তাওউবা: কুরাআন, হাদিস এবং তাসাউফের আলোকে তার মর্যাদা 

ভুমিকা:

ইমাম জাইনুদ্দিন আল মাখদুম আল কবির বিন আলি আল মাবারি আল মালয়াবারি আল শাফি (রহঃ) তিনি তিনার বই “হিদায়াতুল আযকিয়া ইলা তারিকিল আউলিয়া” তে বর্ণনা করছেন যে একটা মানুষ যে তাসাউফের পথে আসতে চায় তাহালে তাকে ৯ টি ওয়াসিয়াত কে মেনে চলত হবে। আশ্চর্যের বিষয় এটা যে তাওউবাও হল সে ৯ ওয়াসিয়াতের মধ্যে একটি ওয়াসিয়াত।   

তাওউবার লুগাওি অর্থ হল الرجوع মানে ফিরে আসা। এবং শরীয়তে তার অর্থ হল সমস্ত কাজ যেটি শরীয়তের বিধানে খারাপ ও মন্দ আছে সেখান থেকে যে কাজ শরীয়তের বিধানে ভাল তার দিকে ফিরে আসা কে বলে। 

ইমাম জাইনুদ্দিন আল মাখদুম আল কবির বিন আলি আল মাবারি আল মালয়াবারি আল শাফি (রহঃ) আবার তিনি বলছেন যে একটা মানুষের তাওউবা কবুল হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আছে: - 

১) যে ব্যাক্তি যা পাপ বা গুনাহের কাজ করেছে তাকে আবার সে সমস্ত গুনাহের কাজের দিকে দুঃখিত অর্থাৎ তাকে আফসোস হতে হবে যে আমি খুবি পাপ কাজ করেছি।

২) এবং যে গুনাহের কাজ যা সে করেছে তাকে শপথ করতে হবে যে আমি আর এর মত গুনাহের কাজ করব না। 

৩) গুনাহ থেকে খুবি দূরত্ব বোজায় রাখা অর্থাৎ গুনাহ বেশি না করা।

৪) এবং সমস্ত মানুষের হক ও অধিকার কে পূর্ণ করে ফেলা। 

এই ৪ টি শর্ত যদি একাটা মানুষ না মেনে চলে তাহালে তার তাওউবা কবুল হবে না এটা ইমাম জাইনুদ্দিন আল মাখদুম আল কবির বিন আলি আল মাবারি আল মালয়াবারি আল শাফি (রহঃ) তিনার উক্তি। অর্থাৎ আমারা বুঝলাম যে একটা মানুষ যে তাওউবা করতে চাই তাহালে তাকে প্রথমে এই ৮ টি শর্তকে মেনে চলত হবে। 

তাওউবার ফজিলত ও মর্যাদা:  

তাওউবার ফজিলতের সম্বন্ধে কুরআন এবং হাদিস শরিফে নানা স্থানে এসেছে যেমন আল্লাহ তালা সুরাহ বাকরার ২২২ নং আয়াতে বুলছেন ان الله يحب التوابين ويحب المتطهرين নিশ্চই আল্লাহ তালা তাওউবাকারি এবং পরিস্কার মানুষদের কে ভালবাসে। এই কুরআনের আয়াত থেকে আমরা বুঝলাম যে কত আল্লাহর কাছে একটা তাওউবাকারিদের মর্যাদা।  

তাওউবার ফজিলতের সম্বন্ধে রাসুল কারিম (সাঃ) একটা হাদিসে বলেছেন যে التائب من الذنب كمن لا ذنب একটা তাওউবাকারি যেমন তার একটাও গুনাহ নেই। আল্লাহ তালা আবার তউবার ফজিলতের সম্বন্ধে সুরাহ নুরের ৩১ নং আয়াতে বলেছেন وتوبوا إلى الله جميعا ايه المؤمنون لعلكم تفلحون এবং এ সমস্ত মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর দিকে তাওউবা করো যেন তোমরা সফলকারিদের মত হতে পারো।    

আমরা এখানথেকে এটা বুঝতে পারলাম যে তাওউবা হল একটা সফলতার আসল ও চাবি। যেমন ইমাম জাইনুদ্দিন আল মাখদুম আল কবির বিন আলি আল মাবারি আল মালয়াবারি আল শাফি (রহঃ) তিনি একটি কবিতাতে বলেছেন:                   

والتوب مفتاح لكل طاعة 

وأساس كل الخير أجمع أشملا

অর্থ:                               

এবং তাওউবা হল সমস্ত তাআতের চাবি  

এবং সমস্ত ভাল কাজের মুল আসল সম্পূর্ণ ভাবে

এই কবিতাতে কবি বলেছেন যে তাওউবা হল সমস্ত তাআতের চাবি এখানে তাআতের অর্থ হল এবাদত এবং ভাল কাজের আসল সম্পূর্ণ ভাবে এখানে أجمع أشمل অর্থ হল সম্পূর্ণ ভাবে। এখান থেকে আমরা তাওউবার ফজিলত অ মর্যাদা বুঝতে পারি।  

 তাওউবার সমন্ধে আর একটা হাদিস বর্ণিত আছে যে আন আবি মুসা (রাঃ) থকে বর্ণিত যে নাবি কারিম (সাঃ) বলেছেন:  

الله تعالى يبسط يده بالليل ليتوب مسيء النهار ويبسط يده با لنهار ليتوب مسيء الليل حتى تطلع الشمس من مغربها ان

নিশ্চয়ই আল্লাহ তালা নিজের হাত কে রাতে বাড়িয়েদেন যেন তার দিনের গুনাহগার বান্দারা রাতে তাওউবা করতে পারে এবং আল্লাহ তালা আবার দিনে নিজের হাত কে বাড়িয়েদেন যেন তার রাতের গুনাহকারি বান্দারা দিনে তাওউবা করতে পারে যতক্ষণ সূর্য নিজের পশ্চিম দিকে না উঠে। 

এখান থেকে আমরা বুঝালাম যে আল্লাহ তালা আমাদের তাওউবা থেকে কত খুশি হয়।   

তার সমন্ধে একটা হাদিস বর্ণিত আছে যে আন আবি সাইদ বিন সাআদ (রাঃ) থকে বর্ণিত যে নাবি কারিম (সাঃ) বলেছেন যে আল্লাহ একটা মানুষের তাওউবা যে তার রবের দিকে তাওউবা করে তার থেকে আল্লহ তালা কত খুশি হয় তার উদাহারণ হল একটা মানুষ যে নিজের একটা ঘোড়া যার উপর তার পানাহার ছিল তাকে সে হারিয়ে ফেলে এবং সে খুব দুঃখিত হয়ে যায় এবং সে একটা খেজুর গাছের কাছে চলে আসে তারপর সে ঘুমে পড়ে হঠাৎ তার ঘুম ভঙ্গ হয়ে যায় এবং সে নিজের ঘোড়া কে তার পাশে দেখতে পায় এবং সে খুশি তে বলে উঠে:  এ রব তুই আমার বান্দা এবং আমি তোর রব   

হাদিসের আলকে তাওউবার ফজিলতের সম্বন্ধে বিখ্যাত গল্প:

এটা হল একটা মানুষের গল্প যে ৯৯ মানুসদের কে মেরে ফেলে ছিল সে এক দিন নিজের গ্রামের মানুষদের কে প্রশ্ন করে যে আমাদের গ্রামে সব থেকে বেশি কে জ্ঞান জানে? গ্রামের মানুষরা উত্তর দিল একটা রাহিব (বানি ইসরাইলের যুগের বিখ্যাত জাদুকর) । তারপর সে রাহিবের কাছে আসল এবং তাকে প্রশ্ন করে যে এ রাহিব আমি শুনেছি যে তোমার কাছে অনেক জ্ঞান আছে সে বলল, তুমি সঠিক শুনেছ তারপর সে হত্যাকারী মানুষ প্রশ্ন করে আমি ৯৯ মানুষদেরকে মেরে ফেলেছি আমার কি তাওউবা আছে? রাহিব উত্তর দেয় না না! তুমি ৯৯ মানুষ কে মেরে ফেলেছো এটা খুব পাপের কাজ। রাহিবের উত্তর শুনে সে রেগে উঠে এবং তাকেও   মেরে ফেলে দেয়। এখন সে মোট ১০০ জন মানুষদেরকে মেরে ফেলে। তারপর সে আবার নিজের গ্রামে মানুষদের কে প্রস্ন করে যে এর থেকেও বেশি কে জ্ঞান জানে? গ্রামের লোকরা আবার উত্তর দেই সে হল একটা আলিম তারপর সে আলিমের কাছে গেলো এবং তাকেও রাহিবের মত প্রশ্ন করল তার পর আলিম তার প্রশ্নের উত্তর খুবি সুন্দর করে দেই যে নিশ্চয়ই তোমার তাওউবা আছে কিন্তু তোমাকে তোমার গ্রাম বাদ দিয়ে একটা নতুন গ্রামে বাস করতে হবে কেনে না তোমার গ্রাম তোমার জন্য একটি বিপদের মত।

তারপর সে মানুষটা আলিমের কথার মেনে বাড়ি থেকে বাহির হয় যাই, যখন সে পথের মাঝে ছিল তার মৃত্যু হয়ে যাই। তারপর জান্নাত ও জাহান্নামের ফেরেশতারা চলে আসে এবং জান্নাতের ফেরেশতারা বলে যে এ  ব্যাক্তি আমার সঙ্গে জান্নাত যাবে কেনে না সে তাওউবা করে ছিল তারপর জাহান্নামের ফেরেশতারা বলে না না  এ ব্যাক্তি আমার সাথে জাহান্নাম যাবে কেন না সে ১০০ জন ব্যাক্তিদেরকে মেরে ফেলেছে। ফেরেশতআদের   ঝগড়াতে তে মালাকুল আল মালাইকা মানে ফেরেস্তাদের রাজা চলে আসে এবং তাদের কে বলে ঝগড়া করে কোনো লাভ নেই আমি একটা তোমাদের কে বুদ্ধি দিচ্ছি সেটা হল তোমরা সে ব্যাক্তির বাড়ি থকে যেখানে  তার মঞ্জিল বা তার যেখানে তার আসার জন্য ভাবনা ভেবে ছিল তার পথের মাঝের পরিমাপ কর যদি তার  মৃত্যু অর্ধেক পথের পরে হয় তাহাল তাকে জান্নাতের ফেরেশতারা তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং যদি অধেক  থেকে বেশি না হয় তাহাল তাকে জাহান্নামের ফেরেশতারা জাহান্নাম নিয়ে যাবে। পথ কে মাপা হল এবং তার  ফলাফল বের হল বেশি অর্ধেক সুতরাং তাকে জান্নাতের ফেরেশতারা জান্নাতে নিয়ে গেল।     

(এয় গল্পটী সাহিহুল বুখারি ও সাহিহুল মুসলিমতে বর্ণিত আছে এবং এটি আলিম ও তাওউবা ও উযলতের ফজিলতের সম্বন্ধে এসেছে)





 




 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter