ইসলামী জ্ঞানতত্ত্ব: যুক্তি এব প্রত্যাদেশের (ওহির) দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়- একটি সংলাপ

ভূমিকা

ইসলামী চিন্তাধারার জগতে “জ্ঞান” একটি মৌলিক বিষয়, এবং এর ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে বহু দর্শন, মতবাদ ও জীবনব্যবস্থা। জ্ঞানতত্ত্ব বা Epistemology বলতে বোঝায়—জ্ঞান কী, জ্ঞান কীভাবে অর্জিত হয়, এর উৎস কী, এবং কোন জ্ঞান গ্রহণযোগ্য বা সত্য। পশ্চিমা দর্শনের মতো ইসলামী চিন্তাধারাতেও এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। তবে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে আলাদা, কারণ এটি কেবলমাত্র মানব যুক্তি বা অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে না; বরং এটি একটি অতিপ্রাকৃত উৎসকে, অর্থাৎ ওহি (ঐশী প্রত্যাদেশ)-কে জ্ঞানের অন্যতম ও প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করে। ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বে মূলত দুটি উৎস সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ: আক্ল (যুক্তি) এবং ওহি (প্রত্যাদেশ)। এই দুই উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক, প্রাধান্য ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে বহু বিতর্ক ও ব্যাখ্যা বিদ্যমান। একদিকে যুক্তি মানবজগতের বাস্তবতা ও তর্কের মাধ্যমে সত্য অনুধাবনের চেষ্টা করে, অন্যদিকে ওহি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিঃসন্দেহ ও নির্ভুল, কারণ তা ঐশীকভাবে প্রেরিত। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই এই দুটি উৎসকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গ্রহণ করা হয়েছে, তবে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে দার্শনিক ও কালাম চর্চার সময় এগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিতর্ক এবং সমন্বয়ের বিভিন্ন ধারা দেখা গেছে। এই প্রবন্ধে আমরা এই দ্বৈত উৎসের ভূমিকা, পারস্পরিক সম্পর্ক, এবং তা নিয়ে ইমাম গাজালী, ইবন আরাবি, ইবনে রুশদ প্রমুখ মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করব। পাশাপাশি আধুনিক যুগে যুক্তি ও ওহির সম্পর্ক কীভাবে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে তাও আলোচ্য হবে।

যুক্তির অবস্থান: বিশ্লেষণ ও সীমা

ইসলামে যুক্তিকে কখনোই অস্বীকার করা হয়নি; বরং কুরআন বারবার মানুষকে চিন্তা করতে, উপলব্ধি করতে এবং প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান করেছে। কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তারা কি চিন্তা করে না?” (সূরা আর-রূম, ৩০:৮), “তারা কি দেখে না?”, “তারা কি শুনে না?”—এই ধরণের অসংখ্য প্রশ্নে বোঝা যায় যে, আল্লাহ মানুষকে শুধু অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং যুক্তি, অনুধাবন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সত্য গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। ইসলামী চিন্তাধারায় ‘আক্ল’ বা বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে আল্লাহর একটি আশীর্বাদরূপে দেখা হয়েছে, যা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে স্বতন্ত্র করেছে। যুক্তির মাধ্যমে মানুষ নিজের চারপাশ, জগতের সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা করতে সক্ষম হয়।

মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ (Averroes), আল-ফারাবি, এবং ইবনে সিনার মতো চিন্তাবিদগণ যুক্তিকে সত্য অনুসন্ধানের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাদের মতে, যুক্তি ছাড়া মানুষ কেবল আবেগের দাস হয়ে যায় এবং যুক্তিবিহীন বিশ্বাস স্থায়ী হতে পারে না। ইবনে রুশদ বলেন, “যুক্তি এবং ওহি পরস্পরের পরিপূরক। আল্লাহ উভয় দানই মানবজাতির জন্য পাঠিয়েছেন।”

তবে ইসলামী দার্শনিকরা এটাও স্বীকার করেন যে, মানব যুক্তির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। যুক্তি sensory data বা অনুভবযোগ্য বাস্তবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আত্মা, পরকাল, ফেরেশতা, জান্নাত-জাহান্নামের মতো গায়েবী বিষয়গুলি যুক্তি দিয়ে পুরোপুরি অনুধাবন করা সম্ভব নয়। একারণে ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বে বলা হয়—যেখানে যুক্তির সীমা শেষ, সেখান থেকে ওহির সূচনা। অর্থাৎ ওহি সেই আলোকধারা যা যুক্তির অন্ধকার দূর করে পূর্ণতা আনে।

ওহির শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রামাণিকতা

ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বে ওহি বা প্রত্যাদেশকে চূড়ান্ত ও নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এমন এক জ্ঞান যা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং নবীগণের মাধ্যমে মানবজাতিকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কুরআন ও সহীহ হাদীস এই ওহির দুই মৌলিক ভিত্তি। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ওহি নির্ভুল, নিরবিচল এবং চিরন্তন সত্যের বাহক। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি বা অবস্থানের উপর নির্ভর করে না; বরং এটি সর্বজনীন ও সার্বিক নির্দেশনা প্রদান করে। এই কারণে ওহিকে ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বে এক প্রকার ঐশিক আলো হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা মানুষের সীমিত যুক্তির ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে দেয়।

ইমাম গাজালী তাঁর বিখ্যাত রচনায় ওহির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, যুক্তির মধ্যে বিভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু ওহির মধ্যে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনা রয়েছে, যা কোনো রূপ বিভ্রান্তি বা বিকৃতির শিকার হয় না। তিনি তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ “আল-মুনকিয মিন আদ-দালাল” এ বর্ণনা করেন, কিভাবে এক পর্যায়ে যুক্তির চর্চা তাঁকে আত্মিক শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং শেষপর্যন্ত তিনি ওহির আলো ও সুফিবাদের মাধ্যমে সত্যিকারের জ্ঞান ও প্রশান্তি লাভ করেন। তাঁর মতে, যুক্তি হলো অনুসন্ধানের পথ, কিন্তু ওহি হলো সেই পথের আলো।

ইবন আরাবি বলেন, “সত্য জ্ঞান অর্জনের জন্য কেবল বাহ্যিক যুক্তিই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন ‘কাশফ’ ও ‘ইলহাম’, যা অন্তরের সঙ্গে ওহির সম্পর্কের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে আসে।” তিনি মনে করেন, ওহি মানব আত্মার এমন এক আলোকধারা, যা তাকে ঐশিক বাস্তবতার সংস্পর্শে নিয়ে যায়।

অতএব, ইসলামে ওহির স্থান শুধু নৈতিক বা ধর্মীয় নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জ্ঞানের এক পরিপূর্ণ ও সর্বোচ্চ স্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে মানব যুক্তি আশ্রয় গ্রহণ করে, পথ পায় ও পরিপূর্ণতা লাভ করে।

মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ইসলামী চিন্তাধারার ইতিহাসে যুক্তি ও ওহির সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে, যা বিভিন্ন যুগ ও দর্শন অনুযায়ী বিকশিত হয়েছে। ইসলামী দার্শনিক, কালাম পণ্ডিত, সুফি এবং ফিকহবিদদের মধ্যে এ নিয়ে স্পষ্ট দার্শনিক অবস্থান বিদ্যমান। এই অনুচেদে আমরা ইমাম গাজালী, ইবন আরাবি, ইবনে রুশদ, আশআরি, মাতুরিদি ও ইবন তাইমিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করব।

ইমাম গাজালী যুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং ওহির সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, “যেখানে ওহির আলোকধারা রয়েছে, সেখানে যুক্তির পথ অনুপ্রবেশ করতে পারে না।” তাঁর মতে, যুক্তি একটি অনুসন্ধানী হাতিয়ার, তবে সত্যের শেষ কথা বলে ওহি। তিনি গ্রিক দর্শনের কিছু দিক সমর্থন করলেও দার্শনিকদের অতিরিক্ত যুক্তিনির্ভরতার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন।

ইবন আরাবি, একজন সুফি দার্শনিক, ওহিকে একপ্রকার আধ্যাত্মিক আলোকধারা হিসেবে দেখেন, যা কেবল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার বাইরে ঈশ্বরীয় সত্যের পথ দেখায়। তাঁর মতে, ওহি ও কাশফ বা অন্তর্দৃষ্টি মিলে সত্যিকারের জ্ঞান অর্জিত হয়। তিনি যুক্তিকে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির একটি প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গ্রহণ করেন, তবে চূড়ান্ত নয়।

অপরদিকে, ইবনে রুশদ যুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, “যুক্তি ও ওহি একে অপরের বিরোধী নয়; বরং উভয় একে অপরকে ব্যাখ্যা ও সমর্থন করে।” তাঁর মতে, কুরআনের কিছু আয়াত প্রতীকী বা ‘মুতাশাবিহ’, যেগুলো যুক্তি ও দর্শনের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা দরকার।

আশআরি ও মাতুরিদি চিন্তাবিদরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তারা যুক্তিকে ঈমান ও আকীদার ব্যাখ্যার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন, তবে ওহির শীর্ষস্থান স্বীকার করেন। তারা বলেন, যুক্তি সত্য বুঝতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত নির্দেশনা আসবে ওহি থেকেই।

ইবন তাইমিয়া যুক্তিকে মেনে নিলেও এর সীমা নির্ধারণ করেন। তাঁর মতে, “যদি কখনো যুক্তি ও ওহির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তাহলে ওহিকেই অনুসরণ করতে হবে।”

এইসব মনীষীদের চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় যে, ইসলামী চিন্তায় যুক্তি ও ওহির সম্পর্ক বিরোধী নয় বরং একে অপরের পরিপূরক — তবে ওহির শ্রেষ্ঠত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা সর্বত্র স্বীকৃত।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা

আধুনিক বিশ্ব একটি তথ্য ও বিজ্ঞাননির্ভর সমাজে রূপ নিয়েছে, যেখানে যুক্তি, বিশ্লেষণ, প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক চর্চা প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এই বাস্তবতায় ইসলামি চিন্তাধারায় যুক্তি ও ওহির সম্পর্ক নতুনভাবে আলোচিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—ইসলামী বিশ্বাস ও আধুনিক যুক্তিবাদ কি সহাবস্থান করতে পারে? ইসলাম কি কেবল আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় অনুশাসন, নাকি এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনব্যবস্থা? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে আমাদের আবার যুক্তি ও ওহির দ্বন্দ্বের ঐতিহাসিক ও দার্শনিক বিতর্কে ফিরে যেতে হয় এবং তা নতুন করে ব্যাখ্যা করতে হয় আধুনিক বাস্তবতার আলোকে।

আধুনিক মুসলিম চিন্তাবিদদের মধ্যে ড. ফজলুর রহমান, ড. মোহাম্মদ ইকবাল, নাসর হামিদ আবু জায়েদ প্রমুখ যুক্তিকে ওহির ব্যাখ্যার অংশ হিসেবে দেখেছেন। তাদের মতে, কুরআনের মূল উদ্দেশ্য অনুধাবন করার জন্য মানুষের নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা সক্রিয় হওয়া জরুরি। ওহি শুধু আবেগীয় অনুসরণ নয়, বরং তা একটি চিন্তনপ্রবণ পাঠ—যা মানুষকে চিন্তা, বিচার ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে। ইকবাল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Reconstruction of Religious Thought in Islam-এ বলেন, “ঈমান যদি অন্ধ অনুসরণের নাম হয়, তবে তা বিশ্বাস নয়—বরং চিন্তাহীন অনুকরণ মাত্র।”

আজকের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী ওহিকে যুক্তিহীনভাবে ব্যবহার করছে; অন্যদিকে কিছু আধুনিকপন্থী মুসলিম কেবল যুক্তির দোহাই দিয়ে ওহির সারবত্তাকে উপেক্ষা করছে। এই দুই চরম প্রান্তের বিপরীতে দরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে ওহি থাকবে আল্লাহপ্রদত্ত চূড়ান্ত নির্দেশনা হিসেবে এবং যুক্তি থাকবে সেই ওহিকে যথার্থভাবে বুঝে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার হাতিয়ার হিসেবে।

অতএব, আধুনিক যুগে ইসলামি জ্ঞানতত্ত্বকে সফলভাবে প্রয়োগ করতে হলে ওহির ওপর ভিত্তি রেখে যুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে, যাতে যুগোপযোগী, প্রগতিশীল এবং ঈমানভিত্তিক জ্ঞানচর্চা গড়ে ওঠে।

উপসংহার

ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বে যুক্তি ও ওহির সম্পর্ক একটি চিরকালীন আলোচনার বিষয়। এ দুটি উপাদান কখনো একে অপরের বিরোধী নয়, বরং তারা পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে—এই ধারণাই ইসলামের মূল বার্তা। ইসলামী চিন্তায় যুক্তি হলো আল্লাহর দেওয়া মানব-মস্তিষ্কের এক আশ্চর্য শক্তি, যার মাধ্যমে মানুষ চিন্তা করতে, বিশ্লেষণ করতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, ওহি হলো সেই ঐশিক নির্দেশনা, যা সর্বোচ্চ জ্ঞানের উৎস এবং চূড়ান্ত সত্যের প্রতিফলন। ইসলামী ইতিহাসের প্রখ্যাত মনীষীরা—ইমাম গাজালী, ইবন আরাবি, ইবনে রুশদ, ইমাম আশআরী, মাতুরিদি ও ইবন তাইমিয়া—যত ভিন্ন পটভূমিতে অবস্থান করুক না কেন, তাঁরা সকলেই একমত যে ওহি হচ্ছে নির্ভুল এবং চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা, আর যুক্তি হলো সেই নির্দেশনার ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের একটি মাধ্যম।

এই সমন্বয়মূলক ধারণা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক আজকের যুগে, যেখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং যুক্তির প্রভাব সমাজে ব্যাপক। একদিকে যদি আমরা অন্ধ বিশ্বাসে আবদ্ধ থাকি, তবে ইসলামকে একটি চিন্তাহীন ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। অন্যদিকে যদি আমরা শুধুমাত্র যুক্তির ভিত্তিতে ওহিকে খণ্ডন করি, তবে ঈমান, আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা সংকটে পড়বে। ইসলামের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি হলো—যুক্তিকে গ্রহণ করা, তবে তা ওহির নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত করা।

সত্যি বলতে, ইসলাম চায় এমন এক জ্ঞাননির্ভর সমাজ, যেখানে মানুষ চিন্তা করবে, যুক্তি ব্যবহার করবে, প্রশ্ন তুলবে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ করবে আল্লাহর বাণীর প্রতি। ওহি মানুষকে আলোকিত করে, আর যুক্তি সেই আলোকে সঠিকভাবে গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে সাহায্য করে। তাই ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বে উভয়েরই অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে, এবং মুসলিমদের উচিত এই ভারসাম্য বজায় রেখে জ্ঞানচর্চা, দীন বোঝা ও জীবন পরিচালনা করা।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter