ইসলাম ধর্মে পাগড়ী (আমামা শরিফ) পরা হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা:) এর সুন্নাত ও শরিয়তে তার পড়ার হুকুম নিয়ে একটি গুরুপ্ত পূর্ণ বিশ্লেষণ।

মাঝাহাবে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা,যা মানুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় অবস্থাকে গুরুত্ব প্রদান করে। পোশাকের পবিত্রতা ও মর্যাদাও ইসলাম ধর্মে একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে।এই বাহ্যিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে“পাগড়ি” অন্যতম, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের মধ্যে একটি সুন্নাত, ও আলেমগণ,সালেহীন ও সুন্নি ওলামায়ে কেরামের কাছে এটি মর্যাদা, জ্ঞান এবং ধর্মনিষ্ঠার চিন্নর মধ্যে একটি চিন্ন।

পাগড়ি পরা হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা:) এর অমল:

পাগড়ি পরা  নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম পাগড়ি পরতেন এবং তার একটি অংশ পেছনে ঝুলিয়ে দিতেন(তিরমিজি:১৭৩১)অনুরূপভাবে মক্কা বিজয়ের সময়ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালো পাগড়ি পরিধান করেছিলেন, যা সহীহ মুসলিমের হাদীসসমূহ থেকে জানা যায়।পাগড়ি পরিধান করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নত। ওলামায়ে কেরাম এটিকে “সুন্নতে যাওয়ায়েদ” হিসেবে গণ্য করেছেন, অর্থাৎ এমন সুন্নতসমূহ যেগুলো তিনি আরব সমাজের অভ্যাস হিসেবেও গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তাতেও সুন্নতের অনুসরণের সওয়াব রয়েছে।

সুন্নি ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য:

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরাম পাগড়িকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলতেন: “পাগড়ি হল জ্ঞানী ও সম্মানিত ব্যক্তিদের অলংকার।” ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ তাঁর রওজাতুত ত্বালেবীন কিতাবে লিখেছেন:“পাগড়ি পরিধান করা মুস্তাহাব, বিশেষ করে নামাজ, খুতবা ও জামাতের সময়।”

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ পাগড়িকে দ্বীনের নিদর্শন মনে করতেন। তাঁর শাগরেদরা বর্ণনা করেছেন যে, তিনি প্রায়শই পাগড়ি পরিধান করে নামাজ আদায় করতেন এবং সাধারণ মানুষকেও এর প্রতি উৎসাহ দিতেন।

আল্লামা আব্দুল হাই লখনবী রহিমাহুল্লাহ লিখেছেন: “পাগড়ি পরিধান করলে শুধু সুন্নতের উপর আমল হয় না, বরং এটি মর্যাদা, জ্ঞান ও গম্ভীরতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।”

পাগড়ি পরে নামাজ পোড়ার হুকুম:  

সকল মুসলমান কে জেনে রাখা দরকার যে পাগড়ি পরে নামাজ হবে কিনা? পাগড়ী হচ্ছে পোশাকের সুন্নতগুলোর মধ্যে একটি সুন্নাত,অর্থাৎ এর সম্পর্ক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাকৃতিক জীবনের সঙ্গে রয়েছে এবং এতে আদেশ বা নিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং, পাগড়ি পরে নামাজ পড়া মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) এবং ফজিলতপূর্ণ, কিন্তু যদি কেউ পাগড়ি ছাড়াও নামাজ পড়ে, তাহলে তার নামাজ অনায়াসে ও অনাকর্ষণীয়ভাবে সহীহ হয়ে যাবে।

ফিকহী অবস্থান:

ফুকাহায়ে কেরাম পাগড়িকে মুস্তাহাব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে জুমার নামাজ, খুতবা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়। হানাফি মাজহাবের প্রামাণ্য কিতাব যেমন আদ্দুরুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার-এ এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কিছু ওলামা এমনও লিখেছেন যে, পাগড়ি পরিধান করে পড়া নামাজ, পাগড়ি ছাড়া পড়া নামাজ থেকে সত্তর গুণ বেশি ফজিলতপূর্ণ, যদিও এ হাদীসটি দুর্বল, তবে ফজায়েলে আমালে এর উল্লেখ করা হয়েছে।

আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতা:

পাগড়ি যেমন নবীজির সুন্নতের অনুসরণের মাধ্যম,তেমনি এটি আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য, গাম্ভীর্য এবং ধর্মীয় মর্যাদারও প্রতিফলন ঘটায়। আজও সুন্নি মাদরাসা ও খানকাগুলিতে পাগড়ি বেঁধে রাখা বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক অবস্থানের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গংগোহী, হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও আহমদ রেজা খান ব্রেলভী(রহিমাহুমুল্লাহ)প্রমুখ পাগড়ির গুরুত্বের উপর সবসময় জোর দিতেন।

উপসংহার

পাগড়ি কেবল একটি পোশাকের অংশ নয়,বরং এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত, ওলামার পরিচয় এবং ধর্মীয় মর্যাদার প্রতীক।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দৃষ্টিতে এটি একটি অত্যন্ত মুস্তাহাব আমল, যা দীনের প্রতি ভালোবাসা,সুন্নতের অনুসরণ ও আধ্যাত্মিক উচ্চতার নিদর্শন।আমাদের উচিত এই  সুন্নতকে  জীবিত রাখা এবং আমাদের জীবনে এর বাস্তবায়ন করা, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা যায়।

আমি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি যেন সকল মুসলমান ভাইদের কে পাগড়ী পড়ার তৌফিক দান করুক আমীন।















Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter