তওবা বা আল্লাহর কাছে অনুতাপ

ভুলের মধ্যে পড়ে খারাপ কাজ করা মানুষের স্বভাব। কিন্তু এটি একটি বড় নেয়ামত যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের কৃত মন্দ কাজ থেকে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ বলেন, 

'হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত'। 

তাওবার শাব্দিক অৰ্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গোনাহ থেকে ফিরে আসা। কুরআন ও সুন্নাতের পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে “তাওবাতুন নাসূহ” এর অর্থ এমন তাওবা, যা রিয়া ও নামযশ থেকে খাঁটি-কেবল আল্লাহ তা’আলার সস্তুষ্টি অর্জন ও আযাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গোনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গোনাহ পরিত্যাগ করা। দ্বিতীয় অর্থের দিক দিয়ে “তাওবাতুন নাসূহ” শব্দটি এই উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার জন্যে হবে যে, গোনাহের কারণে সৎকর্মের ছিন্নবস্ত্রে তাওবা তালি সংযুক্ত করে। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ “তাওবাতুন নাসূহ” হল মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গোনাহ থেকে দূরে রাখা। 

একজন মুসলমানের জন্য ক্ষমা চাওয়া আবশ্যক। হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবী (সাঃ) দিনে সত্তরবারের বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন । যদিও তিনার কোন গুনাহ ছিল না নবী গণ হচ্ছে পাপ হতে মুক্তি বা মাসুম তিনাদের কে মুমিন হিসেবে তওবা করার নির্দেশ দিতেন। এটা স্পষ্ট যে তাওবা প্রত্যেক সত্যিকারের বিশ্বাসীর জন্য কতটা অপরিহার্য, এমনকি মন্দ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নবীও তাওবা করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাওবার নিয়ামত দান করেছেন যাতে মন্দের জগতে মন্দ ও পার্থিব গোমরাহীতে পতিত না হয় এবং দুর্বল মানব হৃদয় যেমন কখনো আল্লাহর ক্ষমার প্রতি নিরাশ না হয়।

উলামাদের মতে, তাওবা গ্রহণের জন্য চারটি শর্ত রয়েছে।

1. আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা করুন

2. পাপের জন্য হতাশা বোধ করা

3. একই ভুল আবার না করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হন।

4. জীবের প্রতি বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত।

তাওবা হল আল্লাহর কাছে ফিরে আসার পথ, সে যত খারাপ কাজই করুক না কেন। কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ বলেন, 'বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। ।' (আল-জুমার:53),

আবু সাঈদ সা'দ বিন মালেক বিন সিনান খুদরী থেকে বর্ণিত যে, নবী বলেছেন, "তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, 'সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?' সে বলল, 'না।' সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা ক'রে একশত পূরণ ক'রে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, 'হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।' সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল।

যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার ফিরিশতা উপস্থিত হলেন। ফিরিশাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফিরিস্তাগণ বললেন, 'এই ব্যক্তি তওবা ক'রে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।' আর আযাবের ফিরিস্তারা বললেন, 'এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।' এমতাবস্থায় একজন ফিরিস্তা মানুষের রূপ ধারণ ক'রে উপস্থিত হলেন। ফিরিস্তাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, 'তোমরা দু' দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।' অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।" (বুখারী ও মুসলিম)  সহীহতে আর একটি বর্ণনায় এরূপ আছে যে, "পরিমাপে ঐ ব্যক্তিকে সৎশীল লোকদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ঐ সুশীল ব্যক্তিদের দেশবাসী বলে গণ্য করা হল।"

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter