বাবরি মসজিদের সমষ্টিগত ইতিহাস : ১৫২৮ থেকে ২০১৯ 

বাবরি মসজিদের নির্মাণের তারিখ অনিশ্চিত। এই মসজিদের প্রতি শিলালিপি বিস্ শতকে খুঁজে পাওয়া গেছে সেই অনুযায়ী বাবরি মসজিদের নির্মাণের তারিখ হচ্ছে ৯৩৫ হিজরী ও ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে মুগল রাজা জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের আদেশে অযোধ্যা নামক জাগায় তিনার সেনাপতি মীর বাকির দ্বারাই এই মসজিদের নির্মাণ করা হয় । এই শিলালিপি গুলি আধুনিক ইতিহাস অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

দিল্লী সালতানাত এবং তিনার উত্তরাধিকারী, মুগলরা ভারতের শিল্প, স্থাপত্যবিদ্যার ও বিভিন্ন সুন্দরতম নির্মাণকৃত সমাধি, মসজিদ ও মাদ্রাসা গুলির মহান পৃষ্টপোষক ছিলেন। এই শিল্প এক আলাদা ধরণের শিল্প হিসেবে চিহ্নিত যা প্রভাব পরে তুগলক রাজত্ব কালের শিল্প থেকে। সারা ভারতে বিভিন্ন ধরণের মসজিদ যা রকমারি আর্কিটেকচার ব্যাবহার করে নির্মাণ করা হয়েছিল যা আধুনিক যুগে পর্যটন স্থান রূপে ব্যাবহারিত হয়। সব থেকে খুবসুন্দর ধরণ উন্নতি হয়েছিল সেই জাগায় যেখানে আদিবাসী শিল্পের ঐতিহ্য খুব শক্তিশালী ছিল ও  যেখানে দক্ষতাপূর্ণ কালিগোর  বসবাস করত। 

বাবরি মসজিদের আর্কিটেকচার অনুসরণ করা হয়েছিল জৌনপুর রাজত্ব থেকে। এই মসজিদটিকে পশ্চিম দিক থেকে দেখলে জৌনপুরের আতলা মসজিদের অনুরূপ । মসজিদের যে আর্কিটেচার গুলি ছিল সেগুলি দিল্লী রাজত্ব কালের যে মসজিদগুলি ছিল সেগুলির প্রতিরূপ। বৈইশিষ্টপূর্ণ ও স্বতন্ত্র রীতির মধ্যে বাবরি মসজিদ খুব গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ, দিল্লী রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত পরে এই মসজিদের উন্নতি হয়। এই মসজিদের আর্কিটেকচার বেঙ্গলের মালদার গৌড় মসজিদ এবং জামালী কামালী মসজিদ যা শের শাহ সুরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেখানকার আর্কিটেকচারও এই মসজিদে দেখা যায়।   

ডিসেম্বর ৬ই তারিখ ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে এল কে আডবাণীর ও জোশির কৌতহলী বক্তব্যে কর সেবকদের অন্তরে উৎসাহ জাগিয়ে দেয় এবং তারা এল কে আডবাণীর রথ যাত্রার দিন এই মসজিদ কে ধ্বংস করেন। এই মসজিদের ধ্বংস স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু হিসেবে চিহ্নিত রয়ে গেছে,  এবং ভারত এক ঐতিহ্যময় আর্কিটেচার  কে বিনষ্ট করে দিয়েছে এবং এটি ভারতের এক দুঃখজনক ঘটনা । এর উপর প্রশ্ন উঠিয়ে যাবে যে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ও প্রজাতন্ত্রের ভবিষ্যৎ হিসেবে।

   

বাবরি মসজিদ সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ঘটনা

 

 ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান বাবরের সেনাপতি মীর বাকি এই মসজিদের নির্মাণ করেন। 

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বাবরি সংলগ্ন এলাকায় প্রথম ধর্মীয় হিংসা আরাম্ভ হয়। 

১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিবাদ সৃষ্টির কারণে ব্রিটিশ প্রশাসক মসজিদ চত্বর পৃথক করে দেন, মসজিদের ভিতরের অংশ মুসলমানদের প্রার্থনা করার জন্য ও বাহিরের অংশ হিন্দুদের ব্যাবহার করার জন্য স্থায়ী করে দেন।  

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জন্ম স্থান যা মহান রাঘুবরদাস দ্বারা চলিত সংঘটন তারা মসজিদের বাহির অংশে যা ব্রিটিশ সরকারের স্থায়ী করা জাগায় এক মন্দির নির্মাণ করার জন্য অনুমতি চাইলো কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তা অস্বীকার করে দেন।  

১৯৪৯: মসজিদের দরজা ভেঙে রাম মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন, এই কারণে কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে  মসজিদে তালা লাগিয়ে দেন ও পাহারা দেওয়ার জন্য পুলিশ নিয়োগ করে দেন।  জমি রিসিভারদের হাতে।  মূর্তি সরানোর নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও নির্দেশ গ্রহণ করেন নি। 

১৯৫০: রাম লালার মূর্তি রেখে পুজোর আর্জি জানিয়ে ফৌজাবাদ দায়রা আদালতে দুটি মামলা চলেন। আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ, যত দিন মসজিদে প্রার্থনা বন্ধ থাকবে , তত দিন রামমূর্তি দর্শনেরও অনুমতি নেই। 

১৯৫৯: জমি চেয়ে আদালতে আখড়া। 

১৯৬১: পাল্টা আবেদন করেন সুন্নি ওকাফ বোর্ড।  

১৯৬৪: সব মামলা একত্র। 

১৯৮৪: বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

১৯৮৬:ফাইজাবাদ জেলা আদালতের রায় মেনে মসজিদের তালা খোলা হল এবং পুনরায় রামলালার দর্শন আরাম্ভ হল।  

১৯৮৬: এই রায়ের বিরুদ্ধে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সুন্নি ওকাফ বোর্ড মামলা করল এবং বাবরি মসজিদ অ্যাকশন সদস্যদেরও সব মামলা একত্রে লখনউ হাই কোর্টের বেঞ্চে হাজির করা হল। 

১৯৮৯: রাম মন্দিরের শিলান্যাস।  

১৯৯০: বিজেপি প্রেসিডেন্ট এল কে আডবাণীর চেষ্টাই অযোধ্যা পর্যন্ত রথ যাত্রার আয়োজন করা হল।  তখন আডবাণীর বক্তব্যে মানুষ যাত্রীরা উৎসাহিত হয়ে মসজিদের উপর হামলা করেন, মসজিদে হামলা চালাতে যাওয়া করসেবকদের সঙ্গে আধাসেনার সংঘর্ষ হয়।  তাতে পুলিশ লাঠি চার্জ ও গুলি চালানো আরাম্ভ করেন তাতে অনেকের মৃত্যু হয় অনেকে আহত হন।  

১৯৯১: উত্তর প্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আসেন উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার মসজিদের জমি অধিগ্রহণ করেন।  ওই জমিতে নির্মাণ বন্ধ রাখতে বাবরি অ্যাকশন সদস্য সুপ্রিম কোর্টে হাজির হন কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পুনরায় হাইকোর্টকেই ফিরিয়ে দেয়।  

১৯৯২: বাবরি মসজিদ ধ্বংস। দেশ জুড়ে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে দাঙ্গা, হাজার মানুষ আহত হন ও অনেকে মৃত্যু বোরন করেন তাতে মুসলিমদের মাত্রা বেশি।  এর ফলে এল কে আডবাণী , মুরলীমনোহর জসিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট। 

১৯৯৩: কেন্দ্র সরকার সমস্ত জমি অধিগ্রহণ করে। 

২০০১: পদ্ধতিগত কারণে এল কে আডবাণী সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের মামলা লাগানো হয়ে তা প্রত্যাহার করেন। 

২০০২: গুজরাতের গোধরায় অযোধ্যা ফেরত করসেবকদের ট্রেনে আগুন।  তার জেরে মুসলিম ও হিন্দুর মধ্যে দাঙ্গা আরাম্ভ হয়ে যায় তাতে মুসিলমদের ঘড়ে হিন্দুরা হামলা করেন ও মুসলিমদের প্রতি খুব অত্যাচার করেন তাতে হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।  

২০০৫: বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি গিয়ে বিতর্কিত যোনির পাঁচিল উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্ট।  তাতে মোট ছটি জঙ্গি নিহত হন। 

৩০,সেপ্টেম্বর,২০১০: বিতর্কিত ২.৭৭  একর জমি সুন্নি ওকাফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রাম লালার মধ্যে সমান ভাগ করার নির্দেশ দিলেন এলাহাবাদ হাই কোর্ট। 

মে, ২০১১: হাই কোর্টের রায় স্হগিত সুপ্রিম কোর্টে।  

মার্চ,২০১৭: আদালতের  বাইরে বোঝাপড়ার প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি যে এস খেহরের। 

এপ্রিল,২০১৭: আডবানীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্ট।  

৮ই জানুয়ারী,২০১৯: পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয় সুপ্রিম কোর্টে।  পরে পুনর্গঠিত হয়।  

৮ই মার্চ,২০১৯: আদালতের বাইরে মধ্যস্থতার জন্য প্যানেল ক দায়িত্ব দেন সুপ্রিম কোর্ট।  

২য় অগাস্ট,২০১৯: মধ্যস্থতার বার্থ হওয়ায় ৬ই অগাস্ট থেকে প্রতিদিন শুনানির সিদ্ধান্ত নেন।  

১৬ অক্টোবর, ২০১৯: শুনানি শেষ ।  

৯ই নভেম্বর,২০১৯: সুপ্রিম কোর্টের রায় যে ২.৭৭ একর জমি দেওয়া হোক ওই ট্রাস্ট কে যেটি রামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণ করার জন্য ভারত সরকার তৈরী  করে ছিল।  আর ৫ একর জমি আলাদা করে উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওকাফ বোর্ড কে দেওয়া হোক বাবরি মসজিদের ধ্বংসের বদলে আর এক মসজিদ নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে।  

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter