কারবালা: প্রতিটি যুগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে  আগে ফোরাত নদীর তীরে ইরাকে অবস্থিত কারবালার যুদ্ধ প্রান্তরে, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) তিনার অনুসারীদের সাথে তিনার সমকালীন এক অন্যতম শক্তিশালী অত্যাচারী অন্যায়ের প্রতীক শাসক ইয়াজিদ এর বিরুদ্ধে মাথা নত করতে অস্বীকার করেছিলেন, যার কারণে কারবালার প্রান্তে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি সামনে আসে। 

ইমাম হুসাইন (রা.) উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়ার কারণে ইয়াজিদ মদিনার তৎকালীন গভর্নরকে জোরপূর্বক ইমাম হুসাইনের (রা.) কাছ থেকে বাইয়াত নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কারণ ইমাম হুসাইনের (রা.) বাইয়াত গ্রহণ ও অনুমোদন  রাশিদুন খিলাফতের পতনের পর শুরু হওয়া ইয়াজিদ এর 'মুলুকিয়াত' রাজত্বের নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিত। ইয়াজিদ জানত যে ইমাম হুসাইনের (রা.) সমর্থন তাকে তার অন্যায়ের রাজ্য স্থাপনে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে। সুতরাং, ইয়াজিদ তার রাজত্বের সমর্থনের জন্য তিনাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখালেও তিনি কোনোমতেই তাতে সম্মত হননি। পরবর্তীতে তিনাকে তিনার  আহলেবাইতের নিরাপত্তার  হুমকি দেওয়া হলেও  তাতেও ইমাম হুসাইন (রা.) নতজানু হননি এবং ইয়াজিদের নোংরা এবং অত্যাচারী রাজত্বকে মেনে নেয়নি। 

ইমাম হুসাইনের (রা.) প্রতি নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা ছিল অসীম। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন যে,  "আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুসাইন ইবনে আলীকে (রা.) তিনার কাঁধে তুলে নিতেন। একবার আমি এইরকম দেখার পরে হুসাইনকে বললাম, 'হে বৎস! তুমি কতইনা একজন মহান ব্যক্তির কাঁধের উপর চড়েছ!' নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, 'আর কতই না মহান সে, যে আমার উপর চড়েছে। সুবহানাল্লাহ। 

আমরা প্রায়ই প্রত্যেক বছর  ইমাম হুসাইনের (রা.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনার সাহসী সংগ্রামের কথা শুনি এবং গোটা পৃথিবীতে মুসলিমরা তিনাকে তিনার উল্লেখযোগ্য আত্মত্যাগ, প্রাণ বিসর্জন ও বীরত্বের জন্য স্মরণ করে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বর্তমান পরিস্থিতি পরিদর্শন করে যদি আমরা বলি, যে আমরা ইমাম হুসাইনের (রা:) পবিত্র কঠোর সংগ্রামেকে  শুধুমাত্র একটি তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি, আমার মনে হয় তাতে কোনো অত্যুক্তি হবে না। আমরা পুরো আন্দোলনের সারমর্ম শেখার এবং শেখানোর চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্যের উপর বেশি জোর দিই যেই সংগ্রামের জন্য ইমাম হুসাইন (রা.) তিনার প্রিয়জনদের ও স্বভূমি পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন।

বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল-তাবরি তার কিতাবে উদ্ধৃত করেছেন যে, "মদিনা ত্যাগ করার সময় ইমাম হুসাইন (রা.) পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন:

فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ ۖ قَالَ رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

অনুবাদ: "অতঃপর (মূসা আ:) তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতে। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর।"  (২৮:২১)

এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করার সময় তিনি পাঠ করলেন,

 وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَاءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسَىٰ رَبِّي أَن يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ

অনুবাদ: "যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন তখন বললেন, আমি আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।" (২৮:২২) 

মক্কায় কিছুদিন অবস্থান করার পর, তিনি দ্রুত মক্কা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, সেটিও ছিল যুল-হিজ্জাহ মাসে যখন সারা বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র হজ্ব পালন করার জন্য কাবাঘরের দিকে রওয়ানা হচ্ছিলেন। এমনাবস্থাতেও ইমাম হুসাইন (রা.) সেখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, এ থেকে বোঝা যায় যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ভ্রষ্ট অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাজত্বের বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

এখানে একটি প্রশ্ন জাগে যে,  'কী কারণে ইমাম হুসাইন (রা.) বিদ্রোহের জন্য এত গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন?'

ইতিহাস আমাদের জানায় যে ইসলামের মূল পঞ্চস্তম্ভ  যথা – সালাত (নামাজ), সাওম (রোজা), হজ (তীর্থযাত্রা) এবং যাকাত (দান) পূর্বের মতোই করা হত যেমনটি নবীর যুগে ছিল তাছাড়া মুসলিম সেনাবাহিনীও নতুন নতুন অঞ্চলও জয় করছিলেন; তবুও কি কারণে  ইমাম হুসাইন (রা:) ইয়াজিদের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা আমাদের ইসলামিক বক্তৃতা সমাবেশে একটি জিনিস জানতে পারিনা সেইটি হল এই কঠোর সংগ্রামের পিছনে ইমাম হুসাইনের (রা.) মূল উদ্দেশ্য। এটি ছিল এমন একটি উদ্দেশ্য যেটি সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকরণ করেছিল, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি প্রাচীর তৈরি করেছিল। ইমাম হুসাইন (রা.) এর  উদ্দেশ্য ছিল এমন কিছু যা এই উম্মতের প্রতিটি ব্যক্তি পর্যায়ে এবং বৃহত্তরভাবে সমাজের উভয় স্তরে প্রভাব ফেলার কথা ছিল; কিন্তু বাস্তবতা হল আমরা তিনার আসল উদ্দেশ্য ব্যতীত কারবালার ঘটনা থেকে বাকি সব কিছু নিয়েছি। আমরা 'তাজিয়া' 'অস্ত্রখেলা প্রদর্শন' এবং এছাড়াও বিভিন্ন ইসলাম ভিত্তিহীনমূলক ভিন্নধর্মীরূপ ভূল রীতিনীতির নোংরামিতে নিজেদের হারিয়ে দিয়েছি যা আমাদেরকে ইমাম হুসাইনের (রা.) কঠোর সংগ্রামের উদ্দেশ্য কে বুঝতে বাধা দিয়েছে। 

ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (রা.) যখন ইমাম হুসাইনের (রা.) মক্কা থেকে ইরাকের অভিমুখে অভিযাত্রার  কথা জানতে পারল, সে অবিলম্বে কুফার তৎকালীন গভর্নর নু'মান বিন বাশিরকে প্রতিস্থাপন করে উগ্রবাদী উবায়দ'আল্লাহ ইবনে জিয়াদকে নিযুক্ত করে এবং পত্রের মাধ্যমে আদেশ দেয় যে প্রয়োজন হলে তাকে যেন হত্যা করতে দ্বিধাবোধ না করা হয়।  "ইয়াজিদের এই চিঠি পাওয়ার পর, ইবনে যিয়াদ কারবালায় ইমাম হুসাইনকে (রা.) হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেই এবং দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে ইমাম হুসাইনের (রা.) পবিত্র দেহবিহীন মস্তক মুবারক পাঠিয়ে দেই।" 

৬১ হিজরির ১০ই মহররমের আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (রা.) তিনার সমস্ত সহচরবৃন্দ এবং পরিবারের সদস্যদের বীরত্বের পরিচয় দিয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার পর, ইমাম হুসাইন (রা.) পুনরায় আবার সবাইকে আহ্বান জানান, “এমন কেউ আছে, যে আমাদেরকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করবে? 

 ইতিহাস আমাদের বলে যে তিনার ডাকে কুফার প্রতারক গোষ্ঠীর কেও সাড়া দেয়নি; এইভাবে পরবর্তীতে তিনি একাই যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হন। যুদ্ধের ময়দানে ইমাম হুসাইন (রা.) একাই এমন একটি বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে চূড়ান্ত বীরত্বের প্রমাণ দেন যাদের সংখ্যা প্রায় চার হাজারের কম ছিল না।

 সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তিনার পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন। তিনি আমাদের মানবজাতির কাছে সবচেয়ে মূল্যবান পাঠ শিখিয়ে গেছেন - 'অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ব্যাবস্থা নেওয়া'। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন যে 'বাতিল' অর্থাৎ 'অন্যায়'  যতই শক্তিশালী এবং অত্যাচারী হোক না কেন, আমাদের একা হলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।

 ইয়াজিদ ইমাম হুসাইনকে (রা.) হত্যা করতে অনড় ছিল কারণ সে জানত যে ইমাম হুসাইন (রা.) তাকে এমন একটি অন্যায় রাজ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে দেবেন না যা ইসলামের ভিত্তির বিরুদ্ধে এবং খিলাফত  রাশিদুন এর ব্যবস্থার সাথে সংঘর্ষমুলক। সে ইমাম হুসাইনের (রা.) এই সূচিত আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল।

এই আন্দোলন শুধু একজন ব্যক্তিগত পুরুষের বিরুদ্ধে  ছিল না, বরং আন্দোলনটি এমন একটি আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল যা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য এবং অশ্লীলতার প্রচারের প্রতীক যা  ছিল পুরোপুরিভাবে ইসলামী আদর্শের বিরোধী। ইয়াজিদের শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যাচার, অবিচার,  এবং অন্যায়ের উপর ভিত্তি করে ইসলামের ধার্মিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্থাপিত একটি পরিকল্পনা। ইমাম হুসাইন (রা.) যিনি স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোলে লালিত-পালিত হয়েছিলেন এবং নবীর সেরা সাহাবীদের আলোকিত সান্নিধ্যে লালিত-পালিত হয়েছিলেন, তিনি কীভাবে নীরবে নিজের স্বচক্ষে  ইসলামের নীতি ও আদর্শ বিকৃতি প্রত্যক্ষ করতে পারতেন? 

এইভাবে, ইয়াজিদের নিষ্ঠুর বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের  পরিণতি জানার পরেও, তিনি ইসলামের নীতি ও আদর্শের মর্মকে রক্ষা করার জন্য তিনার সমস্ত কিছু ইসলাম রক্ষার জন্য উৎসর্গ ও বিসর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন।

ইবনে কাথির আল-বিদায়া ওয়াল-নিহায়া নামক তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, "দামেস্কে - ইয়াজিদের সামনে ইমাম হুসাইনের (রা.) পবিত্র মস্তক মুবারক পেশ করা হলে, সে একটি বেত দিয়ে ইমাম হুসাইনের (রা.) পবিত্র মুখে খোঁচাতে শুরু করে। আবু বারজাহ আল-আসলামী (রা.) নামক সেই স্থানে উপস্থিত একজন সাহাবী তাকে এইটি করতে দেখে চিৎকার করে বললেন,

"আল্লাহর কসম, দয়া করে তোমার বেতটি সরিয়ে নাও! আমি কতবার আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সেই মুখে চুম্বন করতে  দেখেছি।"

এখন এক মুহুর্তের জন্য একটু কল্পনা করা যাক যে , ইমাম হুসাইন (রা.) যদি অত্যাচারী ইসলাম বিরোধী শাসনের সামনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করে নিতেন, তাহলে এইটি গোটা পৃথিবীতে ইসলামের একটি বার্তা প্রেরণ করতো যে আমাদেরকে নিপীড়ন মেনে নেওয়া,  অত্যাচারী অবিচার শাসকদের পাশে থাকা, অন্যায়ের সাথ দেওয়া বা সম্পদ, ক্ষমতা এবং বিলাসিতা করার জন্য মাথা নত করা প্রয়োজন। না, কখনই না, বরং ইমাম হুসাইন (রা.) গোটা বিশ্বকে এই বিশুদ্ধ বার্তা দিয়েছেন যে ন্যায় এবং অন্যায়, ইসলাম এবং অত্যাচার,  সত্য ও মিথ্যা কোনোদিন পারস্পরিক ভাবে একসাথে থাকতে পারে না।

কারবালার এই মর্মান্তিক ঘটনা সমগ্র মানবজাতি এবং বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য একটি শিক্ষামূলক ঘটনা। এই আন্দোলনের প্রভাব এমনই যে চৌদ্দ শতাব্দী আগে কারবালার ওই মরুর প্রান্তরে ইমাম হুসাইনের (রা.) ডাকে আজও পৃথিবীর চতুর্দিক থেকে কোটি কোটি অসংখ্য মানুষ সাড়া দেয়। কারবালার ঘটনার পর যখন আহলেবাইতের কাফেলাকে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে হাজির করা হয়, তখন সাইয়্যেদাহ জয়নব (রা.) বন্দী হওয়া সত্ত্বেও ইমাম হুসাইনের (রা.) প্রতিনিধি হিসেবে অত্যাচারী নিষ্ঠুর ইয়াজিদের মুখোমুখি হয়ে বীর বাঘিনীর ন্যায় দাঁড়িয়েছিলেন । নবীজির এই সাহসী দৌহিত্রা তার ভাইয়ের মতো অত্যাচারী শাসনকে মেনে নেয়নি বরং তিনি  ইমাম হুসাইনকে (রা.) উৎসাহিত করতেন। ইমাম হুসাইন (রা.) যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তা হয়তো কারবালার প্রান্তরে হারিয়ে যেত, যদি হযরত জয়নব (রা.) সেটি প্রতিটি দেশের প্রতিটি প্রজন্মের জন্য এই ইসলামী বিপ্লবের বীজ বপন না করতেন।

হযরত জয়নব (রা.) এবং  ইমাম হুসাইন এর (রা.) এই ভূমিকাকে মাথায় রেখে, আমাদেরকে  দুঃখজনক ভাবে স্বীকার করতে হয় যে আজও আমাদের বেশিরভাগ ব্যক্তি তিনাদের চরিত্র সম্পর্কে অজ্ঞ। আমরা আমাদের প্রিয় নায়ক- নায়িকা সেলিব্রিটিদের সম্পর্কে তাদের বায়োডাটা সবকিছু জানি কিন্তু ইমাম হুসাইন (রা.) ও সাইয়িদাহ জয়নব (রা.) এর চরিত্র ও ভূমিকা সম্পর্কে নয়,  আমরা কেবল তাদের নাম ব্যতীত আর কিছুই জানি না। 

ইমাম হুসাইন (রা.) ও কারবালার অন্যান্য শহীদগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শুধু স্লোগান ও স্মরণই যথেষ্ট নয়। প্রকৃত শ্রদ্ধা এবং ইমাম হুসাইনের (রা.) প্রেমিক হওয়ার দাবিদারদের প্রমাণ হল ন্যায়কে অন্যায় থেকে, সত্যকে মিথ্যা থেকে এবং জ্ঞানকে অজ্ঞতা থেকে পৃথক করার শপথ ও অঙ্গীকার নেওয়া। দুর্নীতি, অসততা, অশ্লীলতা বা অন্য কোন অন্যায়ের সাথে নিজেদেরকে জড়িত না করে ইসলামের আদর্শকে জাগ্রত করাই হলো তিনাদের প্রকৃত আনুগত্যস্বীকার। সাম্প্রদায়িকতা এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা নিষিদ্ধ যেকোনো  বৈষম্যের মধ্যে লিপ্ত না হওয়ার জন্য এটি আমাদের কাছে হলো একটি চূড়ান্ত অঙ্গীকার, তদ্রুপ আমরা প্রকৃত মুসলিম হতে পারবো এবং ইমাম হুসাইন (রা.) এর কারবালার প্রান্তরে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে নিজের প্রাণ বিসর্জন বৃথা নয় বলে প্রমাণ করতে পারবো। 

ইমাম হুসাইনের (রা.) অনুসারী হতে হলে আমাদের এটিই যথেষ্ট কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বলতে হয় যে যখন আমরা আজ আমাদের সমাজের চারপাশে তাকাই, আমরা যা দেখি তা হল নিষ্ঠুরতা, অন্যায় এবং নিপীড়ন এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ। যেখানে  মানুষকে তাদের ধর্ম পালনের জন্য পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে,  নারীরা ধর্ষিতা হচ্ছে এবং নারীদের নগ্ন করে প্রকাশ্যভাবে ঘোরানো  হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্নীতি, অসততা, মিথ্যাচার, অজ্ঞতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং বর্ণবাদ আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে শিকড় বেঁধে আছে। এমন কলুষিত সামাজিক অবস্থায় যারা ইমাম হুসাইনের (রা.) অনুসারী বলে দাবি করেন তাদের সবার জন্য ইসলামের আদর্শের আলোয় বিশ্বকে আলোকিত করা জরুরী, সৃষ্টিকর্তার শেষ বাণী কেবলমাত্র মুসলিমদের জন্য নয় বরং সকল মানবজাতির জন্য। 

ইসলামের বার্তা হলো সেই ঐশ্বরিক আলো যা আমাদের জীবন থেকে সমস্ত প্রকারের অন্ধকার দূর করতে পারে, এইটি সেই আলো যেটি হলো সমস্ত দুর্নীতি, জাতিগত বৈষম্য এবং নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের চূড়ান্ত সমাধান l এই ধর্মের বাণীটি এক ইসলামপূর্ব মক্কার সবথেকে নিষ্ঠুর ও ভ্রষ্ট সমাজকে; যারা ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে শত শত বৎসর ধরে যুদ্ধে লিপ্ত থাকত, এমন এক সমাজকে সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ ও সদয় সমাজে রূপান্তরিত করেছে। আগামী প্রজন্মের জন্য এই মহান বাণীকে রক্ষা করার জন্য ইমাম হুসাইন (রা.) তিনার সমস্ত কিছু বিলীন করে দিয়েছেন। এখন আমাদের এইটি দায়িত্ব যে কারবালার এই মহান বার্তা প্রতিটি প্রজন্ম ও প্রতিটি দেশের কাছের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তেমনি পাশাপাশী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা যেই কাজের দায়িত্বের জন্য এই উম্মতকে অন্যান্য উম্মতের চেয়ে উত্তম বলে পবিত্র কুরআনে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter