ইসলাম কি তরবারির জোরে প্রসারিত?
কিছু মানুষের আজও ইসলামের প্রতি ভুল ধারণা রয়েছে যে ইসলাম যদি তরবারির হুমকিতে প্রচার না করা হতো তাহলে আজ বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মুসলিম থাকত না। নিম্নে ব্যাখ্যা তথ্যগুলি বোঝায় যে ইসলাম তরবারির জোরে নয় বরং সত্য ও যুক্তির মাধ্যমে প্রসারিত।
ইসলাম, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সর্বদা স্বীকৃত করেছে যা‌ কুরআন নিজেই স্পষ্ট ভাষায় সমর্থন করে।
দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (বাকারা-২৫৬)
ইসলাম কখনো মুনাফিকদের সমর্থন করেনা বরং বিশ্বাসীদের অনুসন্ধান করে। ধার্মিক স্বাধীনতা হচ্ছে একটাই রাস্তা যা আমাদের বিশ্বাস ও বাস্তবতাকে নিশ্চিত করে। এজন্যই ইসলাম পুরোপুরি ধার্মিক স্বাধীনতার সমর্থন করে।
বিপরিতভাবে, শক্তি হৃদয় পরিশুদ্ধ নয় কেবলমাত্র বহিরাগত প্রভাব ছড়াতে পারে। এই পন্থা একজনকে ভন্ড করবে কারণ সে জনসমক্ষে তো এক দৃড় বিশ্বাসী কিন্তু বাস্তবে সেটা নয়। জোর জবরদস্তি শুধুমাত্র মুনাফিকের মাত্রা বৃদ্ধি করে অনুরূপ বিশ্বাসীদের সংখ্যা হ্রাস পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপদেশ দিয়েছিলেন এক উপদেশদাতা হিসেবে কাম করা ব্যতীত শাসনকর্তা।
অতএব আপনি উপদেশ দিন আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, শাসনকর্তা নয়। অন্যান্য আয়াতে সুসংবাদের বাহক এবং। আল্লাহর শাস্তির সতর্ককারী। হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (সূরা সাবা ৩৪-২৮)
মানুষকে শুধুমাত্র ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার নবী সাঃ এর একমাত্র কর্তব্য ছিল।প্রথম আয়াত থেকে বুঝতে পারি যে ইসলাম গ্রহণে কাউকে বাধ্য করার দরকার নেই কারণ এটি স্বাধীন ও সহজ ধর্ম যেখানে মিথ্যা ও সত্য পৃথক করা সহজ।
ঐতিহাসিকভাবে, ইসলাম ৮০০ বছর ধরে স্পেনে রাজত্ব করে যেখানে খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্ম স্বাধীনতার সঙ্গে নিজের ধর্ম পালন করতো।
মেডেলিস্ট মুসলিম অঞ্চলে খ্রিষ্টান ও ইহুদি বহু শতাব্দি ধরে বিদ্যমান।মিশর, মরক্কো প্যালেস্টাইন, লেবানন এর মত মুসলিম দেশে অধিকাংশ খ্রিস্টান ইহুদী পাওয়া যায়।
হোস্টেন স্মিথ তার “দ্য ওয়ার্ল্ডস রিলিজিয়নস” বইয়ে তিনি ইসলামের রাজত্বতে‌ ইহুদি ও খ্রিস্টান স্বাধীনভাবে কিরূপ ধর্ম পালন করছে তা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
নবী সাঃ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি এক নথি লিখেছিলেন। সেই নথিতে দেখা হয়েছিল যে ইহুদী ও খ্রিস্টান সকল অপমান ও ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। দ্বিতীয়ত, তারা মুসলিম অনুরূপ সমান অধিকার পাবে। স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালন করতে পারবে।
স্মিথ তার বইয়ে বলেন পরবর্তীতে মুসলিমরা এই নথিকে উদাহরণ স্বরূপ ব্যবহার করেন।
যেহেতু মুসলিমরা প্রায় ১০০০ বছর ধরে ভারতে রাজত্ব চালিয়েছিলেন, তাদের ক্ষমতা ছিল যে অমুসলিমদের বাধ্য করে ধর্মান্তরিত করা কিন্তু তা না করে স্বাধীনতা দেয় যার ফল আজ, আমারা ৮০% র বেশি অমুসলিম দেখতে পায়।
আফ্রিকা, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়ার বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে যা সেনাবাহিনী নয় বরং নৈতিক অনুশাসনের ফল। ঐতিহাসিকভাবে, ইসলামীক শাসনের অধীনে থাকা অনেক অঞ্চল যাদের মুসলিম সরকার নেই তবুও স্থানীয় জনগণ নিজেদের মুসলমান বলে মনে করে। তিনারা সত্য প্রচারে যন্ত্র ও বেদনা সহ্য করে যা অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
সিরিয়া, জর্ডান, উত্তর আফ্রিকা, এশিয়া, বলকান, মিশর এবং স্পেনের পাশাপাশি অঞ্চলে ইসলাম প্রসারনের একটাই সত্য‌ তা হচ্ছে ইসলামের নিতি ‌ও নৈতিকতা। বিপরীতভাবে, উপনিবেশীয় রীতিনীতি মানুষদের জোরপূর্বক নির্বাসিত করে যার ফলে তারা অনেক দুঃখ ও কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ডে লেসি ও লেরির মতে ধর্মান্ধ মুসলমানদের পদ্ধতি হচ্ছে এটা যে তারা রাস্তায় মিছিল করে এবং তলোয়ারের জোর দেখায়।
ইসলাম প্রচারে যদি কোন তরবারি ব্যবহার করা হতো তা ছিল যুক্তি ও তর্কের তরবারি যে তলোয়ার মানুষের হৃদয় ও মনকে জয় করে।
কোরআন শরীফে উল্লেখ রয়েছে, আপনি আপনার পালনকর্তার পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের সাথে এবং তাদের সাথে এমনভাবে বিতর্ক করুন যা সর্বউত্তম, নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা সবচেয়ে বেশি জানেন কে তার পথে থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং কে সৎ পথে আছে। (কুরআন ১৬-১২৫)
ইসলাম যে তরবারির জোরে ছড়িয়ে পড়েনি তা আমরা নবী(সাঃ) এর জীবনকে দুই ধাপে দেখলে বোঝতে পারি। প্রথমত, মক্কায় তার মিশনের প্রথম ১৩ বছর অতিবাহিত করার পর, শেষ ১১ বছর মদিনাতে অতিবাহিত করেন। সেই সময় মদিনাতে শক্তি প্রয়োগ করা অবাস্তব ছিল কারণ তিনি এবং মুসলমান উভয়ই মক্কায় সংখ্যালঘু ছিল।
দ্বিতীয়ত, মদিনায় একটি ছোট্ট ইয়াহুদী জনগোষ্ঠী ছিল যারা সেখানে আসার পর ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছুক ছিল না তাই গোত্রের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি এক চুক্তিও ইহুদীদের মধ্যে বানায়।
এই চুক্তিতে লেখা হয়েছিল, ইহুদিরা অপমান ও ক্ষতি থেকে বিরত থাকবে, ধর্মের পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হবে, মুসলিম এবং ইহুদি উভয়ই সম্মানের সাথে আচরণ করবে। 
অতঃপর, এটি নিঃসন্দেহ ভাবে প্রমাণ করে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেননি বরং তিনি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে চুক্তি করেছিলেন। এই সকল তথ্যগুলি প্রমাণ করে যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে নয় বরং এর মহৎ শিক্ষার মাধ্যমে প্রসারিত।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter