মমতা দিদির নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী মিম পার্টি
বাংলার রাজনৈতিক টানাপোড়া একটি মজার পাঠ্য বিষয়। বামপন্থী, তৃণমূলের কেন্দ্র স্থল হল বাংলার চৈহাদ্দের মধ্যেই। এবার নতুন কমরেড আসছে বিজেপি সৈন্যদল ও নব্য নতুন 'হায়দ্রাবাদী বাহিনী' আসাদুদ্দিন ওয়াইসির পার্টি এআইএমআইএম (AIMIM) বা অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তিহাদুল মুসলিমীন। আগামী ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ভোট ও ক্ষমতাকে নিয়ে আরও প্রকট হবে রাজনৈতিক সংগ্রাম। প্রতিষ্ঠিত হবে নতুন নির্বাচনী সমীকরণ। রাজ্যের ২৭% মুসলিম সম্প্রদায় আসন্ন নির্বাচনের একটি দিক নির্দেশ হিসেবে ভূমিকা নিবে। উঠে আসবে আলাদা একটি পশ্চিম বঙ্গ রাজনীতি।
দিদির রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই আকর্ষক। তিনি একাই বাঙলা থেকে দু'দুটি পার্টির স্খলন ঘটিয়ে পদচ্যুত করেছেন। তিনি এখনও বিজেপি (BJP) যথা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবাহ রুখে দাঁড়াতে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু মিম প্রবাহ আবার কোন দিক থেকে তাঁর গতিকে থামিয়ে দেবে না তো? এই বিষয় নিয়ে তুমুল চর্চা আলোচনা আরম্ভ হয়েছে রাজনীতি অভিজ্ঞদের মধ্যে। তাছাড়া ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি'র ৪২'টি সিটের মধ্যে ১৮'টি সিট নিয়ে বিরাট উত্থান এই আলোচনাকে আরও আবশ্যিক করে তোলে, যেখানে ২২'টি সিট মমতার দখলেই থাকে। বঙ্গ রণক্ষেত্রে বিজেপি নতুন হয়েও চমকপ্রদ প্রদর্শন করেছিল। বাস্তবে পশ্চিম বাংলায় গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-দিদির মধ্যে জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক সমীকরণ দেখা যাবে। কংগ্রেস এবং বিশেষ করে বাম সমর্থকদের স্থান ক্রমিকভাবে বিজেপি'র আধিপত্যে আসছে। দিদি তাদের সমর্থন অর্জনে আংশিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এর প্রভাব আগন্ন নির্বাচনেও নিঃসন্দেহে পরবে।
মিমের বঙ্গ পরিকল্পনা
আবশ্যিকভাবে নির্বাচনী লড়ায়ে মিমের অংশগ্রহন বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিসরকে সক্রিয় করে তুলবে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার জন্য এই পরিস্থিতিকে শামাল দেওয়া আরও বড়ো চ্যালেঞ্জের বিষয়। কেননা তৃণমূলে এক অধিকাংশ ভোটের অংশীদার বাঙ্গালি মুসলিম সম্প্রদায়। এরই কারণে তো দিদির বিরুদ্ধে বারবার বিরোধী দল 'মাইনরিটি অপিজমেন্ট'-এর অভিযোগ উঠিয়েছে। আর মিম পার্টি শুধু মাত্র মুসলিম জনসংখ্যা অধিপত্য অঞ্চল থেকেই প্রার্থী প্রদানের পরিকল্পনা করছে। মিম পার্টির নির্বাচনী মহরার বিষয়বস্তু হল বাঙ্গালি মুসলিমের প্রতিনিধিত্ব। মিম পার্টি মুখপাত্র ও পশ্চিম বঙ্গ কর্ডিনেটর ওয়াসিম ওয়াকার মন্তব্য অনুসারে: বাঙ্গালি মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক পার্টির শুধু দাস হয়ে এসেছে। তাদের অগ্রগতি ও উন্নতি সম্পর্কে কেউ ভাবেনি। মুসলিম জনবহুল জেলা মুর্শিদাবাদে একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেয়।
আসাদ বাহিনীর বাংলায় জোরালো অগ্রগতি
আগামী ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন খুবিই প্রতিযোগিতামূলক হবে। সীমাঞ্চল বিহারে পাঁচটি সিট জয়ের পর, বাংলায় মিম তার প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সকল লড়াকু পার্টির প্রস্তুতি বিস্তরভাবে আরম্ভ হয়ে যায়। মিমের কেন্দ্রিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলায় মিম পার্টির মেম্বারশিপ কমবেশি তিন লাখ। ডাটাটি তারা অনলাইনে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পেয়েছে। তাছাড়া মুসলিম জনবহুল জেলা যথা মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুর থেকে মিমের তরফে ৫৫'টি এসেম্বলি সিট আসার সম্ভাবনা। বর্তমানে মিমের ২১'টি জেলায় পার্টি অফিসও গড়ে উঠেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুসারে ৯০% মুসলিম ভোট অর্জনে মিম সফল হবে। পশ্চিম বঙ্গ মিম পার্টি কর্মকর্তাদের মতে তারা প্যারেড বিগ্রেড গ্রাউন্ডে সাধারণ সমাবেশের জন্য আবেদন করেছে। বিশেষজ্ঞদের কথা অনুসারে পশ্চিম বঙ্গে মিম উত্থানের একটি অন্যতম কারণ জাতীয় নাগরিকত্ব সংশোধনীয় আইনের বিরুদ্ধে পার্টির অনড় প্রতিবাদ। আসাদ বাহিনীর বাংলায় অগ্রগতি দেখে তৃণমূলের অভিযোগ: বাংলায় একটি 'হায়দ্রাবাদের সন্ত্রাসী দল' মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
টিএমসি-বিজেপি-মিমের পারস্পরিক শীতল লড়াই
নির্বাচনের আহ্বান আসতেই সকল পার্টির মধ্যে শীতল যুদ্ধ ও বাক লড়াই আরম্ভ হয়ে গেছে। বাতিক্রমভাবে তো এটাও খবরে এসেছে যে একটি দল তার নিজের সদস্যকে মেরে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাতে একটি পলিটিক্যাল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। মুসলিমরা যেহেতু বেশিরভাগ তৃণমূল সমার্থক। আবার মিমের একটি বিশেষ পরিচয় হল মুসলিম প্রধাণ্যতা। তাই মুসলিম সম্প্রদায় আগামী নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক নির্দেশক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্টি বার বার বলে আসছে: মিম বিজেপি'র একটি অংশ হয়ে বঙ্গ ভঙ্গের জন্য কাজ করছে। মিমের পশ্চিম বঙ্গ কর্মদক্ষরা উত্তরে বলে: লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার সময় টিএমসি'র ৮ জন সংসদ পার্লামেন্টে অনুপস্থিত ছিলেন। অতঃপর, এটি কি প্রমাণিত নয় যে বিজেপি'র 'বি' টিম কে? সেখানে বিজেপি মুখ খুলে: বিজেপি'কে পরাজয় করার জন্য দুটিই একই টিম।
বিজেপি'র জোয়ার টিএম'সির ভাটা
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ নির্দেশ করে হাইদ্রাবাদী বাহিনী যদি বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে নিশ্চিত যে বিজেপির লাভ হবে, যদিও সম্পূর্ণরূপে বিজয়ী নাও হতে পারে। অনুরূপ, ক্ষমতারত তৃণমূল ংগ্রেস সিটের অংকে পিছিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমনকি মিম যদি টিএমসি'র সঙ্গে জোটে থাকে তবুও কিন্তু দিদির দল হালকা হবে, কারণ তৃণমূলের হিন্দু সমর্থন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা হয়। অর্থাৎ লাভ হবে বিজেপি'র। ঠিক একই ভাবে টিএমসি যদি একাই লড়ে, তবুও মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশ আসাদুদ্দিনের পার্টিকে নির্বাচন করবে। এখানেও লাভ বিজেপি'র।
এসব ছেড়ে, মিমের সফলতা কতদূরে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জল্পনা চলছে। কলকাতা বিশবিদ্দ্যালয়ের কিংশুক চ্যাটার্জির মতে বাংলায় একটি মজবুত ঘাঁটি তৈরি করা শিঘ্রই মিমের কাছে সহজ হবেনা।