মুসলিম জাতির অধঃপতনের কারণ 

আজ বিশ্বে মুসলিম সমাজ সর্বত্র অপবাদ ও অবহেলার পাত্র হয়ে পড়েছে। তাদের কোন জায়গায় সম্মান নেয়। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? কোন কারনে আজকে এই সম্প্রদায় সবার কাছে পদদলিত?

তো চলুন মুসলিম জাতির অধঃপতনের কারণ গুলি জেনে নিই এবং তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করি যাতে মুসলিম জাতি অধঃপতন থেকে বাঁচতে পারে।

মুসলিম জাতির অধঃপতনের এক বিশেষ কারণ হল যে নিজেদের মধ্যে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অবক্ষয়। এই বিষয় সর্ম্পকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় সজাগ হতে বলেছেন, তিনি সূরা আল ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন:
واعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرقوا অর্থাৎ- তোমরা সকলে মিলে খোদার রজ্জুকে শক্ত করে ধারণ করো এবং দলাদলিতে পরিও না।
 এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্মানিত দীন তথা ইসলাম অবলম্বনকারীদের সংবদ্ধ হয়ে থাকতে আদেশ দিয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ বিচ্ছেদ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। কারণ যদি একটি সমাজ নিজেদের মধ্যে বিভেদ বিচ্ছেদে লিপ্ত হয়ে থাকে তাহলে, সেই সমাজের শক্তি হারিয়ে যায়। তারা কোনো দিনই সফল হতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে এক বিখ্যাত দার্শনিক বলেছেন যে: 
"Where there is unity there is always victory" 
অর্থাৎ- একাত্মতাই শক্তি।
 অতএব আমার প্রিয় ভাইয়েরা যদি আমরা মুসলিম সমাজ সম্মিলিতভাবে শুধুমাত্র ইসলামের জন্য কাজ করি তবে একদিন অবশ্যই আমরা সম্মানিত হবো। তাই আমাদের উচিত যে আমরা নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বীজ রোপন করি। রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে:
 لا يؤمن احدكم حتى يحبوا لأخيه ما يحب لنفسه
 অর্থাৎ- তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মোমিন হবেনা, যতক্ষণ  সে তার ভাইয়ের জন্য সেই বস্তুটি পছন্দ করবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে (সহিহ বুখারী)। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে  ঈমানের পূর্ণতার জন্য করার জন্য আপন ভায়ের জন্য সেই বস্তুটা পছন্দ করতে হবে যেটা আমরা নিজের জন্য করি। তায় প্রিয় ভাইয়েরা আজ থেকে আমরা প্রতিজ্ঞা নিব যে আমরা নিজেদের মধ্যে সংবদ্ধতা ও একতাকে সুদৃত করে তুলবো এবং কেউ কাউকে দুঃখ কষ্ট দেব না ও সকলে মিলে একসঙ্গে ইসলামের উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা করব।
প্রিয় ভাইয়েরা এই কারণটি ছাড়াও আরেকটি বিশেষ কারণ হল যে কুরআন ও হাদিস কে সঠিকভাবে অধ্যায়ন ও অনুসরণ না করা। এই সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিসে বলেছেন-
 إن الله يرفع بهذا الكتاب أقوما ويضع به الآخرين 
অর্থাৎ-  এই কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কোন জাতিকে উন্নত করেন এবং অন্যদের অবনত করেন (মুসলিম)। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একমাত্র কোরআনের মাধ্যমে মানুষ ইহকাল ও পরকালে মর্যাদা লাভ করতে পারে। আর কুরআন তেলাওয়াত না করলে মানুষ উভয় জীবনে হবে লাঞ্ছিত।এই বিষয় সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোও একটি হাদিসে বলেছেন যে কি-
 تركتُ فيكم أمرين، لن تضلُّوا ما تمسكتم بهما: كِتاب الله، وسُنَّة نبيِّه  
অর্থাৎ- আমি তোমাদের মধ্যে এমন দুটি জিনিস রেখে গেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সেই দুটি কে আঁকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথ ভ্রষ্ট হবে না সেই দুটি জিনিস হল আল্লাহর গ্রন্থ কুরআন এবং নবীর সুন্নত।
   আমরা যদি আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ কুরআন ও নবীর সুন্নাত অর্থাৎ হাদিসকে যতক্ষণ পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পথ ভ্রষ্ট হবো না। কিন্তু আমরা কি আজ বর্তমানে কুরআন ও হাদিস কে অধ্যায়ন বা শুনে অনুসরণ করে থাকি? এই প্রসঙ্গে ডঃ আল্লামা ইকবাল একটি কবিতায় বলেন:
زمانے میں معزز تھے تے مسلمان ہوکر،
اور آج ہم خور ہوئے تارک قرآن ہوکر
অর্থাৎ- সাহাবীরা যুগে খুবই মর্যাদাবান ছিলেন। এবং বর্তমানে আমরা পদ্দলিত হয়ে গেছি কেন কি আমরা ভুলে গেছি কোরআনকে।
এই থেকে এটাই বুঝতে পারি যে সেই কলে মুসলমানরা কুরআন হাদিসকে ভালো করে অধ্যায়ন করতেন ও অধ্যায়ন করার সাথে সাথে আমলও করতেন, কিন্তু বর্তমানে আমরা কুরআন হাদিসকে ভালো করে অধ্যায়ন ও আমল করি না তাই আমরা বর্তমানে সবার কাছে পদদলিত হয়ে যাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন:
 "Islam is the best religion but muslims where are" 
অর্থাৎ: ইসলাম হল সর্ব শ্রেষ্ঠ ধর্ম কিন্তু মুসলিমরা কোথায়?
এই প্রবাদটি থেকে এটাই বোঝা যায় যে ইসলাম ধর্ম হল সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম কিন্তু মুসলিমরা ইসলামকে সেই ভাবে মেনে চলতে পারছে না. তাই আজ মুসলিমরা পিছিয়ে পড়ছে.
এই কারণ দুটি ছাড়াও আরেকটি বিশেষ কারণ হলো যুবক। বর্তমানের যুবকরা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গেছে। কুরআন হাদিসকে ভুলে গিয়েছে এবং নিজের জীবনটা নিজের মনের মতন কাটাচ্ছে। 
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিসে বলেছেন-
نعمتان مغبون فيهما كثير من الناس الصحة والفراغ
 অর্থাৎ- আল্লাহর দুটি নিয়ামত যা অধিকাংশ মানুষের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে তা হচ্ছে স্বাস্থ্য ও অবসর।
 এই হাদীসটি থেকে এটাই বোঝা যায়

ে স্বাস্থ্য অর্থাৎ যৌবন কাল চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। অতএব আমাদের যৈবন কালকে ইসলামের জন্য ব্যয় করতে হবে। কেননা এই যৌবন কালে আমাদের কাছে সব কিছু করার ক্ষমতা থাকে। এছাড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যুবকদের বেশি ভালোবাসতেন। কেননা তারা ইসলামের জন্য অনেক কিছু করতে পারতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ওমরের  জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন
اللهم ايد الإسلام بأحد العمرين 
অর্থাৎ- হে আল্লাহ তুমি দুই ওমারের মধ্যে কোন একজনকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে এসো। 
কেননা সেই যামানাই  দুই ওমার অর্থাৎ উমার ইবনুল খাত্তাব ও আবু জাহেল দুই শক্তিশালী ও সাহসী যুবক ছিলেন। তায় তাদের দুজনের মধ্যে একজন  ইসলাম গ্রহণ করলে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এই প্রসঙ্গে দার্শনিকরা বলেছেন
 "Youth are the main capital of the ummah" 
অর্থাৎ- যুবকরা হল উম্মাতের মূলধন। অতএব আমাদের যুবকদের ইসলামের জন্য এগিয়ে আসতে হবে এবং মুসলিম জাতির অধঃপতন কে থামাতে হবে।
এছাড়াও মুসলিম জাতির অধঃপতনের নানা রকম কারণ আছে যেমন কি ঈমানের দুর্বলতা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের সূরা আল ইমরান এর ১৩৯ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন যে- 
 وَ لَا تَہِنُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ  کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡن 

আর তোমরা নিরাশ হয়োনা ও দুঃখিত হয়োনা এবং যদি তোমরা বিশ্বাসী হও তাহলে তোমরাই বিজয়ী হবে। 
এই আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে, যদি আমরা প্রকৃত মোমিন হয়ে থাকি তবে নিশ্চয়ই আমরাই জয়ী হব কেননা এটা আল্লাহ তাআলা বলেছেন। অতএব আমাদেরকে প্রকৃত মোমিন হতে হবে তবেই আমরা মুসলিম জাতিকে অধঃপতন থেকে বাঁচাতে পারি।
প্রিয় ভায়েরা যদি আমরা  মুসলিম জাতিকে অধঃপতন থেকে বাঁচাতে চাই তবে আমাদেরকে কোরআন অনুযায়ী আমল করতে হবে, রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শ আঁকড়ে ধরতে হবে, ঈমানী শক্তি বাড়াতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে আবারও মুসলমানরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। সারা পৃথিবীতে তারা সম্মানিত হয়ে আবার পরিচয় দিবে।  
 متحد ہو تو بدل ڈالو نظام گلشن
منتشر ہو تو مرو,شور مچاتے کیوں ہو

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter