্বাস করে যে ইঞ্জিল সমগ্র নতুন নিয়মকে বোঝায়, বেশিরভাগ পণ্ডিত এবং মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে এটি নতুন নিয়মকে বোঝায় না বরং একটি মূল সুসমাচারকে বোঝায়, যা যীশুকে আল্লাহর বাণী হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। অতএব, মুসলিম বিশ্বাস অনুসারে, সুসমাচার ছিল সেই বার্তা যা যিশু ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইস্রায়েলের বংশধরদের কাছে প্রচার করেছিলেন। মুসলিম পণ্ডিতদের বিশ্বাসে, বর্তমান ক্যানোনিকাল সুসমাচারগুলি ঐশ্বরিকভাবে প্রকাশিত নয়, বরং বিভিন্ন সমসাময়িক, শিষ্য এবং সঙ্গীদের দ্বারা লিখিত যীশুর জীবনের দলিল। মুসলিম বিশ্বাসে এই সুসমাচারগুলিতে যীশুর শিক্ষার কিছু অংশ রয়েছে, তবে আল্লাহর কাছ থেকে মূল সুসমাচারের প্রতিনিধিত্ব বা ধারণ করে না। কুরআনে এই পবিত্র গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়েছে তাদের মধ্যে একটি আয়াত যে আয়াতটির মধ্যে সেই তিনটি পবিত্র গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে বলা হয়েছে
আমি মরিয়ম পুত্র ঈসা (আঃ) কে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রেরণ করেছিলাম তাঁর পূর্বে প্রেরিত তওরাতের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য। আমরা তাকে হেদায়েত, আলো এবং ইতিমধ্যে অবতীর্ণ তও রাতের সত্যতা সহ ইঞ্জিল দিয়েছিলাম, যারা আল্লাহর প্রতি মনোযোগ দেয় তাদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শিক্ষা। আমরা আপনার কাছে কিতাব প্রেরণ করেছি সত্যসহ, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং সেগুলোর উপর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রদান করে।
এইভাবেই আল্লাহ ইসলামের পবিত্র গ্রন্থগুলির মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছেন। দুঃখের বিষয় এই যে আজ পবিত্র কুরআন ছাড়া কোনো গ্রন্থই নিজের আসল রূপে নেই। এই গ্রন্থগুলিকে মানুষ নিজেরাই সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে। কিন্তু এই পবিত্র কুরআনকে কোনো ব্যাক্তি বদলে দিতে পারবে না কেননা আল্লাহ নিজে কুরআন শরীফে বলেছেন- এই কুরআন কে আমিই অবতীর্ণ করেছি, আর আমি এই গ্রন্থের রক্ষ্যক। এই জন্যেই পবিত্র কুরআনের একটি অক্ষরও কেউ কিয়ামত পর্যন্ত বদলাতে পারবে না।