আত্মার ডায়াবীটীজ
স্বাপ্নিকের কলম থেকে:
আজকের সমাজ দেহের গুরুতর ব্যাধি মধুমেহ বা ডায়াবীটীজ নিয়ে চিন্তিত। আর আমি চিন্তিত আত্মার গুরুতর ব্যাধি সংকীর্ণতা নিয়ে!
ডায়াবিটীজ শুধু পীড়িতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু সংকীর্ণতা ক্ষতিগ্রস্ত করে পরিবার, সমাজ, দেশ , জাতি - এমনকি সমগ্র মানব জাতিকে। এই সংকীর্ণতা ডায়াবীটীজের তুলনায় কত যে ভয়ানক ও বিপজ্জনক, তা একালের সমস্ত Artificial Intelligence - এর পক্ষেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় - এমনকি বিশ্বের বিশিষ্ট জ্ঞানী সমাজের পক্ষেও বেশ বেগ পাওয়ার মতো বা হিমশিম খাওয়ার মতো বৈকি! একথা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি!
সংকীর্ণতা মানুষকে রক্ত - মাংসে গড়া এক রোবোট অথবা উন্নত জীবমাত্রে পরিণত করে - এমনকি পরিণত করে মানুষ অথবা অভিশপ্ত শয়তান অথবা উভয়েরই হাতের কাঠপুতুলে!
ডায়াবিটীজে আক্রান্ত মানুষের জীবনও সফল, সার্থক এবং প্রভাবশালী হতে পারে। কিন্তু এমনটি কখনোই আশা করা যায় না সংকীর্ণতায় আক্রান্ত মানুষের জীবনে। কারণ এই ব্যাধি জন্ম দেয় আরো নানা ব্যাধির। বলা বাহুল্য, বহুব্যাধিগ্রস্ত মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি আশা না থাকাই স্বাভাবিক। যে সংকীর্ণ, সে ব্যক্তি, তবে ব্যক্তিত্ব নয়।
মানবদেহে শর্করার যে ভূমিকা, মানবাত্মায় স্বপ্নের সেই ভূমিকা। স্বপ্ন বিহীন জীবনের শক্তি, সাহস ও আত্মবিশ্বাস খুবই কম হয়ে থাকে।
আজকের সমাজের সার্বিক অধোপতন ও চরম দুর্গতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই সংকীর্ণতা! এই ব্যাধি মানুষের স্বপ্নকে তিল - তিল করে দুর্বল করে দেয়। সেই দুর্বল স্বপ্ন এগিয়ে যায় অপমৃত্যুর দিকে! এই ব্যাধি মানুষকে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে দেয় না। কবি জাকির আবু জাফর কতই না চমৎকার কথা বলেছেন :
মানুষ এত বিশাল আকাশের নিচে বসবাস করেও কি করে সংকীর্ণ হতে পারে?
তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও একজন তরুণ যদি সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে না পারেন; ভাই বলে কাছে টেনে নিতে না পারেন; ভালোবাসতে না পারেন; সংগঠিত হতে না পারেন; মানবতার কল্যাণে স্বপ্ন দেখতে না পারেন; ভাই ও বন্ধুদের সাথে চর্চার আগ্রহ না রাখেন - সর্বোপরি জীবনের সার্বিক বিকাশের জন্য একনিষ্ঠ সাধনা ও সর্বাত্মক সংগ্রাম না করেন, তাহলে এর চেয়ে সংকীর্ণতা আর কি হতে পারে? আজ এই শিক্ষিত (?) তরুণ সমাজে বিরিয়ানি নিয়ে এক ঘন্টা গল্প হওয়া স্বাভাবিক হয়ে গেছে! কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে একটি কথাও হয়ে গেছে অসহ্য, অস্বাভাবিক, এমনকি হাস্যকর! এটাই সংকীর্ণতা নয় কি? নিশ্চয়ই...!
যদি আমি ডায়াবিটীজ বিশেষজ্ঞ হতাম, তাহলে হয়তো সংকীর্ণতার ব্যাখ্যা করতে পারতাম বিস্তৃতভাবে।
আমার দৃষ্টিতে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সংকীর্ণতার সবচেয়ে সহজ এবং বাস্তব উদাহরণ হলো রোবোট! কারণ রোবোটের মধ্যে উক্ত বৈশিষ্ট্যাবলী অকল্পনীয়! রোবোটকে যা ইনপুট করা হয়, আউটপুট হিসেবে তা-ই প্রকাশ করে। প্রকৃত সত্য হলো, রোবোট চিন্তা করে না, স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্নের পথে লালন করে না পাগলামি! এই দৃষ্টিতে বিচার করলে পরিস্হিতির তিক্ত ও নির্মম বাস্তবতা হলো আজকের তরুণ সমাজের প্রায় পনের আনাই রক্ত - মাংসে গড়া এক রোবোট বিশেষ!
বস্তুত, সংকীর্ণতা হলো আত্মার ডায়াবীটীজ। (লেখার সময়কাল - ২৭/০৬/২০২৪, বৃহঃ, রাত।)