লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য

লাইলাতুল কদর একটি আরবি শব্দ।  এর অর্থ হল পবিত্র  বা ভাগ্যের রাত।  ইসলাম ধর্মে  এ পবিত্র রাতে বিশ্বনাবী হযরত মোহাম্মদ ﷺ -এর উম্মাতিদের সম্মান বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই এটি মুসলিমদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাত। কুরআনে অনেক আয়াত আছে যেখানে এই রাতের ফজিলতের ব্যপারে উল্লেখ্য করা হয়েছে।  আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে অনেক মর্যাদা দিয়েছেন। এই রাতের ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদের চেয়েও অনেক বেশি। এই রাতের ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত রয়েছে। আমাদের পবিত্র কুরআন শারিফে  "সূরা ক্বদর" নামে একটি পূর্ণ সুরা নাযিল হয়েছে।  ৬১০ সালে লাইলাতুল কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায়  আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদের ﷺ-এর ওপর কুরআন নাজিল হয়।

আল্লাহ তায়ালা এই রাতের ব্যাপারে কুরআন শারিফে ইরশাদ করেছেন: আমি একে (অর্থাং কুরআন) নাযিল করেছি  লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর  সমন্ধে তোমরা কি জান? লাইলাতুল কদর  হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।  (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)

 

এ  এই রাতের  বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা করেছেন: হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (অর্থাং কুরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪)

 

হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী, লাইলাতুল কদরের রাতে  যারা আল্লাহর ইবাদাতে  ব্যস্ত থাকবে, আল্লাহ তাদের ওপর থেকে দোজখের আগুন হারাম করে দেবেন। এ সম্পর্কিত হাদীসটি হল, সমস্ত রাত আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা এ বরকতময় রাতে  বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকো।

 

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে: তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকিত পেতে চাইলে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর রাতে জেগে রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দাও।

 

এই  শবে কদরের রাতে ফেরেশতারা ও তাদের নেতা জিবরাঈল পৃথিবীতে অবতরণ করে উপাসনারত সব মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে: শবে কদরে হজরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)

 

এই  রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআনের সুরা কদরে উল্লেখ আছে, হাজার মাস উপাসনায় যে পূন্য হয়, কদরের এক রাতের উপাসনা তার চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের রাতে  আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। লাইলাতুল কদরে আমাদের জন্য  আল্লাহর কাছে নাজাত, মাগফিরাত ও ক্ষমা পাওয়ার সবথেকে বড়  সুযোগ। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বিশ্বনবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি এই রাত  ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বেকৃত সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন। (বুখারি)

 

লাইলাতুল কদর কখন বা কবে?

 

হাদিস অনুযায়ী, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে আলেমদের মতামত হল যে ২৬ রমজান দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে ।

 

হযরত  আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, হযরত মুহাম্মদ ﷺ রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদর সন্ধান করো। (বুখারি ও মুসলিম)

 

আরেকটি হাদিসে বিশ্বনবী ﷺ বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর সন্ধান করো। (সহীহ বুখারী)

 

বিশ্বনবী ﷺ-কে তাঁর স্ত্রী হযরত  আয়েশা (রাঃ)  শবে কদর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: হে রাসুলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী মত দেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন—অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিযি)

 

এ রাত বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর  অশেষ রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। এ রাতে কোরান শরীফ নাজিল হয়েছিল।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter