ইন্টারনেটের নোংরা ও অবৈধ জিনিস থেকে বিরত থাকার উপায়
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই দেখছেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা। কবি বলেন,' আমার এ চোখ ঐ যুবকের চাইতে অধিক সুন্দর কাউকে দেখি নি যে নিভৃতে আল্লাহর মাকামকে ভয় করে।' তাই বুদ্ধিমানের উচিত এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহ নেয়া। সবসময় এ কথা মনে রাখা যে, সকল গায়েব-অদৃশ্য আল্লাহর কাছে দৃশ্যমান। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহকে সমধিক হালকা দ্রষ্টা হিসেবে সাব্যস্ত করা কি করে সম্ভব?! এটা অনুধাবন করা উচিত যে, যে ব্যক্তি কোনো কিছু গোপন করবে আল্লাহ তাকে ঐ বিষয়ের পোশাক পরিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি কোনো কিছু গোপন করল, চাই তা ভাল হোক বা মন্দ, আল্লাহ তা প্রকাশ করবেন। আমল যে ধরনের হবে, প্রতিদানও সে অনুপাতেই হবে। ইরশাদ হয়েছে, যে মন্দ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।।। সূরা আন নিসা: ১২৩]
এ ব্যাপারে এবার আমি আপনাকে কিছু আলোকিত বাক্য শুনাব, আবু হাযেম সালমা ইবনে দিনার র. বলেছেন, ' যখন কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক দুরস্ত করে নেয়, তখন আল্লাহও তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে ভালো করে দেন, এর বিপরীতে যখন কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়, আল্লাহও তখন তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেন। আর নিশ্চয়ই একজনের চেহারার তুষ্টি অনুসন্ধান সকলের তুষ্টি অনুসন্ধানের তুলনায় সহজ। এর বিপরীতে যদি আপনার ও আল্লাহর মাঝখানকার সম্পর্ক বিগড়ে দেন তবে সবার সাথেই সম্পর্ক বিগড়ে দিলেন। সবাইকেই রাগিয়ে তুললেন।
মু'তামার ইবনে সুলাইমান বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি সংগোপনে কোনো পাপ করে তবে সে তার লাঞ্ছনা মাথায় নিয়েই সকাল করে'।
ইবনুল জাওযি র. বলেন,' আল্লাহার ব্যাপারে আপনি দলিল তালাশ করেছেন, অতঃপর পৃথিবীতে যত ধূলিকণা রয়েছে তার থেকেও অধিক পেয়েছেন, আল্লাহর আজব বিষয়ের মধ্যে আপনি দেখেছেন যে, আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট নন মানুষ যদি এমন বিষয় গোপন করে, তাহলে বিলম্বে হলেও আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেন। লোকেরা তা নিয়ে কথা বলে। যদিও মানুষ তা দেখে নি।
হয়ত এই পাপকারীকে এমন বিপদে ফেলা হয় যার দ্বারা তার সকল পাপ মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। এ যাবৎ সে যত পাপ গোপন করেছে, এ বিষয়টি তার জবাব হয়ে যায়। এটা এ জন্য ঘটে যাতে মানুষ জানতে পারে যে পাপ ও পদস্থলের প্রতিদান দেয়ার অবশ্যই একজন রয়েছেন। আর তিনি এমন এক সত্তা, কোনো পর্দা বা প্রতিবন্ধকতা, তার ক্ষমতাকে রহিত করতে পারে না, যার নিকট কোনো আমলই হারিয়ে যায় না।
অনুরূপভাবে মানুষ পুণ্যের কাজকেও হয়ত গোপন করে, কিন্তু তা প্রকাশ পেয়ে যায়, মানুষ তা নিয়ে কথা বলে, তারা বরং আরো অতিরিক্ত বলে, এমনকী সে ব্যক্তি তাদের কাছে এমন প্রতীয়মান হয় যে সে যেন আদৌ কোনো পাপ করে নি।
মানুষ তার ভাল কাজগুলোই উল্লেখ করে। এ রকম এ জন্য ঘটে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে অবশ্যই একজ প্রতিপালক রয়েছেন যিনি আমলকারীর কোনো আমলকেই বিনষ্ট করেন না।
মানুষের হৃদয় ব্যক্তির অবস্থা জানে, তারা তাকে ভালবাসে অথবা বর্জন করে, তাকে তিরস্কার করে অথবা তার প্রশংসা করে, তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক যে পর্যায়ের হয় সে অনুযায়ী এগুলো ঘটে। আল্লাহই যথেষ্ট ব্যক্তির সকল উৎকণ্ঠা দূর করার ক্ষেত্রে, সকল অশুভ বিষয় তার থেকে উঠিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে।
আর যদি কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে বিগড়ে দেয়, সত্য অনুসরণের বিবেচনা থেকে সরে আসে, তবে তার প্রাপ্য বিষয় উল্টে যাবে। যারা তার প্রশংসা করত তারাই তাকে তিরস্কার করতে শুরু করবে।'
তিনি আরো বলেন, নিশ্চয় নিভৃতে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক চর্চার প্রভাব রয়েছে যা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে চলে আসে। এমন অনেক মুমিন রয়েছেন যারা নিভৃতে আল্লাহকে সম্মান করেন, অতঃপর সে তার প্রবৃত্তির খায়েশকে ছেড়ে দেয়। কেননা সে আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পায়, অথবা তার ছাওয়াবের আশা করে। অথবা আল্লাহকে সম্মান করে তা ছেড়ে দেয়। এ কাজ করে সে যেন সুবাসযুক্ত কাঠ ধুপদানির উপর রেখে দেয়, অতঃপর তা সুগন্ধি ছড়াতে থাকে। মানুষ তা শুঁকে, অবশ্য তাদের জানা থাকে না এ সুগন্ধির উৎস কোথায়।
মানুষ তার প্রবৃত্তির খায়েশ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য যতটুকু মুজাহাদ করবে, ততটুকু তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে মহব্বত বাড়বে। বর্জনীয় অথচ লোভ্য-প্রিয় বস্তুকে ছেড়ে থাকার জন্য মানুষ যতটুকু শ্রম দেবে তার সুবাসও তত বাড়বে, আর এ সুবাস দাহ্য কাঠের প্রকৃতি হিসেবে বাড়ে অথবা কমে। অতঃপর আপনি মানুষকে দেখবেন যে ঐ লোকটিকে তারা সম্মান- শ্রদ্ধা করছে, তাদের মুখ থেকে তার প্রশংসা রের হচ্ছে, যদিও তারা জানে না কেন এমন হচ্ছে। তারা তাদের অনুভূতিকে ব্যক্ত করতে অপারগ।
এ সুবাস মৃত্যুর পরও সুগন্ধ ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদেরকে মানুষ দীর্ঘকাল স্মরণ রাখে, অতঃপর ভুলে যায়। আবার এমন লোকও রয়েছে যাদেরকে এক'শ বছর পর্যন্ত লোকেরা স্মরণ রাখে, অতঃপর ভুলে যায়। আবার এমনও ব্যক্তি আছে যাদেরকে অনন্তকাল স্মরণ রাখা হয়।
উপসংহার
ইন্টারনেটে অনেক ধরনের জিনিসই সুলভ। তার অনেক ভালো আছে এবং অনেক এমন অশ্লিল ও নোংরা জিনিসও অতি সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু মুসলমান হিসেবে আমাদের হারাম ও হালালের জ্ঞান থাকা উচিত আমাদের সামনে যাই আসুক না কেন তাই আমাদের গ্রহণ করা ততক্ষন উচিত নয় যতক্ষণ তার বৈধতার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত না হতে পারব। আর আমার ধারনা নিশ্চয় এ বিসয়ে কোন মুসলমানের সন্দেহ নেই যে আল্লাহ তাআলার নজর থেকে কেও কখনই দুরে থাকে না। আল্লাহ সব সময় আমাদের উপর নজরদারি করছেন এই বিশ্বাসই আমাদের হারাম থেকে দুরে থাকার সর্বমূল উৎস।