এক স্বনের বাস্তবায়ন: দারুল হুদার চল্লিশ বছর এবং আগামী পরিকল্পনা
১৯৮৬ সালের ২৫ জুনে প্রারম্ভিত দারুল হুদার শিক্ষা আন্দোলন এখন তার গর্বের চল্লিশ বছর উদযাপন করছে। কেরালায় আরব সাগর ঘেঁষা মাল্লাপ্পুরম জেলার উদীয়মান ছোট চেম্মাদ বাজার পরে হিদায়া নগর গ্রামে অবস্হিত দারুল হুদা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির জ্ঞান বিতরণ বিগত চার দশকের মধ্যে ওপারের সমুদ্র তীর অতিক্রম করে আরব, আফ্রিকা, ইউরোপ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং এপারের মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বিকিরিত। এবার দেশের ক্ষেত্রে কেরালা তো অবশ্যই। তারপর সমগ্র রাজ্যে এই জ্ঞান অভিযান কার্যরত। কিছু অবশ্যই ব্যতিক্রম থেকে গেছে যা বর্তমান পরিকল্পনায় আগামী গন্তব্যস্থল।
চেম্মাদের জলেপূর্ণ মাঠে ৪০ বছর আগে একটি জ্ঞানের মৌচাক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, দারুল হুদা অসংখ্য জ্ঞানের মৌমাছি তৈরি করেছে যা মিষ্টি অমৃত দিয়ে বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায়কে নিরাময় করে চলে আসছে। মালাবার ও তার বাইরে উড়ে যাওয়ার লালিত স্বপ্ন নিয়ে, সুগন্ধি অন্ধ্র থেকে আসাম পর্যন্ত প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি আসাম এবং বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলিতে শিক্ষার একটি অনন্য বৈপ্লবিক ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলেছে।
এক অস্বাভাবিক সূচনা এবং প্রাথমিক যাত্রা
১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় মুসলমান যখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বঞ্চনার শিকার। কেরালা মুসলিম সমাজ ব্যতিক্রম ছিলনা - আন্তঃধর্মীয় বিদ্বেষ, অজ্ঞতা, শিক্ষার বিভাজন (পার্থিব এবং ধর্মীয় বর্গে) প্রভৃতি ব্যাধিতে তারাও আক্রান্ত ছিল। এক ঐকিক সূত্রে সার্বিক শিক্ষার সচেতনতায় মুসলমান সমাজ সম্বল হবে - এই সংকল্প নিয়ে এগিয়ে আসেন কয়েক দূরদর্শী ব্যক্তিবর্গ। যাদের মধ্যে ড. ইউ বাপুট্টি হাজী, এমএম বাশীর মুসলিয়ার এবং সিএইচ হাইড্রোস মুসলিয়ার প্রথম প্রণালীতে। এরাই দারুল হুদা যাত্রার প্রাণপুরুষ এবং পৃষ্ঠপোষক। উল্লেখযোগ্য যে বাপুট্টি হাজী যখন জলপূর্ণ স্থান ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য মাটি দিয়ে ভরাট করতেন তখন লোকে বিদ্রুপ করতো। ১৯৮৬ সালে তাদের স্বপ্নের জ্ঞান কেন্দ্র দারুল হুদা ইসলামিক একাডেমি নামে এক নতুন পরিকাঠামোর সঙ্গে বাস্তবায়িত হয় যেখানে আধুনিক বা পার্থিব ও ইসলামিক শিক্ষাকে একই কক্ষে স্থান দেওয়া হয়। দারুল হুদার প্রথম ব্যাচকে উদ্দেশ্য করে বাপুট্টি হাজী বলেন: এই উজ্জ্বল নক্ষত্রপঞ্জি একদিন দেশ পেরিয়ে আমেরিকার আকাশে জ্যোতির্ময় হয়ে উঠবে। দারুল হুদা থেকে স্নাতক শিক্ষার্থীরা দীন-দুনিয়ার শিক্ষা নিয়ে হাদিয়া নামক সংগঠনের ছত্রতলে জাতি ও সমাজের সেবায় নিয়োজিত। ২০০৯ সালে একাডেমি থেকে ইউনিভার্সিটি রূপে উন্নত হয় এই প্রতিষ্ঠান।
মূল প্রতিষ্ঠান এবং শাখা-প্রশাখা
এক বৃহৎ বৃক্ষের মতো কেন্দ্রে পোক্ত মূল রেখে তার চতুর্দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তারিত করেছে এখন দারুল হুদা। বর্তমানে কেরালার মধ্যে দারুল হুদা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছাব্বিশ যেখানে কেরালার বাইরে নয়টি। উল্লেখযোগ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মুম্বাই, কর্ণাটকা অফ ক্যাম্পাস। সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের জন্য বেশ কয়েক বিশেষ ক্যাম্পাস আছে। অন্যদিকে হাদিয়ার বিভিন্ন কর্মসহ জাতীয় প্রজেক্টের অন্তর্গত ১৪ টি রাজ্যে কাজ চলছে যেখানে ৩০৮৮ জন মাদ্রাসা শিক্ষকের অধীনে লক্ষধিক বাচ্চা-বালিকা অধ্যয়নরত।
কিছু সম্মানের স্বীকৃতি
দারুল হুদা ইতিমধ্যে বেশ কয়েক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশেষ উল্লেখ্য করার মধ্যে লীগ অফ ইসলামিক ইউনিভার্সিটিজ, কায়রো দারুল হুদাকে সদস্যভুক্ত করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দারুল হুদার স্বারকলিপি আছে যেমন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ মালেশিয়া ইত্যাদি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে দারুল হুদা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এখানেই স্থির নয়। স্বপ্নের মতো চৌহদ্দিহীন পরিকল্পনা দারুল হুদার। প্রত্যেকের কাছে যেন নিশ্চয়তা করা যায় এবং তালিম, তর্বিয়াহ ও দাওয়াহ-এর মধ্যে প্রস্তুত প্রত্যেক সদস্য যেন জ্ঞান নিয়ে যে কোনো মাধ্যমে সত্যের সেবায় নিয়োগ হতে পারে। এই প্রয়াস চিরন্তর। এক জ্ঞানের আন্দোলন যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়ে যায়। এই ইচ্ছাশক্তি ও আধ্যাত্মিকতায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠান তারকার মতো আকাশে উড়তে দেখা যায়।