ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহ আলাইহে
জন্ম- ইমাম গাজ্জালি ইরানের খোরাসান প্রদেশের কাছে তুস নগরীতে ৪৫০ হিজরি (১০৫৮ সালের – ১৯ ডিসেম্বর )সনে জন্মগ্রহণ করেন।
জীবন - ইমাম গাজ্জালি ইরানের খোরাসান প্রদেশের কাছে তুস নগরীতে ৪৫০ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আল-গাজ্জালি। গাজ্জাল শব্দের অর্থ সুতা কাটা। ইমাম গাজ্জালির বংশের লোকেরা সম্ভবত সুতার ব্যবসা করতেন, তাই তাদের বংশ উপাধি গাজ্জালি নামে পরিচিত। তিনি ৫০৫ হিজরি সনে নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে সুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর দিন ভোর বেলায় তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন। তার ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে নিজ হাতে কাফনের কাপড় পরিধান করেন এবং কিবলার দিকে মুখ করে শুয়ে পড়েন। এভাবেই এই অজানা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এই মহান দার্শনিক। ইরানের কবি ফেরদৌসীর সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। ছোট বেলায় তিনি তার বাবাকে হারান। তার শিক্ষা জীবন ও বাল্যকাল কাটে তুস নগরীতে। ইমাম আল গাজ্জালি (রহ•) তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠতম ধর্মব্যাপী আলেম ছিলেন।
বাল্যকাল ও শিক্ষা দীক্ষা - ছোট বেলায় তিনি তার বাবাকে হারান। তার শিক্ষা জীবন ও বাল্যকাল কাটে তুস নগরীতে। আলেম ইমামুল হারামাই আল জুয়াইনির কাছে তিনি জীবন শৈশব, বাল্যকাল ও শিক্ষা দীক্ষা লাভে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন।পঞ্চম শতকের মধ্যভাগে এই রকম এক সময়ে ইমাম গাজ্জালী জন্মগ্রহণ করেন যখন গ্রিক দর্শণের বিস্তার লাভ হয়ে ছিল। সে যুগে যে শিক্ষা পার্থিব উন্নতির বাহন হতে পারতো, প্রথমত সেই ধরনের শিক্ষা তিনি লাভ করেন। বাজারে যেসব বিদ্যার চাহিদা ছিল, তাতেও তিনি জোর দিয়েছিলেন। অতঃপর এই বস্তুকে নিয়ে তিনি ঠিক সেখানেই পৌঁছেন সেখানকার জন্যে এটি তৈরি হয়েছিল এবং তৎকালে একজন আলেম যতদূর উন্নতির কল্পনা করতে পারতেন ততদূর তিনি পৌঁছে যান।
কর্মজীবন - তিনি ৪৮৪ হিজরিতে বাগদাদ গমন করেন। বাগদাদে তৎকালীন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনায় যোগ দেন। নিযামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনা তার এই জ্ঞান পিপাসা মেটাতে পারেনি। তাই অল্প সময়ের মধ্যে নিযামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনা ছেড়ে সৃষ্টি রহস্যের সন্ধানে তিনি বেরিয়ে পড়েন। প্রায় দশ বছর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে অবশেষে আবার তিনি নেজামিয়া অর্থাৎ তৎকালীন দুনিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এর রেকটর নিযুক্ত হন। নেজামুল মুলক তুসী মালিক শাহ সালজুকী ও বাগদাদের খলিফার দরবারে যোগ্য আসন লাভ করেন। ওই সময় রাজনীতিতে এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেন যে, সালজুকী শাসক ও আব্বাসীয় খলিফার মধ্যে মতবিরোধ দূর করার জন্যে তার খেদমত হাসিল করা হতো। এই পর্যায়ে উপনিত হবার পর তার জীবনে বিপ্লব আসে।। নিজের যুগের ধর্মীয়, রাজনৈতিক জীবনধারাকে যত গভীরভাবে পর্যবের্যক্ষণ করতে থাকেন, ততই তার মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলতে থাকে। অবশেষে সমস্ত রাজকীয় মর্যাদা , লাভ ও মর্যাদা পূর্ণ কার্যকে ঘৃণা ভাবে দূরে নিক্ষেপ করেন। কেননা এগুলোই তার পায়ে শিকল পরিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর ফকির হয়ে দেশ পর্যটনে বেরিয়ে পড়েন। বনে-জঙ্গলে বসে নিরিবিলিতে চিন্তায় মগ্ন হন। বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মুসলমানদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের জীবনধারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। দীর্ঘকাল সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে থাকেন। ৩৮ বছর বয়সে বের হয়ে পূর্ণ দশ বছর পর ৪৮ বছর বয়সে ফিরে আসেন। ওই দীর্ঘকালীন চিন্তা ও পর্যবেক্ষণের পর তিনি বাদশাহদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেন এবং তাদের কথা গ্রহণ করা বন্ধ করেন। বিবাদ ও বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার জন্যে শপথ করেন। তিনি সব কিছু বাদ দিয়ে তুসে নিজের একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি নির্বাচিত ব্যক্তিদের বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিয়ে তৈরি করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তার এ প্রচেষ্টা পুরোপুরি হতে সক্ষম হয়নি, কেননা এ পদ্ধতিতে কাজ করার জন্যে তার আয়ু তাকে পাঁচ- ছয় বছরের বেশি চলতে দেয়নি।
জীবন দর্শন - ইমাম আল গাজ্জালি ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার চিন্তাধারাকে মুসলিম ধর্মের বিবর্তন বলে ধরা হয়। ফালাসিফা বা দার্শনিকদের বিরুদ্ধে তিনি বলেন- দার্শনিকদের মতবাদ কখনও ধর্মীয় চিন্তার উপরে হতে পারে না। প্রয়োজনীয় সত্য সম্পর্কে শুধু ওহির জ্ঞান পাওয়া সম্ভব।
মৃত্যু – তিনি ৫০৫ হিজরি (১৯ ডিসেম্বর ১১১১) ৫২থেকে ৫৩ বছর বয়সে ইরানের সেলজুক সাম্রাজ্যের মধ্যে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর দিন ভোরবেলায় ফজরের নামায আদায় করেন এবং মৃত্যুর পর তিনি তার ভায়ের কাছ থেকে কাফন নিয়ে নিজ হাতে পরিধান করেন এবং কিবলার দিক হয়ে শুয়ে পরেন।