কাশ্মীর ফাইলস থেকে উদয়পুর ফাইলস: বলিউডে মুসলিমদের খলনায়করূপে চিত্রায়ন

সূচনা

ভারতের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি, যাকে গোটা বিশ্বে বলিউড নামে ডাকা হয়, অনেক বছর ধরে রঙিন কাহিনি, সুরেলা সংগীত এবং প্রেমের গল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ইন্ডাস্ট্রি এক নতুন দিক নিয়েছে, যেখানে বিনোদনের নামে সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃণার বীজ বোনা হচ্ছে। আগে চলচ্চিত্রকে সামাজিক সংস্কার ও জাতীয় ঐক্যের জন্য একটি কার্যকর মাধ্যম মনে করা হতো, কিন্তু আজকের দিনে এটি কিছু নির্দিষ্ট মতাদর্শ প্রচারের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।

কাশ্মীর ফাইলস, কেরালা স্টোরি, সূর্যবংশী, ছাভা এবং এখন উদয়পুর ফাইলস — এসব চলচ্চিত্র শুধুই গল্প নয় বরং একটি বিশেষ পরিকল্পনার অংশ, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও বহু-ধর্মীয় সমাজ কাঠামোকে ভাঙার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এসব চলচ্চিত্রে মুসলমানদের শুধু খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয় না, বরং তাদের এমন একটি জাতি হিসেবে তুলে ধরা হয় যারা ভারতের অখণ্ডতার জন্য হুমকি। এই বার্তা ধীরে ধীরে জনগণের মনে প্রবেশ করানো হচ্ছে, যাতে মুসলমানদের প্রতি মানসিক ভয় এবং সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হয়।

এই কাজটি কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ফল, যা হিন্দুত্ববাদের প্রভাবাধীন রাজনৈতিক শক্তি ও তাদের সমর্থক মিডিয়া হাউসগুলো পরিচালনা করছে। তাদের উদ্দেশ্য শুধু নির্বাচনী লাভ নয়, বরং এমন এক ভারত গঠন করা, যেখানে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হবে। উদয়পুর ফাইলসের মতো চলচ্চিত্রগুলো শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা এবং মসজিদগুলোকে সন্ত্রাসের কেন্দ্র হিসেবে দেখায় না, বরং এতে এমন অবমাননাকর উপাদানও থাকে যা ইসলামের নবী –এর পবিত্র মর্যাদার বিরুদ্ধে যায়। এই ঘৃণা ছড়ানো বিষয়বস্তু সামাজিক সম্প্রীতির জন্য বিষের মতো এবং ভারতের সংবিধানের মৌলিক নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই পরিস্থিতি শুধু ভারতের বহুধর্মীয় সমাজকেই প্রভাবিত করেনি বরং আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ভাবমূর্তিতেও আঘাত হেনেছে। ইউরোপীয় ইসলামোফোবিয়া রিপোর্ট ২০২৩–এর মতো প্রতিবেদনগুলো স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র ও মিডিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। এসব রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের ঘৃণা সমাজে বিভাজন তৈরি করে, যার ফলে দাঙ্গা ও হিংসার আশঙ্কা বাড়ে। এই পরিস্থিতি ভারতের সংবিধানের আত্মার বিপরীত, যার ভিত্তি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা ও সবার জন্য সমান নাগরিক অধিকার।

সাম্প্রদায়িক উস্কানি

ভারতের সংবিধান বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এটি ধারা ১৯(১)–এর অধীনে সুরক্ষিত। তবে এই স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। ওই ধারা ১৯(২)–তে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষা, রাষ্ট্রের অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং কোনো ধর্ম বা গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত না পৌঁছানোর জন্য এই অধিকার সীমিত করা যেতে পারে। এর মানে হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে কেউ অন্য ধর্ম বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে পারবে।

ভারতের বিচার ব্যবস্থাও একাধিক মামলায় এই নীতিকে মেনে চলেছে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বও জড়িত। যেমন, K.A. Abbas বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (১৯৭১) মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, চলচ্চিত্রের পূর্ব সেন্সর সংবিধানসম্মত যদি তা জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হয়। আদালত আরও বলেছে, চলচ্চিত্র অন্যান্য প্রচারমাধ্যমের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী, তাই এগুলোর ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।

এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান চলচ্চিত্রগুলো যদি খতিয়ে দেখা হয়, তবে দেখা যায় যে উদয়পুর ফাইলসের মতো ছবি ধারা ১৯(২)–এর মূলভাবের বিরোধী। এই চলচ্চিত্রগুলো মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বদের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়াতে চায়, যার ফলে শুধু তাদের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয় না বরং সমাজে বিভাজনও বাড়ে। সংবিধান রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান ও সেন্সর বোর্ডের দায়িত্ব এমন বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, রাজনৈতিক চাপ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটব্যাংকের রাজনীতি এসব প্রতিষ্ঠানকেও দুর্বল করে দিয়েছে।

উস্কানিমূলক চলচ্চিত্র প্রচারে সরকারের দ্বৈতমানসিকতা ও সামাজিক বিভাজন

বর্তমান সরকার যে ধরনের উস্কানিমূলক চলচ্চিত্রকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তা শুধু রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সামাজিক সম্প্রীতির উপরও গভীর আঘাত হানছে। উদয়পুর ফাইলস কিংবা কাশ্মীর ফাইলস  জাতীয় সিনেমাগুলি তথাকথিত বাস্তব ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রঙচঙে করে তুলে ধরছে, যার ফলে একপাক্ষিক বর্ণনা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়া হচ্ছে। যদিও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যেন চলচ্চিত্র সমাজে বিভেদ সৃষ্টি না করে, তবুও সরকারের মদদপুষ্ট এসব প্রজেক্ট কার্যত সেই নীতির পরিপন্থী। এ ধরনের উদ্যোগ রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার এবং গণতন্ত্রের সুস্থ সংস্কৃতি রক্ষার পথে এক বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদিও সংবিধান ও আদালত ঘৃণামূলক বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে আইনগত ভিত্তি দিয়েছে, তবুও বাস্তবে মুসলমানদের ন্যায়বিচার পেতে যে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তা কারও অজানা নয়। বছরের পর বছর মামলার ঝুলে থাকা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামাজিক পক্ষপাতিত্ব বিচারব্যবস্থার ধীর গতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো ব্যক্তিরা বা প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালিয়ে যায় এবং আইনি প্রক্রিয়া কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে।

এর পাশাপাশি মুসলমানদের মাটির বাস্তবতাও উদ্বেগজনক। শিক্ষা, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে পশ্চাৎপদতা তাদের কণ্ঠস্বর দুর্বল করে ফেলেছে। ২০০৬ সালের সচার কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারতের মুসলমানরা শিক্ষাক্ষেত্রে দলিতদের চেয়েও পিছিয়ে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও খুব দুর্বল। এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, যখন মিডিয়া ও চলচ্চিত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বার্তা ছড়ায়, তখন মুসলমানরা এর কার্যকর জবাব দিতে পারে না। এই বাস্তবতা আমাদের বলে, মুসলমানরা যেন কেবল আইনগত পথেই নির্ভর না করে, বরং চিন্তাগত ও ব্যবহারিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করে তোলে যেন প্রোপাগান্ডার যথাযথ জবাব দিতে পারে।

পাল্টা আখ্যান তৈরি

ইসলাম শুধুই আধ্যাত্মিক শিক্ষার ধর্ম নয় বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা সব সময়ে মুসলমানদের মুখোমুখি চ্যালেঞ্জের সমাধান দেয়। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তুমি কাফেরদের আনুগত্য করো না এবং কুরআনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে একটি বড় জিহাদ করো” (আল-ফুরকান: ৫২)। এই আয়াত আমাদের জানিয়ে দেয়, আজকের যুগের সবচেয়ে বড় জিহাদ হলো জ্ঞান, যুক্তি এবং মিডিয়ার মাধ্যমে করা জিহাদ। শত্রু যে ফ্রন্টে আক্রমণ করেছে, মুসলমানরা যদি সেই ফ্রন্টেই জবাব দেয়, তবেই সাফল্য আসবে।

নবী করীম –ও শত্রুদের প্রোপাগান্ডার জবাবকে গুরুত্ব দিয়েছেন। হযরত হাসান ইবনে সাবিত (রা.) তাঁর কবিতার মাধ্যমে কুরাইশদের অপবাদ খণ্ডন করতেন এবং মুসলমানদের ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরতেন। আজকের যুগে এই কাজটি মিডিয়া ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে করা যেতে পারে। মুসলমানদের উচিত তাদের চিন্তাশীল নেতৃত্বকে সক্রিয় করা, তরুণ প্রজন্মকে মিডিয়া খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামের সম্পর্কে ছড়ানো ভুল ধারণার প্রতিকারে কাজ করা।

আজকের ভারতে, যেখানে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ও নিউজ চ্যানেলগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষ ছড়াচ্ছে, মুসলমানদের সামনে দুটোই পথ আছে: হয় চুপ করে থাকো এবং পরবর্তী প্রজন্মকে মানসিক দাসত্বের হাতে তুলে দাও, অথবা একতাবদ্ধ হয়ে মিডিয়ার মাঠে নামো এবং শক্তিশালী পাল্টা বার্তা দাও। নীরবতা মানে নিজের অস্তিত্বকে বিপদে ফেলা, আর সক্রিয় হওয়া মানে নিজের পরিচয় রক্ষা এবং ভারতের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা।

মুসলমানদের উচিত নিজস্ব ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস তৈরি করা, ডকুমেন্টারি ও ওয়েব সিরিজ বানানো, যাতে মুসলমানদের ত্যাগ, বৈজ্ঞানিক অবদান ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা যায়। পাশাপাশি দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উপর হওয়া নিপীড়নও জনসাধারণের সামনে আনতে হবে, যাতে হিন্দুত্ববাদের আসল রূপ প্রকাশ পায়। মুসলিম ধনীদের দায়িত্ব হলো তাদের সম্পদ এই মিডিয়া জিহাদে ব্যয় করা এবং তরুণদের আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া যেন তারা চলচ্চিত্র, সোশ্যাল মিডিয়া ও সাংবাদিকতায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

চলচ্চিত্র এবং গণমাধ্যম হলো সমাজের আয়না।

মানব ইতিহাস একটি বিশাল আয়না যা আমাদের বারবার শিক্ষা দেয়, সেই জাতিগুলো যারা সময়ের দাবি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নীরবতাকে বেছে নিয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে মুছে গেছে বা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছে। আন্দালুসের উদাহরণ আজও ইতিহাসের পাতায় রক্ত দিয়ে লেখা কাহিনির মতো জীবন্ত। সেখানে মুসলমানরা জ্ঞানের কেন্দ্র ছিল, তারা দুনিয়াকে দর্শন, চিকিৎসা, গণিত ও শিল্পকলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু যখন তারা বিলাসিতা ও অভ্যন্তরীণ বিভাজনের শিকার হয়, তখন তাদের শত্রুরা তাদের শহরগুলো ধ্বংস করে দেয় এবং তাদের প্রজন্মকে এমন দুঃখে ফেলেছে, যা আজও স্পেনের পথঘাটে মুসলমানদের অতীতের বিলাপ শোনায়। এই শিক্ষা আমাদের জন্য আজকের ভারতে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার এমন একটি বার্তা বড় হচ্ছে, যা শুধু মানসিক দাসত্বেই থেমে থাকবে না বরং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠবে।

ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্র, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলমানদের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, তা শুধুই এককালের প্রোপাগান্ডা নয় বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। ঘৃণামূলক চলচ্চিত্রগুলো মুসলমানদের সন্ত্রাসবাদী, উগ্রপন্থী ও জাতিশত্রু হিসেবে তুলে ধরছে, যা সাধারণ মানুষের মনে এক স্থায়ী ভয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এই প্রোপাগান্ডার কারণে আগামী প্রজন্ম মুসলমানদের এমন একটি গোষ্ঠী হিসেবে দেখবে, যাদের বিরুদ্ধে যে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ স্বাভাবিক মনে হবে। যদি মুসলমানরা এই পরিস্থিতিতে নীরব থাকে, তবে এই নীরবতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষের মতো ক্ষতিকর হবে।

ইসলাম কেবল ইবাদত ও আধ্যাত্মিক মুক্তির শিক্ষা দেয় না, বরং দুনিয়ার কাজেও দিশা দেখায়। কুরআনে আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই জাতির অবস্থা বদলান না যারা নিজের অবস্থা বদলানোর চেষ্টা না করে” (সূরা রা’দ: ১১)। এই আয়াতের বার্তা হলো: যতক্ষণ না মুসলমানরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনে চেষ্টা করে, ততক্ষণ তাদের কষ্ট ও অপমানের শৃঙ্খল আরও শক্ত হতে থাকবে।

আজকের যুগে সবচেয়ে বড় জিহাদ হচ্ছে জ্ঞান, মিডিয়া ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে, কারণ শত্রুর তরবারি আজ চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার রূপ নিয়েছে।

মুসলমানদের করণীয় 

এখন প্রশ্ন হলো, মুসলমানদের কী করা উচিত? প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হলো, মুসলমানরা যেন তাদের তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক মিডিয়ার হাতিয়ার দিয়ে সজ্জিত করে। তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণ, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ডকুমেন্টারি প্রস্তুতকরণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করানো এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চাহিদা। এজন্য মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উচিত তাদের পাঠ্যক্রমে মাস কমিউনিকেশন, ফিল্ম স্টাডিজ এবং ডিজিটাল মার্কেটিং–এর মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো, মুসলিম বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা যেন তাদের দায়িত্ব বোঝেন এবং মিডিয়াতে বিনিয়োগ করেন। যদি ভারতের মুসলিম ধনীরা একত্রে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করেন, তাহলে তারা শুধু একটি প্রোডাকশন হাউসই নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ মিডিয়া নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন, যা মুসলমানদের পক্ষে কাজ করবে এবং একই সঙ্গে ভারতের গঙ্গা-যমুনা সংস্কৃতিকে তুলে ধরে দেশের সব শ্রেণির মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে। এই মিডিয়া নেটওয়ার্ক এমন চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ এবং ডকুমেন্টারি তৈরি করবে যাতে মুসলমানদের অবদান, স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকা এবং শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি এটি আইনগত দিকেও জোর দিতে হবে। মুসলমানদের উচিত তাদের আইনজীবী সমাজকে সক্রিয় করা যাতে তারা ঘৃণামূলক বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে আদালতে কার্যকরভাবে কণ্ঠ তুলতে পারে।

যদি মুসলমানরা এই পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বর্তমান নীরবতা কেবল তাদের পরিচয়কেই হুমকির মুখে ফেলবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভারতে বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এই সময়টাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। মুসলমানরা যদি শিক্ষা, মিডিয়া এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে, তবে তারা শুধু নিজেদের পরিচয়ই রক্ষা করতে পারবে না বরং ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও উগ্রপন্থার বিষ থেকে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু যদি আজও আমরা নীরব থাকি, তবে আগামী দিনের ইতিহাসবিদরা আমাদের ভীরুতা ও নিষ্ক্রিয়তাকেই আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করবে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter