ইসলাম ধর্মে ইতিহাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইতিহাস হ'ল অতীতের অধ্যয়ন, যার মধ্যে এমন ঘটনাগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা মানব সমাজকে রূপ দিয়েছে এবং সময়ের সাথে সাথে কীভাবে তারা পরিবর্তিত হয়েছে। এটি এই ঘটনাগুলির ডকুমেন্টেশনও, যা লেখা বা বর্ণনার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ইসলাম ধর্মে ইতিহাসের কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে ? বা ইসলাম ধর্ম ইতিহাসের উপর কতটা নির্ভরশীল ? চলুন আমি আপনদের ইসলাম ধর্ম ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু তথ্য যানাই
ভুমিকাঃ
ইসলাম ধর্মে ইতিহাসের গুরুত্ব অসিম। এটির এতই গুরুত্ব যে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনার মহা গ্রন্থ কুরান মাজিদে অলংকার মণ্ডিত প্রভাবময় শৈলাতে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের পূর্ব পুরুষ ঘটনাগুলি সম্পর্কে জগতবাসীকে অবগত করেছেন । ইসলাম ধর্ম ইতিহাস ব্যাতিত অসম্পূর্ণ ।
পট্যভুমিঃ
কোরানের দৃষ্টিতে ইতিহাস
আল্লাহ তায়ালা করান শরীফে নবিদের ঘটনা উল্লেখ করে কখনো মানবসমাজকে সাবধান করেছেন, আবার কখনো তিনার প্রিয় বান্দাদের খোদাভিরুতা উল্লেখ করে তাদের মত হতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ ۚ وَجَاءَكَ فِي هَـٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যদ্দ্বারা তোমার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে তোমার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসীহত ও স্বরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে। (সুরা হুদ, আয়াত-১২০)
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়েত। (সূরা ইউসূফ, আয়াত- ১১১)
আমরা যদি ইতিহাস শিখি তবে আমরা জানতে পারব কেন আমাদের পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং তা থেকে দূরে থাকব।
হাদিসের আলোকে ইতিহাস
হুজুর সাল্লাহ আলাহি ও সাল্লামের কৃত কর্ম ও আদেশ সমূহকে হাদিস বলে । হাদিসের দৃষ্টিতে ইতিহাসের গুরুত্ব অনেক। নবী জীবনের ঘটনা ও তিনার জীবনী সম্পর্কে যানা একটি মোসলমান নর-নারীর জন্য অপরিহার্য। একজন মুসলিম বাক্তি হুজুর সাল্লাহ আলাহি ও সাল্লামের জিবন কাহিনি না জেনে কোন দিন একটি পূর্ণ মোসলমান হতে পারবেনা । একটি সঠিক নেতা হতে গেলে ইতিহাস অধ্যয়নের প্রয়োজন। মহাবীর সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর মতো নেতা হওয়ার নিমিত্তে ইতিহাস জানা অপরিহার্য।এই ইতিহাস দ্বারাই আমরা জানতে পারব যে আমার নবী কেমন ভাবে যুদ্ধ করেছিলেন এবং কি ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বের করেছিলেন এবং চরম পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন। শুধু হুজুর ﷺ না তার ও পূর্বের কথা আমাদের এই ইতিহাস দ্বারাই যানা সম্ভব।
ফিকাহ শাস্ত্রে ইতিহাসের গুরুত্ব- ফিকার দিক দিয়ে দেখতে গেলে হাদিস মসলা মাসায়েলের জন্য খুবই প্রয়জনিয় বিষয়। সাহাবাগন কিভাবে নামাজ পড়তেন বা কিভাবে কুরবানি করতেন এই সব বিষয় ইতিহাস ছাড়া যানা অসম্ভব তাই ফিকহি শাস্ত্রে এটির খুবই গুরুত্ব রয়েছে। মুসলিম শাস্ত্রবিদদের সম্মুখে কোন কোন সময় ইতিহাস পড়া হারাম আবার কোন কোন সময় ইতিহাস পড়া না জায়েজ আবার কোন কোন সময় মাকরুহ আবার কোন সময় মান্দুব বা উত্তম।
১. জায়েজ: যে ইতিহাস পরলে দিন ও আখিরাতে তার ফল পাওয়া যাবে জ্ঞান অর্জন করার জন্য বা সাধারন মানুসের সামনে সত্যিতা প্রকাশের জন্য।
২.হারাম: কোন বে ফাইদা যা যেনে আমাদের কোন উপকার হবে না বরং আমদের চরিত্র খারাপ হবে বা আকিদা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, যেমন প্রম ভালবাসার ইতিহাস বা কোন খারাপ চরিত্রহিন রাজার ইতিহাস পড়া হারাম।
৩. মাকরুহ: এমন কোন ইতিহাস পড়া যার দারা আমরা উপকৃত হতে পারবনা একেবারে অর্নাথক বা সাহাবায়ে কেরামদের নিজেদের মধ্যে লড়াইগুলি যেমন জঙ্গে সিফফিন বা জাঙ্গে জামাল পড়া, এতে সম্মানিত বাক্তিদের ওপর আমাদের ক্ষোব জন্মাতে পারে জঙ্গে জামাল যেটি হজরত বিবি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মধ্যে হয়েছিল । কিন্তু কোন কাফির কে তার প্রশ্নের জবাব দিতে বা বিশ্ববাসিকে সঠিক তথ্য জানাতে পড়লে তাতে কোন আসুবিধা নাই।
৪. উত্তম: হুজুর ﷺ এর সিরাত সম্পর্কে জানতে বা কোন সাহাবি এর জিন্দেগী সম্পর্কে জানতে আল্লাহর অলিদের তাকওয়া সম্পর্কে জানতে ইতিহাস পড়লে সেগুলি মান্দুব বা উত্তম । বা যে ইতিহাস জেনে আমরা এই দুনিয়া ও আখিরাতে উপকৃত হতে পারব।
ইতিহাসের উপকারিতা
* পরিস্থিতি সম্পর্কে আবগত রাখে। তখনকার দিনের পরস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে উত্তমটির বিবেচনার করার সুযোগ করে দেয়।
* কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যে ব্যাক্তি ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান রাখে সে কোন কঠিন সময় পূর্ব বর্তী দের সমাধানের পথ গুলি ভেবে সে হতাস হয় না বরং উঠে দাড়ায় ।
* সতর্ক রাখে। সে বাক্তি সর্বদা সতর্ক থাকে তাদের পূর্ব পুরুষ গন যে কারণে ধ্বংস হয়েছে সে বিষয়ে সে আবগত থাকে এবং যেই ভুল গুলিকে সে পুনরায় করে না ।
* সঠিক বিষয় জানতে সাহায্য করে। কোন যুগের কথা সেই যুগের মানুষজন ছাড়া জানা অসম্ভব কিন্তু ইতিহাসের দ্বারা আমরা সেই যুগে না গিয়ে এক স্থানে বসে বসে সেই বিষয় গুলি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। হিজরির পঞ্ছম শতাব্দীতে বাগদাদের ইহুদিগন একটি চুক্তি পত্র প্রকাশ করে সেখানে তারা বলতে চায় যে নবী করিম ﷺ খাইবারের যুদ্ধের পরে তাদের জিজিয়া বা ট্যাক্স নেইনি, সেই পত্রে হজরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লহু আলহুর ও হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হজরত সাআদ বিন রাদিয়াল্লাহু মুয়ায স্বাক্ষর ছিল পত্রটি খুব পুরোনো ছিল তাই সকল মুসলমান মেনে নিল ও তাদের ট্যাক্স মাফ করে দিতে রাজি হল। কারন হুজুর সাল্লহু তায়ালা আলাইওসাল্লাম যেটা করেছেন সেটাই সকল মুসলমানের জন্য উত্তম। কিন্তু এর মধ্যে একজন জ্ঞানী বাক্তি এই বিষয় টি মেনে নেননি ইমাম আবু বাক্কার খিতাব বাগদাদি রহমাতুল্লাহ। তিনি কেবল ইতিহাসের দ্বারা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে হজরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন, তাতে বোঝা যায় যে তিনি খন্দক জদ্ধের সময় মুসলমান ছিলেন না তিনি মক্কা বিজয় ইসলামের শেষ যুদ্ধে মুসলমান হন ও হজরত সাআদ বিন রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনি এই যুদ্ধের পূর্বেই শহিদ হন। এবং এভাবেই মুসলমান সমাজ ইহুদিদের ধোকা থেকে বেঁচে যায়। উক্ত ঘটনাটি আমি এই জন্য ব্যক্ত করলাম যেন আপনি বুঝতে পারেন যে ইতিহাস ধর্মের মূলেও কতটা গুরুত্ব রাখে।
* আমাদের প্রচেষ্টার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আমাদের মধ্যে পূর্ববর্তীদের কথা বলে আমাদের প্রচেষ্টার জোশ ইচ্ছা বাড়িয়ে তোলে বা উৎফুল্ল ও আনন্দিত করে। যেমন হুজুর সাল্লাহ তায়ালা আলাহই ও সাল্লামের সিরাত পড়ে আমাদের জোশ বেড়ে যায় তিনি কত কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু তিনি হার মানেননি ও তিনি কওমের ভালোর জন্য জেতেন কিন্তু না জেনে বুঝে তারা হুজুরের উপর অত্যাচার করতেন কিন্তু আমাদের দয়ার নবি কোন দিন তাদের দোয়া ছাড়া আভিশাপ দেননি। এই থেকে আমারা ধৈর্যের পাঠ পাই।
অন্তিম পাঠ
এক দিক থেকে দেখতে গেলে ইসলাম ধর্মের সমস্ত কিছুই ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। এটা শুধু ইসলাম ধর্মে না, আমি মনে করি পৃথিবী তে যত ধর্ম আছে তারা তাদের ধর্মীয় ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। এই প্রবন্ধের সমস্ত তথ্য আল-কোরাণ এবং ইসলামী বিশ্বকোষ থেকে সংকলিত।