কোরান ও হাদিসের আলোকে পিতার মর্যদা
রোদ্রের সময় ছায়া, বৃষ্টির সময় ছাতা , হোঁচট খাওয়ার সময় হাত ধরে হাটতে শিখানো আর যিনি মনে হাজার টেনশন নিয়েও সন্তানকে দেখে হাসি মুখে সে শুধু একজন 'আব্বু '। হ্যাঁ তিনিই সব দুঃখ কষ্ট ভুলে হাসি দেখায়। পরিবারের জন্য রোজকার করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরা, পরিবারের তরে বিদেশে থাকা সবই পারেন তিনি সে মোদের সবার আব্বুজান। তাদের প্রতি সুব্যাবহারে নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও তার প্রিয় রাসূল সা:।
কুরআন ও হাদিসে পিতার মর্যাদাকে অত্যন্ত সম্মানিত করা হয়েছে এবং তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে পিতার গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরার জন্য এখানে কিছু মূল বিষয় রয়েছে:
সম্মান এবং উদারতা:
কুরআন বিশ্বাসীদেরকে তাদের পিতামাতার প্রতি দয়া, সম্মান এবং আনুগত্য দেখানোর নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে মা এবং পিতা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। বেশ কয়েকটি আয়াতে, আল্লাহ পিতামাতার সাথে সুব্যবহার এবং তাদের অধিকার পূরণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, সূরা আল-ইসরা-এ আল্লাহ বলেন, "এবং আঁপনার রব নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, আর তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল।" (কুরআন ১৭:২৩)
পিতার নির্দেশনার গুরুত্ব:
পিতাদের পরিবারের মধ্যে নেতা এবং গাইড হিসাবে দেখা হয়। তারা তাদের সন্তানদের নির্দেশিকা, সমর্থন এবং সুরক্ষা প্রদানের জন্য দায়ী
পিতা-মাতার করুণা:
ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে পিতা-মাতার, বিশেষ করে পিতার করুণার মধ্যে আল্লাহর রহমত প্রকাশ পায়। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "আল্লাহর রহমত তাদের উপর যারা অন্যদের প্রতি দয়া করে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া কর, আসমানের উপরে যিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন" (আবু দাউদ)। পিতারা তাদের সন্তানদের প্রতি সহানুভূতি, ভালবাসা এবং করুণা প্রদর্শন করবেন বলে আশা করা হয়।
উত্তরাধিকার এবং আর্থিক দায়বদ্ধতা:
উত্তরাধিকার সম্পর্কিত ইসলামের সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে এবং পিতাদের তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তরাধিকার বণ্টনে একটি সংজ্ঞায়িত ভূমিকা রয়েছে। এটি তাদের আর্থিক দায়বদ্ধতা এবং তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণের গুরুত্ব প্রদর্শন করে।
তাঁরা আমাদের বেহেশত ও দোযখ:
(عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ: همَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ. (رواه ابن ماجه
“হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কি আছে? তিনি বললেন, তারা তোমার বেহেশত ও দোযখ” (ইবনে মাজাহ-৪৯৪১)।
হাদিসটির মূল কথা হচ্ছে, সন্তান পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করলে বেহেশতের অধিকারী হবে এবং পিতা-মাতার অধিকারসমূহকে পদদলিত করলে, পিতা-মাতার চেয়ে অন্য কোন মানুষকে, আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দিলে দোযখের অধিকারী হবে।
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কালামে বলেছেন,‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আঁমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই। তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আঁমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আঁমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আঁমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবগত করব’। [সূরা লোকমান,আয়াত নং ১৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসসমূহ পিতামাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বহু মূল্যবাণ উপদেশ বাণী সবিস্তারে বিবরণ প্রদান করেছে। তাতে পিতামাতার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে পুরষ্কার এবং তাঁদের অবাধ্য হলে শাস্তির বর্ণনাও প্রদান করেছে। নিচে কিছু সংশ্লিষ্ট হাদিস পেশ করা হল:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلَى وَالِدَتِهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَانَ لَهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ “رواه أبو بكر الإسماعيلي في “معجم أسامي الشيوخ ”) – ومن طريقه البيهقي في “شعب الإيمان .
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আববাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে নেক্কার ছেলে নিজ মাতা-পিতার প্রতি রহমত ও আন্তরিকতার দৃষ্টিতে একবার তাকাবে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে তার জন্য একটি মাবরুর হজ্বের (মকবুল হজ্বের) সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি উক্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন একশত বার তাকায়, তাহলে? তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ! আল্লাহ তায়ালা সুমহান ও বড় করুণাময়।(বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান ১০/২৬৫)
আয়ু ও রিযক বৃদ্ধি পায়:
عَنْ ثَوْبَانَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ ، وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِخَطِيئَةٍ يَعْمَلُهَا
হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, দোয়া ব্যতিত অন্য কিছুই ভাগ্যকে বদলাতে পারে না এবং পিতামাতার প্রতি সদাচার ব্যতিত অন্য কিছুই আয়ুকে প্রলম্বিত করতে পারে না। কোন ব্যক্তি তার পাপের কারণে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ-৮৭)
পিতৃ দিবসের পালনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
১৯০৮ সালে, গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খনির দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্মান করার জন্য এই দিনটির প্রস্তাব করেছিলেন। যদিও তখন এটি গৃহীত হয়নি, ১৯০৯ সালে সোনোরা স্মার্ট ডড, যিনি তার পাঁচ ভাইয়ের সাথে একা তার বাবার দ্বারা বড় হয়েছিলেন, একটি গির্জায় মা দিবসে যোগ দেওয়ার পর, স্পোকেন মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনকে বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদযাপন করতে রাজি করান।
বর্তমান যুগে মা বাবার সাথে ইসলাম বিরোধী আচার আচরণ করা হয়।যে মা বাবা ছোটতে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে তাদেরই ঘর ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছে। তাদের আর ঠাই নেই তাদের নিজের ভিটেতে বরং যেতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। হায়রে দুনিয়ার মূর্খ লোক কবে তোদের আসবে ফিরে হোশ। মনে কর সেই দিনের কথা যখন পিঠে করে নিয়ে যেত তোর বাবা। জিজ্ঞেস করে দেখ কত দিন খেতে পাইনি মন ভোরে ভেবে তোদের কথা। খবর নিয়ে দেখ কত দিন বিদেশে আছে কোন হালে। আসবে কি তোর চোখে জল তাঁর দুঃখের কাহিনী শুনে ?