স্বাধীন ভারত: দেশ প্রেমিকদের বর্ণণা
আমরা স্বাধীন ভারতের নির্মল পরিবেশে বসবাস করছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা স্বাধীনতার মূল আর্দশ যথা আমাদের স্বাধীনতার বীরপুরুষের নাম ভুলতে চলেছি। স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ চরম শিখরের পৌছেঁ যায় সে সময়টি ইতিহাসের পাতায় অগ্নিযুগের নাম বলেই বিখ্যাত। এই যুগে ভারতের বিভিন্ন দেশপ্রেমী সংগ্রামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র, ভগৎ সিং, ক্ষুদিরাম বসু, গান্ধীজি, প্রমুখ। এছাড়াও মুসলমানদের মধ্যে খান আব্দুল গফ্ফার, মাওলানা শওকাত আলি, মাওলানা জওহর আলি, মাওলানা কালাম আজাদ, আজিমুল্লাহ খান, আসফাকুল্লাহ প্রমুখের নাম স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বার্ণক্ষরে খচিত। এই দেশপ্রেমিকেদের জন্য বলা হয়:
حب الوطن من الايمان
অর্থাৎ: দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।
ভারত স্বাধীনতায় মুসলিমদের অবদান অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে। মুসলিম বীরপুরুষ বক্ত ও প্রাণূৎসর্গ ব্যতীত ভারত কখনোই স্বাধীনতা অর্জন করতে পারত না। ব্রিটিশদের বিরুদ্বে সর্ব প্রথম বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন আমাদের নবাব সিরাজ দৌল্লাহ এবং তারপরে বৈপ্লবিক মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলেন ভারতের সব প্রদেশের তরুন বিপ্লবীরা। হাসতে হাসতে ফাঁসি জায়গায় তাঁরা জীবনের জয়গান গেয়েছেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে প্রধান নেতৃত্বের মধ্যে আজিমুল্লাহ খানের অবদান অতুলনীয়। এই গণযুদ্ধে সকল মুসলমানদের ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বিভিন্ন মুসলিম বিজ্ঞ ব্যক্তিরা এই মহাবিদ্রোহকে জিহাদ বলে ঘোষণা করেন। ফলে ১৮৫৭-১৮৫৮ পর্যন্ত শুধুমাত্র দিল্লিতে ২৯ হাজার মুসলমান বিদ্রোহী জেলে যায়। মুসলিম নেতাদের ও বিদ্রোহীদের কারারুদ্ধ করে ব্রিটিশরা স্বাধীনতা সংগ্রামের গতি মন্থর করার আপ্রান চেষ্টা চালায়।
যার ফলে খান আব্দুল গফ্ফার খান, আব্বাস আলির মতো বীর বিদ্রোহীরা জীবনের অর্ধেক বয়স জেলে কাটিয়ে ছিলেন। কিন্তু ৪৫ বছর জেলে বন্দি থাকা ও ৫০ বার জেলে যাওয়া, তাদের দীপ্ত মনের আত্রুোশ ও বিদ্রোহকে ব্যর্থ করতে পারেনি। তাদের মতো হাজার হাজার বিদ্রোহীরা বন্দি থাকে ও স্বাধীনতা সংগ্রাম বার বার ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের এই রকমের কর্মপ্রেরণা ও উদ্যোগে বিভিন্ন মুসলিম সাহিত্যিক ও কবিদের অবদান প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সে সব কবিদের মধ্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত কবিতার দ্বারা যুবক শ্রেণীদের মধ্যে সংগ্রামের প্রতি এক বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি ইংরেজদের কুশাসন ভাঙার গান বলেন-
“কারার এই লৌহ কপাট,ভেঙে ফেল,কররে লোপাট
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষান বেদী
ওরে ও তরুন ইশান বাজা তোর প্রলয় বিষান
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।”
এই কবিতাংশ দ্বারা তিনি যুবক বিদ্রোহীদের জেল ভেঙে ব্রিটিশদের বিরুদ্বে যুদ্বের দিকে ডেকে নিয়েছেন। সকল রচনা দ্বারা দেশ প্রেম ও বিদ্রোহের শিখা উদ্দীপিত করেছেন।
শুধুমাত্র এর মধ্যে মুসলিমদের অবদান সীমিত নয়, বরং ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দে মহাবিদ্রোহে হাজার হাজার মুসলিম নারীরাও যুদ্ধের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যার মধ্যে ২২৫ জন বিদ্রোহী নারীকে ব্রিটিশরা প্রকাশ্য আগুনে নিক্ষেপ করে দেয়। শুধু তাই নয় স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল আজাদ স্বাধীনতা সংগ্রামে ভীষণ প্রভাবশীল অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন মুসলিম হিন্দু সমাজের একতার প্রান পুরুষ। তাঁর দেশভক্তির সম্পর্কে একজন কবি লিখেছেন যে, “ তার স্ত্রীর সমাধি কর্মের শেষে তিনি সোজা গিয়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন। তাহলে এই থেকে প্রমাণিত যে তারা নিজের দেশের জন্য তারা নিজের জীবন কে প্রতিদান দিয়েছে।
এছাড়া ইউপির আশাফুল্লাহ খান ইংরেজের বিরুদ্বে গুপ্ত মিটিং করার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালান। তিনি এই কাজের জন্য ইংরেজের হাতে ধরা পড়েন এবং তিনাকে ফাঁসিতে ঝুলে এবং হাসিমুখে ভারতকে বিদায় জানান ও তিনি শেষ বাক্য বলেন:
“No desire is left exept one that some one may put a little soil of my mother land in my winding sheet.”
অর্থাৎ- মনের কোন আশা বাকি নেই, শুধুমাত্র একটি আশা,তা হলো আমার উড়ন্ত চাদরে মাতৃ ভূমির ধুলিকণা পাওয়ার আশা। এই আশা নিয়ে চলে গেলাম।
এই দেশ আমাদের রক্ত ব্যতীত কখনই স্বাধীন হতে পারত না। আমরা শুধু আমাদের ধর্মকে ভালোবাসি না বরং ধর্মের মতো দেশকেও ভালোবাসি। তাই আমরা কখনই দেশের জন্য ত্যাগ বিসর্জন দিতে পিছিয়ে যায়নি। এই জন্য একটি উর্দু সাইরিতে বলছেন:
يقین ہو کہ نہ ہوں بات يقین کی ہے
ہمارے جسم کی مٹی اسی زمین کی ہے