আন্তর্জাতিক পিতৃ দিবস ও ইসলামে পিতার মান ও মর্যদা

আন্তর্জাতিক পিতা দিবস

আন্তর্জাতিক পিতা দিবস হল বছরের এমনএক দিন যেইদিনসকল পিতাদের এক বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় ঠিক যেমনভাবে বিশ্ব মাতৃ দিবস পালন করা হয়। এই দিবসটি প্রত্যেক বছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালিত করা হয়। সেই অনুযায়ী এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এটি ১৮ই জুন উদযাপিত হবে। এই দিবসটির উৎপত্তি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে হয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বাবা দিবসের সর্বপ্রথম উদযাপন ১৯জুন, ১৯১০ তারিখে ওয়াশিংটনের স্পোকেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর থেকেই বিশ্বব্যাপী শুরু হয় এই দিবস পালিত করা।বাবা দিবসের ধারণাটি সনোরা ডড নামে এক মহিলার দ্বারা কল্পনা করা হয়েছিল।রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন১৯৭২সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসকে একটি জাতীয় ছুটির ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছিলেন ।

ভূমিকা:-

সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে আপন ব্যক্তিহল বাবা। বাবা জীবনের ভরসা ও ছায়ার নাম।অনুশাসনের দ্বিতীয় নামটি হল কেবল বাবা।যতই দুঃখ আসুক না কেন দুঃখের ছায়া কখনই বাচ্চাদের উপরযে পড়তে দেয় না সে হলো বাবা।বাবাই একমাত্র ব্যক্তি যার নিজের পকেট খালি থাকলেওসন্তানকে হতাশ করে না।এই পৃথিবীতে একমাত্র বাবাই এমন এক ব্যক্তি যে নিজের চেয়েনিজের সন্তানকে এগিয়ে যেতে দেখতে চায়।মোদ্দকথায়,বাবা হল অনেকটা সূর্যের সমতুল্য।

কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় এই যে আজ বর্তমানে সেই বাবাকেই অবহিলিত করা হচ্ছে । বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা হচ্ছে। তাছাড়া বউরা তাদের নানাভাবে জ্বালাতন করছে, ঠিক মতো খাবার দেয়না, প্রত্যেক কাজেই কোনো না  কোনো ত্রুটি খুঁজে তাদের মন বিপন্ন করে দেয় যারফলে সেই বাবা দুঃখের সহিত তার বাকি জীবনটা কেঁদে কেঁদে কাটাতে বাধ্য় হচ্ছেন।যেমন  কি আমরা এক সংক্ষিপ্ত গল্প থেকে বুছতে পারি,একদা একসময় এক ছেলে ও এক পিতা এক মাঠের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ছেলেটির পিতা ছেলেটিকে প্রশ্ন করল, হে আমার প্রিয় বৎস!ওই ধানের ক্ষেতে ওগুলি কী?ছেলেটি উত্তরে বলল, বক। তখন আবার সেই পিতাটি জিজ্ঞাসা করল, ওই ধানের ক্ষেতে ওগুলি কী? ছেলেটি উত্তর দিল, বললাম তো বক। আবার পিতা ঠিক একই ভাবে সেই প্রশ্নটি দ্বিরুক্তি করলেন কিন্তু পরিশেষেছেলেটি অতি রাগান্বিত হয়ে বলল, আর কতো বার বলব তোমাকে ওগুলি বক। শুধু শুধু মাথা খারাপ করায়। চুপ কর আর একটিও প্রশ্ন করবে না । ছেলের এই উত্তরটি শুনে পিতা ক্রন্দন করতে শুরু করলেন এবং কয়েক শ্বাস ফেলিয়া বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস!তুমি যখন ছোটো ছিলে সেই সময় তুমি আমায় এই প্রশ্নটিকেইহাজারো বার করেছিলে। তোমায় যখন নিজের কোলে নিতাম তখন তুমি কতবার না পেশাব করেদিতে,আমার জামাকাপড় গুলো নষ্ট করে দিতে। তোমার ইচ্ছা পূরণের জন্য় আমি নিজে ঘোড়া হাতি হয়েযেতাম। তোমাকে আমার মতো মূর্খ না হওয়ার জন্যে নিজে সারা দিনভর আমি উত্তপ্ত রোদ্র হওয়া সত্বেওমাঠেঘাটে পড়ে থাকতাম, কখনো খালি সময় পেলেই যে কোনো কাজেই লেগে পড়তাম।কখোনো রাজমিস্ত্রি তো কখোনোবাবরচি, এমনকি কখনো ভ্যান,রিকশাও চালাতাম ।কখনো কখনো তোমাদের পেটভরে খাওয়ানোর নিমিত্তে নিজে না খেয়ে থাকতাম।তোমাকে শিক্ষিতসফল ব্যক্তিহয়ে ওঠার জন্য়ে কতই না ছুটেছিলাম। আজ তুমি এক বড় অফিসার এক সফল ব্যক্তি কিন্তু আমিই আজ তোমার চোখের জ্বালা হয়ে পড়েছি।

 

ইসলামে পিতার মর্যদা ও সম্মান:-

প্রিয় পাঠকগন,আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে আমরা একজন মুসলিম অতএব ইসলামে পিতার মর্যদা  ও সম্মান যা রয়েছে তার প্রতি ঠাহর করা ও তার প্রতি আমল করা।

ইসলামে পিতার গুরুত্ব ও মর্যদা এতটাই যে এই প্রসঙ্গে অনেক হাদিশ বর্ণিত হয়েছে। এমনকি হাদিসে উল্যেখিত রয়েছে যে পিতা হল জান্নাতের সমতুল্য।

আবূদ দারদা (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃজান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা । তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙ্গেফেলতে পার অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণও করতে পার।

এছাড়াও অন্য এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে,

পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা।এখন তোমার ইচ্ছা, এর হেফাজত কর অথবা একে বিনষ্ট করে দাও।’ (মুসনাদে আহমদ: ২১৭৬৫)

এছাড়াও একদা রাসুলুল্লাহ(সা.)-কে পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কেজিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘তারা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’ (ইবনেমাজাহ : ৩৬৬২) অর্থাৎ তাদের সেবা-যত্নেআল্লাহর জান্নাত পাওয়া যাবে। পক্ষান্তরে তাদের অন্তরে কষ্টদিলে জাহান্নাম অবধারিত।

আরও নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং পিতারঅসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট।’ (তিরমিজি : ১৯৬২)।

সুতরাং, হাদিসগুলি থেকে এটাই প্রমাণিত যে পিতা হল জান্নাতের সমতুল্য।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতযে, এক ব্যক্তি বলল:হে আল্লাহর রসূল, আমার সম্পদ ও একটি পুত্র আছে এবং আমার পিতা আমার সমস্ত সম্পদ নিয়ে যেতে চান।তিনি, সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার।"(ইবনে মাজাহ)

আবুহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তিরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, আমার সৎসঙ্গেরসবচেয়ে বেশি হকদার কে? নবীজি বললেনঃতোমার মা।লোকটি জিজ্ঞেস করল, "তারপরকে?" রাসুল তোমার মা।লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, "তারপরকে?" নবীজি বললেনঃতোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, "তারপর কে?" নবীজি বললেনঃআপনার বাবা।(সহীহ বুখারী 5626)

আবূহুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:কোন সন্তান তার পিতাকে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে না যতক্ষণ না সে তাকে একজন ক্রীতদাস হিসাবে খুঁজেপায়, তাকে ক্রয় করে এবং তাকেমুক্ত করে।" (সহীহ মুসলিম:2787)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:ধার্মিকতারসর্বোত্তমকাজহলএকজনমানুষতারপিতারপ্রিয়জনদেরসাথেসুসম্পর্কবজায়রাখে।(সহীহমুসলিম2552)

অতএব উপরুন্ত হাদিশগুলি থেকেই প্রমাণিত যে ইসলামে পিতার কতই না ফযিলত কতই না মর্যদা।

উপসংহার:-

ছেলেমেয়ের জন্যএকজন পিতা কি না করেন। তাই বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা দিনক্ষণে বেঁধে রাখা যায় না।যদিও বাবার রাগ আমাদের কাছে রাগ বলে মনে হয় কিন্তুবাস্তবে তা হলো বাবার ভালবাসা।এক কথায় আমরা বলতে পারি যে বাবা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।আপনি জীবনেও বাবা ও মায়ের ভালো বাসার ঋণ শোধকরতে পারবেন না ।একজন পিতার গুরুত্ব সেই সন্তানই বোঝে যে পিতার ভালোবাসাপায়নি। তাই বলি সর্বদা পিতার সহিত সৎ ব্যবহার করো। যেমনকি কুরআন শরীফে উল্লেখিত রয়েছে যে, তোমরা তোমাদের পিতা মাতার সহিত এমন ব্যবহার করো যে তারা যদি তোমাকে কোনো কিছু করতে বলেন তাহলে তার প্রতুত্তরে কখনোই উফ পর্যন্তও বলোনা।এছাড়াও অহর্নিশি তোমরা তাদের জন্য দুয়া করতে থাকো কেননা একটি বর্ণিত রয়েছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তার নেকবান্দাদের মর্যাদা জান্নাতে উন্নীত করবেনএবং তারা বলবে : হে প্রভু, এটা কি ? আল্লাহ বলবেন: এটাতোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে ।(মুসনাদে আহমদ 10232)

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter