শিরক: জাহান্নামে ঠেলে দেওয়ার কারণ
শিরক হচ্ছে আরবি শব্দ যার মানে ইসলামে হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো বা অন্য কিছুর উপাসনা করা। ইসলাম শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বর হচ্ছে এক, তিনার কোনো শরীক নেই, তিনি জন্ম হননি, তিনার ছেলে নেই এবং তিনার সমতুল্য কেউ নেই এবং তার ঐশ্বরিক গুণাবলী কারো সাথে ভাগ করেন না। ইসলামী মতবাদ তাওহীদ (একত্ববাদ) অনুসারে আল্লাহর সাথে শরীক করা নিষিদ্ধ। মুশরিক হল তারা যারা শিরক অনুশীলন করে, যার আক্ষরিক অর্থ "সমিতি" এবং আল্লাহর পাশাপাশি অন্যান্য দেবতা এবং দেবতাদের গ্রহণ করা আল্লাহর সহযোগী হিসাবে। ইসলাম শিরককে এমন একটি পাপের মর্যাদা দিয়েছে যার তওবা ছাড়া কোনো ক্ষমা নেই, যদি কোনো ব্যাক্তি মুশরিক হয়ে মারা যায় তাহলে তার জাহান্নাম ছাড়া কোনো ঠিকানা নেই। সে নিশ্চয় জাহান্নামে যাবেই, কেননা আল্লাহ কুরআন শরীফে অনেকবার শুধু এই শিরকের ব্যাপারে বলেছেন যে- মুশরিকের ঠিকানা জাহান্নাম ছাড়া কোথাও না তাদের উপর জাহান্নামের আযাব সর্বদা হতেই থাকবে।
ইসলামের সুফিবাদী ব্যাখ্যার অনুসারে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন শক্তিতে বিশ্বাসকে এক ধরণের শিরক হিসাবে বিবেচনা করে। এর মধ্যে মিথ্যা দেবতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তবে অস্তিত্বের অন্যান্য উত্সগুলিতে বিশ্বাসও রয়েছে। বিশ্বাসগুলি সাধারণত একেশ্বরবাদ দ্বারা গৃহীত হয়, যেমন শয়তানকে মন্দের উত্স হিসাবে বা ঈশ্বরের সৃষ্টির নিজস্ব দায়িত্বের উত্স হিসাবে স্বধীন ইচ্ছা , ঈশ্বর ব্যতীত অন্যান্য শক্তির বিশ্বাসের সাথে সমতুল্য এবং তাই নিন্দা করা হয়।
শিরকের ভাগ
শিরক শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয় যথা এক: বহুঈশ্বরবাদ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে পূজা করা এবং দুই: এমন কিছু যা বহুঈশ্বরবাদ নয় বরং একটি নির্দিষ্ট ধরণের পাপ বোঝায় যেমন- লোক দেখানো ইবাদাত করা। ইসলামের অনুসারে শিরককে দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১) বড় শিরক (আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা)
২) ছোট্ট শিরক (আল্লাহ ছাড়া লোককে দেখিয়ে ইবাদাত করা)
বড় শিরক
সাধারণত বড় শিরক বলতে বহুঈশ্বরবাদ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে পূজা করাকে বোঝায়, এবং এই বড় শিরকের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অনেকবার বলা হয়েছে। তারই মধ্যে থেকে একটি কুরআন শরীফের আয়াত হচ্ছে যে- নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করেন না তাকে, যে আল্লাহর বদলে অন্য কারোর জন্য ইবাদত করে, বরং যাকে ইচ্ছা করেন তাকে ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, সে অবশ্যই অনেক বড় পাপ করেছে।
কুরআনের আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে যে- তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের রাব্বী, সন্ন্যাসী এবং মরিয়মের পুত্র মসীহকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছে, যদিও তাদেরকে এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করার আদেশ দেওয়া হয়নি। তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য, তিনার মতো কোন উপাস্য নেই। তারা যাকে শরীক করে, তার চাইতে তিনি মহিমান্বিত।
ছোট্ট শিরক
সাধারণত কম শিরক, বা শিরকে-ই-আসগর হচ্ছে যে- যদি একজন ব্যক্তি দাবি করে যে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, কিন্তু সে এমন চিন্তা ভাবনা এবং কাজ করে যা সেই বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে না।
সৈয়দ কাসিম মুজতবা মুসাভি বলেন যে- "যে ব্যক্তি লোককে দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে, সে মুশরিক।আর যে ব্যক্তি জনসাধারণকে তার ধার্মিকতা দেখানোর জন্য বা সুনাম অর্জনের জন্য রোজা রাখে, যাকাত দেয়, অথবা হজ্জ করে, সে মুশরিক।
এবং এই ছোট্ট শিরকের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে যে- মাহমুদ ইবনে লুবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো আশ-শিরক আল-আসগর (ছোট্ট শিরক)। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, এটা কি? তিনি বললেন: কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তোমরা পার্থিব দুনিয়ায় যাদের কে প্রদর্শন করেছ, তাদের কাছে যাও এবং দেখ, তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন লাভ পাও কি না।
এই ছোটো শিরক এতই খারাপ যে এতা কে যদি বারবার করা হয়, তাহলে এতি বড় শিরকে পরিণত হতে তবে বেশি সময় লাগবে না। আরেকটি হাদিসে আছে, যেই হাদিসটি মাহমুদ ইবনে লুবাইদ (রা.)-ই বর্ণিত করেছেন যে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে ঘোষণা করলেন, 'হে মানুষ, গোপন শিরক (ছোট্ট শিরক) থেকে সাবধান হও। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, গোপন শিরক কি? তিনি বললেন, "গোপন শিরক হচ্ছে তা যখন কোন ব্যক্তি নামাযের জন্য উঠে পড়ে এবং তার নিজের নামাযকে সুন্দর করার চেষ্টা করে কারণ লোকেরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে"।
শিরক যেরকমেরই হোক না কেন এটি জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই আল্লাহ আমাদের সকলকে শিরক থেকে রক্ষ্যা করুক।أمين